জার্মানির প্রবীণদের সেবা শুশ্রূষার ক্ষেত্রে আরো কর্মীর প্রয়োজন৷ এজন্য অফেনবাখ শহরে একটি প্রকল্প গঠন করা হয়েছে যাতে অভিবাসীরা এই পেশাটি সম্পর্কে আগ্রহী হন৷ এতে থাকবে ভাষা শিক্ষা কোর্সসহ অন্যান্য সুব্যবস্থা৷
বিজ্ঞাপন
মধ্য ত্রিশে এসে আসমা হাডরি এখন নিজের জন্যও কিছু করতে আগ্রহী৷ কোনো প্রশিক্ষণ নিতে ও পেশায় ঢুকতে ইচ্ছুক৷ ১০ বছর ধরে পরিবারের জন্যই নিজেকে নিবেদিত করেছেন তিনি৷ নার্গিস ইয়েলাঘির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যায় তাঁর৷
প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্যোগ
ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে অফেনবাখে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অভিবাসী মেয়েদের বৃদ্ধদের পরিচর্যার কাজে উদ্বুদ্ধ করতে চান ইয়ালাঘি৷ এব্যাপারে তাঁর টিম আগ্রহীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন, পরামর্শ দেন৷ নার্গিস ইয়েলাঘি জানান, ‘‘প্রথমে কয়েকবার তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করি৷ তাদের জানাই এই কাজের জন্য কোন কোন গুণাগুণ প্রয়োজন৷''
জার্মানিতে আধুনিক নানু, দাদুর চাহিদা বাড়ছে
তাঁরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলে বলে কি?
ছবি: privat
সময় বদলে গেছে
জার্মানিতে আগে নাতি-নাতনিরা দাদা, নানার বাড়ি গেলে নানি, দাদিরা তাদেরকে সাথে নিয়ে পছন্দের কেক বানাতেন৷আর দাদা, নানারা ওদের সাথে খেলনার ট্রেন বানাতেন বা রূপকথার গল্প শোনাতেন ৷ বাংলাদেশ বা ভারতের চিত্রও অনেকটা এরকমই ছিল৷ কিন্তু এখন সময়ের সাথে প্রায় সবকিছুই পাল্টে গেছে৷ বদলে গেছে নাতি-নাতনিদের চাহিদাও৷
ছবি: Katarzyna Domagała-Pereira
ব্যস্ত প্রবীণ
আজকের যুগের দাদা-দাদি বা নানা-নানিদের আগের দিনের মতো এত বেশি সময় নেই৷ তাঁদের অনেকেই আজকাল চাকরি করেন৷ ছুটি কাটাতে যান দেশ-বিদেশে, যান পছন্দের কনসার্ট দেখতে৷ ফিট থাকার জন্য নিয়ম করে ফিটনেস সেন্টারেও যেতে হয় তাঁদের৷ তাছাড়া অনেকেরই রয়েছে নানা রকমের ‘হবি’৷
ছবি: picture-alliance/Frank May
অনেকের আক্ষেপ
চাকরিজীবী বাবা-মায়েরা কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান যুগের ছেলে-মেয়েরা তাদের দাদু-নানুর কাছ থেকে খুব কম সময় পেয়ে থাকে৷ আগের মতো, অর্থাৎ তাঁরা নিজেরা যেভাবে নানি-দাদির সঙ্গ পেয়ে এসেছেন নিজের সন্তানরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷
