জোট সরকারে বিষয়টি নিয়ে বহুদিন ধরে আলোচনা চলেছে৷ সামাজিক গণতন্ত্রী পরিবার মন্ত্রী মানুয়েলা শোয়েজিগ এবার জার্মানিতে যৌনকর্মীদের ‘অমানবিক পরিস্থিতির' অন্ত ঘটানোর ডাক দিলেন৷
বিজ্ঞাপন
দোসরা জুন ছিল আন্তর্জাতিক যৌনকর্মী দিবস৷ সেই দিনেই জার্মান সংসদ পরিকল্পিত প্রস্তাবিত পতিতাবৃত্তি আইনটি নিয়ে প্রথমবারের মতো আলোচনা করেছে৷ জার্মানিতে ২০০১ সালে গণিকাবৃত্তিকে বৈধ করা হয়৷ তখনকার চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার তখন গণিকাবৃত্তিকে একটি ‘পরিষেবা' বলে ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু তখন থেকে যে হারে মহিলাদের অংশত ভুয়ো আশা ও প্রলোভন দেখিয়ে পূর্ব ইউরোপ বা আফ্রিকা থেকে জার্মানিতে নিয়ে এসে শোয়েজিগ-উল্লেখিত ‘অমানবিক পরিস্থিতিতে' জার্মানির বিভিন্ন রেজিস্ট্রিকৃত ও অ-রেজিস্ট্রিকৃত গণিকালয়গুলিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে সরকারের যে কিছু একটা করা উচিৎ, সেটা সকলেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন৷
কিন্তু সেটা যে কি,তা নিয়ে দৃশ্যত এখনও মতানৈক্য আছে৷ গণিকাদের বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন অর্থাৎ নাম লেখাতে বাধ্য করার অর্থ, তাদের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ করা৷ তবুও সরকারপক্ষ এটাকে অন্যায় মনে করছেন না, এমনকি গণিকাদের সম্মতি নিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কথাও ভাবা হচ্ছে৷ সঙ্গে থাকছে অন্তঃসত্ত্বা গণিকাদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা, অথবা সাধারণভাবে গণিকাদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা৷ এ সব নিয়েই আলোচনা হচ্ছে৷
অন্যদিকে কিছু বিধিনিষেধেরও প্রয়োজন, কেননা, জার্মানির পরিবার মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘জার্মানিতে একটা আলুভাজার দোকান খোলা যত কঠিন, একটি বেশ্যালয় খোলা তার চেয়ে সহজ৷'' তাই পতিতালয়গুলির জন্য সরকারি লাইসেন্সের কথা ভাবা হচ্ছে৷
এছাড়া পতিতালয়গুলো যে টেলিফোন কোম্পানির মতো ‘ফ্ল্যাট রেট' চালু করেছে, সেটাও নিষিদ্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে৷ আর থাকছে পতিতার গ্রাহকদের জন্য কন্ডোম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা৷ জোর করে যাদের পতিতাবৃত্তিতে আসতে বাধ্য করা হয়েছে, জেনেশুনে তাদের কাছে যাওয়া মানবপাচার সংক্রান্ত আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে৷
দুই বিরোধী দল বামদল ও সবুজদের মতে কিন্তু এই নতুন আইনের ফলে শুধু গণিকাদের উপর চাপ ও কড়াকড়িই বাড়বে, কিন্তু তাঁদের যারা শোষণ করছে সেইসব গণিকালয়ের মালিক ও দালালদের কোনো অসুবিধা হবে না৷ শুধু আরো কিছু অসহায় তরুণী আরো আইনবহির্ভূত, আরো অ-সুরক্ষিত, আরো অসহায় হয়ে পড়বে বলে দল দুটির আশঙ্কা৷
এসি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
পতিতাবৃত্তি নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশা৷ কিন্তু কোনো যুগে, কোনো দেশেই মানুষ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি, আজও করে না৷ তবে বিশ্বের বহু দেশেই পতিতাবৃত্তি বৈধ এবং সেখানে যৌনকর্মীরা নিয়মিত আয়করও দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
হল্যান্ডের ‘পতিতাপল্লী’ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ
নেদারল্যান্ডসে পতিতাবৃত্তি শুধু বৈধ নয়, ইউরোপের এই দ্বীপদেশটির পতিতাপল্লী সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিখ্যাত৷ ঐ ‘রেডলাইট জোন’ দেখতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে আমস্টারডামে৷ নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও দেহব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ৷
ছবি: picture-alliance/AP
জার্মানি এবং ফ্রান্সে কঠোর আইন
