শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর জার্মান সামরিক বাহিনীর বাজেট কমেছে৷ ফলে বাধ্য হয়ে পুরনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন সেনারা৷ এমনও হয়েছে যে, একসঙ্গে সব বিমান ওয়ার্কশপে থাকায় প্রশিক্ষণ নিতে পারেননি বৈমানিকরা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান সংসদের সামরিক বাহিনী বিষয়ক কমিশনার হান্স-পেটার-বার্টেলসের তৈরি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
রিপোর্টে জানানো হয়, ২০১৭ সালের শেষের দিকে একসঙ্গে জার্মানির সব সাবমেরিন সংস্কারের জন্য ড্রাইডকে রাখা ছিল৷ এছাড়া, গত কয়েকমাসের মধ্যে এমনও সময় গেছে যখন বিমানবাহিনীর কাছে থাকা ১৪টি এ৪০০এম পরিবহণ বিমানের একটিও ওড়ার মতো অবস্থায় ছিল না৷ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ বিমানগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় ওয়ার্কশপে থাকায় বৈমানিকরা প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷
আফগানিস্তানে জার্মান সেনা
এক্ষুনি আফগানিস্তান থেকে ফিরছে না জার্মান সেনারা৷ আফগানদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেনা সদস্যদের আরো কিছুদিন সেখানে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি৷ ছবিঘরে থাকছে আফগানিস্তানে জার্মান সেনাদের অবদান ও তৎপরতা নিয়ে কিছু তথ্য৷
ছবি: picture alliance / JOKER
যেখানে প্রশিক্ষণ দেয় জার্মানরা
এই ক্যাম্প মারমালেই আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয় জার্মান সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷ এই মুহূর্তে ৬৫০ জন জার্মান সেনাসদস্য সেখানে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
শুরু যেভাবে
২০০২ সালের ১১ই জানুয়ারি আফগানিস্তানে প্রথম দফা সৈন্য পাঠায় জার্মানি৷ সেবার ৭০ জন সেনা সদস্যকে কাবুলে পাঠিয়েছিল জার্মান সরকার৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেই প্রথম ইউরোপের বাইরে যায় জার্মানির সৈন্য৷ আফগানিস্তানে এক সময় জার্মান সৈন্যের সংখ্যা বেড়ে ৫৩৫০ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তানে জার্মান সেনাদের অবদান
এই মুহূর্তে মোট ৮৭০ জন জার্মান সেনা আছে আফগানিস্তানে৷ তাঁদের মূল কাজ আফগান পুলিশ এবং সেনা সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া৷ ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬০ হাজারের চেয়েও বেশি আফগান পুলিশ ও সেনা সদস্য সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Eisele
প্রথম নিহত জার্মান সেনা
২০০২ সালের মার্চ মাসে কাবুলে এক বোমা হামলায় দু’জন জার্মান এবং তিনজন ডেনিশ সৈন্য মারা যায়৷ ওই দু’জনই আফগানিস্তানে প্রাণ দেয়া প্রথম জার্মান সৈন্য৷ তারপর অবশ্য মৃতের সংখ্যা বেড়েছে৷ এ পর্যন্ত মোট ৫৫ জন জার্মান সেনা মারা গেছেন আফগানিস্তানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উন্নয়ন কাজে জার্মানি
সেনা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অন্য কিছু উন্নয়ন কর্মেও ভূমিকা রাখছে জার্মানি৷ বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুযোগ এবং প্রয়োজন আরো বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Joker
আফগানিস্তানে জার্মান সেনাবাহিনীর কালো অধ্যায়
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে দু’টি তেলের ট্রাক তালেবান দখল করে নিয়েছে শুনে জার্মান সেনাদের কুন্দুসে বিমান হামলা চালানোর নির্দেশ দেন কর্নেল গেওর্গ ক্লাইন৷ সেই হামলায় ৯১ জন সাধারণ নাগরিক মারা যায়৷
ছবি: DW/M. Saifullah
6 ছবি1 | 6
যন্ত্রাংশ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে গতবছর ফাইটার প্লেন, ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার, জাহাজগুলোর অবস্থাও ভালো ছিল না বলে বার্টেলসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷ প্রায় ২১ হাজার অফিসার ও নন-কমিশন্ড অফিসারের পদ শূন্য থাকায় সেনারা নেতৃত্বের অভাববোধ করছেন বলে জানান বার্টেলস৷
