জার্মানি আমার দেশের বাইরে দেখা প্রথম কোনও দেশ৷ তিনমাসের জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে কাজ করতে আসা কর্মী প্রশিক্ষণ অংশীদারিত্ব চুক্তির বদৌলতে৷ এই তিন মাস আমার জীবন কেটেছে অন্যরকমভাবে৷
ছবি: Reuters/T. Schwarz
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বনে থাকা তিনমাসে ছোট ছোট সংস্কৃতিগত অমিল চিন্তার জগতকে বারবার তোলপাড় করেছে৷ বিদেশে প্রথমবার স্বল্পসময়ের জন্য এলে তুলনার বিষয়টি চলেই আসে৷ পরে ঠিক হয়ে যায় হয়তো৷ যা দেখি তাতেই কমবেশি বিস্মিত হই৷ হয়তো দেশে থাকতে একই ব্যাপারগুলো জানতাম, কিন্তু সামনাসামনি দেখে টাশকি খাওয়ার উপক্রম হয়৷
জার্মানিতে এসে প্রথম যে ধাক্কাটা খাই সেটি হলো- কাগজপত্রের ধাক্কা৷ 'মেশিন-জাতি' হিসেবে পরিচিত জার্মানরা কিন্তু ব্যাপকভাবে কাগজপত্রে বিশ্বাসী৷ যেখানে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এখন সবকিছু ডিজিটাল করার তোড়জোড়, সেখানে জার্মানে এখনো লেটারবক্স আছে৷ সব ধরনের অফিসিয়াল কাজে আগে সেই লেটারবক্সে চিঠি আসবে৷ ই-মেইল সেখানে অনেক পরের হিসেব, জার্মানে ই-মেইলের গুরুত্ব কম৷ হাতে-কাগজে-কলমে এদের অগাধ বিশ্বাস৷ যেখানে আমাদের দেশের সবাই যাতায়াতের সময় মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেখানে জার্মানদের দেখি ঢাউস ঢাউস বই পড়তে পড়তে ট্রামে বা ট্রেনে চলাচল করছেন৷
প্রবাসের বাঙালিরা
কেমন আছেন প্রবাসে বাঙালিরা? কেমন লাগে প্রবাসে স্বজন ছাড়া থাকতে? দেশ নিয়ে কী বা তাঁদের চিন্তা? ডয়চে ভেলের সাথে দেখে আসা যাক বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙালির জীবনযাত্রা, তাঁদের নিজেদের জবানিতে৷
ছবি: privat
আসাদুজ্জামান খান, চীন
প্রায় এক দশক হতে চলল, পথে-প্রবাসে৷ চীনে এসেছিলাম উচ্চশিক্ষার জন্যে৷ এরপর কর্মজীবনে প্রথমে চীন, তারপর ম্যাকাও, ভিয়েতনাম ঘুরে আবার চীনে৷ বর্তমানে কাজ করছি সিচুয়ান প্রদেশের লুঝৌ শহরের সাউথওয়েস্ট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে, ‘রিসার্চ প্রফেসর’ হিসেবে৷ সুবিশাল এবং বৈচিত্রময় চীনে কাটানো এতদিনের অভিজ্ঞতা জীবনের বিশেষ প্রাপ্তি বলেই আমি মনে করি৷ এখানকার মানুষের সততা, কর্মস্পৃহা আমাকে মুগ্ধ করেছে বরাবর৷
ছবি: privat
রফিক আহমদ খান, মালয়েশিয়া
বছরের পর বছর ভিসা-পাসপোর্ট ও আইনি জটিলতা এবং বহু প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই ১৫ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় যাপন করছি প্রবাসজীবন৷ এই প্রবাসেও লেখালেখি করি প্রাণের টানে৷ লিখি মালয়েশিয়ায় প্রবাসী প্রায় দশ লাখ বাংলাদেশির সুখ-দুঃখের কথা৷ তুলে ধরতে চেষ্টা করি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সোয়া কোটি প্রবাসীর মনের কথা৷
ছবি: privat
শিপু ও শারমিন, লন্ডন
প্রবাস জীবনটা আমাদের কাছে বেশ ক্যালকুলেটিভ৷ কারণ প্রতিনিয়ত অনিশ্চিয়তা ঘিরে রয়েছে চারদিকে, বিশেষ করে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য৷ পরিবার থেকে দূরে যান্ত্রিক জীবন হলেও কিছু সুবিধার জন্য কষ্টগুলো এক নিমিষে দূর হয়ে যায়৷ প্রবাস শিখিয়েছে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হতে৷ বিপুল নাগরিক সুবিধাও রয়েছে৷ সে কারণেই আমাদের কাছে মনে হয় প্রবাস জীবন হচ্ছে প্রচণ্ড শীতের মাঝে এক টুকরো রোদের হাসি...!
