এসেন শহরের ফুডব্যাংকের সিদ্ধান্ত ঘিরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে জার্মান রাজনীতিতে৷ মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলও৷ পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের৷
বিজ্ঞাপন
বিতর্ক ছিলই৷ বিতর্ক আরো জোরদার হলো৷ জার্মানির এসেন শহরের একটি এনজিও-র ‘হঠকারি' সিদ্ধান্ত সারা দেশে রাজনৈতিক আলোড়ন ফেলে দিয়েছে৷ ঘটনার জের এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন৷
ঘটনার সূত্রপাত গত ডিসেম্বর মাসে৷ পশ্চিম জার্মানির এসেন শহরের একটি এনজিও দরিদ্র মানুষদের জন্য একটি ফুডব্যাংক চালু করেছে বহুদিন যাবৎ৷ সপ্তাহের একটি দিন সেখানে রেস্তোরাঁ এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের এক্সপায়ারি ডেটের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া খাবার নিয়ে এসে বিনামূল্যে দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়৷ অভিযোগ, গত ডিসেম্বরে এনজিও-টি সিদ্ধান্ত নেয় যে, কেবলমাত্র জার্মান নাগরিকদেরই এই সুযোগ দেওয়া হবে৷ যুক্তির সপক্ষে এনজিও-র আধিকারিক জর্গ সারতর বলেন, মূলত বৃদ্ধ জার্মানেরাই আগে সেখানে খাবার নিতে আসতেন৷ কিন্তু গত কয়েকবছরে প্রায় ৭৫ শতাংশ শরণার্থী ওই শহরে পৌঁছেছেন৷ তাঁরাও খাবার নেওয়ার জন্য লাইন দিতে শুরু করেছেন৷ শরণার্থীদের দেখে বৃদ্ধ জার্মানেরা ভয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ সে কারণেই সাময়িক সময়ের জন্য তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এর কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায়, এনজিও-র ভ্যানের গায়ে কেউ বা কারা ‘নাৎসি' শব্দটি জুড়ে দিয়েছেন৷ এরপরেই বিষয়টি রাজনৈতিক পরিসরে আলোড়ন সৃষ্টি করে৷
বাম রাজনীতিকেরা প্রথম থেকেই পুরো বিষয়টির তীব্র সমালোচনা শুরু করেন৷ বাম রাজনীতিক সারা ভাগেনক্নেশ্ট বলেন, এর জন্য দায়ী সরকার৷ কেন এ ধরনের ছোট ছোট এনজিও-র হাতে এ ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ এবং বলেন, জার্মানি যথেষ্ট সমৃদ্ধ রাষ্ট্র৷ অর্থের কোনো অভাব নেই৷ কেন সেখানে শরণার্থীদের কিংবা দরিদ্র মানুষদের এক্সপায়ারি ডেটের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া খাবার বিতরণ করা হবে?
এনজিও-র আধিকারিক অবশ্য বলেন, বিষয়টি নিয়ে অকারণেই রাজনৈতিক শোরগোল হচ্ছে৷ ‘নাৎসি' শব্দটি যাঁরা লিখেছেন, তাঁরা নেহাতই বালখিল্য আচরণ করেছেন৷ এর সঙ্গে নাৎসি ভাবনা বা জাতিবিদ্বেষের কোনো যোগ নেই৷ বরং বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ায় তাঁর কর্মীরাই কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন৷
বামেদের অবশ্য বক্তব্য, বিষয়টি এক ধরনের জাতিবিদ্বেষ৷ কারণ কেবলমাত্র জার্মান নাগরিকদের খাবার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বীকার করেন যে, ঘটনাটি অনভিপ্রেত৷ আরো সচেতন ভাবে সমস্যার মোকাবিলা করা দরকার ছিল৷ প্রয়োজনে তাঁর সরকার পদক্ষেপ করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন৷
গত কয়েকবছরে জার্মানিতে চোখে পড়ার মতো শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে৷ সিরিয়ায় নতুন করে উদ্ভূত পরিস্থিতির ফলে শরণার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই মনে করাহচ্ছে৷ এদিকে জার্মান নাগরিকদের মধ্যেও শরণার্থীদের নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত৷ এমন পরিস্থিতিতে এসেন শহরের ঘটনা সমস্যা আরো জটিল করবে বলেই বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন৷
এলিজাবেথ শুমাখার/এসজি
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