স্থানীয় সময় রাত নয়টা ১০ মিনিটে প্রকাশিত সাময়িক ফলে দেখা যাচ্ছে সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি বিদায়ী চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ/সিএসইউ দলের চেয়ে ১.২ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছে৷
বিজ্ঞাপন
এই ফলে দেখা যাচ্ছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি (২৫.৭ শতাংশ), খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ/সিএসইউ (২৪.৫ শতাংশ), সবুজ দল (১৪.৩ শতাংশ), মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি (১১.৫ শতাংশ), অভিবাসনবিরোধী এএফডি (১০.৫ শতাংশ), বাম দল (৫ শতাংশ) ও অন্যান্য (৮.৫ শতাংশ) ভোট পেয়েছে৷
এর আগে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রকাশিত বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছিল সিডিইউ/সিএসইউ দল এবং এসপিডি ২৫ শতাংশ করে ভোট পেতে যাচ্ছে৷ সবুজ দল পেতে যাচ্ছে ১৫ শতাংশ ভোট৷ ২০১৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় এসপিডি প্রায় সাড়ে চার শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে৷ সবুজ দলের ভোট বেড়েছে ছয় শতাংশের বেশি৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের ভোট কমেছে প্রায় আট শতাংশ৷
জার্মান নির্বাচন ২০২১: জোট সরকারের সম্ভাবনা ও যত উপায়
২৬ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জার্মানির যে-কোনো দুটি দল জোট বেঁধেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ মতামত জরিপ থেকে তেমন ইঙ্গিতই মিলছে৷ সেক্ষেত্রে তিন দলের অনেক ধরনের জোটেরই সম্ভাবনা রয়েছে৷ ছবিঘরে এক নজরে দেখুন পাঁচ বিকল্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
রংয়ের রহস্য
মধ্য ডানপন্থি দল খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটিক - সিডিইউ এবং তাদের বাভারিয়ান সহযোগী খ্রিস্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন - সিএসইউ-এর প্রতীকী রং কালো৷ মধ্য বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট - এসপিডি ব্যবহার করে লাল রং৷ অন্যদিকে মুক্ত বাজারপন্থি ফ্রি ডেমোক্র্যাটস-এফডিপির রং হলুদ৷ আর পরিবেশবাদী সবুজ দলের রং যে সবুজ তা তো বলাই বাহুল্য৷ জোট বোঝাতে জার্মানির গণমাধ্যমে অনেক সময় নামের বদলে দলগুলোকে তাদের রং দিয়ে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: Fotolia/photocrew
কালো, লাল, সবুজ-কেনিয়া জোট
খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাট এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জোট গত আট বছর ধরে জার্মানির ক্ষমতায়৷ আসন্ন নির্বাচনে যদি এই দুই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তাহলে সবুজ দলকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর জোট হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে তাদের জোটের রংটি কেনিয়ার পতাকার রংয়ের সঙ্গে মিলে৷ এই জোটের চ্যান্সেলর কে হতে পারেন তা এসপিডি ও সিডিইউ/সিএসইউ এর মধ্যে কাদের বেশি আসন থাকবে তার উপর নির্ভর করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
কালো, হলুদ, সবুজ-জ্যামাইকা জোট
আঞ্চলিক ও জাতীয় নির্বাচনে সিডিইউ গত কয়েক বছরে অপেক্ষাকৃত ছোট দল ফ্রি ডেমোক্র্যাট - এফডিপিরর সঙ্গেও জোট বেঁধেছে৷ তার সঙ্গে সবুজ দলকে নিয়ে আরেকটি বিকল্প জোটের সম্ভাবনাও অনেক সিডিইউ নেতার কাছে আকর্ষণীয়৷ এই তিন দলের রং রয়েছে জ্যামাইকার পতাকাতে৷ তবে সবুজ ও এফডিপির মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২০১৭ সালে সরকার গঠনের এমন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কালো, লাল, হলুদ-জার্মানি জোট