ছবি: privat
জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, আরব আমিরাত
দু’দশক ধরে আছি আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে৷ ২০১২ সালে দেশটি বাংলাদেশিদের জন্য পযর্টন ভিসা বাদে সব ধরনের ভিসা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা ট্রান্সফার বন্ধ করে দেয়ায় আমরা বেশ বিপদে রয়েছি৷ চাই এ অবস্থার অবসান৷ এখানে থেকে শত সংকটের মাঝেও ভালো লাগে তখন, যখন দেশে রেমিটেন্স পাঠাই৷
ছবি: privat
আরিফুর রহমান, সৌদি আরব
পারিবারিক স্বপ্নপূরণের আশায় ২০০৮ সালে সৌদি আরব এসেছি৷ কম্পিউটারের কাজ জানা থাকলেও ভিসায় প্রভিশন ইলেকট্রিশিয়ান হওয়ায় অন্য কাজ করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে৷ অনেক সময় রিয়াদের এক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও বেতন পাইনি৷ কপিল আকামা নতুন করে না দেয়ায় অবৈধ হতে হয়েছে৷ না খেয়ে সৌদির মরুভূমির রাস্তায় দিনাতিপাত করতে হয়েছে৷ এখন একটি ট্র্যাভেল কোম্পানিতে কাজ করছি৷ দেশ-মা-মাটিকে ভালোবাসি৷ মনে পরে সবকিছু...৷
ছবি: privat
মোয়াজ্জেম হোসেন তারা, প্যারিস
ঢাকার একটা কলেজে শিক্ষকতা করতাম৷ সমাজের পিছিয়ে পড়াদের আলোকিত করার স্বপ্ন দেখতাম৷ কিন্তু সমাজে গেড়ে বসা ধর্মান্ধদের জন্য স্বদেশ প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছে এবং সেইসাথে আলোকিত সমাজ গড়ার স্বপ্নে বিভোর অসংখ্য তরুণ মেধা হারিয়ে ডুকরে কাঁদছে৷ প্রবাসে ভালো আছি৷ ধর্মান্ধের চাপাতির কোপ পড়ার আশঙ্কা নেই৷ তবে স্বদেশ আলোকিতের স্বপ্ন নিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়৷ যতদূরে থাকি না কেন প্রার্থনায় রয় জননী মাতৃভূমি তোমার মঙ্গল কামনা!
ছবি: privat
নাঈম আব্দুল্লাহ, অস্ট্রেলিয়া
১৯৯৫ সালের শেষ দিকে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে নিউজিল্যান্ড গিয়েছিলাম৷ আপেল বাগানে পিঠে ১৫ কেজির ঝুড়ি আর মই হাতে দৌড়ে আপেল পারার প্রতিযোগিতায় আমি মোটেই সিদ্ধহস্ত ছিলাম না৷ তাই ঐ কাজ ছেড়ে ট্যাক্সি ক্যাব চালাতাম৷ সুবিধা করতে না পারায়, পেলাম হাসপাতালে চাকরি৷ ২০০০ সালে চলে এলাম অস্ট্রেলিয়ায়৷ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসে পেলাম ব্যাংকের চাকরি৷
ছবি: privat
মো. ফারুক হোসেন, ওমান
ভিনদেশে থেকে স্বদেশ ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না৷ জীবিকার তাগিদে বসবাস এখন ওমানে৷ মরুদেশের সাথে পলিমাটির বাংলার মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ আরব সাগরের ধারে খুঁজি কক্সবাজারের সৌন্দর্য্য, ওমানের পাহাড়-পর্বতে খুঁজি রাঙামাটি-বান্দরবন, খারিফ (বর্ষা) মৌসুমে সবুজ সালালায় পাই বাংলাদেশের ঘ্রাণ আর কৃত্রিমতায় ভরপুর দুবাই শহরে পাই যান্ত্রিক ঢাকার টান৷ জোড়াতালির এত মিলের পরও অমিলের হাহাকার থাকে বারো আনা৷
ছবি: privat
8 ছবি1 | 8
জার্মানিতে এসেই এক সাবেক সহকর্মী ও বড়ভাইয়ের বাসায় উঠলাম৷ তখনই জানলাম এখানে বাড়িভাড়া করে থাকতে হলেও সরকারের নথিভুক্ত হতে হয়৷ ‘স্টাডহাউস' নামে প্রত্যেক শহরেই একটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের জায়গা আছে, যেখানে সকল ভাড়াটেকে যেতে হয়৷ সাথে নিজের বাড়িওয়ালার সাথে চুক্তিপত্র নিয়ে হাজির হয়ে নিবন্ধন করতে হয়৷ বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ছাড়া জার্মানিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে অন্য কোনও কাজই হয় না৷ তার মানে বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া বাড়াচ্ছে কি না, কোন কোন ভাড়াটে থাকছে, তার পুরো নথি ‘স্টাডহাউস' এ থাকে৷ ইচ্ছে হলেই ভাড়া বাড়ালাম এমনটা হওয়া সম্ভব না৷ করের কথাও তো মাথায় রাখতে হয়৷
