জার্মানিতে চলছে ভোটগ্রহণ৷ এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনের সরকার নির্ধারণ করবে দেশটির নাগরিকেরা৷ ভোট দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টসহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী শীর্ষপ্রার্থীরা৷
জার্মান নির্বাচনে বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবং সিডিইউ/সিএসইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলেছে৷ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় ছয় কোটি৷ আগামী চার বছরের জন্য পার্লামেন্টের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন তারা৷
গত নভেম্বেরে এসপিডির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশটিতে৷ জনমত জরিপে এগিয়ে আছে রক্ষণশীল দল সিডিইউ৷
বার্লিনে ভোট দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট
জার্মানির সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ ভোটগ্রহণ শুরুর ঠিক একঘণ্টা পর রাজধানী বার্লিনের সেলেনডর্ফে একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন তিনি৷
জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেছেন, প্রত্যেক নাগরিকের উচিত ভোট দিয়ে নিজ অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা৷ছবি: Bernd von Jutrczenka/dpa/picture alliance
ভোটগ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কর্মীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট৷ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রত্যেক নাগরিকের উচিত ভোট দিয়ে নিজ অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা৷
তিনি আরো বলেছেন, ভোট দেয়ার সময় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত, আপনার ভোটই হতে পারে নির্ণায়ক৷
পসটডামে ভোট দিলেন চ্যান্সেলর শলৎস
মধ্য বামপন্থি রাজনৈতিক দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটস (এসপিডি)-এর চ্যান্সেলর প্রার্থী এবং বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ভোট দিয়েছেন৷ বার্লিনের ঠিক বাইরের ব্রান্ডেনবুর্গের পটসডামের একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন তিনি৷
দেশের জনগণকে ভোটকেন্দ্রে এসে নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ছবি: Ralf Hirschberger/AFP/Getty Images
ভোট দেয়ার কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট দিয়েছেন তিনি৷ ভিডিও বার্তায় দেশের জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘ভোটকেন্দ্রে আসুন এবং আপনার সিদ্ধান্ত জানান৷''
২০২১ সালে গ্রিন পার্টি ও এফডিপিকে সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গঠন করেছিলেন ৬৬ বছর বয়সি শলৎস৷ কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে ভেঙে যায় জোটটি৷ অর্থনৈতিক সংস্কার ইস্যুতেই মূলত দূরত্ব বাড়ে শরিক দলগুলোর মধ্যে৷ এর জের ধরে অর্থমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিস্কার করেন শলৎস৷ তারই ধারাবাহিকতায় আজ জার্মানিতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷
আর্নসবের্গে ভোট দিলেন ম্যার্ৎস
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার পশ্চিমের আর্নসবের্গে ভোট দিয়েছেন এবারের নির্বাচনে আলোচিত চ্যান্সেলর প্রার্থী ও সিডিইউ/সিএসইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস৷
জার্মান নির্বাচনে জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ৷ছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance
তার প্রতিদ্বন্দ্বী ওলাফ শলৎস ভোট দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভোট দিয়েছেন ম্যার্ৎস৷ ভোটকেন্দ্রে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘‘ভালোকিছুই হবে৷''
২০২১ সালে অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল সরে দাঁড়ালে সিডিইউ-এর দায়িত্ব নেন ৬৯ বছর বয়সি ম্যার্ৎস৷ নির্বাচনে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসাবে জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করার উপর বেশি জোর দিয়েছেন রক্ষণশীল এই নেতা৷
নুরেমবের্গ ভোট দিলেন সিডিইউ নেতা স্যোডার
বাভারিয়ান রাজ্যপ্রধান এবং সিএসইউ নেতা মার্কুস স্যোডার ভোট দিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর নুরেমবের্গে৷ নির্বাচনের ফল নিয়ে ‘দারুণ আত্মবিশ্বাসী' এই রাজনীতিবিদ৷
জার্মানির নুরেমবের্গ শহরের একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সিএসইউ নেতা ও বাভারিয়ার রাজ্যপ্রধান মার্কুস স্যোডার৷ছবি: Angelika Warmuth/REUTERS
তিনি বলেন, ‘‘আমি আশাকরি, অবশেষে আমাদের দেশ একটি সরকার পেতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে বাস্তবিক পরিবর্তনগুলো করা সম্ভব হবে এবং দেশ আর পুরানো নিয়মে চলবে না৷''
জার্মানির স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ৷ এরপরই শুরু হবে গণনা৷ বুথফেরত জনমত জরিপে ভোটের ফল কেমন হতে পারে তার একটি চিত্র হয়তো খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে৷ তবেসব কেন্দ্রের ভোট গণনাশেষ হতে সোমবার সকাল হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
টিএম/এসবি
জার্মানির পট পরিবর্তনের নির্বাচন!
