আফগানিস্তান পরিস্থিতি
৮ অক্টোবর ২০১৩শহরের বাইরে কয়েকটি জেলায় তালেবান ইতিমধ্যেই নিজেদের জাহির করছে বলে প্রকাশ৷ এছাড়া কিছু সশস্ত্র অপরাধী গোষ্ঠীও নাকি তাদের কার্যকলাপ চালাচ্ছে৷ এই প্রদেশে জার্মান সৈন্যদের আগমনটাই ছিল কুন্দুসবাসীদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ তাদের ধারণা হয়েছিল, যতদিনের জন্যই হোক, এবার তারা নিরাপদে বাস করতে পারবে, জীবনধারণ করতে পারবে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারবে৷
জার্মান সেনাবাহিনীর উপস্থিতির পাশাপাশি চলেছে পুনর্নির্মাণের কাজ: রাস্তাঘাট তৈরি, স্কুলবাড়ি মেরামত, শিক্ষক এবং মজদুর-কারিগরদের প্রশিক্ষণ৷ জার্মান সৈন্যরাও স্থানীয় দোকানবাজার থেকে কেনাকাটা করেছে, যা ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থ উপার্জনের একটা নির্ভরযোগ্য উৎস৷ কিন্তু প্রায় এক বছর আগে থেকেই কুন্দুসের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে, যার ফলে জার্মান সৈন্যরাও তাদের ছাউনি ছেড়ে বাইরে আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে৷
সহযোগিতা বনাম নিরাপত্তা
জার্মান সেনাবাহিনী কুন্দুস ছাড়ছে বলেই যে জার্মানি কুন্দুসকে পরিত্যাগ করছে, এমন নয়৷ জার্মানির রাষ্ট্রায়ত্ত ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সমিতি' বা জিআইজেড আগের মতোই উত্তর আফগানিস্তানে সক্রিয় থাকবে৷ জিআইজেড-এর নতুন নিরাপত্তা নীতির ভিত্তিপ্রস্তর হবে স্থানীয় জনগণের আস্থা৷ এভাবেই জিআইজেড অন্তত ২০১৬ সাল অবধি আফগানিস্তানের এই প্রত্যন্ত প্রদেশে কাজ চালিয়ে যাবে৷
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আসল উদ্বেগ যাদের, তারা হলো জার্মান সেনাবাহিনীর স্থানীয় আফগান সহকারী ও কর্মচারীদের৷ ‘বুন্ডেসভেয়ার' কুন্দুস পরিত্যাগ করার অর্থ, তাদের চাকুরির অন্ত – এবং শুধু তা-ই নয়: তাদের এবং তাদের পরিবারবর্গের জীবনাশঙ্কা পর্যন্ত রয়েছে৷ আইসাফ-এর হয়ে যারা কাজ করেছে, তারাই তালেবানের চোখে ‘দুশমন'৷ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীরাও কোনো আফগানের ‘বিদেশিদের' সঙ্গে সহযোগিতা করা বরদাস্ত করবে না৷
জার্মান সরকার এই সব মানুষদের আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সচেতন৷ জার্মান সেনাবাহিনীর পশ্চাদপসারণের পর যাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে, তারা জার্মানিতে বসবাসের ভিসার আবেদন করতে পারবে৷ কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর হবে কিনা, তা প্রতিক্ষেত্রে পৃথকভাবে বিবেচনা করে দেখা হবে৷ শুধু জার্মান সেনাবাহিনীর সঙ্গেই নয়, অন্যান্য জার্মান ফেডারাল মন্ত্রণালয় কিংবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে সব স্থানীয় আফগান করেছেন, তারা সকলেই এই ভিসার আবেদন করার সুযোগ পাবেন৷
কৈশোরের অন্ত
অপরদিকে জার্মান সেনাবাহিনীর পক্ষে কুন্দুস এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে৷ যাকে ‘‘কুয়ো খোঁড়া থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ'' বলেছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী টোমাস ডি মেজিয়ের৷ এখানেই জার্মান সেনাবাহিনী তাদের কৈশোর হারিয়েছে, এখানেই তারা জীবন দিতে এবং জীবন নিতে শিখেছে৷ তার দু'টি দৃষ্টান্ত: কুন্দুসের কাছেই একটি তেলের ট্যাংকারের উপর ন্যাটোর বিমান হানায় শতাধিক বেসামরিক আফগানের মৃত্যু ঘটেছে; সেই বিমান হানার নির্দেশ দিয়েছিলেন জার্মান সেনাবাহিনীর এক কর্নেল৷ অন্যদিকে এই কুন্দুসে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ জন জার্মান সৈন্য৷