‘সময় কম মানে সম্পর্কে ঘাটতি নয়’ ন্যুরেমব্যার্গের প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ রোজভিথা সমার-হিমেল বলেন, শুধু কম সময়ের কারণে যেন সম্পর্ক নষ্ট হয়ে না যায়৷ সময় বেশি বা কম থাকা বড় কথা নয়৷ যতক্ষণ নাতি-নাতনিরা কাছে থাকে সেই পুরো সময়টাই যেন তাদেরকে দেওয়া হয়, অর্থাৎ কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটিকেই যেন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ তাহলে দূরে থেকেও মধুর সম্পর্ক রাখা সম্ভব৷
ছবি: Robert Kneschke - Fotolia.com
প্রবীণরা অনেক বেশি সজাগ
জার্মান যুব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষীবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী ভাল্টার বিন অবশ্য একেবারে নিশ্চিত যে, এ যুগের নাতি-নাতনিদের সাথে দাদু-নানুর সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের তুলানায় অনেক বেশি অন্তরঙ্গ৷ এই যুগে দু’পক্ষই সব কিছু দ্রুততার সাথে করে, তাই তাদের মধ্যে বোঝাবুঝিটা ভালো হয়৷ তাছাড়া, এ যুগের দাদু-নানুরা বর্তমান পরিস্থিতির নানা বিষয়ে অনেক বেশি সজাগ ও সচেতন৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
নিজের মতো করে থাকো
আজকের যুগে চাকরির খাতিরে সারা বিশ্বেই বড় পরিবার ভেঙে ছোট হয়ে যাচ্ছে৷ এ বিষয়ে ভাল্টার বিনের মত, দূরে থাকা কোনো সমস্যা নয়৷ দু’পক্ষই যেন জানে যে, প্রয়োজনে একজন আরেকজনের সাহায্যে এগিয়ে আসবে৷ তাছাড়া দূরে থাকার সুবিধাও যে রয়েছে৷ এই যেমন, নিজেদের মধ্যে মতের অমিল হলে ঝগড়াঝাটি না করে যে যার বাড়িতে চলেও যাওয়া যায়৷
ছবি: Katarzyna Domagała-Pereira
কাছাকাছি থাকা
বর্তমান সময়ে অনেক দাদি বা নানি আছেন, যাঁরা তাঁদের নাতি-নাতনিকে কাছে পাওয়ার জন্য ওদের সঙ্গে করে ফিটনেস সেন্টারে বা সিনেমা দেখাতে নিয়ে যান৷
ছবি: DW/A. Boutsko
অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি
অনেক উঠতি বয়সের নাতি-নাতনি তাদের নানা সমস্যার কথা অথবা বর্তমান পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ নানি বা দাদির সাথে ভাগাভাগি করে থাকে ও পরামর্শ নিয়ে থাকে৷
ছবি: DW/Wolfgang Dick
সাহায্যের মাধ্যমে অন্তরঙ্গতা
কেউ কেউ নানু, দাদুর কাছ থেকে পড়া দেখিয়ে নেয় বা ছবি আঁকে৷ আর তখন ফাঁকে ফাঁকে গল্পগুজবও হয়৷ এভাবেই গড়ে ওঠে দু’পক্ষের মধ্য অন্তরঙ্গতা৷
প্রযুক্তির সাথে চলা
শুধুমাত্র নাতি-নাতনির সাথে যোগাযোগ রাখার জন্যই অনেক নানু-দাদু কম্পিউটার ব্যবহার করা শেখেন বা ফেসবুকে ঢোকেন৷ আধুনিক প্রবীণরা জানেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে না গেলে বা মানসিকতার পরিবর্তন না করতে পারলে পরিবারের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়৷ ‘নাড়ির টান বা রক্তের টান’ যাই বলিনা কেন, সেটা হয়ত যথেষ্ট নয়!
