1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান সংসদে উড়বে না রংধনু পতাকা

১৪ জুলাই ২০২৫

জার্মান আইনসভায় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকের গুরুত্ব কতটা, সেই নিয়ে বিরোধী দল বামপন্থি ও গ্রিন পার্টির সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন জার্মানির সংসদ বুন্ডেসটাগের প্রেসিডেন্ট ইয়ুলিয়া ক্লকনার৷

জার্মানির সংসদ বুন্ডেসটাগের প্রেসিডেন্ট ইয়ুলিয়া ক্লকনারকে দেখা যাচ্ছে৷
মার্চ মাসের শেষ থেকে বুন্ডেসটাগের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ক্লকনার৷ কূটনীতিকদের মতে, তিনি একাধারে লড়াকু, কিন্তু রক্ষণশীল৷ জার্মানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন ইয়ুলিয়া৷ ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance

তিনি রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস বা সিডিইউ দলের সদস্যা৷ বর্তমানে তার উপরেই সংসদের প্রশাসনিক কাজকর্মের দায়িত্বভার৷ সাম্প্রতিক এই উত্তেজনার সূত্রপাত প্রাইডের রংধনু পতাকা সরানো নিয়ে৷ এই পতাকা এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের গৌরবের প্রতীক৷ ক্লকনারের স্পষ্ট নির্দেশ, সংসদীয় দফতরগুলো থেকে সমস্ত  রংধনু পতাকা সরিয়ে ফেলতে হবে৷ সংসদে কোনও প্রতীক বা পতাকা প্রদর্শন মূলতঃ নিষিদ্ধ! সংসদীয় মুখপাত্রের কথায়, অফিসের জানালায় প্রদর্শিত গৌরবের এই পতাকা বাইরে থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা নিয়মের পরিপন্থি৷

কী এই নিয়ম?

বাস্তবিকই এই নিয়মটা আছে৷ বুন্ডেসটাগের নিয়মাবলীর ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে যে, ‘‘জার্মান বুন্ডেসটাগের যে দফতরগুলিতে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারেন, এবং যে দফতরগুলি বাইরে থেকে দেখা যায় সেগুলির দরজা, দেয়াল, জানালা কোথাওই কোনও নোটিস, পোস্টার, প্রতীক বা স্টিকার লাগানো চলবে না৷'' যদিও অতীতে পতাকা টাঙানোয় অনুমোদন ছিল৷ কিন্তু ইয়ুলিয়া এখন পতাকার বিরুদ্ধেও খড়্গহস্ত৷ বামদলের সদস্য স্টেলা মেরেডিনো ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বুন্ডেসটাগে তার দফতরে রংধনু পতাকা টাঙানো ছিল বলে ফেডারেল পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল৷

মাতৃত্বে সাম্যের জন্য লড়ছেন দুই নারী

07:07

This browser does not support the video element.

আচমকা নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত

মার্চ মাসের শেষ থেকে বুন্ডেসটাগের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ক্লকনার৷ আগে তিনি কৃষিমন্ত্রী ছিলেন৷ কূটনীতিকদের মতে, তিনি একাধারে লড়াকু, কিন্তু রক্ষণশীল৷ জার্মানির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন ইয়ুলিয়া৷ তার অন্যতম দায়িত্ব বুন্ডেসটাগের সেশনগুলি যতদূর সম্ভব নিরপেক্ষ ভাবে পরিচালনা করা৷ যাতে বিতর্ক ও আলোচনাগুলো যুক্তি-সহকারে সামলানো যায়৷ পাশাপাশি, বুন্ডেসটাগের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বও তার৷ অথচ, এই ইয়ুলিয়াই পরিচিত বামেদের ও গ্রিন পার্টির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করার জন্য৷ শুধু তাই নয়, তার মন্তব্যের নিশানায় এসেছেন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস দলের সদস্যরাও৷ অথচ, ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস হাতে হাত মিলিয়ে দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে৷

