দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ পরবর্তী অবস্থা নিয়ে বাৎসরিক রিপোর্টের ওপর সংসদীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির সাংসদরা ছিলেন নিজেদের মধ্যেই৷ আর তাতে জার্মানির দুই অঞ্চলের চিত্র খানিকটা ফুটে ওঠে৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিবছরের মতো এবারও জার্মান সংসদে সাবেক পূর্ব জার্মানি সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘বিকশিত প্রাকৃতিক অঞ্চল'৷ ১৯৯০ সালে তত্কালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল সাবেক পূর্ব জার্মানি সম্পর্কে এই রকম একটি চিত্রই তুলে ধরেছিলেন৷ এর কয়েক মাস পরেই পূর্ব জার্মানিতে স্বৈরশাহীর পতন হয়৷ একত্রিত হয় দুই জার্মানি৷ চেষ্টা করা হয় দুই অংশের জীবনযাত্রার মান কাছাকাছি আনতে৷ প্রতিবছর জার্মান সংসদে এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়৷ এতে পূর্ব ও পশ্চিমের বেড়ে ওঠা নিয়ে লক্ষ্য করা যায় একেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি৷
পরিসংখ্যানকে অগ্রাহ্য করা যায় না
কিন্তু কেউ বেকারত্বের হার বা কর্মক্ষেত্রে বেতনের ব্যাপারে পরিসংখ্যানকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না৷ তবে পরিসংখ্যানকেও আবার বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়৷
বিরোধী বামদল ডি লিংকের ডিটমার বার্টশ বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে ১.২ মিলিয়ন বিমাযোগ্য কর্মক্ষেত্র পূর্বাঞ্চল থেকে হারিয়ে গিয়েছে৷ অর্থাৎ প্রায় ১৮ শতাংশ৷ অন্যদিকে সরকারি সিডিইউ দলের সাংসদ মার্ক হাউপ্টমান বলেন, ‘‘জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর পূর্বাঞ্চলে এখন বেকারত্বের হার সর্বনিম্ন৷'' যদিও এই হার ১১ শতাংশের মতো, পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় দ্বিগুণ৷
বার্লিন প্রাচীরের পতনের ২৫ বছর পর ডিটমার বার্টশের মূল্যায়ন: ‘‘পশ্চিমের অনুকরণে পূর্বের গঠন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছে৷'' অপর দিকে হাউপ্টমান মনে করেন পূর্বাঞ্চলে বেকারত্ব সম্পূর্ণ দূর করার সম্ভাবনা অবাস্তব নয়৷
দৃষ্টিভঙ্গিতে বিরাট পার্থক্য
দুই সাংসদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিরাট পার্থক্যের কারণ, তাঁদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা৷ এছাড়া রয়েছে বয়সের ব্যাপারটিও৷ বার্টশ সাবেক পূর্ব জার্মানির সরকারি দল এসইডি-র সদস্য ছিলেন৷ কমিউনিজমের পতনের সময় তাঁর বয়স ছিল ৩০৷ আর হাউপ্টমানের জন্ম ১৯৮৪ সালে৷ পুনরেকত্রীকরণের সময় তিনি ছিলেন বালক৷ টিনএজে সিডিইউর সদস্য হন এই সাংসদ৷
পুনর্গঠিত শহরগুলিতে বার্টশের চোখে পড়ে বহু খালি দোকানপাট৷ হাউপ্টমান খেয়াল করেন তরুণদের মধ্যে পূর্ব জার্মানির একনায়কতন্ত্রকে হালকা করার একটা প্রবণতা৷ উদাহরণস্বরূপ ‘সবকিছুই খারাপ ছিল না' টিভি প্রোগ্রামটির উল্লেখ করেন তিনি৷ তবে এই দুই রাজনীতিবিদই সব কিছুই সাদা-কালোর ঘেরাটোপে দেখছেন না৷ বার্টশ পূর্বের যে কোনো উন্নয়নে খুশি হন৷ হাউপ্টমান উঁচু আশাবাদ সত্ত্বেও পুবের গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত৷ জন্মহার হ্রাস ও তরুণ জনগোষ্ঠীর পশ্চিমে পাড়ি দেওয়ার কারণে বিশেষজ্ঞ শ্রমিকের অভাব দেখা দিচ্ছে সেখানে৷ যা মধ্যম শ্রেণির কর্মপ্রতিষ্ঠানগুলির জন্য বিপজ্জনক৷