ছবি: tina7si/Fotolia.com
বয়সের পার্থক্যে ভিন্ন মত
প্রবীণদের মধ্যেও বয়সের পার্থক্য থাকার কারণে মতের অমিল রয়েছে৷ কিছুদিন আগের একটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, শতকরা ৭৫ জন প্রবীণ নাতি-নাতনির সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার পক্ষে৷ তবে প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবীণ মনে করেন, আজকের যুগের নাতি-নাতনিরা শুধু ঝামেলা বাড়ায়৷ বিশেষ করে মিশ্র পরিবারে, যেখানে বাবা, মা এবং নাতি-নাতনির সংখ্যা বেশি থাকে৷
ছবি: privat
11 ছবি1 | 11
প্রথম বাধা দূর হলে সহজ হয় কাজটা
প্রথম বাধাটা দূর হয়ে গেলে প্র্যাকটিক্যাল কাজ শুরু হয়৷ মেয়েরা তখন বুঝতে পারেন কাজটি তাদের উপযোগী কিনা৷ টিউনিশিয়া থেকে আসা ৩৫ বছর বয়স্ক আসমার কাছেও প্রথম দিনগুলি খুব সহজ ছিল না৷ স্বদেশে ফরাসি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘প্রথম দিন আমি বুঝতেই পারিনি, কোন কাজটা কীভাবে করবো৷'' তাঁর কাছে সব কিছুই ছিল অপরিচিত: টিম, কাজ, পরিবেশ, বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দারা, সবকিছুই৷ কিন্তু দিনে দিনে ভাল লাগতে লাগলো কাজটা৷ অবশেষে বৃদ্ধ-সেবা ক্ষেত্রে একটা শিক্ষানবিশের কাজ পেয়ে যান তিনি৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের কাজ পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে তিনিও একজন৷
এই পেশার ভবিষ্যৎ আছে
জার্মানিতে ২.৪ মিলিয়ন মানুষ সেবা শুশ্রূষার ওপর নির্ভরশীল৷ ২০৩০ সালে এই সংখ্যাটা ৩.৪ মিলিয়নে দাঁড়াবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷ সেই সময় পর্যন্ত অতিরিক্ত এক লক্ষেরও বেশি সেবক সেবিকার প্রয়োজন৷ সারা জার্মানিতে এই ধরনের মডেল প্রজেক্ট আরো কয়েকটি রয়েছে৷ এই রকম একটি প্রকল্পের সমন্বয়কারী সেরেনা কেরা জানান, জার্মানিতে বিদেশি বংশোদ্ভূত প্রবীণদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এই জনগোষ্ঠীর জন্য অভিবাসী সেবক সেবিকা ও নার্সের প্রয়োজন৷ যাতে তাদের বিশেষ চাহিদার দিকে লক্ষ্য রাখা যায়, মাতৃভাষায় কথাবার্তা বলা যায়৷ বয়োবৃদ্ধদের সেবা করা তেমন সহজ কাজ নয়৷ তবে এই পেশার ভবিষ্যৎ আছে৷
ভাষা সমস্যা
২০১৪ সালে আসমা হাডরি প্রবীণ-সেবাসহায়ক হিসাবে প্রশিক্ষণ শেষ করবেন৷ সে পর্যন্ত তাঁকে অনেক কিছু শিখতে হবে৷ তবে সমস্ত কোর্সটাই জার্মান ভাষায়৷ অন্যান্যদের সঙ্গে আসমাকেও মানবদেহের গঠন, সেবার ওপর নির্ভরশীল মানুষদের সঙ্গে আচরণবিধি ইত্যাদি শিখতে হবে৷ বিশেষ করে জার্মান ভাষাটাই তাঁর জন্য ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ কেননা জার্মান তো তাঁর মাতৃভাষা নয়৷ এ প্রসঙ্গে নার্গিস ইয়েলাঘি বলেন, ‘‘অনেকে অল্প কিছুদিন আগে জার্মানিতে এসেছেন৷ তাই তাদের তাদের ভাষাজ্ঞানটা যথেষ্ট নয়৷ এজন্য আমরা ভাষা শিক্ষা কোর্সও দিয়ে থাকি৷''এই রকম সহায়তা পেয়ে নার্গিস হাডরির জার্মান ক্রমেই ভাল হচ্ছে৷
জার্মান ভাষা জানার বিকল্প নেই
জার্মান ভাষা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত৷ ভারত-বাংলাদেশের মতো বিশ্বের আরো অনেক দেশে এ ভাষা শেখার জন্য রয়েছে গ্যোটে ইন্সটিটিউট৷ তবে জার্মানিতে থেকে সে’ দেশের ভাষা না জানলে যে পদে পদে সমস্যা!
