জার্মান পত্রপত্রিকায় ‘দিদি’র জয়
২২ মে ২০১১মমতার জয় এবং বামফ্রন্টের শোচনীয় পরাজয়ের ওপর আলোকপাত করেছে বার্লিনের টাগেসাইটুং - টাৎস - দুটি লেখায়৷ তৃণমূল নেত্রী যে সাধারণ মানুষের কাছে ‘দিদি'র আসনে অধিষ্ঠিত সেকথা উল্লেখ করে পত্রিকা লিখছে:
‘‘বহু বছর ধরে যা অসম্ভব মনে হয়েছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় একাই তা সম্ভব করলেন৷ ৫৬ বছর বয়স্কা এই রাজনীতিক এবার সিপিআইএম'কে ৩৪ বছর পর তাদের শক্ত ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরিয়ে দিলেন৷ অথচ ‘দিদি'র কোন প্রভাবশালী পরিবারের ছাপ নেই, নেই ধনসম্পদ, না আছে পাকাপোক্ত কোন সংগঠন৷ শিক্ষক তনয়া মমতা বিয়ে করেননি৷ মায়ের সঙ্গে থাকেন কলকাতায় অত্যন্ত সাধারণভাবে৷ অগ্নিবর্ষী বক্তা তিনি, ধমনীতে যাঁর মানুষকে টেনে আনার শক্তি৷ ক্ষমতার বোধটাও যেন তাঁর সহজাত৷''
কেন্দ্রের রেলমন্ত্রী হিসেবে অবশ্য মমতা তেমন কিছু করতে পারেননি বলে মনে করে দৈনিক টাগেসসাইটুং৷ পত্রিকা লিখছে: ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শিল্প আর কৃষি খাতকে একই সঙ্গে জোরদার করার গালভরা প্রতিশ্রুতি তিনি কীভাবে রক্ষা করবেন তা স্পষ্ট নয়৷ তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ উদ্ধত কমিউনিস্টদের সহ্য করে যাওয়ার চাইতে বরং নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ‘‘দিদি''কে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিতেও আগ্রহী৷''
সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহর থেকে প্রকাশিত ‘নয় স্যুরশার সাইটুং' পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের নির্বাচনী বিপর্যয়কে ভারতের বামদের জন্য এক বড় আঘাত বলেই মনে করে৷ পত্রিকা লিখছে: ‘‘বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তাঁর পার্টির অন্যান্য বহু শীর্ষ নেতা তাঁদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় পরাস্ত হয়েছেন৷ বুদ্ধদেব বিধানসভায় বিরোধী নেতার আসনেও বসতে পারবেননা৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বচ্ছ এক সরকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ তবে কিনা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক কর্মজীবনে রাস্তায় জনবিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েই দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি৷ ২০০৯ সাল থেকে কেন্দ্রের মন্ত্রী হিসেবে তিনি অবশ্য তেমন দূরদৃষ্টির পরিচয় দেননি৷''
‘ভারতের লাল দুর্গ এবার সবুজ' - এই শিরোনাম ‘নয়েস ডয়েচলান্ড' পত্রিকার প্রতিবেদনের৷ পত্রিকা মনে করে, মমতার ‘মা, মাটি, মানুষ' ও পরিবর্তনের শ্লোগান ভোটারদের মনে প্রতীতি জাগাতে পেরেছে৷ বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বাম শিবিরের এই জার্মান দৈনিক লিখছে: ‘‘সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় থেকে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব হয়ে উঠেছিল আত্মগর্বী৷ এমন সব সিদ্ধান্ত তাঁরা নেন যা তাঁদের তৃণমূল পর্যায়ের সমর্থকদের দুর্বল করে ফেলে৷...সিপিআই নেতা এ.বি.বর্ধন যেমন ‘আমজনতা থেকে বামফ্রন্টের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া'টাকেই তার পরাজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন৷''
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন