জার্মানিতে নতুন সরকার গঠনে প্রাথমিক আলোচনা ব্যর্থ হবে, এটা ভাবা যায়নি৷ আর এখন সংখ্যালঘু সরকার অথবা নতুন নির্বাচন, কোনোটাই অসম্ভব নয়৷ তবে এটা পরিষ্কার: ম্যার্কেলের জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা, লিখছেন ডয়চে ভেলের ইনেস পোল৷
বিজ্ঞাপন
ব্রেক্সিট, ট্রাম্পের জয়ের পর হয়ত এটাই বাকি ছিল৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হওয়া৷ জার্মানি একটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীল এবং সফল দেশ, ইউরোপের হৃদয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইঞ্জিন বা চালিকাশক্তি৷ এমন একটি দেশে সরকার গঠন এখন একেবারে অনিশ্চিত!
রবিবার মধ্যরাতে মুক্ত গণতন্ত্রী বা এফডিপি দলের নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার ঘোষণা দেন যে, জোট গঠনে প্রাথমিক আলোচনা ভেস্তে গেছে৷ তিনি জানান, ভুলভাবে সরকার পরিচালনার চাইতে বরং সরকার গঠন না করাই ভালো৷
জার্মানিতে সরকার গঠন করবে জামাইকা কোয়ালিশন?
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের পর সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ সিডিইউ-সিএসইউ ওএসপিডি-কে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট নয়, নতুন সরকারের রং হতে পারে কালো-হলুদ-সবুজ৷ অর্থাৎ সিডিইউ-সিএসইউ-এর সঙ্গে জোট গড়তে পারে এফডিপি ও সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
জার্মানিতে বিদেশি পতাকার রং
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আবারো নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করেছে সিডিইউ বা খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা৷ অর্থাৎ চতুর্থবারের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর হতে চলেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু সরকার গঠনের ক্ষেত্রে চিরাচরিত কালো-হলুদ নয়, দেখা দিতে পারে জামাইকা, কেনিয়া বা ট্র্যাফিক লাইটের মতো কোয়ালিশন৷
ছবি: Getty Images
কালো-লালের দিন শেষ?
চার বছর আগে, সিডিইউ-সিএসইউ আর সামাজিক গণতন্ত্রী, মানে এসপিডি দল একত্রে জোট সরকার গঠন করেছিল৷ অর্থাৎ বৃহৎ কোয়ালিশনের রং ছিল কালো-লাল৷ কিন্তু ২০১৭ সালের সংসদীয় নির্বাচনের পর এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস বেশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে এবার আর মহাজোটের সম্ভাবনা নেই৷ বরং বিরোধী দল হিসেবেই সংসদে বসবে এসপিডি৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
তৃতীয় বৃহত্তম দল এএফডি
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা জার্মানির জন্য বিকল্প দল (এএফডি)৷ এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে৷ তুলনামূলকভাবে জার্মানির রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন দল হলেও, প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাস পরের নির্বাচনেই প্রায় পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে সাড়া ফেলে দেয় এই দল৷ আর এবার, সেই এএফডি-ই তৃতীয় বৃহত্তম দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
জামাইকা কোয়ালিশন
নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালেই এএফডি-র সঙ্গে জোট বাঁধতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি, মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি), সবুজ দল এবং বামদলের মতো বড় দলগুলি৷ নির্বাচনের পরেও তারা সেই অবস্থানেই রয়েছে৷ তাই এএফডি যদি জোটের বাইরে থেকে যায়, তবে সরকার গঠন করতে সিডিইউ-সিএসইউ দলের হাত ধরতে পারে এফডিপি আর সবুজ দল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কেনিয়া কোয়ালিশন
ভোটের অঙ্ক অনুযায়ী অবশ্য আরো একটি কোয়ালিশনের সুযোগ আছে৷ আর সেটা হচ্ছে সিডিইউ-সিএসইউ, এসপিডি এবং সবুজ দলের, যদিও প্রথম দুটি দলেরই সম্মিলিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে৷ অর্থাৎ কেনিয়ার ফ্ল্যাগের রঙে কালো-লাল-সবুজের৷ অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এ সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিলেও গত বছর স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যেও কিন্তু জোট গঠন করেছিল এই দলগুলি৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
লাল-লাল-সবুজ
এসপিডি আর বামদলের সঙ্গে সবুজ দলের জোট হলে তা হতে পারতো লাল-লাল-সবুজের জোট৷ তবে সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফলে এসপিডি দলের ভরাডুবির ফলে সে সম্ভাবনা আর নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Michael Reichel
ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশন
যথেষ্ট আসনসংখ্যা না থাকার কারণে লাল-হলুদ-সবুজ বা এসপিডি-এএফডি আর সবুজ দলেরও আর জোট গড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.Büttner
7 ছবি1 | 7
জোট সরকার গঠন নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহের দীর্ঘ আলোচনার পর লিন্ডনার এই কঠিন কথাগুলো বলেন৷ মূলত প্রতিটি দলের ভিন্ন মতাদর্শের কারণে চাওয়া-পাওয়ায় অসংগতি ছিল৷ আর সে জন্যই এবারের আলোচনা সফল হয়নি৷
কট্টরপন্থি দল এএফপি সংসদে
এবারই প্রথমবারের মতো অলটারনেটিভ ফর জার্মানি বা কট্টরপন্থি এএফডি দল জার্মান সংসদে প্রবেশ করেছে৷ নির্বাচনে তাদের জয় জোট সরকার গঠনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ আসলে যে সংসদে সাতটি দল প্রতিনিধিত্ব করছে, সেখানে একটা সহজ সমাধান আশা করা যায় না৷ এসডিপি নতুন জোটের অংশ হতে প্রত্যাখ্যান করার পর, ম্যার্কেল ১২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো যেন ক্ষমতাধর হয়েও ক্ষমতার প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন৷
সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দলের খারাপ ‘পারফর্মেন্স'-এর পরই বোঝা গিয়েছিল যে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আলোচনায় এবার ব্যর্থ হতে পারেন ম্যার্কেল৷ যদিও ম্যার্কেলকে নতুন দিকনির্দেশনা দিয়ে নতুন ধারার জোট গঠনে সাহায্য করতে চাচ্ছে, কিন্তু শুধু তাদের চাওয়ায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়৷
ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতি যখন প্রতিবন্ধকতা
নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ৷ শরণার্থী ইস্যুতে ম্যার্কেলের নিরপেক্ষ নীতি নাৎসিপন্থি দল এফডিপিকে শক্তিশালী করেছে, আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পেছনেও যা অন্যতম কারণ৷ তার মানে আমি এটা বলছি না যে, যেসব মানুষের সাহায্য দরকার তাদের সাহায্য না করা৷ কিন্তু এটাও ঠিক যে অন্যকে সাহায্য করার আগে নিজের কথা ভাবতে হবে, আগে নিজেকে বাঁচাতে হবে৷
জোট সরকার গঠনে এই আলোচনা ভেস্তে যাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে অর্থনৈতিক সাফল্য জনগণের মন থেকে শরণার্থীদের নিয়ে জার্মানির ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার শঙ্কা মুছে ফেলতে পারছে না৷
জোট সরকারের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় সোমবার সকালে কেবল জার্মানরাই উদ্বিগ্ন হননি, উদ্বেগ দেখা দিয়েছে পুরো ইউরোপে৷ কেননা এই সমস্যার সমাধান হতে কয়েক সপ্তাহ না কয়েক মাস, কত সময় লাগবে, তা কারো জানা নেই৷
ইনেস পোল/এপিবি
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