জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার একটি অঘোষিত সফরে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে পৌঁছেছেন ইতিমধ্যেই৷ সেখানে তিনি জার্মান সৈন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার একটি অঘোষিত সফরে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফে পৌঁছেছেন ইতিমধ্যেই৷ সেখানে তিনি জার্মান সৈন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন৷
নিরাপত্তাজনিত কারণে জার্মান প্রেসিডেন্টের আফগানিস্তান সফর সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি৷ স্টাইনমায়ার এর আগেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সাতবার আফগানিস্তানে গেছেন৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর আফগানিস্তান সফর এই প্রথম৷ সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী এলকে ব্যুডেনবেন্ডার৷ বৃহস্পতিবার সকালে উভয়েই মাজার-ই-শরিফে অবতরণ করেন – তাঁরা আসছেন কাজাকস্তান থেকে৷ কাজাকস্তানে স্টাইনমায়ার বিশ্বের জ্বালানি ব্যবস্থার বিষয়ে এক্সপো ২০১৭ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীটি পরিদর্শন করেছেন৷
কাবুলে বিধ্বংসী গাড়ি বোমা
৩১শে মে সকালে কাবুলের দূতাবাস এলাকায় একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৯০ জন নিহত ও আরো ৪০০ জন আহত হয়েছেন বলে আফগান কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে প্রকাশ৷ হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
কালো ধোঁয়া
বোমাটি একটি ময়লা ফেলার গাড়িতে রাখা ছিল বলে রয়টার্সের খবরে প্রকাশ৷ বিস্ফোরণের পর দূতাবাস এলাকার আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়৷ জার্মান দূতাবাসসহ বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের অবস্থান এই এলাকায়৷ আফগান রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনও এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
জার্মান দূতাবাসের প্রহরী নিহত
কাবুলের জার্মান দূতাবাস এই বোমা আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কিনা, তা এখনও অজ্ঞাত৷ কিন্তু বিস্ফোরণে জার্মান দূতাবাসের এক আফগান সিকিউরিটি গার্ড নিহত ও দূতাবাসের দু’জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
শক্তিশালী বোমা
বিস্ফোরণ এতই জোরালো ছিল যে, অনেক দূরের বাড়িঘরেরও জানালা-দরজা উড়ে গেছে৷ এই হামলার যাবতীয় দায়িত্ব অস্বীকার করেছে তালেবান৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ইতিপূর্বে কাবুলে এ ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
লক্ষ্য ছিল ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ?
ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন ‘রেজোলিউট সাপোর্ট’ মিশন জানিয়েছে যে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী বোমার গাড়িটিকে ‘গ্রিন জোনে’ ঢুকতে দেয়নি৷ আরএস মিশনের হেডকোয়ার্টার্স ঐ গ্রিন জোনেই অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
একাধিক দূতাবাসের ক্ষতি
কাবুলের ফরাসি, তুর্কি ও চীনা দূতাবাসগুলি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে দৃশ্যত কোনো কূটনীতিক আহত হননি৷ বিবিসি জানায়, তাদের এক ড্রাইভার সাংবাদিকদের অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন৷ চারজন সাংবাদিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/H. Sayedi
আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরৎ পাঠানো বন্ধ রাখছে জার্মানি
একটি চার্টার উড়াল ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আর কোনো উড়াল হবার সম্ভাবনা নেই৷ কারণ, হিসেবে বলা হয়েছে, কাবুলের জার্মান দূতাবাসের কর্মীদের এখন প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই৷ গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে মোট ৯২ জন আফগান নাগরিককে বিমানযোগে স্বদেশে ফেরৎ পাঠানো হয়৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
‘আরেকটা কঠিন বছর’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন সৈন্যদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে, উগ্রপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ‘‘আরো একটি সংকটজনক বছরের’’ জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
7 ছবি1 | 7
কিন্তু কাজাকস্তানের রাজধানী থেকে সরাসরি জার্মানিতে ফেরার পরিবর্তে প্রেসিডেন্টের বিমান আফগানিস্তান যাত্রা করে, যেখানে ন্যাটোর ‘রেজোলিউট সাপোর্ট' অভিযানের অঙ্গ হিসেবে এখনও প্রায় ১,০০০ জার্মান সৈন্য নিয়োজিত আছেন৷
আফগানিস্তানে তালেবান যে আবার মাথা চাড়া দিয়েছে ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, মে মাসের শেষে কাবুলে জার্মান দূতাবাসের সামনে গাড়িবোমা বিস্ফোরণ তার একটি প্রমাণ৷ ঐ আক্রমণে ১৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ সংশ্লিষ্ট এলাকায় একাধিক বিদেশি দূতাবাস থাকা সত্ত্বেও জার্মান দূতাবাসই ঐ আক্রমণের লক্ষ্য ছিল, বলে জার্মান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ অপরদিকে বর্ধিত নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণেই আফগানিস্তান থেকে আগত যে সব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন খারিজ হয়েছে, তাদের আপাতত আফগানিস্তানে ফেরৎ পাঠানো হচ্ছে না৷
