জার্মান সামরিক বাহিনীতে প্রায় দেড় হাজার মুসলমান কাজ করছেন৷ ধর্মীয় পরামর্শ পেতে তাঁরা কয়েক বছর ধরে ইমাম নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন৷ তবে এখনো দাবি পূরণ হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
মরোক্কান মা-বাবার ঘরে জন্ম নেয়া নারিমান রাইনকে ২০০৫ সাল থেকে জার্মান নৌবাহিনীতে কাজ করছেন৷ ইতিমধ্যে তিনি দুইবার আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে রাইনকে বলেন, খ্রিস্টান সৈন্যদের পরামর্শ দেয়ার জন্য সামরিক বাহিনীতে যাজকরা আছেন, কিন্তু মুসলিমদের জন্য কোনো ইমাম নেই৷ সামরিক বাহিনীতে এই ধর্মীয় বৈষম্য দূর করতে তিনি কয়েক বছর ধরে ইমাম নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে আসছেন, কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন৷
রাইনকে বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় তিনি সবসময় একটি বিষয় মাথায় রাখেন যে, যে-কোনো সময় তাঁর মৃত্যু হতে পারে৷ তিনি চান, মৃত্যুর পর ইসলামি রীতি অনুযায়ী তাঁর শরীর ধোয়া হোক এবং কাফনের কাপড়ে মোড়ানো হোক৷ এজন্য আফগানিস্তানে থাকার সময় তিনি সবসময় তাঁর কাছে কাফনের কাপড় রাখতেন বলে জানিয়েছেন৷
এদিকে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ইমাম নিয়োগ নিয়ে ‘জার্মান ইসলাম কনফারেন্স'-এর (ডিআইকে) সঙ্গে আলোচনা চলছে৷ তবে ডিআইকের প্রতিনিধিদের অভিযোগ, সরকার অনীহার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে৷
জার্মানির বিভিন্ন মুসলিম সংস্থা নিয়ে গঠিত জাতীয় ইসলাম পরিষদের প্রধান বুরহান কেসিচি জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে একবার ডিআইকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল৷ তারা ইমাম বিষয়ে উপদেষ্টামন্ডলিতে কারা থাকতে পারেন তাঁদের নাম চেয়েছিল৷ তবে পরে আর যোগাযোগ করেনি৷ ‘‘মনে হচ্ছে তারা এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি চান না,'' অভিযোগ তাঁর৷
আফগানিস্তান ত্যাগ করছে জার্মান সেনাবাহিনী
আফগানিস্তানে জার্মান সামরিক বাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ এর কম্ব্যাট মিশন শেষ হচ্ছে ২০১৪ সালে৷ তাই সেনাসদস্যদের সঙ্গে কয়েক হাজার টন যুদ্ধ উপকরণ এবং অন্যান্য পণ্যও ফেরত আনতে হবে৷ বিছানা থেকে শুরু করে বিশাল ট্যাংক রয়েছে তালিকায়৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
বিশাল কর্মযজ্ঞ
জার্মান সেনাবাহিনীর সাড়ে চার হাজারের মতো সেনা সদস্য, সতের শত যান এবং ছয় হাজারের মতো কন্টেইনার রয়েছে আফগানিস্তানে৷ ২০১৪ সালে আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনী আইসাফ এর কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার আগেই জার্মান সেনাবাহিনীর অনেক সম্পদ ফিরিয়ে আনা হবে৷ এই সম্পদের মধ্যে মেশিনগান থেকে শুরু করে পঞ্চাশ টন ওজনের ট্যাংক রয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
ট্রাবজন হাব
হিন্দুকুশ থেকে বিভিন্ন পণ্য ফিরিয়ে আনতে জার্মানি যে দুটি হাব ব্যবহার করছে তার একটি তুরস্কের ট্রাবজন৷ এই বন্দর হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাবে বুন্ডেসভেয়ার-এর বিভিন্ন পণ্য৷ তবে আফগানিস্তান থেকে ট্রাবজন পর্যন্ত পণ্য পৌঁছানোর প্রক্রিয়া সহজ নয়৷
ছবি: cc-by-nd/Sebastian Wilke/Bundeswehr
পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার
গত এগারো বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে জার্মান সেনাবাহিনী৷ তাদেরকে মূলত সেদেশের উত্তরে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ ইতোমধ্যে অনেক ক্যাম্প খালি করা হয়েছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Bienert
সবাই সম্ভবত ফিরছেন না
২০১৪ সালের শেষ নাগাদ সম্ভবত সকল জার্মান সেনা ঘরে ফিরবেন না৷ জার্মানি আইসাফের ম্যান্ডেট মেনে আটশো সেনা আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য আফগানিস্তানে রাখতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সব পণ্য ফিরবে না