তো সেই ‘স্টাডহাউসে' এ রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার শুনলাম৷ আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি কোন ধর্মের, বিশেষ করে খ্রিস্টান কি না! আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে সাথে থাকা সেই বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম- খ্রিস্টান হলে কী হবে ভাই, ট্যাক্স মওকুফ? যেহেতু এটা খ্রিস্টানপ্রধান দেশ, ফলে তারা সুবিধা পাবে, এমনটাই ভাবছিলাম৷
কিন্তু জানলাম এখানে বরং খ্রিস্টান হলেই বাড়তি কর নেওয়া হয়৷ কেননা সরকার আপনাকে যে ধর্মীয় সুবিধা দিচ্ছে, ঈশ্বরের আরাধনা করার জন্য গির্জায় ভর্তুকি দিচ্ছে, কবরস্থানে ভর্তুকি দিচ্ছে, আরও কতো কী করছে... এসব কিছুর খরচ তো আপনাকেই বহন করতে হবে! আমি ভাবলাম আমাদের দেশে যদি এমন কর নেওয়া হত বা ন্যূনতম উদ্যোগ নেয়া হত, তাহলে হয়তো ভয়াবহ আন্দোলন হয়ে যেত! আচ্ছা ধর্ম করও নিশ্চয় মানুষ ফাঁকি দিত? কিংবা কেউ কেউ পরিচয় গোপন করত?
হাবিব ইমরান, ডয়চে ভেলেছবি: DW/S. Burman
মাসখানেক নানা ধরনের ছোটখাট অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জার্মানিতে পার করলাম৷ জার্মানদের সবচেয়ে ভাল লাগে রাস্তা পার হওয়ার নিয়ম কানুন৷ সবাই যেন অতিরিক্ত ভদ্র৷ এই কয়মাসে একবারও গাড়ির হর্ন দিতে দেখি নাই৷ এসব ভাবতে ভাবতে বাসার পাশের রাইন তীরে বসে এক রাতে বসে নদী দেখছিলাম৷
হঠাৎ পাশের বেঞ্চিতে চুমুর আওয়াজ পেলাম৷ অন্ধকারে আবছাভাবে দেখলাম মেয়েটা ছেলেটার কোলের উপর বসে আছে৷ আমার দিকে পিঠ দিয়ে বসা৷ এদেশে এটা খুব সাধারণ ব্যাপার৷ দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গেছে৷ খুব অদ্ভুত ব্যাপার হলো, প্রথম যখন আসি তখনও ছেলে-মেয়ের এই চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা তেমন চোখে লাগেনি৷ সবসময়ই মনে হয়েছে খু্ব স্বাভাবিক৷
সে যাইহোক অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকার পর একসময় উঠে বাড়ি যাবো বলে ঠিক করলাম৷ ঠিক তখনই চোখে পরলো অন্ধকারে যাদেরকে চুমু খেতে দেখেছিলাম তারা দুজনই আসলে পুরুষ৷ যাকে মেয়ে মনে করেছিলাম সে আসলে ছেলে৷ এরা তাহলে সমকামী বা সমপ্রেমী !
সমকামী বা প্রেমীদের ব্যাপারে আমার কোনও সংস্কার নেই৷ দেশে থাকতে তাদের অধিকারের পক্ষেই লড়াই করার বুলি ছেড়েছি৷ কিন্তু প্রথমবারের মতো সম-প্রেমের দৃশ্য এক ঝলক দেখে চমকে গেলাম৷ জার্মানিতে থাকা তিনমাসে এ দৃশ্যটি বারবার এসেছে স্মৃতিতে৷ নিজের সাথে নিজের এ লড়াই খুব অদ্ভুত ছিল৷
জার্মানিতে আবর্জনা আলাদা করবেন যেভাবে
আলাদা আলাদা ধরনের আবর্জনা ফেলতে বাড়ির পেছনের বাগানে নানা রংয়ের ময়লা ফেলার বাক্স রাখা হয়৷ ইউরোপের দেশ জার্মানি ময়লা, আবর্জনা আলাদা করে ফেলার ব্যাপারে বেশ সচেতন৷ চলুন জেনে নিই, ঠিক কী প্রক্রিয়ায় এটা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Wolf
এই পাত্রে কোনো ভুল দেখছেন?
