ইদানীং কট্টরপন্থি সালাফিস্টরা জার্মানির ভুপার্টাল শহরে স্বঘোষিত পুলিশ হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছেন৷ বিরক্ত, বিচলিত করছেন জনগণকে৷ জার্মান সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এখন৷
বিজ্ঞাপন
বেশ কিছুদিন ধরে ভুপার্টাল শহরের কেন্দ্রে কিছু তরুণকে রাতের দিকে বিশেষ করে তুর্কি দোকানপাট, ক্যাফে বা গেমরুমের সামনে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে৷ তাদের পরনে কমলা রঙের ওয়েস্ট কোট, যাতে লেখা ‘শারিয়া পুলিশ'৷ অ্যালকোহল, মাদক, পর্নোগ্রাফি, জুয়াখেলা, সংগীত, কনসার্ট ইত্যাদি চলবে না, ইত্যাদি লেখা লিফলেট বিলি করেন তাঁরা৷
সালাফিস্টরা তাদের এই কর্মকাণ্ডের ভিডিও তৈরি করেছেন৷ যার মূল প্রতিপাদ্য: ‘‘ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন কাটাতে হবে৷''
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
ইতোমধ্যে অন্যান্য শহরেও শারিয়া পুলিশ নিয়োগ করা হবে বলে জানান এই গোষ্ঠীর অনুসারীরা৷ রাস্তাঘাটে ডিসকোথেকের সামনে তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা৷ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে ও মসজিদে যেতে অনুপ্রাণিত করেন৷
‘‘জার্মানির মাটিতে শারিয়াকে বরদাস্ত করা হবে না৷ এইভাবে পুলিশের সুনাম নষ্ট হতে দেওয়া হবে না৷'' বলেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের৷ তাঁর কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আইনমন্ত্রী হাইকো মাস জানান, ‘‘বিচার ও আইন চালানোর দায়িত্ব একমাত্র রাষ্ট্রের হাতে৷ স্বঘোষিত শারিয়া পুলিশের হাতে নয়৷ পাশাপাশি একটি বেআইনি বিচারালয় সহ্য করা হবে না৷''
এক্ষেত্রে আইনগত স্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই বলে ভুপার্টালের নিরাপত্তারক্ষা বাহিনী সমস্যায় পড়েছে৷ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সভা আইনভঙ্গ করায় তদন্ত করা হচ্ছে৷ ডিসকোথেক, গেমরুম বা সান স্টুডিওতে ঢোকার পথে বাধা দিলে সেটা নিগ্রহ বলে গণ্য করা হবে কিনা কিংবা শারিয়া লেখা ওয়েস্ট কোট পরা বেআইনি কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন৷
শহরটিতে পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ জনসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করলে জরুরি নম্বরে ফোন করতে৷ নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব একান্তই রাষ্ট্রের হাতে৷ আতঙ্ক জাগানো বা বিরক্ত করা সহ্য করা হবে না৷ বলেন ভুপার্টালের পুলিশ প্রেসিডেন্ট বির্গিটা রাডারমাখার৷
উল্লেখ্য, ইসলামি আইন-কানুনকে আরবি ভাষায় শারিয়া বলা হয়৷ কোরান ও হাদিসের ওপর ভিত্তি করেই চলে এই নিয়ম কানুন৷ পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জীবনযাপনের এক দিক নির্দেশনা এটি৷