আফগানিস্তানে পাঠানো কিছু জার্মান পণ্য ফেরত আনা হবে না৷ কিছু পণ্য বিক্রি অথবা ধ্বংসে করে ফেলা হবে৷ তবে অস্ত্রশস্ত্র কন্টেইনারে ভরে নিয়ে আসা হবে৷ ইতোমধ্যে এসব পণ্য জমা করা শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরেক হাব: মাজার-ই-শরিফ
আফগানিস্তান থেকে জার্মান সেনাবাহিনীর পণ্য ফিরিয়ে আনার আরেকটি হাব হচ্ছে মাজার-ই-শরিফ৷ সে দেশের চতুর্থ বড় এই শহর থেকে অধিকাংশ পণ্য বিমানে পরিবহন করা হচ্ছে৷ তবে পাকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজাকিস্তান হয়ে সড়ক পথেও কিছু পণ্য ফেরত আনা হবে৷ তবে নিরাপত্তার কারণে বেশি পণ্য এভাবে পরিবহন হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্ষণাবেক্ষণ এবং জীবাণুমুক্তকরণ
জার্মান সেনাবাহিনীর এসব পণ্যের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে কোন জীবাণু যাতে জার্মানিতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য এসব পণ্য জীবাণুমুক্ত করা হবে৷ জার্মানিতে এসব পণ্য প্রবেশের আগেই এটা করা হবে৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
বিমানে আফগানিস্তান ত্যাগ
বড় এবং ভারি যানবাহন পরিবহনের মতো বিমান জার্মান সামরিক বাহিনীর নেই৷ ফলে ছবির এই বিশাল সামরিক যান পরিবহনের জন্য একটি ইউক্রেনীয়-রাশিয়ান কনসর্টিয়ামের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে৷ এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক উড়ালে ৩৭ মিটার দীর্ঘ জায়গায় ১৫০ টন পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Weinrich
সরাসরি জার্মানিতে ফেরত
অস্ত্র এবং কারিগরিভাবে সংবেদনশীল বিভিন্ন পণ্য বিমানে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফেরত আনা হচ্ছে৷ ছবির ট্যাংকটি এই সুবিধা পাচ্ছে৷
ছবি: cc-by-nd/Bundeswehr/Schmidt.
বাকি পণ্য আসছে তুরস্ক হয়ে
অস্ত্রবিহীন গাড়ি, রেডিও এবং তাঁবুর মতো পণ্য সরাসরি জার্মানিতে আনা হচ্ছে না৷ আফগানিস্তান থেকে বিমানে এগুলো তুরস্কের ট্রাবজন বন্দরে আনা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by/Sebastian Wilke/Bundeswehr
জাহাজে প্রত্যাবর্তন
ট্রাবজন বন্দরে জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করছেন ১৭০ ব্যক্তি৷ এই বন্দর থেকে ত্রিশ হাজার বর্গমিটার পণ্য জাহাজে জার্মানিতে পাঠাতে কাজ করছেন তারা৷ সমুদ্রপথে বিভিন্ন পণ্য ট্রাবজান থেকে জার্মানিতে পোঁছাতে সময় লাগে দুই সপ্তাহের মতো৷
ছবি: Bundeswehr - PIZ SKB/Foto: Vanita Schanze
11 ছবি1 | 11
জার্মানির শাসক জোটের অংশীদার এসপিডি দলের প্রতিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র ফ্রিৎস ফেলগেনট্রয় ইমাম নিয়োগের বিষয়টি সমর্থন করেন৷ তবে কিছু বিষয়ে সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি৷ যেমন, তিনি বলছেন, মুসলমানদের সঙ্গে যোগাযোগ করার একটি সূত্র নেই, কারণ, জার্মানিতে ইসলামী সংগঠনের সংখ্যা অনেক৷
বছর কয়েক আগেও জার্মান সরকার মুসলমানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ‘টার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রেলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স' বা ডিটিব-এর সঙ্গে কথা বলতো৷ কিন্তু তুরস্কের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর সেটি আর হচ্ছে না৷ জার্মানির অভিযোগ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান বিদেশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাতে ডিটিবকে ব্যবহার করছেন৷
তবে নৌ কর্মকর্তা রাইনকে বলছেন, দুই দেশের সম্পর্কের কারণে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ধর্মীয় পরামর্শ পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেন না৷ তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেকে ইসলাম নিয়ে লেখাপড়া করেছেন৷ তাছাড়া সম্প্রতি অসনাব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইমামরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বিদেশি কোনো সরকারের সম্পর্ক নেই৷ এই ইমামদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন রাইনকে৷