জার্মানিতে তিনটি আলাদা ময়লার বাক্সে কাঁচের বোতল ফেলতে হয়৷ সেগুলো হচ্ছে সাদা, বাদামী এবং সবুজ৷ এসব রংয়ের ছাড়াও নীল বা হলুদ রংয়ের বোতল সবুজ বাক্সে ফেলা যাবে৷ তবে ভাঙা কাঁচের গ্লাস বা জানালার কাঁচ সেখানে ফেলা যাবে না৷ সেগুলো অন্য ধরনের কাঁচ, যা বোতলের সঙ্গে মেশালে রিসাইকেল করা যাবে না৷ ফলে বাড়ির কাজে ব্যবহৃত কাঁচ ফেলতে হবে অন্যত্র৷
ছবি: DW/Elisabeth Greiner
সবার জন্য কন্টেইনার
আপনার বাড়িতে যদি গ্লাস বা কাঁচ ফেলার আলাদা আলাদা পাত্র না থাকে, তাহলে রাস্তার পাশে থাকা বড় কন্টেইনারগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে খেয়াল রাখবেন যে, দুপুর একটা থেকে তিনটা এবং রাত আটটার পর ও সপ্তাহান্তে এবং ছুটির দিনে সেসব কন্টেইনারে বোতল ফেলা যাবে না৷ কেননা, তখন বোতল ফেলা হলে সেই শব্দে আশেপাশের বাসিন্দারা বিরক্ত হতে পারেন৷
ছবি: DW/Elisabeth Greiner
বোতল ফিরিয়ে দেয়া
যেসব খালি বোতল দোকানে ফিরিয়ে দিলে রিফান্ড, মানে কিছু টাকা ফেরত পাওয়া যায়, সেসব বোতল রাস্তার পাশের গ্লাসের কন্টেইনারে ফেলা যাবে না৷ জার্মানির অধিকাংশ সুপারমার্কেটে সেসব বোতল ফেরত দেয়ার মেশিন রয়েছে৷ মেশিনে বোতলগুলো একের পর এক দেয়া হলে, মেশিন সেগুলো হিসেব করে আপনি যে টাকা ফেরত পাবেন, তার রশিদ দেবে৷ সেই রশিদ ক্যাশে দিলে আপনাকে টাকা দেয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance/Rainer Hackenberg
বোতল ফেলার আরেক উপায়
শহুরে এলাকায় যারা বোতল সুপারমার্কেটে ফেরত দিতে চান না, তারা চাইলে সেগুলো রাস্তার পাশের ময়লার বাক্সগুলোর কাছে রেখে দিতে পারেন৷ এটা শুনতে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও, যারা পয়সার জন্য রাস্তায় বোতল কুড়ান, তাদের জন্য উপকারের৷ তারা তখন সেগুলো ময়লার বাক্সের মধ্যে খোঁজার চেয়ে সহজে কুড়িয়ে নিতে পারবেন৷ জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরে আবার বোতল রাখার সুবিধার্থে এরকম ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck/
কাগজের জন্য নীল বাক্স
সব জার্মানই জানেন যে, নীল ময়লার বাক্স হচ্ছে কাগজ এবং কার্ডবোর্ড ফেলার জন্য৷ তবে অনেকেই এটা বোঝেন না যে, পিৎসার বাক্স এবং পেপারের প্লেট সেই বাক্সে ফেলা যাবে না৷ প্লেটে থাকা খাবারের বাড়তি অংশ রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়৷ মোটের উপর গ্লসি পেপার, মানে পোস্টারও সাধারণ কাগজের সঙ্গে রিসাইকেল করা যায় না৷ আর হ্যাঁ, সেই ১৭৭৪ সাল থেকে জার্মানিতে কাগজ পুর্নব্যবহার করা হয়৷
ছবি: DW/Elisabeth Greiner
বায়োডিগ্রেডেবল আবর্জনার জন্য বাদামি বা সবুজ বাক্স
বায়োডিগ্রেডেবল বা জীবাণুবিয়োজ্য আবর্জনা ফেলার জন্য বাদামি বা সবুজ বাক্স ব্যবহার করতে হয়৷ রান্না করা বা না করা বাড়তি খাবার, দুধ জাতীয় পণ্য, মাংস এবং মাছ এই ক্যাটাগরিতে পরে৷ সেগুলো পচে গেলেও ফেলতে পারেন এসব বাক্সে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Wolf
সব প্যাকেজিং প্রোডাক্টের জন্য হলুদ
অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, পলিস্টিরিন কিংবা টিন ক্যানের মতো প্যাকেজিং প্রোডাক্ট ফেলতে পারেন হলুদ বাক্সে৷ খেয়াল রাখবেন, প্যাকেট ফেলার আগে সেটি খালি করে নিলে ভালো৷ তবে সামান্য কিছু ভেতরে থাকলে কেউ আপত্তি করবে না৷
ছবি: Imago
মাঝে মাঝে এটি হলুদ ব্যাগ