জার্মানি এবং ফ্রান্সেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’দেশেই যৌনকর্মীদের এই ব্যবসা করতে হয় কঠোর আইন মেনে৷ জার্মানির কিছু শহরে এখনো যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমে খদ্দের ডাকতে পারেন না, এভাবে খদ্দের সংগ্রহ করা সেসব জায়গায় আইনত দণ্ডনীয়৷ ফ্রান্সেও ২০১৪ সালে এমন একটা আইন হয়েছে, যা মেনে যথেচ্ছ দেহব্যবসা করা খুব কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইডেন আর নরওয়েতেও নিয়ন্ত্রিত পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্স ২০১৪ সালে যে আইন প্রবর্তন করে, সেটা প্রথম চালু হয়েছিল সুইডেনে, ১৯৯৯ সালে৷ এ কারণে আইনটি ‘সুইডিশ মডেল’ হিসেবে পরিচিত৷ এ আইনে যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করে দালালদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’টি দেশে ১৯ বচর বয়স না হলে কেউ দেহব্যবসায় আসতে পারেন না৷ যৌনকর্মীদের যাতে কোনো যৌনরোগ না হয়, কিংবা তাঁদের মাধ্যমে খদ্দেরদের মাধ্যে যাতে এইডস, সিফিলিস বা অন্য কোনো রোগ ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হয়৷ অবশ্য শুধু সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতে নয়, জার্মানিতেও ঐ একই নিয়ম৷
ছবি: AFP/Getty Images
গ্রিস এবং তুরস্কে পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত
গ্রিস এবং তুরস্কেও পতিতাবৃত্তি পুরোপুরি বৈধ, তবে দেহ ব্যবসার আইন খুব কঠিন৷ জার্মানির মতো এই দু’টি দেশেও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া যৌনকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান কিনা, তা সবসময় তদারক করা হয়৷ স্বাস্থ্যকার্ডেই লেখা থাকে স্বাস্থপরীক্ষার সব তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
যে দুই দেশের পতিতাপল্লীতে ধীরে চলা মানা
ব্রিটেন আর আয়ারল্যান্ডের পতিতাপল্লী বা ‘রেড লাইট জোন’-এর প্রায় সব আইনই জার্মানির মতো ছিল৷ তবে সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু বেসরকারি সংস্থার দাবিতে এতে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে৷ ব্রিটেনের রেড লাইট জোন-এ এখন যেমন ধীরে গাড়ি চালানো নিষেধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাউকে জোর করে পতিতা বানানো যায় না
ইউরোপের সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ৷ তবে আইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশভেদে একটু হলেও অন্যরকম৷ যেমন স্পেন এবং পর্তুগালেও দেহব্যবসা বৈধ৷ কিন্তু স্পেনে কাউকে জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মী বানানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় অন্যরূপ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অধিকাংশ দেশেই যৌনব্যবসা বৈধ৷ তবে কিছু দেশে মাফিয়া এবং মানবপাচার বড় সমস্যা হয়ে ওঠায়, এই ব্যবসার ওপর কড়াকড়ি এবং তদারকি বেড়েছে৷ দেহব্যবসাকে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে রয়েছে কঠোর আইন৷ তারপরও দেশ দু’টিতে মাফিয়া চক্রের আধিপত্য রয়ে গেছে৷
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
প্রতিবেশী হয়েও নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আলাদা
নিউজিল্যান্ডে যৌনব্যবসা একেবারেই বৈধ৷ তবে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজ্যে এই ব্যবসা এখনো অবৈধ৷ ২০০৩ সালে আইন করে সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যৌনব্যবসাকে বৈধ করে দেয় নিউজিল্যান্ড৷
ছবি: picture-alliance / rolf kremming
এশিয়ায় লুকোনো পতিতাবৃত্তি
ভারতের পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ তারপরও পতিতাবৃত্তি চলে আড়ালে-আবডালে৷ রাস্তায় নেমে পতিতারা খদ্দের সংগ্রহ করতে পারেন না৷ খদ্দেররা অর্থের বিনিময়ে যৌনক্ষুধা মেটাতে যায় রাতের আঁধারে৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে পতিতালয় কমলেও মাসাজ পার্লার এবং আবাসিক হোটেলে প্রায়ই চলে পুলিশি অভিযান৷ খদ্দেরসহ পতিতা আটকের খবর আসে তখন৷ থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে পতিতাবৃত্তি চলে অবাধে৷ তবে দেশ দুটিতে এই ব্যবসা আইনের চোখে অবৈধ৷