1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুমোরটুলিতে লোকসানের অশনিসংকেত

পায়েল সামন্ত
১০ আগস্ট ২০১৭

এই বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পুজো আর পাঁচ সপ্তাহ দূরে৷ অন্য শিল্পের মতো প্রাক-পুজো মরশুমে জিএসটি নিয়ে আশঙ্কার মেঘ কলকাতার কুমোরটুলিতেও৷ মৃৎশিল্পীদের বক্তব্য, নোট বাতিলের পর জিএসটি কার্যকর হওয়ায় সংকটে পড়েছেন তাঁরা৷

ছবি: DW/P. Samanta

পয়লা জুলাই জিএসটি বা পণ্য পরিষেবা কর চালু হওয়ার পর বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে৷ করের হার বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ব্যবসায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন৷ তবে অনেক পণ্যে করের হার কমায় কোনো কোনো মহল থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে৷ কিন্তু ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশঙ্কার মাত্রাটাই বেশি৷ কলকাতার কুমোরটুলিও তার ব্যতিক্রম নয়৷ কুমোরপাড়ায় ঘুরে মৃৎশিল্পী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের আঁচ পেল ডয়চে ভেলে৷শ্রাবণের বিকেলে তখন তুমুল ব্যস্ততা কুমোরপাড়ায়৷ কয়েকদিন আগেই একটানা প্রবল বৃষ্টিতে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় ভেস্তে গিয়েছিল৷ চলতি বর্ষায় যে তার রেশ এখনও কাটেনি, দু'পাশে সার দেওয়া শিল্পালয়ে পলিথিনে ঢাকা প্রতিমা দেখে তা বোঝা যাচ্ছিল৷ কোথাও শুধু মাটির প্রলেপ পড়েছে৷ কোথাও প্রথম দফার রঙের পোঁচ৷ প্রতিটি ঘরে শিল্পীরা ব্যস্ত প্রতিমার রূপদানে৷ ফি বছরের মতো বৃষ্টির প্রকোপ থেকে এবারও নিজেদের আড়াল করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এই শিল্পীরা৷ কিন্তু এই বর্ষায় সুনামির মতো তাঁদের উপর আছড়ে পড়েছে জিএসটি-র ঢেউ৷ তাই শিল্পীদের গলায় পণ্য পরিষেবা কর নিয়ে একরাশ উদ্বেগ৷

মৃৎশিল্পে সঙ্কট কতটা তার হিসেব নিতে ডয়চে ভেলে মুখোমুখি হয়েছিল মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘নোটবাতিলের পর জিএসটি – একবছরের মধ্যে পরপর দু'টো ধাক্কা সামলানো যাচ্ছে না৷ ঠিক পুজোর মুখে আমাদের ভরা মরশুমে জিএসটি চালু হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে৷ জিএসটি নম্বর নেওয়া, হিসেবপত্র সামলাতে একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট রাখতে হবে মনে হচ্ছে৷ এটা আমাদের কাছে বাড়তি বোঝা৷’’

রঞ্জিতবাবু নিজে প্রতিমার সাজসজ্জার ব্যবসা করেন – দেবীর শাড়ি, অস্ত্র থেকে মহিষাসুরের বস্ত্র, গয়না থেকে চুল ইত্যাদি৷ তাঁর ঘরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে এ সবের নমুনা৷ প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় সারা, এ বার এই সাজসজ্জা ও রং নিয়ে ক্ষতির আশঙ্কা করছে কুমোরটুলি৷ কেন? রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘প্রতিমার সাজসজ্জার বিভিন্ন পণ্যে জিএসটি বসেছে, করের হার বেড়েছে৷ যেমন ধরুন কাঁচা পাটে জিএসটি নেই, কিন্তু তাতে রং করা হলে, অর্থাৎ চুল তৈরির পর ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে৷ অস্ত্রশস্ত্রের ক্ষেত্রে কর বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশ৷ রঙের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হার, ২৮ শতাংশ৷ ফলে প্রতিমা তৈরির খরচ বাড়ছে৷’’

এই বাড়তি খরচ কীভাবে পোষাবেন মৃৎশিল্পীরা? রঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘রথের পর থেকে বায়না শুরু হয়ে গেছে৷ তখন বুঝতে পারিনি জিএসটি-র ফলে দাম কতটা বাড়বে৷ এখন দেখছি, খদ্দেরের কাছে যা দাম চেয়েছি, প্রতিমা তৈরির খরচ প্রায় তার কাছাকাছি পড়ে যাচ্ছে৷ এখন ক্রেতার কাছে বাড়তি দাম চাইলে তারা দেবে কেন? ফলে আমাদের লাভের অঙ্ক কমবে, অনেকের লোকসানও হতে পারে৷''

‘জিএসটি-র প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে ধোঁয়াশা অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রের মতো মৃৎশিল্পেও রয়েছে’

This browser does not support the audio element.

