জার্মান নির্বাচন: বুথ ফেরত জরিপে এগিয়ে সিডিইউ/সিএসইউ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জার্মান নির্বাচনে শেষ হলো ভোটগ্রহণ৷ বুথ ফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে এগিয়ে আছে রক্ষণশীল দল সিডিইউ/সিএসইউ৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কট্টর ডানপন্থি দল এএফডি৷ আর তৃৃতীয় অবস্থানে এসপিডি৷
বুথ ফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, সিডিইউ/সিএসইউ প্রার্থী ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস হতে পারেন জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর৷ছবি: Sascha Schuermann/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
জার্মান পার্লামেন্ট নির্বাচনে শেষ হলো ভোটগ্রহণ৷ স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট৷ একটানা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত৷ এখন চলছে গণনা৷ ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকাল সকাল নাগাদ শেষ হবে পূর্ণ ভোট গণনা৷
তবে বুথ ফেরত জরিপ থেকে নির্বাচনের ফল সম্পর্কে কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷ এতে দেখা গেছে, রক্ষণশীল দল সিডিইউ/সিএসইউ ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কট্টর ডানপন্থি দল এএফডি৷ তারা পেয়েছে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট৷
বুথ ফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন এসপিডি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে৷ এই দলটিকে ভোট দিয়েছে ১৬ শতাংশ জার্মান৷
সিডিইউ/সিএসইউ প্রার্থী ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস হতে পারেন জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর৷ তারা হয়তো এসপিডি বা গ্রিনের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করবে৷
জার্মান নির্বাচনে উৎসবের আমেজ
জার্মানির নির্বাচন সাধারণত হয় সাদামাটা৷ বাংলাদেশ বা ভারতের নির্বাচনের মত অতটা উৎসবমুখর নয়৷ কিন্তু এবার জার্মানির কার্নিভাল উৎসবের সময়টাতে নির্বাচন হওয়ায় রঙ্গিন পোশাকেও অনেকে এসেছেন ভোট দিতে৷
ছবি: Steffen Schmidt/REUTERS
কুমির ক্রিস্টোফার
ভোটার ক্রিস্টোফার৷ এসেছেন সবুজ কুমিরের পোশাকে৷ ভোটকক্ষে পর্দার পিছনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন৷ জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের শহর ডামেতে কার্নিভাল উৎসবের বিশেষ দিন ‘রোজেন মোনটাগের’ এক সপ্তাহ আগে ঐতিহ্যবাহী ফাস্টনাখট উৎসব হয়৷ সেই উৎসবের জমকালো পোশাক পরে এসেছেন তিনি ভোট দিতে৷
জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট এলাকায় থাকেন এই নারীরা৷ তারাও সেখানকার ঐতিহ্যবাহী পোশাকেই এসেছেন ভোট দিতে৷
ছবি: Steffen Schmidt/REUTERS
২৩ ফেব্রুয়ারির ভোট
জার্মানির আগের জোট সরকার ভেঙ্গে যাওয়ায় সময়ের আগেই হচ্ছে সংসদ নির্বাচন৷ ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মানুষ তাদের পরবর্তী সংসদ প্রতিনিধিদের নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রগুলোতে ভোট দিতে যান৷
ছবি: Christoph Reichwein/dpa/picture alliance
6 ছবি1 | 6
কিন্তু এএফডি-এর কট্টর অবস্থানের কারণে তাদের এড়িয়ে চলছে সবকটি রাজনৈতিক দল৷ তাই জোট সরকারে দলটিকে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷
এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় ছয় কোটি৷ এবারের নির্বাচনে ৮৩-৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ জার্মানির সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচনে এটি রেকর্ড৷
গত নভেম্বেরে এসপিডির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশটিতে৷ জনমত জরিপে এগিয়ে আছে রক্ষণশীল দল সিডিইউ৷
টিএম/জেডএ
জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর খতিয়ান