ছবি: POOSHdesign/Reza Alaeddini
যদি ভাষা জানেন, সুবিধা পাবেন
যে কোনো দেশে থাকতে হলে সে দেশের ভাষা জানা খুবই জরুরি৷ তা না হলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার তেমন কোনো সুযোগই থাকেনা৷ ভাষা না শেখার কারণে খালিদ, আইচো, শিরিয়া, আরিয়ানা বা রাইসার মতো অনেকেই নিজের দেশে চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করলেও জার্মানিতে শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে৷
ছবি: Doc RaBe - Fotolia.com
সেবিকা থেকে ক্লিনার
শিরিয়া কসোভো থেকে বেশ কয়েকবছর আগে স্বামী, সন্তান নিয়ে জার্মানিতে এসেছে৷ নিজের দেশে একটি হাসপাতালে নার্স বা সেবিকা হিসেবে কাজ করতো৷ প্রথমে ভাষা শেখাটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বলে আর শেখাও হয়নি৷ বেঁচে থাকার জন্য এখন তাকে অন্যের বাড়িতে ক্লিনারের কাজ করতে হচ্ছে৷ জার্মান ভাষা জানা থাকলে সহজেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে হয়তো আবারও সেবিকার কাজ পেতে পারতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খালিদের অনেক দুঃখ
খালিদ পোল্যান্ডের একটি কন্সট্রাকশন ফার্মে সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করতো৷ ভাষা শেখেনি, তাই এখন নিজেকেই এ সব কাজে হাত লাগাতে হচ্ছে৷ ভাষা না শেখার কারণ জানতে চাইলে কিছুই বলেনা৷ তবে এখন বুঝতে পারছে সে ভাষা না শিখে ভুল করেছে এবং মানসিকভাবে অনেক কষ্টও পাচ্ছে৷ যদিও জার্মানিতে কম আয়ের বিদেশিদের জন্য বিনে পয়সায় ভাষা শিক্ষার কোর্স রয়েছে৷
ছবি: Kzenon - Fotolia.com
আরিয়ানা
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকা আরিয়ানা প্রায় দশ বছর আগে ইউক্রেন থেকে এসেছে৷ নিজের দেশে টুকটাক জার্মান ভাষা শিখেছিলো, তবে জার্মানিতে এসে আর শেখা হয়নি কোলে বাচ্চা থাকায়৷ তবে ওর স্বামীর জার্মান ভাষা মোটামুটি শেখাতে একটি চাকরি এবং জার্মানিতে থাকার অনুমতি পেয়েছে৷ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে আরিয়ানাকেও কাজ করতে হয়৷ স্বামীর সহায়তায় অগত্যা একটি সরকারি অফিসে মেঝে মোছার কাজই করছে সে এখন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বসনিয়ার মেয়ে মারিয়ম
১৫ বছর বয়সে বাবা মায়ের হাত ধরে জার্মানিতে এসেছে মারিয়ম৷ প্রথমদিকে কিছুটা অসুবিধা হলেও বাবা মায়ের উৎসাহে এবং নিজের মনোবলের কারণে ভালোভাবেই জার্মান ভাষা রপ্ত করতে পেরেছে৷ এখন সে নিজেই চাকরির জন্য অফিসে দরখাস্ত করছে৷ ওর চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে৷
ছবি: Bilderbox
জব সেন্টারে ঘোরাঘুরি
অনেকে প্রতি সপ্তাহেই চাকরির খোঁজে জব সেন্টারে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷ ভাষা না জানার কারণে ওদের জন্য তেমন কোনো চাকরির সুখবরও থাকেনা৷ তবে এরা সরকার থেকে বেকার ভাতা বা সামাজিক ভাতা পায় নিয়মিত৷
ছবি: dpa
ভাষা শিখে স্বপ্ন পূরণ
লায়লা ছোটবেলা থেকেই বাচ্চা ভালোবাসে তার ইচ্ছে বাচ্চাদের সাথে কাজ করবে৷ লায়লার জন্য ভাষা শেখা কোনো সমস্যাই ছিলোনা৷ সাধারণ স্কুলের পাশাপাশি আলাদাভাবে জার্মান ভাষা শেখার ক্লাস সে করেছে৷ যার ব্যয়ভার জার্মান সরকার বহন করেছে৷ কিন্ডারগার্টেনের ট্রেনিং শেষে পছন্দের চাকরিও সে পেয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বখাটে তরুণ
