ধৃত ব্যক্তি নাকি বুন্ডেসভের-এর লেফটেন্যান্ট ফ্রাঙ্কো এ.-কে একটি ‘হিট লিস্ট' তৈরি করতে সাহায্য করেছিল৷ সে তালিকায় হালের আইনমন্ত্রীর নামও নাকি ছিল৷ ধৃত ব্যক্তিও জার্মান সেনাবাহিনীর সদস্য৷
বিজ্ঞাপন
ধৃত ব্যক্তি নাকি বুন্ডেসভের-এর লেফটেন্যান্ট ফ্রাঙ্কো এ.-কে একটি ‘হিট লিস্ট' তৈরি করতে সাহায্য করেছিল৷ সে তালিকায় হালের আইনমন্ত্রীর নামও নাকি ছিল৷ ধৃত ব্যক্তিও জার্মান সেনাবাহিনীর সদস্য৷
২৭ বছর বয়সি ম্যাক্সিমিলিয়ান টি. ‘‘জাতীয় নিরাপত্তার উপর একটি গুরুতর আক্রমণের'' পরিকল্পনা করছিল বলে জানিয়েছে কার্লসরুহের ফেডারাল কৌঁসুলির দপ্তর৷ তাকে পশ্চিম জার্মানির কেল শহরের কাছে ধরা হয় বলে খবর দিয়েছে ‘ডের স্পিগেল' সংবাদপত্র৷ ‘স্পিগেল'-ই প্রথম ম্যাক্সিমিলিয়ান টি.-র গ্রেপ্তারের খবর দেয়৷
ম্যাক্সিমিলিয়ান টি. ‘চরম দক্ষিণপন্থি আদর্শের' বশবর্তী হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো বড় সহিংসতার পরিকল্পনা করছিল বলে ফেডারাল কৌঁসুলির দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে৷ সে দৃশ্যত লেফটেন্যান্ট ফ্রাঙ্কো এ.-র সহযোগী ছিল৷ ফ্রাঙ্কো বহিরাগত বিদ্বেষের বশে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে সিরীয় উদ্বাস্তু হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছিল৷ গত এপ্রিল মাসের শেষে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তারপর পরই মাটিয়াস এফ. নামের এক ২৪ বছর বয়সি ছাত্রকে ফ্রাঙ্কোর সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়৷
‘হিট লিস্টে' আইনমন্ত্রীর নাম
জার্মান সেনাবাহিনীর যত কেলেঙ্কারি
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতে, ২০১৭ সাল ভয়ঙ্কর, বিভৎস, ভয়াবহ এবং খারাপ বছর৷ নিজের সেনাবাহিনীকে সমর্থন না করে বরং তাদের কেলেঙ্কারি তুলে ধরে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি৷ জেনে নিন জার্মান সেনাবাহিনীর কেলেঙ্কারির কথা৷
ছবি: picture alliance/akg-images
এক ভুয়া শরণার্থী
সিরীয় শরণার্থী সেজে এক জার্মান সেনা কর্মকর্তা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল৷ সমান্তরাল এক দ্বিতীয় জীবন শুরু করেছিলেন ফ্রাংকো৷ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরীয় শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত হন তিনি৷ তার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের উপর হামলার দোষ চাপানো৷ ২০১৪ সাল থেকেই ফ্রাংকো’র ডানপন্থি আচরণের কথা জানতেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা৷ এাই ফ্রাংকো ধরা পড়ার থেকে জার্মান সেনাবাহিনিকে শুরু হয় বিতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
বাড রাইশেনহাল পর্বতে রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানি
ডানপন্থি সন্ত্রাসী আচরণের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য সেনাবাহিনী বর্তমানে ২৭৫ টি মামলার তদন্ত করছে৷ চলতি বছরের মার্চে জনগণ একজন ল্যান্স করপোরালের কথা জানতে পারেন, যিনি কয়েক মাস ধরে বাভেরিয়া পর্বতের রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যৌন নীপিড়ন করা হয়েছে৷ এ ঘটনার জন্য ১৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
নারীদের পোল ড্যান্সে বাধ্য করা
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সবচেয়ে বড় যে কেলেঙ্কারির কথা বলেছেন তাহলো, ফুলেনডর্ফে স্টাওফের সেনাঘাঁটির ভয়াবহ ঘটনা৷ জানুয়ারিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের নগ্ন করা ও যৌনতা প্রকাশ পায় এমন আচরণ করতে বাধ্য করেছিলেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, সেগুলো ভিডিও করা হয়েছিল৷ সদ্য নিয়োগ পাওয়া নারীদের ‘এনট্র্যান্স পরীক্ষা’র অংশ হিসেবে পোল ড্যান্সে বাধ্য করা হয়েছিল৷ একারণে সেনাবাহিনীর শীর্ষ প্রশিক্ষক কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Warnack
ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদের অনেক ঘটনার তদন্ত চলছে