জার্মানির কিছু এলাকায় বিভিন্ন প্যাকেট ফেলার জন্য হলুদ বাক্সের বদলে হলুদ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়৷ তবে সেগুলো নির্ধারিত দিনে ফেলতে হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/P.Pleul
কালো হচ্ছে বাকি সবের জন্য
কালো বা ধূসর বাক্স হচ্ছে বাকি সবকিছু ফেলার জন্য৷ আর এই বাকি কিছুর মধ্যে শিশুদের ব্যবহৃত ডায়পার বা সিগারেটের শেষাংশের মতো আবর্জনা থাকতে পারে৷ তবে ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনা এই বাক্সে ফেলা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/G. Czepluch
ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনা
অনেক সুপারমার্কেটে ব্যবহৃত ব্যাটারি সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ আবর্জনা ফেলার জন্য প্রতিটি শহরেরই নির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে৷ নির্ধারিত দিনে এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে নগর কর্তৃপক্ষের ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে৷ সেই ট্রাকে এসব আবর্জনা রেখে আসা যায়৷ ব্যাটারির মতো আবর্জনা সাধারণ আবর্জনার বাক্সে না রাখার যুক্তি হচ্ছে সাধারণ আবর্জনায় সেগুলো থাকলে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ার সময় আগুন লেগে যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hitij
আসবাব ফেলবেন কোথায়?
বাড়িতে ব্যবহৃত কিছু আইটেম আছে, যেগুলো ময়লা ফেলার বাক্সে ফেলা সম্ভব নয়৷ তবে সেগুলো ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা আছে৷ সোফা, পুরনো টিভি কিংবা ভবন তৈরির উপাদান এই ধরণের আবর্জনার মধ্যে পড়ে৷ কিছু শহরে অবশ্য এ ধরণের ময়লা নির্দিষ্ট দিনে বাড়ির সামনে রাখা যায়৷ নগর কর্তৃপক্ষ তখন গাড়িতে করে সেগুলো নিয়ে যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa
কাপড়ের জন্য বিশেষ বাক্স
ব্যবহৃত কাপড় বা জুতা সাধারণ ময়লার বাক্সে ফেলার দরকার নেই৷ সেগুলো সংগ্রহের জন্য বিশেষ বাক্স প্রায় সব শহরেই রয়েছে৷ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা পুরনো কাপড় ও জুতা সংগ্রহ করে সেগুলো ব্যবহারোপযোগী থাকলে পুনরায় বিক্রি করে৷ কিছু মানুষ অবশ্য তাদের কাপড় ময়লার বাক্সের পাশে রেখে যান যাতে করে যাদের প্রয়োজন, তারা সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী নিয়ে নিতে পারেন৷
ছবি: DW/Elisabeth Greiner
বেশি ভরবেন না
একটি ময়লার বাক্স যদি ধারণক্ষমতার বেশি ভর্তি থাকে, তাহলে সংগ্রহ করতে আসা ব্যক্তিরা সেটি নিতে অস্বীকার করতে পারেন৷ তাই যদি ময়লার বাক্স ভর্তি হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেটির উপরে বাড়তি ময়লা রাখবেন না৷ এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন অনেক বাড়িতে ময়লার বাক্সে তালা লাগানো থাকে? এটা এজন্য যে, প্রতিবেশিরা যাতে সেগুলো ভরে ফেলতে না পারেন৷
যদিও জার্মানরা ময়লা, আবর্জনা নিয়মমতো ফেলার ব্যাপারে বেশ সচেতন, তারপরও মাঝেমাঝে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময় সোমবার সকালে পার্কে গেলে দেখা যাবে এখানে-সেখানে ময়লা, আবর্জনা পড়ে আছে৷ বার্লিনের পার্কের এই ছবিই বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি আরো উন্নতির সুযোগ রয়েছে৷