রোববার জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন৷ ছবিঘরে এক নজরে দেখে নিন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং তারা কী চায়।
ছবি: Florian Gaertner/photothek/imago images
সিডিইউ/সিএসইউ
মধ্য-ডানপন্থি সিডিইউ এবং বাভারিয়ায় এর আঞ্চলিক সহযোগী সিএসইউ যৌথভাবে ইউনিয়ন নামে পরিচিত। বয়স্ক, গ্রামীণ এবং গির্জাগামী মানুষের মধ্যে দলটির সমর্থন বেশি। শিল্প নেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং নিম্ন বা মাঝারি শিক্ষার ভোটারদের মধ্যেও ভালো ফল করেছে তারা। কর্পোরেট কর কমানো, উচ্চ-আয়ের মানুষদের সুবিধা প্রদান, আশ্রয়বিধি কঠোর করা, অপরাধী শরণার্থীদের বহিষ্কার করা ইত্যাদি এর এজেন্ডায়। দলটির নির্বাচনী রঙ- কালো৷
ছবি: Christof Stache/AFP/Getty Images
এসপিডি
মধ্য-বামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল- এসপিডি ঐতিহ্যগতভাবে শ্রমিক শ্রেণী এবং ট্রেড ইউনিয়নের দল। ঐতিহ্যগতভাবে জার্মানিতে এসপিডির সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল পশ্চিম জার্মানির শিল্প অঞ্চল, বিশেষ করে রুওর অঞ্চল, হেসে এবং লোয়ার সাক্সনি রাজ্য। ন্যূনতম মজুরির মতো সামাজিক নীতি গ্রহণ, ধনীদের ওপর কর আরোপ এবং নিম্ন ও মাঝারি আয়ের মানুষের করের বোঝা কমাতে চায় এসপিডি। দলটির নির্বাচনি রঙ- লাল।
ছবি: Bernd von Jutrczenka/dpa/picture alliance
গ্রিন পার্টি
পরিবেশবাদি দলটির মূল ভোটার ভিত্তি শহুরে সুশিক্ষিত জনগণ, বিশেষ করে পশ্চিম জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক শহরগুলোতে। তবে ধীরে ধীরে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হচ্ছে দলটি। ফ্রাইডে ফর ফিউচার এবং জলবায়ু নিয়ে নানা কর্মসূচি তরুণদের দলটির প্রতি আকৃষ্ট করছে। স্বাভাবিকভাবেই দলটির নির্বাচনী রঙ- সবুজ।
ছবি: Daniel Roland/AFP
এফডিপি
নয়া-উদারপন্থি মুক্ত বাজারের সমর্থক মুক্ত গণতন্ত্রী দল- এফপিডি সাধারণত ব্যবসায়ী, ডেন্টিস্ট এবং আইনজীবীদের কাছে জনপ্রিয়। শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে এর জনপ্রিয়তা কম। ব্যক্তির স্বাধীনতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা কমানোই হচ্ছে দলটির মূলনীতি। ইউরোপপন্থি এই দল কর ছাড়ের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছে। দলটির নির্বাচনী রঙ- হলুদ।
ছবি: Hannes P Albert/dpa/picture alliance
ডি লিংকে
বামপন্থি দল ডি লিংকের মূল ঘাঁটি সাবেক পূর্ব জার্মান অঞ্চলে। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো বিলুপ্ত করে দিতে চায় দলটি। অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরি অনেক বাড়ানো, অবসরের বয়েস কমানো, অভিবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া ইত্যাদি। দলটির নির্বাচনি রঙ- লাল।
ছবি: Hendrik Schmidt/dpa/picture alliance
এএফডি
অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড বা জার্মানির জন্য বিকল্প- এএফডি একটি কট্টর ডানপন্থি অভিবাসী বিরোধী দল। গঠিত হওয়ার পর গ্রিন ছাড়া অন্য প্রায় সব দল থেকেই সমর্থকেরা এই দলের প্রতি আনুগত্য বদল করেছেন। পূর্ব জার্মানিতে এর সাফল্য তুলনামূলক বেশি। জার্মান ঐতিহ্যে গুরুত্ব দেয় দলটি, ইসলামকে জার্মান সমাজের অংশ মনে করে না। দলটির নির্বাচনী রঙ- হালকা নীল।
ছবি: Kay Nietfeld/dpa/picture alliance
বিএসডাব্লিউ
২০২৪ সালে গঠিত এই পপুলিস্ট দলটি খুব দ্রুতই বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সারা ভাগেনক্নেশট জোট বা ব্যুন্ডনিস সারা ভাগেনক্নেশট- বিএসডাব্লিউ এর চেয়ারম্যান সাবেক বামপন্থি নেত্রী সারা ভাগেনক্নেশট। পূর্ব জার্মানিতে এই দলের সমর্থন বেশি। সামাজিক বিচার, চাকরির নিরাপত্তা ইত্যাদি ইস্যুতে বামপন্থি নীতিতে থাকলেও অভিবাসন, লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু ইস্যুতে তাদের নীতির সঙ্গে ডানপন্থিদের মিল রয়েছে। দলটির নির্বাচনী রঙ- বেগুনি।