কুর্দি যোদ্ধাদের উপর তুরস্কের সামরিক হামলার বিরুদ্ধে পিটিশন স্বাক্ষর করায় জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কি শিক্ষাবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করছে তুরস্ক৷
বিজ্ঞাপন
অন্তত ১০০ তুর্কি শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ গঠন করছে সেদেশের আইনজীবীরা৷ রোববার জার্মান গণমাধ্যম এনডিআর, ভিডিআর ও সুডডয়েচার সাইটুং-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে অনেক বুদ্ধিজীবী এরই মধ্যে লিগ্যাল নোটিশও পেয়েছেন৷
২০১৬ সালের শুরুর দিকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পি কে কে) যোদ্ধাদের দমন করতে চালানো সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এক পিটিশনে স্বাক্ষর করেন৷ ১,১২৮ জন তুর্কি ও আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবী৷ তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাংশে দু'বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ওই অভিযানে কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক, পিকেকে যোদ্ধা ও তুর্কি নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়, ধ্বংস হয় কয়েকটি শহর, বাস্তুচ্যূত হন হাজার হাজার মানুষ৷ ‘অ্যাকাডেমিকস ফর পিস' হিসেবে পরিচিত এ দলের সদস্যরা পিটিশনে পরিকল্পিত এ হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তুরস্কের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লাগাতার হামলায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ সরকারের প্রতি পিকেকে'র সাথে আলোচনা শুরুর আহ্বানও জানান তাঁরা৷
অন্যদিকে, তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান এ পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন৷ এরই মধ্যে পিটিশনে স্বাক্ষর করায় তুরস্কে বিচারাধীন রয়েছেন অনেক শিক্ষাবিদ৷ অন্তত কয়েকশ' শিক্ষাবিদ চাকরি হারিয়েছেন৷ জার্মানিতে পালিয়ে এসেছেন প্রায় ১০০ জন বুদ্ধিজীবী৷ সরাসরি সহিংসতায় না জড়ালেও পিকেকে'র সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের বিরুদ্ধে৷
এর্দোয়ান সরকার মনে করে, তুরস্ককে ‘বেআইনি, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা' এসব শিক্ষাবিদের উদ্দেশ্য ছিল৷ সন্ত্রাসে মদত দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তুরস্কে সাড়ে সাত বছরের কারাবাসের বিধান রয়েছে৷
যদিও জার্মানিতে বসবাস করায় এসব শিক্ষাবিদদের আপাতত কারাবাসের সম্ভাবনা নেই, তবে দেশে ফিরলেই শাস্তি ভোগ করতে হবে তাঁদের৷ তবে তুরস্কের এ পদক্ষেপে জার্মান-তুরস্ক সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে৷ এ বছরের প্রথম ৯ মাসে পাঁচ হাজারেরও বেশি তুর্কি জার্মানিতে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন, যার মধ্যে অনেকেই শিক্ষাবিদ, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও সেনা কর্মকর্তা৷
যুদ্ধে নারী, নারী যোদ্ধা
২০১৪ সালের গ্রীষ্মে ইসলামিক স্টেট উত্তর ইরাকের ইয়াজিদি এলাকাগুলি দখল করে৷ হাজার হাজার ইয়াজিদি মহিলা ও কিশোরীকে ধরে নিয়ে গিয়ে দাসী হিসেবে রাখা হয় ও ধর্ষণ করা হয়৷ আজ সেই ইয়াজিদি নারীরাই সন্ত্রাসবাদিদের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শত্রুর খোঁজ
