জার্মানি জানিয়েছে, প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে। এর ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে অনেকটাই সুবিধা পাবে।
বিজ্ঞাপন
জার্মান প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সাহায্যে বহু কিলোমিটার দূরের মিসাইল ট্র্যাক করা যায়। শত্রুর ছোঁড়া মিসাইল ধ্বংস করা যায়। আবার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে মিসাইল হামলা চালানো যায়। শত্রুর বিমান এবং ড্রোন ধ্বংস করা যায়। ইউক্রেন বহুদিন ধরে এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের জন্য আবেদন জানিয়ে রেখেছিল।
অ্যামেরিকার তৈরি এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম জার্মানি ব্যবহার করে। জার্মানি এবং অ্যামেরিকা দুই দেশই একটি করে প্যাট্রিয়ট ইউক্রেনকে দেয়া হবে বলে জানিয়েছিল। বুধবার জার্মানি জানিয়েছে, তাদের প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইউক্রেনের কাছে পৌঁছে গেছে।
বিধ্বস্ত ইউক্রেনে যেমন কাটছে জীবন
কবে, কিভাবে শেষ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জানা নেই কারো৷ অনেকেই আক্রান্ত এলাকা থেকে সরে গিয়েছেন৷ অনেকে ছেড়েছেন ইউক্রেন৷ কিন্তু অনেকেই বিধ্বস্ত ইউক্রেনেই মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
ধ্বংসপ্রাপ্ত দালান
গালিনা স্লেপকোর বয়স ৬৪ বছর৷ এই বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করাটাও তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ রাশিয়ার দখল করে নেয়া দনেৎস্ক অঞ্চলে তার এই বাড়িটির এক পাশের দেয়াল রাশিয়ার মর্টার শেলের আঘাতে ধসে গেছে৷ এই অবস্থাতেই তাকে কাটাতে হয়েছে শীতকাল৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
পুরো ইউক্রেন যুদ্ধটাই যেন থেমে আছে বাখমুতে৷ কৌশলগতভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মর্যাদার লড়াইয়ের কারণে এই এলাকা দখলে নিতে চায় দুই পক্ষই৷ বাখমুতের চাসিভ ইয়ার গ্রামে এখনও হাতেগোণা কয়েকজন বাসিন্দা রয়ে গেছেন জীবনের ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই৷ তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ
যেকোনো সময় পালটে যেতে পারে পরিস্থিতি৷ দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতে এখন চলছে চূড়ান্ত লড়াই৷ দুই পক্ষের সেনারাই দখল-পুনর্দখলের চেষ্টায় রত৷ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের সুপারমার্কেটে এসে পড়েছে একটি মর্টার শেল৷ আগে এক হামলায় আহত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে কান্না করতে৷ বাখমুতে এখন প্রতিটি মুহূর্তই জীবন-মরণের লড়াই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
সরবরাহ সংকট
যুদ্ধের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ও জলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সেবাও এখন বিলাসিতা৷ হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই প্রয়োজন মিটিয়ে কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করছেন বাসিন্দারা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিধ্বস্ত সামরিক বিমান থেকে ধাতব দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছেন দুজন৷ সেটিকেই কোনো কাজে লাগানোর চিন্তা রয়েছে তাদের৷
ছবি: OLEKSANDR KLYMENKO/REUTERS
একটি রক্তাক্ত চশমা
এই ছবিটিই অনেক কথা বলে দেয়৷ কস্তিয়ানতিনিভকা নামের একটি আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় মারা যান অনেকেই৷ কেউ ছিলেন বাসায়, কেউ বাজারে, কেউ রাস্তায়৷ হয়তো একজন বাসিন্দার রক্তমাখা চশমা এখনও পড়ে রয়েছে মাঠের পাশে৷ পৃথিবীকে আর দেখা হবে না তার৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
জ্বালানি সংকট
ঠিক পেছনেই একটি গাড়ি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ এখন বাখমুতের রাস্তায় গাড়ি চালানো অনেক কারণেই আঁতকে ওঠার কারণ৷ একে তো জ্বালানি জোগাড় করাই কষ্ট ও ব্যয়সাধ্য৷ অন্যদিকে, যেকোনো সময় হতে পারে মর্টার বা বিমান হামলা৷ ফলে রাস্তায় বের হয়ে কেউই নিশ্চিত টার্গেটে পরিণত হতে চান না৷ ফলে দোকানে যেতেও বেশিরভাগের ভরসাই নিজের পা, বড়জোর বাইসাইকেল৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
ত্রাণ সহায়তা
প্রায় পুরো অঞ্চলই ধ্বংসপ্রায়৷ ফলে বাখমুতের সকল অফিস-আদালত, দোকানপাট প্রায় বন্ধ৷ যেসব গুটিকয়েক দোকান খোলা রয়েছে, অনেকেই সেখান থেকে জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই৷ ফলে যেসব বাসিন্দা এখনও বাখমুতে রয়ে গেছেন তাদের অনেকের নির্ভর করতে হচ্ছে ত্রাণের ওপর৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ঝুঁকি নিয়েই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
জীবন-মৃত্যুর দোলাচল
এই ছবিটি খারকিভের৷ রাশিয়া দখলে নেয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা আবার এই এলাকা পুনর্দখলে নিয়েছে৷ কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি দখলে মরিয়া রুশবাহিনী৷ ফলে এখনও প্রায়ই বোমাবর্ষণ চলছে এখানে৷ রুশ মিসাইলে ধ্বংস হওয়া একটি বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী৷ মনে ভয়, যেকোনো মুহূর্তে আবারও হতে পারে নির্বিচার হামলা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
একসঙ্গেই থাকা, একসঙ্গেই কাজ৷ কদিন আগেও বন্ধুর চেয়েও বেশি ছিলেন ইভান সোরোকিনের সহকর্মী৷ কর্মরত অবস্থাতেই বিমান হামলায় মারা যান এই গাড়ি মেরামতকর্মী৷ বন্ধুকে শেষ বিদায় জানানোর আগে তার মরদেহ আনা হয়েছে তার কাজের জায়গাতেই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
9 ছবি1 | 9
ইউক্রেনও প্রাপ্তি স্বীকার করেছে। ইউক্রেনের সরকারের তরফে বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ''দেশের আকাশ এখন অনেকটাই বিপন্মুক্ত। জার্মান প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম পৌঁছে গেছে।'' বস্তুত, এর আগে কীভাবে এই সিস্টেম চালাতে হবে, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের সেনাকে। জার্মানি নিজের দেশেই এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে। অ্যামেরিকা ন্যাটোর একটি দেশে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে, প্যাট্রিয়টের যন্ত্রাংশ এবং মিসাইল দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে। জার্মানি, অ্যামেরিকা এবং নেদারল্যান্ডস তিনটি দেশকেই ধন্যবাদ জানিয়েছে ইউক্রেন।
পর্তুগালে শলৎস
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস বুধবার পর্তুগালের রাজধানীতে পৌঁছেছেন। সেখানে ওই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। পর্তুগাল এবং জার্মানি একত্রে ইউক্রেনকে আরো সাহায্য দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। বস্তুত, এর আগেলিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দিয়েছিল পর্তুগাল এবং জার্মানি। সেই ট্যাঙ্ক যুদ্ধে ইউক্রেনকে যথেষ্ট সাহায্য করছে বলেই বিশেষজ্ঞদের দাবি।
জার্মানি বলেছে, আগামী আরো বেশ কিছুদিন ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শেষদিন পর্যন্ত জার্মানি ইউক্রেনকে সাহায্য করে যাবে।