আফগানিস্তানে ক্ষমতার অন্তহীন লড়াই
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান হামলার ১৬ বছর পরও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি ইসলামপন্থিদের সন্ত্রাসের কবল থেকে রেহাই পায়নি৷ কূটনৈতিক এলাকায় সাম্প্রতিক হামলাই বলে দিচ্ছে, জঙ্গিরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
কাবুলের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকায় হামলা
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ৩১ মে ভয়ঙ্কর ট্রাক বোমা হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছে৷ এবার জঙ্গিরা হানা দিয়েছে কাবুলের ‘গ্রিন জোনে’ অবস্থিত অত্যন্ত সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায়৷ হামলায় জার্মান অ্যাম্বাসিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন তালেবান এবং আইএস অতীতে এই শহরে বড় হামলাগুলো করেছিল৷
ছবি: REUTERS/O. Sobhani
অতীতের পুনরাবৃত্তি
কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায় এই হামলা দীর্ঘ ধারাবাহিকতারই পুনরাবৃত্তি৷ এর আগে মে মাসেই আইএসের বোমা হামলায় ৮ বিদেশি সৈন্য প্রাণ হারায়৷ এর আগে মার্চে কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায় আফগান সামরিক হাসপাতালে হামলায় রোগী-ডাক্তার-নার্সসহ ৩৮ জন নিহত এবং ৭০-এর বেশি আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Hossaini
মরিয়া আক্রমণ
গত এপ্রিলে আফগানিস্তানের তালেবানরা সে দেশে থাকা যৌথ বাহিনী এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়৷ জঙ্গি সংগঠনটি বলছে, চলতি বছর তারা আক্রমণের কৌশল বদলেছে৷ ২০১৬ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত মোল্লাহ আখতার মনসুরের নামে তারা এর নাম দিয়েছে, ‘অপারেশন মনসুর’৷
ছবি: Reuters
ট্রাম্পের আফগান নীতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো তার আফগান নীতি ঘোষণা করেননি৷ আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগলিম্যান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ট্রাম্পের আফগান নীতি অনেক ক্ষেত্রেই ওবামা প্রশাসনের মতোই হবে৷ তাঁর মতে, ওবামার মতো ট্রাম্পও হয়ত তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সমঝোতার ধারণার পথেই হাঁটবেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Ernst
আফগান শান্তি প্রক্রিয়া
কিন্তু তালেবানরা শান্তি আলোচনায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই জঙ্গি দল সমঝোতার পথে হাঁটবে বলে মনে হচ্ছে না৷ এখন যুদ্ধেই তাদের পূর্ণ মনোযোগ৷ ২০০১ সালের পর এরা এখন সবচেয়ে বেশি জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
পাকিস্তানি সহায়তা
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গত বছর বলেছিলেন, পাকিস্তান তালেবানকে সমঝোতার টেবিলে আনবে বলে আর আশা করা যাচ্ছে না৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসলামাবাদ তালেবানকে আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রভাব কমাতে ব্যবহার করছে৷ পাকিস্তানি তালেবানের (তেহরিক-ই-তালেবান) সাবেক মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান সম্প্রতি ধরা পড়েন৷ তালেবানের ভারত সহায়তা দিচ্ছে– এমন অভিযোগ করার পর ইসলামাবাদ তাকে মাফ করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Muslim
যুদ্ধবাজ নেতাদের ভূমিকা
তালেবান ছাড়াও আফগানিস্তান জুড়ে রয়েছে নানা গোষ্ঠিগত ও আঞ্চলিক যুদ্ধবাজ নেতা৷ আফগান রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে হেজবি ইসলামির নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার ২০ বছর পর এ বছরের মে মাসে কাবুলে ফিরে আসেন৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আফগান সরকার তার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছিল৷ এতে অন্যান্য যুদ্ধবাজ নেতা ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সরকারের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে উৎসাহী হবে বলে আশা করেছিল সরকার৷
ছবি: Reuters/O.Sobhani
রাশিয়ার স্বার্থ
বহু বছর নিরাপদ দূরত্বে থাকার পর রাশিয়া আবার আফগানিস্তানে তার যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছে৷ কিন্তু এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থায় মনে হচ্ছে, রাশিয়া আর আগের মতো দীর্ঘস্থায়ী এই দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে চাচ্ছে না৷ গত কয়েক মাসে চীন, পাকিস্তান ও ইরানকে সাথে নিয়ে রাশিয়া বেশ কয়েকটি আফগান-সম্মেলনও করেছে৷
ছবি: picture-alliance/A. Druzhinin/RIA Novosti
অদক্ষ সরকার
ক্ষমতার এই অন্তহীন লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট গনির সমর্থন কেবলই কমছে৷ ব্যাপক দুর্নীতি এবং সরকারে থাকা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সন্ত্রাস দমনের লড়াইকে দুর্বল করে দিচ্ছে৷