মধ্য ডানপন্থি সিডিইউ/সিএসইউ ও মধ্য বামপন্থি এসপিডি এর সঙ্গে মুক্ত বাজারপন্থি এফডিপি যোগ দিলে এমন একটি জোট হতে পারে৷ এই তিন দলের রং জার্মানির পতাকার তিনটি রংয়ে৷ মতপার্থক্য দূর করে এক হতে পারলে তারা অনায়াসেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ব্যবসায়ী নেতা ও উচ্চ আয়ের মানুষের কাছে এটি কাঙ্খিত এক জোট৷
ছবি: imago/blickwinkel/McPhoto/K. Steinkamp
লাল, লাল, সবুজ
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা সবুজ দলের সঙ্গে জোট করেও যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে বামপন্থি দল ডি লিংকে-কে কাছে টানতে পারে৷ সেক্ষেত্রে পার্লামেন্টে যেতে ডি লিংকের অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে৷ কিন্তু এসপিডি ও ডি লিংকের সম্পর্কের অতীত খুব একটা ভালো নয়৷ বিশেষ করে ডি লিংকের কট্টর পররাষ্ট্রনীতি এই সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে পারে৷
ছবি: Imago/C. Ohde
লাল, হলুদ সবুজ-ট্রাফিক লাইট জোট
মুক্ত বাজারের সমর্থক এফডিপি এর আগে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও সবুজ দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী হয়নি৷ তবে এই বছর কোনো সম্ভাবনাই তারা বাতিল করছে না৷ বড় দলগুলো যেভাবেই হোক ক্ষমতায় ফিরতে চাইবে, তা যে রংয়ের জোটই হোক না কেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.Büttner
6 ছবি1 | 6
নেতাদের প্রতিক্রিয়া
এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শলৎস বলেছেন, ভোটাররা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা তাকে ‘পরবর্তী চ্যান্সেলর’ হিসেবে চান৷
সিডিইউ/সিএসইউর চ্যান্সেলর প্রার্থী আরমিন লাশেট বলেছেন, খারাপ ফল সত্ত্বেও একটি নতুন সরকার গঠনের জন্য ‘আমরা যতটুকু পারি’ চেষ্টা করে যাব৷ ‘‘নির্বাচনের এমন ফলে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না,’’ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি৷ লাশেট বলেন, ‘‘আমরা রক্ষণশীলদের নেতৃত্বে একটি সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাব কারণ জার্মানদের এখন এমন জোট প্রয়োজন যেটা আমাদের দেশের আধুনিকায়নের জন্য দরকার৷’’
সবুজ দলের চ্যান্সেলর প্রার্থী আনালেনা বেয়ারবক বলেন গত নির্বাচনের চেয়ে ভোট বাড়লেও তার দল প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পায়নি৷ ‘‘আমরা আরও চেয়েছিলাম৷ আমরা তা পাইনি৷ এর একটা কারণ প্রচারণার শুরুতে আমরা কিছু ভুল করেছিলাম- আমারও ভুল ছিল,’’ সমর্থকদের বলেন তিনি৷
সারাদিনের চিত্র
স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়৷ চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত৷ আট কোটি মানুষের এই দেশে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি৷
ভোটাররা দু'টি করে ভোট দিয়েছেন৷ একটি ভোট সরাসরি প্রার্থী নির্বাচনের, অপরটি পছন্দের দলকে৷ দ্বিতীয় তালিকায় দলীয় সমর্থনের অনুপাতের ভিত্তিতে সংসদে অর্ধেক আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়৷ তবে কে চ্যান্সেলর হতে যাচ্ছেন তা আজই নির্ধারিত হবে না৷ পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা চ্যান্সেলর নির্বাচিত করবেন৷
২৯৯টি সংসদীয় এলাকায় সরাসরি নির্বাচন হয়েছে৷ অন্য আসনগুলো দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত অনুযায়ী মীমাংসিত হয়৷ নিয়ম অনুযায়ী, দলগুলো তাদের ভোটপ্রাপ্তির সংখ্যাতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেও মনোনীত প্রার্থীদের পার্লামেন্টে পাঠাতে পারে৷ কোনো দল ৫ শতাংশের কম ভোট পেলে পার্লামেন্টে যাওয়ার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে৷
এবারের নির্বাচনে ৪৭টি দল ৬ হাজার ২১১ জন প্রার্থী দিয়েছে৷ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ছয় হাজার৷