যারা জার্মান ভাষা শেখেনা, তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়৷ কোনো প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র এলেও সেগুলো তারা পড়তে বা বুঝতে পারেনা৷ ফলে সবসময়ই অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়৷ ভাষা না জানা এই প্রজন্মের অনেক ছেলে মেয়েকে পয়সার জন্য অন্যায় পথে পা বাড়াতেও দেখা যায়৷ কেউ কেউ আবার অন্য বাড়ির দরজায় গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে৷
ছবি: fotolia/imageteam
জন্ম থেকে জার্মানিতে, জার্মান ভাষার প্রতি আগ্রহ নেই
জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি রয়েছে৷ যাদের জন্ম জার্মানিতে, জার্মান স্কুলে পড়ে – তারপরও অনেকেই তেমন ভালো জার্মান ভাষা জানেনা৷ কারণ হিসেবে অনেক সময় বলা হয় জার্মান স্কুলের বাইরে অর্থাৎ নিজেদের মধ্য এরা সবসময়ই তুর্কি ভাষায় কথা বলে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
নারীদের ভাষা শেখার আগ্রহ খুব কম
নিজ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেকেই জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তাদের মধ্যে পুরুষরা কিছুটা জার্মান ভাষা শিখে বিভিন্ন দোকান, কারখানা, রেস্তোরাঁতে কাজ করছেন৷ এদেশে স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক বলে বাচ্চারাও স্কুলে যায়৷ তবে এসব পরিবারের খুব কম নারী জার্মান ভাষা শেখে৷ অনেক বছর থাকার পরও কথা বলতে পারেন না৷ যদিও এদেশে তুর্কি নারী সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের জন্য আলাদাভাবে ভাষা শেখার ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তিন বোন
পোল্যান্ড থেকে আসা এক পরিবারের তিনজন৷ ছোটবোন ভালো জার্মান ভাষা শিখেছে বলে মোটামুটি ভালো বেতনে দোকানে সেলস গার্লের চাকরি করছে৷ দ্বিতীয়জনের জার্মান ভাষার জ্ঞান আরো কম বলে সে একটি ফ্যাক্টরিতে জিনিসপত্র গোছানোর কাজ করে, যেখানে তাকে বেশি কথা বলতে হয়না৷ এবং স্বাভাবিকভাবেই বেতন বেশ কম৷ আর সবচেয়ে বড় বোন একদমই ভাষা জানেনা৷ তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোন বাড়িতে ক্লিনারের কাজও কেউ দিতে চায়না৷
ছবি: POOSHdesign/Reza Alaeddini
11 ছবি1 | 11
পরিবার ও পেশার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করার সমস্যা
প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের ভাষা সমস্যা ছাড়াও আরেকটি সমস্যা হলো পরিবার ও পেশার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলা৷ প্রশিক্ষণের সময় মেয়েদের ভোর ছয়টায় কাজ শুরু করতে হয়৷ কিন্তু এত ভোরে তাদের বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য খুব কম ব্যবস্থাই রয়েছে৷
দুই সন্তানের মা সার্বিয়া থেকে আসা আইডা হালিলোভিচও এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন৷ ভোর সাড়ে পাঁচটায় কাজ শুরু করতে হয় তাঁর৷ তবে মা-বাবা এক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ তারাই পালাক্রমে বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন৷ এজন্য কিছুটা পরিকল্পনার প্রয়োজন, জানান আইডা৷ সার্বিয়ায় রাঁধুনির কাজ করতেন তিনি৷ অফেনবাখের প্রকল্পের মাধ্যমে সেবিকার কাজটি পেয়েছেন৷ জার্মানিতে এটাই তাঁর প্রথম কাজ৷ বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত আইডা৷ ‘‘কারণ তাঁরা খুব কৃতজ্ঞ৷ এটা আসে একেবারে অন্তর থেকে৷ খুব সুন্দর এক অনুভূতি,'' বলেন আইডা হালিলোভিচ৷