জার্মান ফুটবল ফেডারেশন ডিএফবি-র প্রেসিডেন্ট ভোল্ফগাং নিয়ার্সবাখ সোমবার রিপোর্টারদের বলেন যে, ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ সংক্রান্ত ঘটনাবলীর ‘রাজনৈতিক দায়িত্ব' নেবার সময় এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
সেদিন সন্ধ্যাতেই ডয়চে ভেলের রিপোর্টার জেফারসন চেজ ফ্রাংকফুর্টে ডিএফবি-র কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানান যে, ফ্রেশফিল্ডস ব্রুকহাউস ডেরিঙ্গার নামধারী একটি আন্তর্জাতিক আইনজীবী সংস্থা ৬৭ লাখ ইউরোর পেমেন্ট নিয়ে যে ডিএফবি-বহির্ভূত তদন্ত চালাচ্ছে, তাতে কিছু নতুন তথ্য বেরিয়েছে৷ এবং সেই কারণেই নিয়ার্সবাখ পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন৷
মোট কথা, পুরো কেলেঙ্কারি ঐ টাকার অঙ্ক নিয়ে৷ জার্মানির প্রখ্যাত ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকা প্রথমে কাহিনিটি ফাঁস করে৷ দৃশ্যত ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের জন্য জার্মানির অর্গানাইজিং কমিটি ফিফাকে ঐ টাকা প্রদান করে৷ এটি ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা৷ ঐ টাকা নাকি উদ্বোধনী প্রোগ্রামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য দেওয়া হয়েছিল – যদিও সে অনুষ্ঠান কোনোদিন সংঘটিত হয়নি৷ পরে জানা যায়, ঐ অর্থ নাকি আডিডাস কোম্পানির সাবেক প্রধান রব্যার্ট-লুইস ড্রেইফুসকে ফেরত দেওয়া হচ্ছিল – তবে ফিফার মাধ্যমে৷ কিন্তু কেন? এবং টাকাটা নেওয়াই বা হয়েছিল কেন?
ব্লাটার থাকতে ফিফার যত কেলেঙ্কারি
গত ১৭ বছর ধরে ফিফার নেতৃত্বে আছেন সেপ ব্লাটার৷ তার এই মেয়াদকালে ফিফা বেশ কয়েকবার কেলেঙ্কারির মুখে পড়েছে৷ এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
১৯৯৭: বিশ্বকাপ বিপণন চুক্তি থেকে ঘুস
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগেই এক ঘুস কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেপ ব্লাটার৷ তাঁর আগের প্রেসিডেন্ট জোয়াও আভেলাঞ্জ এবং তাঁর সাবেক জামাতা রিকার্ডো টেশেরার সঙ্গে বিশ্বকাপের বিপণন সত্ত্ব সংক্রান্ত এক ঘুস কেলেঙ্কারিতে ব্লাটারের নামও এসেছিল৷ সেসময় ফিফার মহাসচিব ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৯৮: আফ্রিকার প্রতিনিধিদের ঘুস
ফ্রান্সের বিশ্বকাপ শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সেপ ব্লাটার৷ অভিযোগ আছে, সেসময় প্যারিস হোটেলে অবস্থানরত আফ্রিকার প্রত্যেক প্রতিনিধিকে পঞ্চাশ হাজার মার্কিন ডলার করে ঘুস দেয়া হয়েছিল৷ ব্লাটার অবশ্য এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন৷
ছবি: AP
২০০৬: টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ভাইস প্রেসিডেন্ট
২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো৷ সেদেশের জ্যাক ওয়ার্নার তখন ফিফার ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ তার পরিবারের সদস্যরা সেবার সেদেশে টিকিট বিক্রির সুযোগ পায় এবং নয় লাখ মার্কিন ডলারের মতো কমিশন থেকে আয় করে, যা আসলে অনুচিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Acosta
