সেনাবাহিনীতে নাবালকদের নিয়োগ? তা-ও আবার জার্মানিতে! এমন মানবাধিকার সচেতন দেশে সেনাবাহিনীতে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নিয়োগের খবরটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজ্ঞাপন
তথ্যটি হয়তো গোপনই থাকত৷ কিন্তু সম্প্রতি বামপন্থি জার্মান দলের এক নেত্রীর প্রশ্নের মুখে ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে৷ জানা গেছে, ২০১৭ সালে রেকর্ড সংখ্যক নাবালককে নিয়োগ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷ সংখ্যাটি ২,১২৮৷ জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বামপন্থি সাংসদ এভরিম জমারের প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ বস্তুত, জার্মান সেনাবাহিনীতে এমন ঘটনা প্রথম নয়৷ অতীতেও জার্মান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নাবালকদের নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে৷ সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বামপন্থি সাংসদ মন্তব্য করেছেন, বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক৷ এবং দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ এভরিম জমার বলেন, ‘‘নাবালকদের কামানের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কী প্রমাণ করতে চাইছি আমরা? দেশের মানবাধিকার এবং শিশুসুরক্ষা বলে কি আর কিছু অবশিষ্ট নেই? এই কাজ করে বিশ্বের সামনে জার্মানি নিজেই নিজের মুখ পোড়াচ্ছে৷''
এই তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন মানবাধিকার এবং শিশু সুরক্ষা সংগঠনও প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ তাদের বক্তব্য, জার্মানিতে যে এমন ঘটনা ঘটে, তা তাদের জানা৷ তথ্য সামনে এসেছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য জার্মানিতে যে ব্যবস্থাগুলি চালু আছে, তা নিয়ে তাদের কোনো দ্বিমত নেই৷ কিন্তু তাই বলে ১৭ বছরের ছেলে-মেয়েদের যোগদান কখনোই মেনে নেওয়া যায় না৷ যদিও সেনাসূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, ১৮ বছরের কম বয়সি সব প্রার্থীই ‘ভল্যান্টিয়ার' হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, যে কোনো সময় কোনো কারণ না দেখিয়েই তারা চলে যেতে পারে৷ সেনাবাহিনীর দাবি, নাবালকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না৷ কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজেনি৷ প্রতিবাদ এবং সমালোচনা চলছেই৷
যেসব দেশে শান্তি ফেরাচ্ছে জার্মানি
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকে বার্লিন ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোটটিকে নানাভাবে সহায়তা করেছে৷ সেই ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শান্তি ফেরাতে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে ১৯৫৫ সালে৷ তবে ১৯৯০ সাল অবধি নিজেদের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সীমিত রেখেছিল জার্মানি৷ শান্তিরক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ন্যাটোর হয়ে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
১৯৯৫ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়৷ অর্থাৎ বসনিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেদেশে শান্তি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জার্মানরাও৷ সেই শান্তিরক্ষা মিশনে ন্যাটোর সদস্য ও সহযোগী দেশগুলোর ৬০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোতে শান্তিরক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরুতেই সেদেশে সাড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতবাদী এবং তাদের সমর্থকদের ওপর বর্বর দমনপীড়নের দায়ে সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায় ন্যাটো৷ এখনো প্রায় ৫৫০ জন জার্মান সেনা কসভোতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সাগরে টহল
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমর্থিত ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে এজিয়ান সাগরে মোতায়েন করা হয় জার্মান যুদ্ধজাহাজ ‘বন’৷ অভিবাসী সংকট যখন চরমে, তখন অন্যান্য কাজের মধ্যে এই মিশনের অন্যতম কাজ ছিল গ্রিস এবং তুরস্কের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ওপর নজর রাখা৷ জার্মানি, গ্রিস এবং তুরস্ক এ কাজে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক দেশগুলোতে ন্যাটোর মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় চলতি বছর ৪৫০ জন জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ অবস্থান করছে জার্মান ট্যাংকও৷ তবে জার্মানি ছাড়া ক্যানাডা, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাও রয়েছে সে অঞ্চলে৷ ‘বর্ধিত সামরিক মহড়া’-র অংশ হিসেবে প্রায় এক দশক যাবৎ ন্যাটো বাহিনী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়ায় অবস্থান করছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনীতে জার্মানি যোগ দেয় ২০০৩ সালে৷ সংখ্যার বিচারে দেশটিতে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের মধ্যে জার্মানির অবস্থান তৃতীয়৷ আফগান মিশনে এখন পর্যন্ত ৫০ জন জার্মান সেনা নিহত হয়েছে৷ ২০১৫ সালে জার্মান সেনাদের মিশন শেষ হওয়া ও দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও সহস্রাধিক জার্মান সেনা অবস্থান করছেন আফগানিস্তানে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Niedringhaus
