জার্মানির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এমএডি ২০১৯ সালে সামরিক বাহিনীর ১৪ সদস্যকে চরমপন্থি হিসাবে চিহ্নিত করেছে৷ সংসদে জমা দেয়া এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে এমএডি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান ম্যাগাজিন ‘ডেয়ার স্পিগেল' বলছে, ১৪ জনের মধ্যে আট জন চরম ডানপন্থিআর চার জন চরমপন্থি ইসলামে বিশ্বাসী৷
প্রতিবেদনে সামরিক বাহিনীর আরও দুই সদস্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যাঁরা জার্মান রাষ্ট্র ও তার আইনকে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া প্রতিবেদনে আরও ৩৮ জনের কথা রয়েছে, যাঁদের মধ্যে জার্মান সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে৷
টাইমলাইন: উগ্র-ডানপন্থিদের সন্ত্রাসী হামলা
গত দশ বছরে উগ্র-ডানপন্থিদের অসংখ্য হামলা করেছে৷ এর মধ্যে কয়েকটি বড় ঘটনার দিকে ফিরে তাকিয়েছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Wire/D. Lawson
জার্মানি ২০০৯: ড্রেসডেন কোর্টে নারীকে ছুরিকাঘাত
২০০৯ সালের ১ জুলাই, ড্রেসডেনের জেলা জজ আদালতে মারওয়া এল-শেরবিনি নামের নারীকে ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয়৷ ঐ নারী ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট৷ স্বামী ও ছেলে সন্তান নিয়ে ড্রেসডেনে থাকতেন৷ ২৮ বছর বয়সি এক রাশিয়ান-জার্মানের বিরুদ্ধে কোর্টে কটূক্তির অভিযোগের সাক্ষ্য দেয়ায়, যুবক হামলা চালান৷ ঐ যুবক মারওয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘উগ্র মুসলিম’ বলে গাল দিয়েছিলেন৷ মারওয়া জার্মানিতে ইসলামবিদ্বেষের প্রথম হত্যার শিকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
নরওয়ে ২০১১: ব্রাইভিকের গণহত্যা
২০১১ সালের ২২ জুলাই অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রাইভিক নামের এক উগ্র ডানপন্থি যুবক একাই দু’টি ঘটনায় ৭৭ জনকে হত্যা করেন৷ তিনি প্রথমে অসলোর সরকারি ভবনে বোমা বিস্ফোরণ করেন এবং এরপর উটোয়া দ্বীপে নিরীহ তরুণদের এক সামার ক্যাম্পে গিয়ে গুলিবর্ষণ করেন৷ হামলার আগে তিনি একটি ইশতাহার প্রকাশ করেন৷ সেখানে তিনি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ‘ইউরোপের ইসলামীকরণ’-এর নিন্দা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Berit
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫: চ্যাপেল হিল শ্যুটিং
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ৪৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তি প্রতিবেশী তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেন৷ নিহতরা হলেন দেয়াহ বারাকাত, তাঁর স্ত্রী ইউসর আবু-সালহা ও তাঁর বোন রাজান আবু-সালহা৷ হামলাকারী হত্যাকাণ্ডের আগে নিজেকে একটি সংঘবদ্ধ ধর্মের বিরোধী বলে উল্লেখ করেন৷ এই হত্যাকাণ্ডে অনলাইনে ব্যাপক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়৷ টুইটারে #MuslimLivesMatter নামে হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়৷
২০১৫ সালের ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লেস্টনে এমানুয়েল আফ্রিকান মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চে এক শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণপন্থি গুলিবর্ষণ শুরু করেন৷ এটি যুক্তরাষ্ট্রে কালোদের সবচেয়ে পুরোনো চার্চ৷ গুলিতে নয়জন নিরীহ আফ্রিকান-অ্যামেরিকান মারা যান৷ এর মধ্যে একজন যাজকও ছিলেন৷ ২১ বছর বয়সি সেই হত্যাকারীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদ্বেষমূলক অপরাধে দণ্ডিত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
জার্মানি ২০১৬: মিউনিখে গুলি
২০১৬ সালের ২২ জুলাই মিউনিখের ১৮ বছর বয়সি এক তরুণ একটি শপিং মলে ঢুকে গুলি করা শুরু করেন৷ এতে ১০ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত হন৷ নিহতদের মধ্যে ঐ হামলাকারীও ছিলেন৷ হামলাকারী একজন ইরানি বংশোদ্ভুত জার্মান নাগরিক ছিলেন৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারী বর্ণবাদী মন্তব্য করছিলেন৷ তিনি অভিবাসীদের উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছিলেন৷
