জার্মান ভাষা ক্রমাগত বদলাচ্ছে৷ অনেকের কাছে এটা স্বাভাবিক৷ অনেকের কাছে হতাশাব্যঞ্জক৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্যোটে ইন্সটিটিউট জার্মান ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷
বিজ্ঞাপন
গ্যোটে ইন্সটিটিউটের জেনেরাল সেক্রেটারি ইয়োহানেস এবার্ট এখন বেশ স্বস্তি বোধ করতে পারেন৷ অনেক বছর থমকে থাকার পর আবার যেন প্রাণ পেয়েছে জার্মান ভাষা৷ দেশ বিদেশে জার্মান শিখতে আগ্রহীদের তালিকাটা বড় হচ্ছে৷
জার্মান ভাষা শেখায় আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে
‘‘এই মুহূর্তে আমাদের কোর্সে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ২৫০.০০০'' বলেন গ্যোটে ইন্সটিটিউটের ইয়োহানেস এবার্ট৷ বিশেষ করে স্পেন ও গ্রিসে জার্মান শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ কারণ সেখানকার তরুণরা মনে করছেন স্বদেশের চেয়ে জার্মানিতে চাকরির সম্ভাবনা উজ্জ্বল৷
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশ্বে জার্মান ভাষা ক্রমেই আবার আদৃত হচ্ছে৷ বিশেষ করে যারা বিদেশি ভাষা হিসাবে জার্মান শিখছে৷ তবে প্রশ্ন জাগতে পারে, যাদের মাতৃভাষা জার্মান, তারা এ ব্যাপারে কী ভাবছেন? মাতৃভাষার বিকাশে কতটাই বা আগ্রহী তাঁরা?
আরো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত
জার্মান ভাষা ইন্সিটিটিউটের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ৮০ শতাংশ জার্মান মনে করেন, এই ভাষার জন্য আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত৷ তাই সংশ্লিষ্টদের আবার নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে৷
এই পরিপ্রেক্ষিতে গ্যোটে ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে জার্মান ভাষা ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধারাবাহিক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷ এতে যোগ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ, ভাষাবিশেষজ্ঞ ও ভাষাতত্ত্ববিদ৷
কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে
আয়োজকদের মধ্যে আছেন ডুডেন প্রকাশনা সংস্থা ও জার্মান ভাষা ইন্সটিটউট৷ এই উপলক্ষ্যে দেশ বিদেশে ২৫টি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷ চলবে প্রায় সারা বছর জুড়ে৷ এতে ৪টি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে: ডিজিটালকরণ, বিশ্বায়ন, অর্থনীতি ও ভাষা – সেই সাথে বিজ্ঞানের ভাষা হিসাবে জার্মান৷ আয়োজকরা খোঁজার চেষ্টা করছেন এই সব বিষয়ে জার্মান ভাষার চ্যালেঞ্জটা কী রকম? তাঁরা একমত হয়েছেন যে, ভাষার ক্ষেত্রে অনেক কিছু প্রভাব বিস্তার করে ও পরিবর্তন আনে৷ যেমন মিডিয়া, ফেসবুক, এসএমএস, টুইটার ইত্যাদি৷ এসব আমাদের যোগাযোগের ধরনটাকে বদলে দিচ্ছে৷
জার্মান ভাষা জানার বিকল্প নেই
জার্মান ভাষা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত৷ ভারত-বাংলাদেশের মতো বিশ্বের আরো অনেক দেশে এ ভাষা শেখার জন্য রয়েছে গ্যোটে ইন্সটিটিউট৷ তবে জার্মানিতে থেকে সে’ দেশের ভাষা না জানলে যে পদে পদে সমস্যা!