6 ছবি1 | 6
সেনাবাহিনীতে যোগদানের বয়স নিয়ে জাতিসংঘের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে৷ সেখানে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, কোনো দেশ নাবালকদের সেনাবাহিনীতে নিতে পারবে না৷ ২০০২ সালে একটি কনভেনশনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেছে, বহু দেশই সেই নির্দেশাবলী মানছে না৷ জার্মানি তাদের মধ্যে অন্যতম৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, নাবালকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পিছনে একটি বিশেষ মানসিকতা কাজ করে৷ স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেনাবাহিনী নিয়ে একটি রোমাঞ্চ কাজ করে৷ ফলে সহজেই তাদের সামনে সেনাবাহিনীর স্বপ্ন তৈরি করা যায়৷ স্কুল-কলেজে এ ধরনের বিজ্ঞাপনও করে সেনাবাহিনী৷ দেখা গেছে, সাবালকদের অনেকেই সেই রোমাঞ্চের বশবর্তী হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান না৷
জার্মান সেনাবাহিনীতে সাবালকদের ড্রপ আউটের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো৷ ফলে, নাবালকদেরই টার্গেট করা হয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গি সংগঠনগুলির ক্ষেত্রেও সেই একই মানসিকতা কাজ করে৷ এবং দু'ক্ষেত্রেই বিষয়টি মানবতাবিরোধী৷
আশার কথা, জার্মানির মতো দেশে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়৷ সরকার তথ্য গোপন করে না৷ তবে পৃথিবীর বহু দেশেই এখনো শিশুসুরক্ষা বিষয়ক অনেক তথ্যই গোপন রাখা হয়৷
জার্মানদের ১০টি আচরণ, যা আপনাকে বিস্মিত করবে
স্বল্প মধ্যাহ্ন বিরতি, বুদবুদসহ ওয়াইন, লিফটে শুভেচ্ছা বিনিময় – জার্মানদের এমন বেশ কিছু আচরণ বিদেশিদের বিস্মিত করে৷ ছবিঘরে থাকছে এমন ১০টি আচরণের কথা৷
ছবি: picture alliance/Sputnik/dpa/A. Kudenko
সময় মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ
জার্মানিতে কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের ৫ মিনিট আগে পৌঁছে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ তবে ১০ মিনিট আগে পৌঁছে গেলে সেটাকে বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখা হয়, বিশেষ করে যদি আপনার কাছে অফিস ঘরের চাবি না থাকে৷
ছবি: Stauke - Fotolia.com
লিফটে শুভেচ্ছা বিনিময়
যাঁরা বহুতল ভবনে কাজ করেন, তাঁরা এই ব্যাপারটার সাথে ভীষণভাবে পরিচিত৷ এলিভেটর বা লিফটে ঢোকার সময় শুভেচ্ছা বিনিময় এবং লিফট থেকে বের হওয়ার সময় বিদায় সম্ভাষণ খুব সাধারণ একটা ব্যাপার৷
ছবি: Imago/Westend61
কফি খেতে বিপত্তি
অফিসে প্রথমদিনে আপনার সহকর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর অফিস ঘুরে দেখানো হয়৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কফি মেশিন৷ যদি আপনি নিয়মিত কফি খেতে চান, তাহলে কয়েকটা জিনিস আপনার জানা জরুরি, কোন মেশিনে কফি পাওয়া যায়, কীভাবে দাম দিতে হয় অথবা মেশিন পরিষ্কার করতে হয় কিনা ইত্যাদি৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Klose
পদ বুঝে সম্বোধন
কে কোন পদে আছেন, তা বুঝে আপনার সম্বোধন জানানো উচিত৷ বাংলার মতো জার্মান ভাষাতেও ‘আপনি’ ‘তুমি’ সম্বোধন আছে৷ তাই শুরুতে সবাইকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করাই নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/Denkou Images
লিখিত ছাড়া মূল্য নেই
বছরে এক একজন জার্মানের কাছে গড়ে ২৫৯ কেজি কাগজ পাবেন আপনি৷ জার্মানির প্রত্যেকটি অফিসে এখনও লিখিত নথিপত্র ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ লিখিত তথ্যই মুখ্য, আর বাকি সবকিছুই গৌন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Eisenhuth
স্বল্প সময়ের মধ্যাহ্ন বিরতি
ভূমধ্যসাগরের দেশগুলোতে মধ্যাহ্নে দুই ঘণ্টা বিরতি থাকে, অথচ জার্মান চাকুরিজীবীদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩০ মিনিট৷ যদিও জার্মানিতে মধ্যাহ্নভোজ দিনের প্রধান খাবার হিসেবে গণ্য৷
ছবি: Picture alliance/dpa/C. Seidel
কেক ভীষণ দরকারি
জার্মানির অফিসগুলোতে অনেক ধরনের উদযাপন হয়৷ যাঁরা অফিসে নতুন, তাঁরা প্রথমদিন কেক নিয়ে আসে৷ এছাড়া যখন কেউ চাকরি ছেড়ে দেয় বা দীর্ঘ বিরতিতে যায়, তখনও একটা উদযাপন হয়৷ নিজেদের জন্মদিনেও কেউ কেউ কেক নিয়ে আসে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/B. Jürgens
বুদবুদসহ ওয়াইন
জার্মানির অফিসগুলোতে এসব আয়োজনে কেকের সাথে যদি বুদবুদসহ ওয়াইন থাকে, তাহলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই৷ কেবল সেসব দিনেই নয়, যে কোনো দিনই এই পানীয় পান করা হতে পারে৷
ছবি: Fotolia
ঘরে ঢোকার আগে একটু টোকা
কোনো সহকর্মীর কক্ষে যদি কোনো মিটিং থাকে এবং দরজা বন্ধ করে মিটিং করতে থাকেন, যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জার্মান অফিসগুলোতে হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কেবল দরজায় একটু টোকা দিন এবং কারো অনুমতির অপেক্ষা না করেই ভেতরে প্রবেশ করুন৷
ছবি: imago/Westend61
প্রমোদ ভ্রমণ যখন কর্পোরেট সংস্কৃতির অংশ
বেশিরভাগ জার্মান ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবন আলাদা রাখতে পছন্দ করেন৷ তারপরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহকর্মীদের মধ্যে পরিচিতি ও সামাজিকতা বাড়াতে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়৷