1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌জিএসটি:‌ বিভ্রান্ত পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৩ জুলাই ২০১৭

ভারতের নতুন পণ্য ও পরিষেবা কর নিয়ে বিভ্রান্ত পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা৷ তবে জিএসটির কারণে মূল্যবৃদ্ধি যে ঘটছেই, এ ব্যাপারে তাঁরা একরকম নিশ্চিত৷

Indien Narendra Modi, Pranab Mukherjee und Hamid Ansari in Neu-Delhi
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup

বিভ্রান্তি৷ ব্যাপক এবং চূড়ান্ত বিভ্রান্তি৷ জিএসটি, অর্থাৎ দেশজুড়ে সমহারে পণ্য ও পরিষেবা কর চালু হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্যিক মহলের প্রতিক্রিয়া এই একটি শব্দেই বর্ণনা করা যায়৷ ব্যবসায়ীরা, বিশেষত ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা সবাই বিভ্রান্ত যে, কীভাবে এই নতুন কর কাঠামোর সঙ্গে তাঁরা যুক্ত হবেন৷ এমনকি যাঁরা বাণিজ্য কর আদায় করবেন, সেই সরকারি আধিকারিকরাও জনান্তিকে স্বীকার করছেন যে, বিভ্রান্ত তাঁরাও৷ জিএসটি নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরেও তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কোন পণ্যের কর হার কী হবে এবং কীভাবে সেটা আদায় হবে৷ তার একটা বড় কারণ অবশ্যই বহুস্তরীয় কর ব্যবস্থা৷ পণ্য অনুযায়ী করের চারটি স্তর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য দেশের মত নির্দিষ্ট একটি কর হারে জিএসটি চালু হয়নি ভারতে৷ ফলে পুজোর বাজারের মরশুম শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও শনি ও রবিবার, কলকাতা শহরের শপিং মলগুলো কার্যত খালি পড়ে ছিল৷

ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছিল কাগজ ও স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু দের সঙ্গে৷ কলকাতার টেরিটি বাজারে তাঁদের বহু বছরের পারিবারিক ব্যবসা৷ শুক্রবার, জিএসটি চালুর আগের দিন ওই বাজারে বনধ পালিত হয়েছে৷ মমতা ব্যানার্জির সরকার পশ্চিমবঙ্গে জিএসটি মেনে না নেওয়ার যে নীতিগত অবস্থান নিয়েছে, তার সঙ্গে এই ব্যবসায়ীরা একমত৷ কেন?‌ কৃষ্ণেন্দু দে জানালেন, প্রাথমিক কারণটা ব্যবহারিক৷ আগে প্রতি তিন মাস পর পর তাঁদের ব্যবসার হিসেব দাখিল করে কর জমা করতে হতো৷

অনুপম চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

জিএসটি-র নতুন নিয়মে সেটাই করতে হবে প্রতি ১০ দিনে৷ এবং সেটাও যথেষ্ট জটিল এক হিসেব-নিকেশ, যার জন্য উপযুক্ত হিসাবরক্ষক নিয়োগ করতে হবে৷ ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে সেটা দুঃসাধ্য৷ আর এর জন্য যে বাড়তি খরচ হবে, তার দায় বহন করবে কে?‌ প্রশ্ন করছেন কৃষ্ণেন্দু৷ এবং তাঁর আশঙ্কা, এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, কারণ ব্যবসায়ীদের প্রবণতা থাকবে ওই বাড়তি খরচের ভার ক্রেতার ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়ার৷

আরও একটা অসুবিধের কথা ওরা বলছেন যে, জিএসটি-উত্তর ভারতে সব লেনদেনকেই ডিজিটাল নজরদারির আওতায় নিয়ে আসতে চাইছে মোদী সরকার৷ ফলে ব্যবসায়িক লেনদেনের সময় জিএসটি নথিভুক্তি ক্রম, অথবা করদাতার স্থায়ী অ্যাকাউন্ট নম্বর, অর্থাৎ ‘‌প্যান'‌, কিংবা ব্যক্তিগত পরিচিতির আধার কার্ড নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