বিশ্ব ভ্রমণ: জার্মানির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের শিল্প
বার্লিন দেয়াল শিল্প ইতিহাসকে বিভক্ত করেছে৷ তাই সমান্তরালভাবে ৬০ বছরের জার্মান শিল্পের ইতিহাস ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ নামে এই প্রদর্শনীতে ফুটে উঠেছে৷ এর আয়োজক ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স৷
ছবি: Julian Röder
পুনরেকত্রীকরণের শিল্প
এই দেয়াল শিল্প ইতিহাসকে বিভক্ত করেছে৷ তাই সমান্তরালভাবে ৬০ বছরের জার্মান শিল্পের ইতিহাস এখানে উঠেছে ফুটে৷ ইনস্টিটিউট ফর ফরেন কালচারাল রিলেশন্স ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’ নামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে৷ এখানে তৎকালীন পূর্ব জার্মানির আলোকচিত্রী সিবিলে ব্যার্গেমান সোভিয়েত ব্লক ভাঙার ক্রমিক চিত্র তুলে ধরেছেন৷
ছবি: Nachlass Sibylle Bergemann/Ostkreuz
গ্রাউন্ড জিরো
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি৷ নাৎসিবাহিনীর অত্যাচারের চিত্রের পর আর কিছু কি দেয়ার থাকতে পারে? এ যেন ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকে কনটেম্পোরারি আর্ট বা সমকালীন শিল্পের ইতিহাস শুরু৷
ছবি: Bernd Borchardt/VG Bild-Kunst Bonn 2013
অসঙ্গতিপূর্ণ শিল্পের গোপন রহস্য
গ্যারহার্ড আল্টেনবুর্গ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ভিন্নধর্মী শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম৷ তাঁর কাজে কখনোই সামাজিক বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি৷ অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আল্টেনবুর্গ সৃষ্টি করেছিলেন গোপন কিছু করার৷ পুনরেকত্রীভূত জার্মানিতে এখন তাঁর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত৷ এমনকি বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদেও তাঁর চিত্রকর্ম ঝোলানো আছে৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst, Bonn 2013
পশ্চিমে বিমূর্ত ছবির প্রতি সমর্থন
পশ্চিম জার্মান চিত্রশিল্পী ব্যার্নার্ড শুলৎসের ছবিতে কাব্য যেমন আছে, তেমনি আছে একটা বিমূর্ত ধারণা৷ আইএফএ জানিয়েছে, আল্টেনবুর্গের মধ্যেও একই ধরণের শৈল্পিক চিন্তাভাবনা কাজ করেছে৷ ১৯৫৯ সালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কনটেম্পোরারি প্রদর্শনীতে তাঁদের দু’জনের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পূর্ব জার্মানির ফটোগ্রাফিতে স্বাধীনতা
গত ৬০ বছরের ফটোগ্রাফিতে পুরো জার্মানির যে বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে, তা হোল স্বাধীন আর্ট ফর্ম৷ তৎকালীন পূর্ব বার্লিনের ফটোগ্রাফার আর্নো ফিশার ১৯৫৭ সালে এই রাস্তার ছবিটি তুলেছিলেন৷ ফিশারের ছবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, বরং মানুষের অস্তিত্ব বোঝানোর আগ্রহই তাঁর শিল্পকর্মে বেশি লক্ষ্যণীয়৷
ছবি: Bernd Borchardt/Erbengemeinschaft Arno Fischer
উত্তেজনামুলক নয়, পার্থিব
ফটোগ্রাফার সারগেসহাইমার অনেকটা আর্নো ফিশারের মতো, যা দেখেন তারই ছবি তুলতে ভালোবাসেন৷ সারগেসহাইমারের আসল নাম কার্ল-হাইনৎস হার্গেসহাইমার৷ তিনি যতটা না উত্তেজনামূলক বিষয়বস্তুর ছবি তুলতে ভালোবাসতেন, তার চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন পার্থিব কোনো কিছুর ছবি তুলতে৷
ছবি: Chargesheimer
পূর্বের জ্যামিতিক শিল্প