ছবি: POOSHdesign/Reza Alaeddini
যদি ভাষা জানেন, সুবিধা পাবেন
যে কোনো দেশে থাকতে হলে সে দেশের ভাষা জানা খুবই জরুরি৷ তা না হলে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার তেমন কোনো সুযোগই থাকেনা৷ ভাষা না শেখার কারণে খালিদ, আইচো, শিরিয়া, আরিয়ানা বা রাইসার মতো অনেকেই নিজের দেশে চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করলেও জার্মানিতে শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে৷
ছবি: Doc RaBe - Fotolia.com
সেবিকা থেকে ক্লিনার
শিরিয়া কসোভো থেকে বেশ কয়েকবছর আগে স্বামী, সন্তান নিয়ে জার্মানিতে এসেছে৷ নিজের দেশে একটি হাসপাতালে নার্স বা সেবিকা হিসেবে কাজ করতো৷ প্রথমে ভাষা শেখাটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি বলে আর শেখাও হয়নি৷ বেঁচে থাকার জন্য এখন তাকে অন্যের বাড়িতে ক্লিনারের কাজ করতে হচ্ছে৷ জার্মান ভাষা জানা থাকলে সহজেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে হয়তো আবারও সেবিকার কাজ পেতে পারতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খালিদের অনেক দুঃখ
খালিদ পোল্যান্ডের একটি কন্সট্রাকশন ফার্মে সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করতো৷ ভাষা শেখেনি, তাই এখন নিজেকেই এ সব কাজে হাত লাগাতে হচ্ছে৷ ভাষা না শেখার কারণ জানতে চাইলে কিছুই বলেনা৷ তবে এখন বুঝতে পারছে সে ভাষা না শিখে ভুল করেছে এবং মানসিকভাবে অনেক কষ্টও পাচ্ছে৷ যদিও জার্মানিতে কম আয়ের বিদেশিদের জন্য বিনে পয়সায় ভাষা শিক্ষার কোর্স রয়েছে৷
ছবি: Kzenon - Fotolia.com
আরিয়ানা
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকা আরিয়ানা প্রায় দশ বছর আগে ইউক্রেন থেকে এসেছে৷ নিজের দেশে টুকটাক জার্মান ভাষা শিখেছিলো, তবে জার্মানিতে এসে আর শেখা হয়নি কোলে বাচ্চা থাকায়৷ তবে ওর স্বামীর জার্মান ভাষা মোটামুটি শেখাতে একটি চাকরি এবং জার্মানিতে থাকার অনুমতি পেয়েছে৷ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে আরিয়ানাকেও কাজ করতে হয়৷ স্বামীর সহায়তায় অগত্যা একটি সরকারি অফিসে মেঝে মোছার কাজই করছে সে এখন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বসনিয়ার মেয়ে মারিয়ম
১৫ বছর বয়সে বাবা মায়ের হাত ধরে জার্মানিতে এসেছে মারিয়ম৷ প্রথমদিকে কিছুটা অসুবিধা হলেও বাবা মায়ের উৎসাহে এবং নিজের মনোবলের কারণে ভালোভাবেই জার্মান ভাষা রপ্ত করতে পেরেছে৷ এখন সে নিজেই চাকরির জন্য অফিসে দরখাস্ত করছে৷ ওর চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে৷
ছবি: Bilderbox
জব সেন্টারে ঘোরাঘুরি
অনেকে প্রতি সপ্তাহেই চাকরির খোঁজে জব সেন্টারে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে৷ ভাষা না জানার কারণে ওদের জন্য তেমন কোনো চাকরির সুখবরও থাকেনা৷ তবে এরা সরকার থেকে বেকার ভাতা বা সামাজিক ভাতা পায় নিয়মিত৷
ছবি: dpa
ভাষা শিখে স্বপ্ন পূরণ
লায়লা ছোটবেলা থেকেই বাচ্চা ভালোবাসে তার ইচ্ছে বাচ্চাদের সাথে কাজ করবে৷ লায়লার জন্য ভাষা শেখা কোনো সমস্যাই ছিলোনা৷ সাধারণ স্কুলের পাশাপাশি আলাদাভাবে জার্মান ভাষা শেখার ক্লাস সে করেছে৷ যার ব্যয়ভার জার্মান সরকার বহন করেছে৷ কিন্ডারগার্টেনের ট্রেনিং শেষে পছন্দের চাকরিও সে পেয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বখাটে তরুণ
