অর্থাৎ ‘গুলি চালিও না’৷ সেটাই হলো একটি গুলি চালানোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচির শীর্ষক, জনবহুল উত্তর রাইন পশ্চিম ফালিয়া রাজ্যে৷ অবশ্য জার্মান পুলিশ অফিসাররা পারতপক্ষে গুলি চালান না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি ঠিক যার উল্টো৷
বিজ্ঞাপন
ফার্গুসন-এ মাইকেল ব্রাউন হত্যার পর অ্যামেরিকা তোলপাড়৷ শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ বিভাজনের ক্ষতটা থেকে এবার যেন শুধু রক্তক্ষরণ নয়, বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে৷ কিন্তু মার্কিন মুলুকে ব্যক্তিস্বাধীনতার খুঁটি বলে যে বস্তুটি পরিগণ্য হয়, সেটি হলো নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার৷ সারা দেশে সম্ভবত ৪০ কোটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে৷ ফলে অ্যামেরিকায় গুলি চলেই থাকে, যেমন জনসাধারণ, তেমনই পুলিশের দিক থেকে: ফার্গুসন-এর ঘটনা যার সর্বাধুনিক নিদর্শন৷
কী ঘটেছে ফার্গুসন-এ? ১৮ বছরের নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ তরুণটির দিকে কেন গুলি চালালেন সংশ্লিষ্ট শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারটি? জার্মানিতে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে – পুলিশের তরফ থেকে? যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বেশ কয়েক'শো মানুষ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান – ধরে নেওয়া যাক তাঁদের অধিকাংশই অপরাধী, কিন্তু তা সত্ত্বেও একটা মানুষের প্রাণ তো একটা মানুষের প্রাণই? জার্মানিতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানোর পরিসংখ্যান শুনুন: গত দু'বছরে আটজন; ১৯৯৮ সাল যাবৎ ১০৯ জন৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Soric
8 ছবি1 | 8
জার্মানিতে পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা এত কম হওয়ার একটা কারণ: এ দেশে অপরাধী কিংবা সাধারণ মানুষদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার সম্ভাবনা কম৷ তা সত্ত্বেও বলা যায়, সত্তরের দশক যাবৎ জার্মান পুলিশের মধ্যে প্রথমেই কিংবা সামান্য প্ররোচনাতেই গুলি না চালানোর চেতনা ও মনোবৃত্তি ক্রমেই আরো গভীরভাবে দানা বেঁধেছে – এবং সেটা রাজনীতি ও পুলিশ বিভাগের ওপরওয়ালাদের সচেতন সিদ্ধান্ত হিসেবেই৷
উত্তর রাইন পশ্চিম ফালিয়া রাজ্যের পুলিশ বিভাগের রংরুটরা তাই তাদের গুলি চালানোর প্রশিক্ষণে শেখে: গুলি না চালাতে! তাদের মনে রাখতে বলা হয়, আগ্নেয়াস্ত্র বস্তুটি কোনো খেলনা নয়, বরং একটি প্রাণঘাতী অস্ত্র৷ পুলিশ রেঞ্জে টার্গেট প্র্যাকটিসের পরই শুরু হয় চাপ ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার ট্রেনিং – এমনকি রোল প্লেয়িং-ও বাদ যায় না৷ তা সত্ত্বেও যে দুর্বলতাটা থেকে যায়, সেটা হলো মানুষ চিনতে ভুল করা – যে মানসিকভাবে অসুস্থ, তাকে অপরাধী বলে মনে করা৷
গত বছর বার্লিনে একজন পুলিশ অফিসার একজন উলঙ্গ পুরুষকে গুলি করে মারেন, যে ছুরি হাতে একটি ফোয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল৷ পরে জানা যায়, সে মানসিক রোগে ভুগছিল৷ বার্লিনের একটি টিভি চ্যানেলের রিপোর্ট অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরে যতজন পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন মানসিক রোগগ্রস্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের কাছেও সে তথ্য অজ্ঞাত ছিল না৷