উল্লেখ্য, জার্মান সংসদের সামরিক বাহিনী বিষয়ক কমিশনার প্রতিবছরই সামরিক বাহিনীর অবস্থা নিয়ে এরকম প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকেন৷
বার্টেলস বলেন, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার গতবছর জার্মান সামরিক বাহিনীর আকার বাড়ানো ও আগামী সাত বছর ধরে বাজেট বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তখন থেকে বাজেট ‘বলার মতো বাড়েনি' বলে জানান তিনি৷
উল্লেখ্য, ন্যাটোর সদস্য জার্মানি সামরিক খাতে ব্যয় না বাড়ানোয় প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়ে৷ বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকবারই বিষয়টি তুলে ধরেছেন৷ নিয়ম অনুযায়ী, ন্যাটো সদস্যদের তাদের জিডিপির দুই শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করার কথা৷ কিন্তু জার্মানি বর্তমানে করছে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ৷
বার্টেলসের প্রতিবেদনের আগে জার্মান গণমাধ্যমে প্রকাশিত অন্যান্য প্রতিবেদনেও সামরিক বাহিনীর দুরবস্থার বিষয়টি উঠে এসেছে৷ এতে বলা হয়, আগামী বছর জার্মানির যে ইউনিট ন্যাটোর দায়িত্ব পালন করবে, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ভেস্ট, শীতের পোশাক ও তাঁবুর অভাব রয়েছে৷
যেসব দেশে শান্তি ফেরাচ্ছে জার্মানি
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকে বার্লিন ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোটটিকে নানাভাবে সহায়তা করেছে৷ সেই ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শান্তি ফেরাতে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে ১৯৫৫ সালে৷ তবে ১৯৯০ সাল অবধি নিজেদের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সীমিত রেখেছিল জার্মানি৷ শান্তিরক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ন্যাটোর হয়ে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
১৯৯৫ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়৷ অর্থাৎ বসনিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেদেশে শান্তি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জার্মানরাও৷ সেই শান্তিরক্ষা মিশনে ন্যাটোর সদস্য ও সহযোগী দেশগুলোর ৬০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোতে শান্তিরক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরুতেই সেদেশে সাড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতবাদী এবং তাদের সমর্থকদের ওপর বর্বর দমনপীড়নের দায়ে সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায় ন্যাটো৷ এখনো প্রায় ৫৫০ জন জার্মান সেনা কসভোতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সাগরে টহল
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমর্থিত ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে এজিয়ান সাগরে মোতায়েন করা হয় জার্মান যুদ্ধজাহাজ ‘বন’৷ অভিবাসী সংকট যখন চরমে, তখন অন্যান্য কাজের মধ্যে এই মিশনের অন্যতম কাজ ছিল গ্রিস এবং তুরস্কের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ওপর নজর রাখা৷ জার্মানি, গ্রিস এবং তুরস্ক এ কাজে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক দেশগুলোতে ন্যাটোর মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় চলতি বছর ৪৫০ জন জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ অবস্থান করছে জার্মান ট্যাংকও৷ তবে জার্মানি ছাড়া ক্যানাডা, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাও রয়েছে সে অঞ্চলে৷ ‘বর্ধিত সামরিক মহড়া’-র অংশ হিসেবে প্রায় এক দশক যাবৎ ন্যাটো বাহিনী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়ায় অবস্থান করছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনীতে জার্মানি যোগ দেয় ২০০৩ সালে৷ সংখ্যার বিচারে দেশটিতে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের মধ্যে জার্মানির অবস্থান তৃতীয়৷ আফগান মিশনে এখন পর্যন্ত ৫০ জন জার্মান সেনা নিহত হয়েছে৷ ২০১৫ সালে জার্মান সেনাদের মিশন শেষ হওয়া ও দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও সহস্রাধিক জার্মান সেনা অবস্থান করছেন আফগানিস্তানে৷