সাদা পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ ঐ ঘটনার পর সেদেশে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বর্ণবাদ৷ ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা বিতর্ক হচ্ছে এ নিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
মিডিয়ার এ ধরনের সংবাদ ও প্রতিবেদনগুলি দর্শকদের কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে, ফার্গুসনের এই ঘটনায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে মনে করেন আফ্রো অ্যামেরিকান তরুণ টেলর অ্যাটকিন্স৷ তিনি তাঁর টুইটারে জানিয়েছেন, কীভাবে গণমাধ্যমে মাইকেল ব্রাউনকে উপস্থাপিত করা হয়৷ মাইকেলের প্রতিবেদনে এমন ছবি দেয়া হয়েছে যাতে তাঁকে একটি গুন্ডা দলের সদস্য হিসেবে মনে হতে পারে অচিরেই৷
অ্যাটকিন্স নিজের দু'ধরনের ছবি ‘পোস্ট' করেছেন #হ্যাশট্যাগ ‘ইফ দে গানড মি ডাউন' ব্যবহার করে৷ একটিতে একটু উদ্ধত পোশাক, অন্যটি বেশ মার্জিত৷ কিন্তু মার্কিন গণমাধ্যম কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রে বরাবরই নেতিবাচক ছবিটি ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
অ্যাটকিন্স লিখেছেন, শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে কিন্তু ছবি এবং তথ্য পরিবেশনে ঠিক উল্টোটা করা হয়৷ সেটাও টুইটার মারফত দেখিয়েছেন তিনি৷ মার্কিন গণমাধ্যম বরাবরই এই ছক ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যাটকিন্স৷
জার্মানির কৃষ্ণাঙ্গ শরণার্থীরা
জার্মানিতে বসবাসরত কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ তাহির ডেলাও জানান যে, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে৷ তবে তাঁরা এই বাধাধরা নিয়ম ভাঙার জন্য সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও ইন্টারনেটে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তিনি জানান, কৃষ্ণাঙ্গ দেখলেই ধরে নেয়া হয় যে, এরা মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত অথবা দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ বা বসবাস করছে৷
‘প্লিজ গুলি কোরো না’
সাদা পুলিশের হাতে নিরস্ত্র এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের মিসুরি রাজ্যের শহর ফার্গুসন৷ মাত্র ২১ হাজার অধিবাসীর এই শহরের প্রতিবাদের খবর এখন বিশ্ব মিডিয়ায়৷
ছবি: DW/M. Soric
ঘটনার সূত্রপাত
৯ আগস্ট রাত, নিরস্ত্র মাইকেল ব্রাউন নিহত হন পুলিশের গুলিতে৷ পুলিশ শ্বেতাঙ্গ আর ১৮ বছরের মাইকেল কৃষ্ণাঙ্গ৷ ব্রাউন বর্ণবাদের বলি হয়েছেন, এ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ-অধ্যুষিত ওই এলাকার বাসিন্দারা৷
ছবি: Getty Images
‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’
বিক্ষোভের সময় প্রতিটি বিক্ষোভকারী হাত উপরে তুলে ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন৷ স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘হ্যান্ডস আপ, ডোনট শ্যুট’ বলে৷
ছবি: Reuters
কিছুটা স্তিমিত
৯ আগস্ট থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত বিক্ষোভ হয়েছে ফার্গুসনে৷ তবে ২০ তারিখ বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ কিছুটা স্তিমিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রথম আফ্রো-অ্যামেরিকান হোল্ডার৷
ছবি: Reuters
ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য
গত ১১ দিনে বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সদস্যদের পাঠান৷
ছবি: Getty Images
প্রতিবাদ রূপ নেয় সহিংসতায়
বিক্ষোভ কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল৷ মনে হচ্ছিল ফার্গুসন যে রণক্ষেত্র৷ বুধবারও ছয় বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷ এর আগে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গভীর রাতের দিকে কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে পানি ও প্রস্রাব ভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ছুড়ে মারলে কিছুটা উত্তেজনা ছড়ায়৷
ছবি: Reuters
বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগ
ফার্গুসনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ ফার্গুসনের জনসংখ্যা প্রায় ২১ হাজার৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকান-অ্যামেরিকান৷ কিন্তু নিরাপত্তা, প্রশাসন, রাজনীতিসহ সব বিভাগেই শ্বেতাঙ্গ মানুষের পদচারণা৷
ছবি: Reuters
আর এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু
১৯ আগস্ট দুই পুলিশের গুলিতে ২৩ বছর বয়সের আরেক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক সেন্ট লুইস এলাকায় নিহত হন৷ সে অঞ্চলের পুলিশ প্রধান স্যাম ডস্টন দাবি করেন, ঐ যুবক পুলিশদের দিকে ধেয়ে আসেন এবং হাতে থাকা ছুরি বের করে বলতে থাকেন, ‘‘আমাকে গুলি করো, মেরে ফেলো আমাকে’’৷ যুবকটি তাঁদের দিকে ধেয়ে এলে গুলি করতে বাধ্য হন তাঁরা৷
ছবি: Reuters
ঘটনার তদন্তে শুনানি
এরিক হোল্ডার বুধবার ব্রাউনের মৃত্যুর তদন্তকারীদের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ বুধবারই ঘটনার তদন্তে শুনানি শুরু হয়েছে বলে খবর৷ তবে ড্যারেন উইলসন নামের পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁর গুলিতে ব্রাউনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা – সে বিষয়ে এখনও ‘ফাইনাল’ সিদ্ধান্ত জানা যায়নি৷
ছবি: DW/M. Soric
8 ছবি1 | 8
ডয়চে ভেলেকে তাহির ডেলাও বলেন, এ কারণেই আফ্রিকা থেকে জার্মানিতে মানুষ খুব একটা আসতে চায় না৷ শুধুমাত্র ভালো চাকরি পেলে তবে তারা আসে৷ আর জার্মান গণমাধ্যম এ সব মানুষদের কথা না লিখে বরাবরই নেতিবাচকভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের উপস্থাপিত করে বলেও দাবি করেন তিনি৷
রেডিও সাংবাদিক কনস্টানটিনা ফাসিলিও-এনৎস ডয়চে ভেলেকে বলেন, কর্মক্ষেত্রেও কেবল কালো নয়, অন্যান্য অধিবাসীদেরও তাঁদের দেশ উল্লেখ করে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়৷ যেমন আহমেদ কোলোন থেকে এসেছেন তা না বলে বলা হয় তিনি একজন তুর্কি যিনি কোলোনে থাকেন৷ এছাড়া মুসলিম নারীর কথা লিখলেই জার্মান গণমাধ্যম স্কার্ফ বা হিজাব পড়া নারীদের ছবি দেখায়৷
কনস্টানটিনার মতে, এর অর্থ এটা জার্মান সমাজের বদ্ধমূল ধারণা যে মুসলিম নারী হলেও তাঁরা হিজাব পরে থাকেন৷ তাই সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের গবেষণা এবং প্রতিটি দেশের অধিবাসীদের ব্যাপারে মৌলিক কিছু ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