জার্মান সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি কমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সাল জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য মোটেই ভালো বছর ছিল না৷ ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদ বা ‘জার্মানির মুক্ত গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক চেতনার লঙ্ঘন’ এর মোট ৬০টি অভিযোগের ঘটনা পাওয়া গেছে৷ এমনকি সেনারা নিজেদের নাৎসি চেতনা নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করে, নাৎসি সংগীত শোনে ও নাৎসি স্যালুটও দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
জাহাজে মৃত্যু
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত এসব কেলেঙ্কারি নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি সেনাবাহিনী৷ ২০১০ সালের একটি ঘটনা জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে, তা হলো, গর্ক ফক-এ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় ২৫ বছরের এক সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা৷ প্রশিক্ষণের সময় ঐ নারী জাহাজের পাল থেকে নীচে পড়ে মারা যান৷ ফলে অন্যান্য ক্যাডেটরা পালে উঠতে আর রাজি হননি৷ পরে ঐ প্রশিক্ষণ বাতিল করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Rehder
জার্মান সেনাবাহিনীর জন্ম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি সেনাবাহিনী রাখার পক্ষে ছিল না৷ পশ্চিম জার্মানিতে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে৷ পুনরেকত্রীকরণের পর পূর্ব জামানির সেনাবাহিনী থেকে ২০ হাজার সদস্য নেয় কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী৷ ১৯৯৯ সালে যখন জার্মান সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সংঘাতে (কসোভো যুদ্ধ) জড়িয়ে পড়ে, তখন এতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়৷ এর আগ পর্যন্ত কেবল বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল৷
ছবি: picture alliance/akg-images
বাধ্যতামূলক সেবা নয়
বর্তমানে জার্মান সেনাবাহিনীতে সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২০০৷ ২০১৭ সালের মার্চের হিসেব অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর মোট সদস্যের ১১.৪ শতাংশ নারী৷ ২০১১ সাল পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনীতে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল৷ এই মেয়াদকাল ছিল ৯ থেকে ১৮ মাস৷ বর্তমানে তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়৷ তবে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির কারণে এই আবেদনে তাদের সাড়া দেয়াটা সত্যিই কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
7 ছবি1 | 7
এই তিন অভিযুক্ত দৃশ্যত একটি বা একাধিক সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে তা ইসলামপন্থি জঙ্গিদের নামে পাচার করার পরিকল্পনা করছিল৷ তিনজনে মিলে যে সব বামঘেঁষা রাজনীতিক অভিবাসন সমর্থন করেন, তাদের একটি ‘হিট লিস্ট' তৈরি করে, যে হিট লিস্টে সাবেক জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক ও বর্তমান আইনমন্ত্রী হাইকো মাস-এর নামও ছিল৷
‘স্পিগেল' নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সূত্রে জানায় যে, ফ্রাঙ্কো এ., মাটিয়াস এফ. ও ম্যাক্সিমিলিয়ান টি.-র মধ্যে অনলাইন চ্যাট থেকে তাদের মনোভাব ও সহিংসতার প্রস্তুতি স্পষ্টভাবে জানা যায়৷ এক তদন্তকারী কর্মকর্তা পত্রিকাটিকে বলেন যে, দলের প্রত্যেক সদস্য শপথ নেয় যে, ‘‘তারা তাদের আদর্শের জন্য নিহত করতে রাজি''৷
তিন অভিযুক্ত যে বাস্তবিক কী করার পরিকল্পনা করছিল, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত নয়৷ তবে মাটিয়াস এফ.-এর বাড়িতে বুন্ডেসভের থেকে সরানো প্রায় ১,০০০ তাজা কার্তুজ পাওয়া গিয়েছে৷
গোটা ঘটনাটি থেকে যে দু'টি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তা হলো, জার্মান সেনাবাহিনীতে ডানপন্থি চেতনা ঠিক কতদূর ছড়িয়েছে? এবং জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার পদ্ধতিতে কি এবং কত ধরনের ফাঁক আছে যে, ফ্রাঙ্কো এ. শুধুমাত্র ভাঙা-ভাঙা ফরাসি বলে নিজেকে সিরীয় উদ্বাস্তু বলে চালিয়ে দিতে পারল?