২০১০: রাশিয়া এবং কাতারে বিশ্বকাপ
২০১৮ এবং ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পর্যায়ক্রমে রাশিয়া এবং কাতারকে দেয়া হয়৷ কিন্তু এই ঘোষণার আগেই ফিফার দুই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়৷ রাশিয়া এবং কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দেয়া নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
২০১১: ব্লাটারের প্রতিদ্বন্দ্বীর পদত্যাগ
সেবছর ফিফার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ব্লাটারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন কাতারের মোহাম্মেদ বিন হাম্মাম৷ কিন্তু ভোটাভুটির আগেই ক্যারাবিয়ানরা হাম্মামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন৷ ফলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন হাম্মাম৷
ছবি: Saeed Khan/AFP/Getty Images
২০১৪: টিকিট বিক্রিতে দুর্নীতি
ব্রাজিলে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশ্বকাপের টিকিট বিতরনে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয় আর্জেন্টিনার ফিফা কর্মকর্তা জুলিও গ্রোডোনার বিপক্ষে৷ ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই মারা যান তিনি৷
ছবি: Juan Mabromata/AFP/Getty Images
২০১৫: ব্যাপক ধরপাকড়
দুর্নীতির অভিযোগে ২৬ মে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯ ফিফা কর্মকর্তাসহ ১৪ জন৷ ফিফা সভাপতি নির্বাচনের ঠিক আগে গ্রেপ্তার হলেন তাঁরা৷ এ কেলেঙ্কারির পর ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি উঠলেও সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa
7 ছবি1 | 7
সন্দেহ ও সেই সঙ্গে গুজব যে, ২০০৬ সালে জার্মানির ‘‘গ্রীষ্মের রূপকথা'', অর্থাৎ ফুটবল বিশ্বকাপ সংঘটিত হয় কেনা ভোটে; জার্মানি এই বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগই পায় এশিয়ার একাধিক ফুটবল ফেডারেশনের ভোট উৎক্রোচের মাধ্যমে কেনার ফলে৷ অর্থাৎ যে ৬৭ লাখ ইউরোর কথা হচ্ছে, সেটি ছিল এক ধরনের ‘স্লাস ফান্ড' বা ঘুসের তহবিল৷
কেলেঙ্কারির একটির পর একটি খুঁটিনাটি ফাঁস হচ্ছে আর নিয়ার্সবাখ ও ডিএফবি-র অন্যান্য কর্মকর্তারা তাতে জড়িয়ে পড়ছেন৷ নিয়ার্সবাখকে বিদায় নিতে হল৷ এরপর যে জার্মান ফুটবলের কিংবদন্তি ফ্রানৎস বেকেনবাউয়ারকে নিয়েও টান পড়বে না, তারা কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ জার্মান টেলিভিশনে এবং স্বভাবতই টুইটারে বেকেনবাউয়ারকে নিয়ে হাসিঠাট্টা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে৷
চিয়ারান ফাহি ছিলেন এপি সংবাদ সংস্থার ক্রীড়া সাংবাদিক৷ তিনি জার্মান টেলিভিশনের ‘এক্সট্রা ড্রাই' নামধারী একটি প্রোগ্রামে প্রদর্শিত একটি কার্টুন রিটুইট করেছেন৷ কার্টুনে নিয়ার্সবাখ বেকেনবাউয়ারকে জিগ্যেস করছেন, ‘আপনি কবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন?' বেকেনবাউয়ার উত্তর দিচ্ছেন, ‘শিগগীরই৷ আগে শুধু কয়েকটা জিনিস ভুলে যেতে হবে৷'
জার্মানিতে ফুটবল জাদুঘর
জার্মানিতে ফুটবল খুব জনপ্রিয়৷ এ দেশের জাতীয় খেলাও ফুটবল৷ তাই ফুটবলের কদরও খুব বেশি৷ ডর্টমুন্ডে নতুন এক ফুটবল জাদুঘর গড়ে কদর আরো বাড়িয়ে দিল জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন৷