যারা জার্মান ভাষা শেখেনা, তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়৷ কোনো প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র এলেও সেগুলো তারা পড়তে বা বুঝতে পারেনা৷ ফলে সবসময়ই অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়৷ ভাষা না জানা এই প্রজন্মের অনেক ছেলে মেয়েকে পয়সার জন্য অন্যায় পথে পা বাড়াতেও দেখা যায়৷ কেউ কেউ আবার অন্য বাড়ির দরজায় গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে৷
ছবি: fotolia/imageteam
জন্ম থেকে জার্মানিতে, জার্মান ভাষার প্রতি আগ্রহ নেই
জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি রয়েছে৷ যাদের জন্ম জার্মানিতে, জার্মান স্কুলে পড়ে – তারপরও অনেকেই তেমন ভালো জার্মান ভাষা জানেনা৷ কারণ হিসেবে অনেক সময় বলা হয় জার্মান স্কুলের বাইরে অর্থাৎ নিজেদের মধ্য এরা সবসময়ই তুর্কি ভাষায় কথা বলে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
নারীদের ভাষা শেখার আগ্রহ খুব কম
নিজ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেকেই জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তাদের মধ্যে পুরুষরা কিছুটা জার্মান ভাষা শিখে বিভিন্ন দোকান, কারখানা, রেস্তোরাঁতে কাজ করছেন৷ এদেশে স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক বলে বাচ্চারাও স্কুলে যায়৷ তবে এসব পরিবারের খুব কম নারী জার্মান ভাষা শেখে৷ অনেক বছর থাকার পরও কথা বলতে পারেন না৷ যদিও এদেশে তুর্কি নারী সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের জন্য আলাদাভাবে ভাষা শেখার ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তিন বোন
পোল্যান্ড থেকে আসা এক পরিবারের তিনজন৷ ছোটবোন ভালো জার্মান ভাষা শিখেছে বলে মোটামুটি ভালো বেতনে দোকানে সেলস গার্লের চাকরি করছে৷ দ্বিতীয়জনের জার্মান ভাষার জ্ঞান আরো কম বলে সে একটি ফ্যাক্টরিতে জিনিসপত্র গোছানোর কাজ করে, যেখানে তাকে বেশি কথা বলতে হয়না৷ এবং স্বাভাবিকভাবেই বেতন বেশ কম৷ আর সবচেয়ে বড় বোন একদমই ভাষা জানেনা৷ তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোন বাড়িতে ক্লিনারের কাজও কেউ দিতে চায়না৷
ছবি: POOSHdesign/Reza Alaeddini
11 ছবি1 | 11
আমাদের পারিপার্শ্বিকতায় আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া লেগেছে৷ চারিদিকে নানা ভাষায় কলকলানি শোনা যায়৷ দৈনন্দিন জীবনে ঢুকে পড়ছে অনেক বিদেশি শব্দ৷ বেশিরভাগই ইংরেজি শব্দ৷ বলেন ইয়োহানেস এবার্ট৷ এর প্রভাব কি নেতিবাচক?
‘‘বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল ও বিজ্ঞানবিষয়ক কংগ্রেসের রিপোর্ট উত্তরোত্তর ইংরেজিতে প্রকাশিত হচ্ছে৷'' বলেন জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগ-এর প্রেসিডেন্ট নরবার্ট লামার্ট৷ যিনি পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ২৯ জানুয়ারি আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণ দেন৷
ভাষা পরিবর্তনশীল
অনেকে আবার বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখছেন৷ ‘‘ভাষা সবসময় পরিবর্তিত হয়েছে৷'' বলেন জার্মান ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক লুডভিশ আইশিঙার৷ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ফলে জার্মান ভাষাকে আরো ভুগতে হচ্ছে, এই ধারণাকেও খণ্ডন করেন তিনি৷
কোনো এক সময় নতুন ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ একটা রুটিনে পরিণত হবে৷ সম্পৃক্ত হবে ভাষার স্বাভাবিক ধারায়৷ বলেন লুডভিশ আইশিঙার৷
জার্মান ভাষা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সচেষ্ট ছিলেন তাঁদের বক্তব্যে কোনো ইংরেজি বা বিদেশি শব্দ ব্যবহার না করতে৷ কিন্তু প্রায়ই হোঁচট খেয়েছেন৷