আগের জোট সরকার ভেঙ্গে যাওয়ায় জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচন৷ এই নির্বাচনকে জার্মানির রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: Ralf Hirschberger/AFP/Getty Images
নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
আগের তিনদলীয় জোট সরকারের দলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক নীতির বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় জোট থেকে সরে যায় ব্যবসায়ীবান্ধব মুক্ত গণতন্ত্রী দল বা এফডিপি৷ তারা বিরোধী পক্ষে চলে যাওয়ায় সংসদে জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর থাকে না৷ তাই ভেঙ্গে যায় সরকার৷ ফলে সরকারের চার বছর মেয়াদ ভেঙ্গে যাবার আগেই নির্বাচন দিতে হয়৷
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
রাজনৈতিক পট পরিবর্তন
রক্ষণশীল নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের নেতৃত্বে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা (সিডিইউ-সিএসইউ) জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে৷ তারা রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে৷ এই নির্বাচন জার্মানির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ কারণ বিভিন্ন জরিপে ভোটারদের মধ্যে অনেক অসন্তোষ দেখা গেছে৷
ছবি: Axel Schmidt/REUTERS
কী বলছে জরিপগুলো?
আগের জোট সরকারের প্রধান দল সামাজিক গণতন্ত্রী বা এসপিডি এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফলাফল করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ২০ ভাগের নিচে নেমে যেতে পারে মধ্যবামপন্থি দলটির ভোট৷ অন্যদিকে উগ্র ডানপন্থি দল জার্মানির জন্য বিকল্প বা এএফডির ভোট ২০ ভাগে পৌঁছাতে পারে, যা আগের নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণ৷ সাবেক জোট সরকারের আরেক অংশীদার সবুজ দল তাদের ভোট হয়তো ধরে রাখতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: Michele Tantussi/Getty Images
অর্থনৈতিক উদ্বেগ
গত তিন বছর ধরে জার্মান অর্থনীতিতে মন্দাভাব চলছে৷ এর ওপর রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ, জ্বালানি সংকট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরও জটিল করেছে৷ ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস সমালোচনা করে বলেছেন, তিন বছর ধরে মন্দা চলছে, কোম্পানির দেউলিয়াত্ব বেড়েছে এবং বিদেশে মূলধন চলে যাচ্ছে৷ তাই এই নির্বাচনে অর্থনীতি বড় ইস্যু৷
ছবি: Michael Kappeler/REUTERS
অভিবাসন আরেকটি প্রধান ইস্যু
অভিবাসন ইস্যু গেল কয়েক বছর ধরেই একটি বড় ইস্যু হিসেবে দেখা দিয়েছে৷ তারওপর ঠিক নির্বাচনের কয়েকদিন আগে একজন আফগান শরণার্থীর ছুরি হামলার ঘটনা অভিবাসন নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে৷ ম্যার্ৎস অভিবাসন নীতিতে কঠোর পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন৷ এএফডিও একই ধরনের নীতিতে বিশ্বাস করে৷
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP Photo/picture alliance
নতুন জোট সরকার কেমন হবে?
সিডিইউ-সিএসইউ যদি সর্বোচ্চ ভোট পায়ও, তাদেরও জোট গঠন করেই সরকার গঠন করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে নীতিগত পার্থক্য থাকার পরও তারা হয়তো এসপিডি বা সবুজদের সঙ্গে জোট করতে পারে৷
ছবি: Martin Meissner/AP Photo/picture alliance
নতুন জোট সরকার কেমন হবে?
সিডিইউ-সিএসইউ যদি সর্বোচ্চ ভোট পায়ও, তাদেরও জোট গঠন করেই সরকার গঠন করতে হবে৷ সেক্ষেত্রে নীতিগত পার্থক্য থাকার পরও তারা হয়তো এসপিডি বা সবুজদের সঙ্গে জোট করতে পারে৷
ছবি: Oliver Kaelke/DeFodi Images/picture alliance
এএফডির সঙ্গে জোট নয়
উগ্র ডানপন্থি এএফডির সঙ্গে কেউ জোট করতে এখনো রাজি নয়৷ তাই তারা হয়তো সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকবে৷ তবে তাদের নেতা অ্যালিস ভাইডেল বলেছেন, এভাবে তাদের ক্ষমতা থেকে বেশিদিন দূরে রাখা যাবে না৷
ছবি: Ying Tang/NurPhoto/picture alliance
ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ম্যার্ৎস মনে করেন, এএফডি-র উত্থান রোধের এটি শেষ সুযোগগুলোর একটি৷ তিনি প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে বলে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে জার্মানির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট সমাধান করা যায়৷