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর আইএফএ জিডিআর শিল্পীদের শিল্পকর্মকে সমর্থন দেয়৷ হ্যার্মান গ্ল্যোকনারও তাঁদের মধ্যে একজন৷ এখানে দেখা যাচ্ছে দেয়ালের যে পাশে যে শিল্পীদের বসবাস, তাঁদের কাজের মধ্যে সম্পর্ক৷
ছবি: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পশ্চিমের জ্যামিতিক শিল্প
দ্বিমাত্রিক রং, ছন্দময় ভঙ্গি: সাবেক পশ্চিম জার্মানির অংশ মিউনিখ শহরের গ্রাফিক শিল্পী গ্যুন্টার ফ্রুট্রুংকের কাজের ধরণটা একেবারেই অন্যরকম৷ তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কাজগুলোর একটি হলো জার্মানির বিখ্যাত স্বল্প মূল্যের বিপণি আল্ডি-র প্লাস্টিক ব্যাগ৷
ছবি: Bernd Borchardt/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
গতানুগতিক শিল্পের বিরুদ্ধে
ইওসেফ বয়েসের এই চিত্রকর্মটির নাম ‘আই ডু নট নো আ উইকএন্ড’৷ ১৯৬০ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে তিনি দর্শকদের তাঁর ঘণ্টাব্যাপী ‘পারফর্মেন্স’ দিয়ে প্ররোচিত করেছিলেন৷ তাঁর মতো করে পূর্ব-পশ্চিমের বিভেদ নিয়ে এমন কাজ করার মতো সাহস কোনো পূর্ব জার্মান শিল্পী দেখাননি৷
ছবি: Uwe Walter/VG Bild-Kunst Bonn, 2013
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী
অনেক বছর আগে যখন নারীর সম অধিকারের বিষয়টি এত ব্যাপক ছিল না, তখন নারী শিল্পীদের সুযোগ দিয়েছিল আইএফএ৷ ৭০-এর দশকে নারী বিপ্লবীদের পাশাপাশি ভূমিকা রেখেছিলেন নারী শিল্পীরাও৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম কাথারিনা ফ্রিচ৷
ছবি: Copyright: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
ড্রেসডেনে ড্যুসেলডর্ফ স্কুল অফ ফটোগ্রাফি
পূর্ব বা পশ্চিম? স্টেশন সিরিজের কয়েকটি ছবির একটি এই ছবিটি৷ ছবিটি ড্যুসেলডর্ফ স্কুল অফ ফটোগ্রাফির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেটি বার্ন এবং হিয়া বেশারের তৈরি৷ তাঁরা দু’জন শিল্পকারখানার চুল্লির উপর ফটোগ্রাফির জন্য সুপরিচিত৷
ছবি: VG Bild-Kunst Bonn, 2013
ফটো সাংবাদিকতার চেয়েও বেশি কিছু
প্রথম দেখায় এটি শুধু ২০০১ সালে ইটালিতে অনুষ্ঠিত জি-এইট সম্মেলনের বিক্ষোভের ছবি ছাড়া কিছুই নয়৷ কিন্তু ভালোভাবে দেখলে এটায় একটা নতুন ধরণ চোখে পড়বে, জানান আইএফএ-র কিউরেটর ভিনজেন৷ ফটো সাংবাদিক জুলিয়ান ব়্যোডার এই কিউরেটরের নতুন আবিষ্কার৷
ছবি: Julian Röder
12 ছবি1 | 12
পুনরেকত্রীকরণ সম্পূর্ণ হয়নি
অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় রাষ্ট্রসচিব হিসাবে ইরিস গ্লাইকে পূর্বাঞ্চলের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত৷ কোনো কিছু করতে হলে বিশেষ করে এলবে নদীর পূর্বে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের কথাই ভাবেন তিনি৷ তবে পশ্চিমাঞ্চলের দুর্বল পরিকাঠামোর এলাকাগুলিও তাঁর চোখ এড়িয়ে যায় না৷ পূর্বাঞ্চলের জীবনমান ক্রমেই উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়ায় আনন্দিত হন থ্যুরিঙ্গেন থেকে আসা ৪৯ বয়সি এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু এখনই সমাপ্তি টানা যাবে না৷ তাঁর মতে, ‘‘যেহেতু জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি৷''
এটা বোঝা যায় সংসদের দেড় ঘন্টার বিতর্কে বক্তাদের তালিকার দিকে দৃষ্টি দিলে৷ ১২ জন সাংসদই এসেছেন পূর্বাঞ্চল থেকে৷ আর পুবের সব ফ্র্যাকশনের সাংসদই একটি বাক্য উচ্চারণ করেছেন, ‘‘আমি পূর্ব জার্মানির বলে গর্বিত৷''