1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান প্রবাসে চুমু সংক্রান্ত একটি মনোদ্বন্দ্ব

হাবিব ইমরান
৩০ জুন ২০১৮

জার্মানি আমার দেশের বাইরে দেখা প্রথম কোনও দেশ৷ তিনমাসের জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে কাজ করতে আসা কর্মী প্রশিক্ষণ অংশীদারিত্ব চুক্তির বদৌলতে৷ এই তিন মাস আমার জীবন কেটেছে অন্যরকমভাবে৷

ছবি: Reuters/T. Schwarz

জার্মানির বনে থাকা তিনমাসে ছোট ছোট সংস্কৃতিগত অমিল চিন্তার জগতকে বারবার তোলপাড় করেছে৷ বিদেশে প্রথমবার স্বল্পসময়ের জন্য এলে তুলনার বিষয়টি চলেই আসে৷ পরে ঠিক হয়ে যায় হয়তো৷ যা দেখি তাতেই কমবেশি বিস্মিত হই৷ হয়তো দেশে থাকতে একই ব্যাপারগুলো জানতাম, কিন্তু সামনাসামনি দেখে টাশকি খাওয়ার উপক্রম হয়৷

জার্মানিতে এসে প্রথম যে ধাক্কাটা খাই সেটি হলো- কাগজপত্রের ধাক্কা৷ 'মেশিন-জাতি' হিসেবে পরিচিত জার্মানরা কিন্তু ব্যাপকভাবে কাগজপত্রে বিশ্বাসী৷ যেখানে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এখন সবকিছু ডিজিটাল করার তোড়জোড়, সেখানে জার্মানে এখনো লেটারবক্স আছে৷ সব ধরনের অফিসিয়াল কাজে আগে সেই লেটারবক্সে চিঠি আসবে৷ ই-মেইল সেখানে অনেক পরের হিসেব, জার্মানে ই-মেইলের গুরুত্ব কম৷ হাতে-কাগজে-কলমে এদের অগাধ বিশ্বাস৷ যেখানে আমাদের দেশের সবাই যাতায়াতের সময় মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেখানে জার্মানদের দেখি ঢাউস ঢাউস বই পড়তে পড়তে ট্রামে বা ট্রেনে চলাচল করছেন৷

জার্মানিতে এসেই এক সাবেক সহকর্মী ও বড়ভাইয়ের বাসায় উঠলাম৷ তখনই জানলাম এখানে বাড়িভাড়া করে থাকতে হলেও সরকারের নথিভুক্ত হতে হয়৷ ‘স্টাডহাউস' নামে প্রত্যেক শহরেই একটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের জায়গা আছে, যেখানে সকল ভাড়াটেকে যেতে হয়৷ সাথে নিজের বাড়িওয়ালার সাথে চুক্তিপত্র নিয়ে হাজির হয়ে নিবন্ধন করতে হয়৷ বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ছাড়া জার্মানিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে অন্য কোনও কাজই হয় না৷ তার মানে বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া বাড়াচ্ছে কি না, কোন কোন ভাড়াটে থাকছে, তার পুরো নথি ‘স্টাডহাউস' এ থাকে৷ ইচ্ছে হলেই ভাড়া বাড়ালাম এমনটা হওয়া সম্ভব না৷ করের কথাও তো মাথায় রাখতে হয়৷

তো সেই ‘স্টাডহাউসে' এ রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার শুনলাম৷ আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি কোন ধর্মের, বিশেষ করে খ্রিস্টান কি না! আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে সাথে থাকা সেই বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম- খ্রিস্টান হলে কী হবে ভাই, ট্যাক্স মওকুফ? যেহেতু এটা খ্রিস্টানপ্রধান দেশ, ফলে তারা সুবিধা পাবে, এমনটাই ভাবছিলাম৷

কিন্তু জানলাম এখানে বরং খ্রিস্টান হলেই বাড়তি কর নেওয়া হয়৷ কেননা সরকার আপনাকে যে ধর্মীয় সুবিধা দিচ্ছে, ঈশ্বরের আরাধনা করার জন্য গির্জায় ভর্তুকি দিচ্ছে, কবরস্থানে ভর্তুকি দিচ্ছে, আরও কতো কী করছে... এসব কিছুর খরচ তো আপনাকেই বহন করতে হবে! আমি ভাবলাম আমাদের দেশে যদি এমন কর নেওয়া হত বা ন্যূনতম উদ্যোগ নেয়া হত, তাহলে হয়তো ভয়াবহ আন্দোলন হয়ে যেত! আচ্ছা ধর্ম করও নিশ্চয় মানুষ ফাঁকি দিত? কিংবা কেউ কেউ পরিচয় গোপন করত?

হাবিব ইমরান, ডয়চে ভেলেছবি: DW/S. Burman

মাসখানেক নানা ধরনের ছোটখাট অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জার্মানিতে পার করলাম৷ জার্মানদের সবচেয়ে ভাল লাগে রাস্তা পার হওয়ার নিয়ম কানুন৷ সবাই যেন অতিরিক্ত ভদ্র৷ এই কয়মাসে একবারও গাড়ির হর্ন দিতে দেখি নাই৷ এসব ভাবতে ভাবতে বাসার পাশের রাইন তীরে বসে এক রাতে বসে নদী দেখছিলাম৷

হঠাৎ পাশের বেঞ্চিতে চুমুর আওয়াজ পেলাম৷ অন্ধকারে আবছাভাবে দেখলাম মেয়েটা ছেলেটার কোলের উপর বসে আছে৷ আমার দিকে পিঠ দিয়ে বসা৷ এদেশে এটা খুব সাধারণ ব্যাপার৷ দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গেছে৷ খুব অদ্ভুত ব্যাপার হলো, প্রথম যখন আসি তখনও ছেলে-মেয়ের এই চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা তেমন চোখে লাগেনি৷ সবসময়ই মনে হয়েছে খু্ব স্বাভাবিক৷

সে যাইহোক অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকার পর একসময় উঠে বাড়ি যাবো বলে ঠিক করলাম৷ ঠিক তখনই চোখে পরলো অন্ধকারে যাদেরকে চুমু খেতে দেখেছিলাম তারা দুজনই আসলে পুরুষ৷ যাকে মেয়ে মনে করেছিলাম সে আসলে ছেলে৷ এরা তাহলে সমকামী বা সমপ্রেমী !

সমকামী বা প্রেমীদের ব্যাপারে আমার কোনও সংস্কার নেই৷ দেশে থাকতে তাদের অধিকারের পক্ষেই লড়াই করার বুলি ছেড়েছি৷ কিন্তু প্রথমবারের মতো সম-প্রেমের দৃশ্য এক ঝলক দেখে চমকে গেলাম৷ জার্মানিতে থাকা তিনমাসে এ দৃশ্যটি বারবার এসেছে স্মৃতিতে৷ নিজের সাথে নিজের এ লড়াই খুব অদ্ভুত ছিল৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