ছবি: Getty Images/J. Simon
যুক্তরাজ্য ২০১৭: ফিন্সবুরি পার্ক মসজিদে হামলা
২০১৭ সালের ১৯ জুন, ৪৭ বছর বয়সি এক ব্যক্তি উত্তর লন্ডনের ফিন্সবুরি মসজিদের সামনে ভ্যান চালিয়ে দিয়ে একজনকে হত্যা ও ১০ জনকে আহত করেন৷ আক্রান্তরা সবাই মুসলিম ছিলেন এবং রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন৷ ইসলামবিদ্বেষী ওই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Augstein
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭: শার্লটসভিলেতে নব্যনাৎসিদের ওপর গাড়ি হামলা
২০১৭ সালের ১২ আগষ্ট ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলেতে এক শ্বেতাঙ্গ নাগরিক বিরোধী শিবিরে হামলা চালান৷ বিরোধী শিবিরটিও সাদাদের ছিল এবং সেখানে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ও নব্য নাৎসিরা জড়ো হন৷ এতে এক নারী নিহত ও অনেকে আহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P.J. Richards
ক্যানাডা ২০১৭: কুইবেকে মসজিদে হামলা
২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে কুইবেকের ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে এক বন্দুকধারী সন্ধ্যার দিকে নামাজ পড়ার সময় হামলা চালান৷ এতে ছয় জন নিহত ও এক ডজনেরও বেশি মানুষ আহত হন৷ ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হামলাকে জঙ্গি হামলা বলে অভিহিত করেন৷
ছবি: Reuters/M. Belanger
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮: সিনাগগে হামলা
২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর ৪৬ বছর বয়সি এক বন্দুকধারী পিটসবুর্গের ইহুদীদের একটি উপাসনালয়ে হামলা চালান৷ এতে ১১ জন নিহত ও ৭ জন আহত হন৷ হামলাকারী হামলার সময় বারবার ইহুদীবিদ্বেষী মন্তব্য করতে থাকেন৷ মার্কিন ইতিহাসে ইহুদীদের ওপর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Rourke
জার্মানি ২০১৯: নববর্ষে বোট্রোপ ও এসেনে হামলা
মধ্যরাতের কিছু পর যখন সবাই নিউইয়ার উদযাপন করছিলেন, তখন ৫০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের দু’টি শহর বোট্রোপ ও এসেনে হামলা চালান৷ তিনি তার গাড়ি উদযাপনরত অভিবাসীদের ওপর চালিয়ে দেন৷ বোট্রোপে গাড়ি উঠিয়ে দেন সিরিয়ান ও আফগান দু’টি পরিবারের সদস্যদের ওপর৷ এতে আট জন আহত হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
নিউজিল্যান্ড ২০১৯: ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলা
ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে জোড়া হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন৷ একে উগ্র ডানপন্থিদের জঙ্গি হামলা বলে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ৷ বন্দুকধারী ব্যক্তি তার বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী ইশতাহার অনলাইনে প্রকাশ করেন এবং হামলার ঘটনা লাইভস্ট্রিম করেন৷ কিউই প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন ঘটনাকে নিউজিল্যান্ডের ‘একটি অন্ধকারতম দিন’ বলে মন্তব্য করেন৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Wire/D. Lawson
11 ছবি1 | 11
চরমপন্থি হয়েও উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা?
সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির সামরিক বাহিনীসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে চরমপন্থি মনোভাবাপন্নরা নিযুক্ত থাকার কথা উঠে এসেছে৷ কড়া হাতে চরমপন্থি আচরণ দমন করার চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷
এক সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আচরণের জন্য আদালতে মামলাও চলছে৷ এমএডির প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে এমন মনোভাব আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে৷ পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে যে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন পন্থার আশ্রয় নিচ্ছে সরকার৷
প্রায় ৫০০ জন সেনাসদস্যের গতিবিধি এই মুহূর্তে গোয়েন্দা বিভাগের নজরে রয়েছে, যার মধ্যে ৩৬০ জনের চরম ডানপন্থি মনোভাব থাকা অসম্ভব কিছু নয় বলে জানিয়েছে এমএডি৷