এসি/এসিবি (এপি,এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
যেসব দেশে শান্তি ফেরাচ্ছে জার্মানি
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেয়ার পর থেকে বার্লিন ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোটটিকে নানাভাবে সহায়তা করেছে৷ সেই ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশে শান্তি ফেরাতে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
ন্যাটোতে জার্মানির ভূমিকা
তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে ১৯৫৫ সালে৷ তবে ১৯৯০ সাল অবধি নিজেদের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সীমিত রেখেছিল জার্মানি৷ শান্তিরক্ষা থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজে ন্যাটোর হয়ে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কাজ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hanschke
বসনিয়া: জার্মানির প্রথম ন্যাটো মিশন
১৯৯৫ সালে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনায় প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়৷ অর্থাৎ বসনিয়া যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেদেশে শান্তি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জার্মানরাও৷ সেই শান্তিরক্ষা মিশনে ন্যাটোর সদস্য ও সহযোগী দেশগুলোর ৬০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Delic
কসভোতে শান্তিরক্ষা
কসভোতে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশনের শুরুতেই সেদেশে সাড়ে আট হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়৷ ১৯৯৯ সালে সংখ্যালঘু আলবেনীয় বিচ্ছিন্নতবাদী এবং তাদের সমর্থকদের ওপর বর্বর দমনপীড়নের দায়ে সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায় ন্যাটো৷ এখনো প্রায় ৫৫০ জন জার্মান সেনা কসভোতে অবস্থান করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaj
এজিয়ান সাগরে টহল
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সমর্থিত ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে এজিয়ান সাগরে মোতায়েন করা হয় জার্মান যুদ্ধজাহাজ ‘বন’৷ অভিবাসী সংকট যখন চরমে, তখন অন্যান্য কাজের মধ্যে এই মিশনের অন্যতম কাজ ছিল গ্রিস এবং তুরস্কের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ওপর নজর রাখা৷ জার্মানি, গ্রিস এবং তুরস্ক এ কাজে ন্যাটোর সহায়তা চেয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M.Schreiber
লিথুয়ানিয়ায় জার্মান ট্যাংক
বাল্টিক দেশগুলোতে ন্যাটোর মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় চলতি বছর ৪৫০ জন জার্মান সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ অবস্থান করছে জার্মান ট্যাংকও৷ তবে জার্মানি ছাড়া ক্যানাডা, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনাও রয়েছে সে অঞ্চলে৷ ‘বর্ধিত সামরিক মহড়া’-র অংশ হিসেবে প্রায় এক দশক যাবৎ ন্যাটো বাহিনী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়ায় অবস্থান করছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Kul
এক দশকের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে
আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনীতে জার্মানি যোগ দেয় ২০০৩ সালে৷ সংখ্যার বিচারে দেশটিতে মোতায়েন বিদেশি সেনাদের মধ্যে জার্মানির অবস্থান তৃতীয়৷ আফগান মিশনে এখন পর্যন্ত ৫০ জন জার্মান সেনা নিহত হয়েছে৷ ২০১৫ সালে জার্মান সেনাদের মিশন শেষ হওয়া ও দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও সহস্রাধিক জার্মান সেনা অবস্থান করছেন আফগানিস্তানে৷