জার্মানির ঐতিহ্যশালী ‘ক্রিস্টোফার স্ট্রিট ডে'-তে বুন্ডেসটাগের উপর গৌরবের পতাকা উত্তোলনের বিরোধিতা করার পরেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ক্লকনার৷ এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের ডেপুটি, এবং তাদের মিত্রদের ক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি৷ ২০২২ সাল থেকে এই পতাকা উত্তোলন একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে৷ যদিও ক্লকনারের দাবি, তিনি নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন, তাই জন্যই এই বিরোধিতা৷ বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, এর মধ্যে হালকা রক্ষণশীল মনোভাবের ইঙ্গিত দেখা গেলেও সেটা খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় হবে না৷

জানা গেছে, এখন থেকে ১৭ মে উত্তোলিত হবে গৌরবের পতাকা৷ ওই দিন ‘আন্তর্জাতিক হোমোফোবিয়া, বাইফোবিয়া ও ট্রান্সফোবিয়া বিরোধী দিবস'৷ ২০২৫ সালে ‘ক্রিস্টোফার স্ট্রিট ডে' পড়েছে ২৬ জুলাই৷ কিন্তু এ বছর ওই দিন বুন্ডেসটাগের উপর কোনও পতাকা উড়বে না৷ এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার মানুষের স্বাক্ষরিত একটি আবেদনও ক্লকনারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়নি৷

তবে কি গোঁড়ামিই এর কারণ?

বিরোধী দল ও সমালোচকদের দাবি, এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায় সমাজে যে যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, তা বুঝতে ক্লকনার ব্যর্থ৷ গ্রিন পার্টির সদস্য লামিয়া কদ্দোর জানিয়েছেন, ক্লকনার নিরপেক্ষ হওয়ার নামে মূলত রক্ষণশীল ধ্যান-ধারণা নিয়ে চলেন৷ তার দাবি, ‘‘এটা এমন এক সময় যখন এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের মানুষ ও সামাজিক ঔদার্যের উপর ক্রমাগত হামলা চলছে৷ এখন নিরপেক্ষতার আনুষ্ঠানিক ধারণা কিছুতেই বহন করতে পারি না আমরা৷ সকল মানুষের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করাই একজন রাজনীতিবিদের দায়িত্ব৷''

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস-ক্লকনারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন৷ সম্প্রতি সরকারি গণমাধ্যম এআরডি-র একটি টক শো-তে তার বিতর্কিত মন্তব্য, ‘‘বুন্ডেসটাগ সার্কাসের তাঁবু নয়৷'' বিপুল ভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করে৷ যদিও সম্প্রতি এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সমর্থনে বার্তা দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ তিনি বলেন, ‘‘এলজিবিটিকিউ+ মানুষেরা যাতে একটি নিরাপদ ও সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন, তার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি৷'' সমকামী মানুষদের প্রতি আক্রমণের বিরুদ্ধেও সরব হন তিনি৷ যদিও বিরোধীদের সমালোচনার তীব্রতা কমেনি৷

তবে একটু অন্য রকম কথা বলেছেন ক্লকনারের এক জন ডেপুটি৷ বলা চলে, ক্লকনারের মতো তার ডেপুটিরাও নতুন কাজে যোগ দিয়েছেন৷ তাদেরই একজন, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট-এর জোসেফাইন অর্টলেব জার্মানির ‘ডি সাইট' পত্রিকাকে বলেন, তার দফতরে একটি গৌরবের পতাকা টাঙানো রয়েছে৷ তার দাবি, ‘‘এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতীককে দমনকরা হচ্ছে, বিষয়টি তা নয়৷'' জোসেফাইন, গ্রিন পার্টির ওমিদ নৌরিপোর এবং ক্লকনারের আর এক জন ডেপুটি এই বছর ২৬ জুলাই বার্লিনে বক্তৃতা দেবেন৷ তবে, গৌরবের প্যারেডে এ বছর বুন্ডেসটাগের কোনও সজ্জিত গাড়ি বা প্ল্যাটফর্ম থাকবে না... তার কারণ, ক্লকনার সেটাও নিষিদ্ধ করেছেন৷

জেনস থুরাও/এসটি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