মজুতদার বা পাইকারি ব্যবসায়ীর জন্যে ক্রেতাদের এই তথ্য নেওয়াটা বাধ্যতামূলক, তার নিজের কেনা-বেচার হিসেব রাখার খাতিরেই৷ কিন্তু ছোট ব্যবসায়ী যাঁরা, নেহাতই কম টাকার লেনদেন করেন, তাঁরা সেই জটিলতার মধ্যে যেতে চাইছেন না৷ এঁদের অনেকেরই জিএসটি নথিভুক্তি, এমনকি প্যান কার্ডও নেই, এতই সামান্য এঁদের ব্যবসার পরিমাণ৷ তার ওপরে হিসেব দাখিলের সরকারি হুকুম মেনে চলতে গিয়ে এঁরা ধনেপ্রাণে মারা পড়বেন৷

কৃষ্ণেন্দু দে

This browser does not support the audio element.

আরও একটি সমস্যার কথা বললেন ব্যবসায়ী অনুপম চক্রবর্তী, যাঁর ব্যবসা চা বাগানে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা৷ তিনি বলছেন, সরকারের আজব নিয়ম ১০ দিনের মধ্যে হিসেব দাখিল করে কর জমা দিতে হবে৷ কিন্তু তাঁদের ব্যবসার ক্ষেত্রে, কলকাতার কারখানা থেকে যন্ত্রাংশ সড়কপথে ত্রিপুরা বা আসামের কোনো চা বাগানে পাঠাতে অন্তত ১৫-২০ দিন সময় লাগে৷ তা হলে কী করে তাঁরা ১০ দিনে একটা বাণিজ্যিক লেনদেনের হিসেব দাখিল করবেন?‌ তবে একটা বিষয় অনুপম বলছেন যে, এর ফলে পণ্য পরিবহন জটিলতামুক্ত হবে৷ বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন কর হারের ঝামেলা থাকবে না, পারমিটের সমস্যা থাকবে না৷ অনেক রাজ্যেই যে কারণে আমদানি শুল্ক আদায়ের চেকপোস্টগুলো তুলে দেওয়া শুরু হয়েছে, খবর পেয়েছেন অনুপম৷ কিন্তু তাঁর মতে, মূল সমস্যা অন্যত্র৷

পণ্য বিশেষে কর হার নির্দিষ্ট করে দেওয়ায়, যে জিনিসটা তাঁরা হয়ত ৫ শতাংশ কর হারে কিনতেন, সেটা এখন ১৮ শতাংশ করের আওতায় চলে আসবে৷ এর ফলে সেই জিনিসটার দাম বাড়বে৷ কিন্তু তাঁরা যখন সেই বেশি দামে সেটা বিক্রি করবেন, ক্রেতারা কিন্তু বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে ব্যবসার পরিমাণ কমিয়ে দেবেন৷ ফলে ব্যবসার অঙ্ক কমবে, লাভ কমবে, বাজার দুর্বল হবে৷ অনুপম বলছেন, আলাদা লোক রেখে হিসেব রাখাই হোক, বা ব্যবসার পরিমাণ ও অঙ্ক ঠিক রাখা, বড় বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর কোনো অসুবিধে হবে না৷ মারা পড়বে তাঁদের মতো ছোট মাপের ব্যবসায়ীরা৷

জনশ্রুতি অবশ্য আছে, যে নরেন্দ্র মোদী আম্বানিদের রিলায়েন্স, বা আদানির ফিউচার গ্রুপের মতো বড় বাণিজ্যিক গোষ্ঠীকে যতটা নেকনজরে রাখেন, ছোট, বা মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছে ততটা গুরুত্ব পায় না৷ ছোট কিছুতে সম্ভবত বিশ্বাসই রাখেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