ছবি: DFM
নয় বছরের শ্রমের ফসল
ডর্টমুন্ডে নয় বছর ধরে চলেছে ফুটবলের জাদুঘর তৈরির কাজ৷ অবশেষে শেষ হয়েছে সেটা৷ ৮০০ টন স্টিল দিয়ে সুদৃশ্য এই জাদুঘর তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউরো৷
প্রতিবেশী দেশ সুইজারল্যান্ড থেকে যে দলটি ’৫৪-র বিশ্বকাপ জিতে এনেছিল সেই দলের খেলোয়াড়দের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে ফুটবলের এই অত্যাধুনিক জাদুঘরে৷
ছবি: DFM
ফুটবল ‘গ্রহ’
অনেকটা ঘূর্ণায়মান গ্রহের আদলেই গড়া হয়েছে ১৩ ফুট ব্যসের এই বল৷ জাদুঘরে বলটি ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে ফুটবলে জার্মানির বড় বড় সব অর্জনের ইতিহাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
থরে থরে ট্রফি
জার্মানি এ পর্যন্ত ফুটবলে যত ট্রফি জিতেছে সবগুলোরই রেপ্লিকা রয়েছে এই বিশেষ কামরায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
ইতিহাসেই বিশ্রাম
এই কামরাটি যেন এক মিনি স্টেডিয়াম৷ স্টেডিয়ামের গ্যালারির মতো আসনে বসে বিশ্রাম নিতে পারেন দর্শনার্থীরা৷ বিশ্রামের ফাঁকে পর্দায় জার্মান ফুটবলের ইতিহাসটাও দেখে নেয়া যায়৷
ছবি: DFM
ধাঁধার জগত
এটি ফুটবল ধাঁধার ঘর৷ এখানে রয়েছে প্রোগ্রাম করা কিছু কম্পিউটার৷ ফুটবল বিষয়ক অনেক প্রশ্ন এবং তার উত্তর কম্পিউটারগুলোর নখদর্পণে৷ অনেক ফুটবলামোদী দর্শনার্থীই কম্পিউটারের সঙ্গে নিজের ফুটবল জ্ঞান ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগটা ছাড়েন না৷
ছবি: DFM
7 ছবি1 | 7
ডিএফবি-র দুই ভাইস-প্রেসিডেন্ট রাইনার কখ এবং রাইনহার্ড রাউবাল আপাতত কাজকর্ম চালাবেন৷ নিয়ার্সবাখ স্বয়ং ফিফা ও উয়েফার কার্যনির্বাহী পরিষদে তাঁর আসন ছাড়ছেন না৷ কখ জানিয়েছেন, ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ কিভাবে জার্মানিতে এলো, ডিএফবি এবার সে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখবে৷ সেই প্রসঙ্গে তিনি বেকেনবাউয়ারকে তিনি যা জানেন, তা জানানোর অনুরোধ করেছেন৷
রুশ কেলেঙ্কারি
একদিকে ক্রীড়াজগতের কর্মকর্তাদের নিয়ে কেলেঙ্কারি, অন্যদিকে ক্রীড়াবিদ ও রাষ্ট্র পর্যায়ে ডোপিং নিয়ে কেলেঙ্কারি – স্পষ্টতই খেলাধুলার জগতে আজ খেলার চেয়ে ধুলাই বেশি, বলে মনে হতে পারে৷ বিশ্ব ডোপিং প্রতিরোধী সংগঠন ওয়াডা-র একটি সুদীর্ঘ রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ায় অ্যাথলিটরা সরকারি সাহায্য নিয়ে নিয়মিত ডোপিং করে থাকেন, বিশেষ করে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইভেন্টগুলিতে৷
প্রাথমিক রুশ প্রতিক্রিয়া হলো, ব্যাপারটাকে উপেক্ষা করো; খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান দিও না৷ অপরদিকে ভয়: ‘ওরা কি আমাদের রিও কেড়ে নেবে?' রুশ ‘স্পোর্টস এক্সপ্রেস' পত্রিকার যে শীর্ষক৷ রিও বলতে রিও ডি জানিরোর অলিম্পিক, রাশিয়ার অ্যাথলিটরা যা থেকে বাদ পড়তে পারে, কারণ গোটা রাশিয়ান ফেডারেশনকেই সাস্পেন্ড করার কথা উঠেছে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ যার সপক্ষে৷