জিএসটি-র ফলে যে সমস্যা দানা বাঁধছে, সেটা অবশ্য বেশ কিছুদিন আগেই টের পেয়েছিলেন মৃৎশিল্পীরা৷ কীভাবে?

আরেক সাজশিল্পী ও ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ দে বলেন, ‘‘গুজরাটের সুরাট থেকে যে সাজের জিনিস আসে, সে সব আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ সাজের জিনিস বলতে প্রতিমার বস্ত্র, বাঘছাল ইত্যাদি৷ জিএসটি-র জেরে সেখানকার মিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ বস্ত্রের উপর ১৮ শতাংশ কর বসিয়েছিল সরকার, সেটা এখন কমে ৫ শতাংশ হয়েছে৷ তার পর আবার সাজের সামগ্রী আসতে শুরু করেছে, কিন্তু মাঝখানে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷’’

কুমোরটুলিতে দুর্গা পুজোর মরশুম শুরু হওয়ার পরপরই ভিনরাজ্যের ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ে৷ উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশার বহু ব্যবসায়ী কুমোরটুলিতে আসেন প্রতিমার সাজ কিনতে৷ রঞ্জিতবাবু জানান, অন্যান্যবার পুজোর একমাস আগে প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ সাজের সামগ্রী বিক্রি হয়ে যেত৷ এ বার ওই ব্যবসায়ীরা আসেননি৷ তাই বিক্রিবাটার হাল ভালো নয়৷ প্রতিমার রপ্তানিও একসময়ে থমকে গিয়েছিল জিএসটি-র জেরে৷ গত বছর ৪০-৪২টি প্রতিমা বিদেশে পাড়ি দিয়েছিল৷ এ বার ৩৫-৩৬টি প্রতিমার বায়না রয়েছে৷ জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহে প্রতিমা বিদেশে পাঠানোর কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ এখন আবার তা শুরু হয়েছে৷

এ সব মিলিয়ে জিএসটি-র প্রভাবে ব্যবসার লাভ-ক্ষতি নিয়ে একেবারে অন্ধকারে রয়েছেন মৃৎশিল্পীরা৷ কতটা লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা? মৃৎশিল্পী জয়ন্ত পাল বলেন, ‘‘এক-একটা প্রতিমা তৈরিতে কত খরচ, তার হিসেব কোনো বছরেই আমাদের কাছে থাকে না৷ যে কটি প্রতিমা তৈরি হচ্ছে, তার মোট হিসেব থাকে৷ এ বার খরচ বাড়ছে বুঝতে পারছি, কিন্তু সেটা কতটা, তার আন্দাজ করা যাচ্ছে না৷ জিএসটি-র প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে ধোঁয়াশা অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রের মতো মৃৎশিল্পেও রয়েছে৷'' জয়ন্তবাবুর ভাষায়, ‘‘শিল্পীরা বেশি শিক্ষিত নয়৷ এত হিসেবের মারপ্যাঁচ তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়৷ এ জন্য অ্যাকাউন্ট্যান্ট রাখতে হবে৷ সেটা একটা বাড়তি খরচের বোঝা৷’’

‘খদ্দেরের কাছে যা দাম চেয়েছি, প্রতিমা তৈরির খরচ প্রায় তার কাছাকাছি পড়ে যাচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

এমনিতেই বহু প্রাচীন কুমোরটুলির এই শিল্পে আর্থিক সঙ্কট থাবা বসিয়েছে৷ শিল্পের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় কারিগর পেতে সমস্যা হচ্ছে৷ শিল্পী সনাতন পান্ডার প্রশ্ন, ‘‘তিন হাজার টাকায় কে কুমোরপাড়ায় কাজ করতে আসবে বলুন? তাই এ কাজে আগ্রহ কমছে, দক্ষ শিল্পীরাও অন্য কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন৷ জিএসটি-র ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলেই আমাদের ধারণা৷’’

এই শিল্পীরাই দুর্গতিনাশিনীর মৃন্ময়ী রূপের কারিগর৷ কুমোরটুলি ঝুপসি, স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে তৈরি হওয়া প্রতিমাই মণ্ডপ আলো করে রাখবে পুজোর কয়েকটা দিন৷ শুধু কলকাতা বা বাংলা নয়, তার গণ্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন রাজ্য বা বিদেশে উৎসব জমে উঠবে৷ খরচ হবে কোটি কোটি টাকা৷ কিন্তু মৃৎশিল্পের দুর্গতি কে ঘোচাবে?                                                 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