শত্রু বাইরে কোথাও - কুর্দি নারী যোদ্ধা হাসেবা নৌজাদ ইরাকের মোসুল শহরের কাছে চোখে দুরবিন লাগিয়ে ‘ফ্রন্ট লাইন’ পরখ করে দেখছেন৷ কুর্দ এলাকা ও আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার মধ্যে সীমারেখা হলো এই ফ্রন্ট৷ কুর্দিরা ইরাকি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় ক্রমেই আরো এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু হটছে ইসলামিক স্টেট৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
গুপ্তপ্রতিরোধের ভ্যানগার্ড
শত্রু নজরে পড়েছে, এবার তাদের দিকে গুলি চালানো হবে৷ হাসেবা নৌজাদ দেখাচ্ছেন কোনদিকে; আসেমা দাহির (ডান দিক থেকে তৃতীয়) ও অন্যান্য ইয়াজিদি নারী যোদ্ধারা নিশানা ঠিক করছেন৷ শুধুমাত্র বিমান থেকে আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লাভ নেই৷ তাই ইয়াজিদি আর কুর্দ মহিলাদের নিয়ে রণক্ষেত্রে এই ভ্যানগার্ড তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
সুন্দর দেখানোর জন্য নয়
বন্দুক নিয়ে ঠিকমতো নিশানা করার জন্য মাথার চুল কপালে বা চোখে পড়লে চলবে না৷ তাই চুল টান টান করে বেঁধে নেন হাসেবা নৌজাদ, ‘মিলিটারি লুক’ ফ্যাশনের জন্য নয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
লাকি চার্ম
যুদ্ধের ফাঁকে আসেমা দাহির৷ হাতে যে লাল রঙের টেডি বেয়ারটি রয়েছে, সেটা হয়তো অতীতের সেই সুন্দর, শান্তিপূর্ণ দিনগুলির প্রতীক, যখন আইএস ইয়াজিদিদের স্বদেশকে দখল করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে সেই শান্তি শেষ হয়ে যায়, শুরু হয় আইএস-এর সন্ত্রাস৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
পালানো ছাড়া পথ ছিল না
শিশু, মহিলা, বৃদ্ধ, আইএস কাউকে ক্ষমা করেনি৷ ২০১৪ সালের গ্রীষ্মে লক্ষ লক্ষ ইয়াজিদি বাস্তু ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের পিছনে আইএস৷ এক বৃদ্ধ ও দুই তরুণীর এই ছবিটি যেন বিশ্বের সামনে ইয়াজিদিদের যন্ত্রণাকে তুলে ধরে৷
ছবি: Reuters
বিভীষিকা
এই ইয়াজিদি কিশোরী ক্যামেরার সামনে তার মুখ দেখাতে চায় না৷ ২০১৪ সালে এই ১৫ বছর বয়সের মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গিয়ে একজন আইএস যোদ্ধার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ তার দু’মাস পরে মেয়েটি পালাতে সমর্থ হয়৷ আজ সে আবার নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাস করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ধ্বংসস্তূপ
উত্তর সিরিয়ার কোবানি শহরটি তুর্কি সীমান্তের অদূরে৷ আইএস যোদ্ধারা মাসের পর মাস শহরটি অবরুদ্ধ করে রেখেছিল৷ কুর্দিরা সব কিছুর পরও প্রতিরোধ চালিয়ে যায় ও শেষমেশ মার্কিন বিমানবাহিনীর সাহায্যে সন্ত্রাসবাদীদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়৷ পড়ে থাকে একটি শহর নয়, যেন শহরের ধ্বংসস্তূপ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Akgul
সবে মিলে করি কাজ
যারা আইএস-এর আদর্শে বিশ্বাস করে না, আইএস-এর দৃষ্টিতে তারা সবাই শত্রু৷ বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করাই হলো আইএস-এর উদ্দেশ্য৷ সে উদ্দেশ্য সর্বক্ষেত্রে সফল হয় না৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েদের মধ্যে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, এক অর্থে তা আইএস-এর প্রতীকী পরাজয়৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
স্বাধীনতার সড়ক
শুধু অস্ত্র দিয়ে আইএস-কে হারানো যাবে না৷ সিরিয়া আর ইরাকের অনেক এলাকা এখনও আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে৷ কুর্দি আর ইয়াজিদি মেয়েরাও তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবে৷ তাদের প্রতিরোধের আর একটি শিক্ষা হলো, মেয়েরা পুরুষের দাস নয় - সন্ত্রাসবাদিদের যা কাজে লাগার কথা!