জার্মানিতে মহাজোট সরকার গড়ার প্রস্তুতির মাঝে বার্লিনে জার্মান সরকারের উপর হ্যাকিং হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ বিদেশি হ্যাকাররা কতকাল ধরে হামলা চালিয়ে কতটা তথ্য সংগ্রহ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
‘এপিটি২৮' রাশিয়ার এক সাইবার গুপ্তচর গোষ্ঠী জার্মানির পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে৷ গোপন সফটওয়্যার ইনস্টল করে তারা কিছু তথ্যের নাগাল পেয়েছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে৷ সম্ভবত গত বছরের পুরোটা সময় জুড়েই হামলা চলেছে৷ ডিসেম্বর মাসে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির টনক নড়ে৷ শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর এমন হামলা চালানো হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ জার্মানির দৈনিক ‘ডি ভেল্ট' এক মার্কিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করেছে৷
ঘটনা ঘটে যাবার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে৷ জার্মান নিরাপত্তা সংস্থাগুলি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে বলে সরকার জানিয়েছে৷ জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ প্রথম এই খবর প্রকাশ করে৷ তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে৷ ফেডারেল সরকারের সব কম্পিউটার হ্যাকারদের কবজায় চলে গিয়েছিল কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ আইভিবিবি নামের এই সরকারি নেটওয়ার্কের অবকাঠামো ব্যবহার করেই প্রায় সব সরকারি কাজকর্ম চলে৷ জার্মান সংসদের দুই কক্ষের অনেক কাজও তার মধ্যে পড়ে৷ জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ বুন্ডেসটাগ-এর ডিজিটাল কমিটি বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে৷
‘এপিটি২৮' গোষ্ঠীর পেছনে আসলে রুশ সরকারের বিভিন্ন দফতরের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলে অনেক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মনে করেন৷ তাদের লোকবল, অর্থবল ও ক্ষমতার প্রেক্ষিতে অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত৷ ২০১৫ সালে জার্মান সংসদের কম্পিউটার ব্যবস্থার উপর হামলার পেছনেও একই গোষ্ঠীর হাত ছিল৷
জার্মানি তথা ইউরোপে এমন সাইবার হামলার অন্যতম লক্ষ্য কী? অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, রুশ সরকার এই সব দেশের রাশিয়া ও ইউক্রেন সংক্রান্ত নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহী৷ উল্লেখ্য, ইউক্রেন সংকটের জের ধরে রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে৷ রাশিয়ার উপর ইইউ কিছু নিষেধাজ্ঞাও চাপিয়েছে৷
সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধরন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বাড়ছে তত বাড়ছে সাইবার অপরাধের ঘটনা৷ ফলে আর্থিক ক্ষতি থেকে নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা৷ এমনই কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিচয় চুরি
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করছেন অনেকে৷ এরজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়৷ সমস্যাটা সেখানেই৷ যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ সেক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে৷ কারণ আপনার যে পরিচয় চুরি হয়ে গেছে!
ছবি: picture alliance/maxppp/S. Mortagne
স্প্যাম ও ফিশিং
একদিন ই-মেল খুলে দেখলেন আপনি অনেক টাকার লটারি জিতেছেন৷ সেটা পেতে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে বলা হচ্ছে৷ হঠাৎ করে বড়লোক হওয়ার লোভে আপনি সেই তথ্যগুলো দিয়েও দিলেন৷ ব্যস, যা হবার হয়ে গেছে৷ পরে দেখলেন টাকা পাওয়ার বদলে আপনার কাছে যা আছে সেটাও চলে যাচ্ছে! অর্থাৎ আপনি ফিশিং-এর শিকার হয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTOs
ব়্যানসমওয়্যার
উন্নত বিশ্বে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ অপরাধীরা ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে অন্যের কম্পিউটারের ফাইলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়৷ তারপর ঐ কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বার্তা পাঠায় এই বলে যে, ফাইল ফেরত পেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
সাইবার মবিং বা সাইবারবুলিং
হয়ত মজা করার জন্য কিংবা ইচ্ছে করে একজনকে কষ্ট দিতে তার বন্ধুরা একজোট হয়ে হয়রানি করে থাকে৷ বাস্তবে স্কুল-কলেজে এমনটা হয়ে থাকে৷ আজকাল ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে ওঠায় ভার্চুয়াল জগতে এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি আর মজার পর্যায়ে না থেকে ভয়ানক হয়ে ওঠে৷ ফলে যাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে সে হয়ত এমন কিছু করে ফেলে যা কারও কাম্য থাকে না৷
ছবি: Sylvie Bouchard - Fotolia.com
ম্যালভার্টাইজিং
ধরুন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে আছেন৷ সেখানে একটি বিজ্ঞাপন দেখে ক্লিক করলেন৷ ব্যস আপনার কম্পিউটারে একটি কোড ডাউনলোড হয়ে গেল৷ এটি কোনো নিরীহ কোড নয়৷ অপরাধীরা এর মাধ্যমে আপনাকে হয়রানির পরিকল্পনা করবে৷ সুতরাং...৷
ছবি: Getty Images
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড স্কিমিং
রেস্টুরেন্ট, সুপারমার্কেটের বিল পরিশোধ, এটিএম থেকে টাকা তোলা, অর্থাৎ এমন কোথাও যেখানে আপনার ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডকে যন্ত্রের মধ্যে ঢোকাতে হয় সেখান থেকেও তথ্য চুরি হতে পারে৷ এটাই কার্ড স্কিমিং৷ স্কিমার যন্ত্রের মাধ্যমে এই তথ্য চুরি করা হয় বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Baltagiannis
ফোন ফ্রড
অচেনা কোনো নম্বর থেকে (বিশেষ করে বিদেশ থেকে) মিসড কল পেলে সঙ্গে সঙ্গে কলব্যাক না করাই ভালো৷ কারণ কে জানে হয়ত ফোন ফ্রড অপরাধীরা এই কলটি করেছিলেন৷ আর আপনি কলব্যাক করতে যে টাকা খরচ করলেন তার একটি অংশ পেয়ে গেল অপরাধীরা!