পোশাক শিল্প নিয়ে ভাবনা
৯ জুন ২০১৩যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা থাকবে কিনা সে সিদ্ধান্ত হবে এ মাসেই৷ আর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জিএসপি সুবিধা না থাকলেও বিচলিত তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা৷ বিজিএমইএ'র সভাপতি আতিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধা পায়৷ তারা এরইমধ্যে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কাজের পরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আলোচনাও হয়েছে৷ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারা জিএসপি সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছে৷ এই অবস্থায় যদি যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করে তাহলে তা অনুসরণ করতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ আর মোট রপ্তানি পোশাকের ৬০ ভাগ যায় ইউরোপে৷
আতিকুল ইসলাম বলেন এখনই জিএসপি বাতিল বা স্থগিত না করে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বাংলাদেশকে আরো বিছুটা সময় দেয়া৷ কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সব পোশাক কারখানা নিয়ম নীতি মেনে গড়ে ওঠেনি৷ তবে এখন সব কারখানায় কাজের পরিবেশ এবং শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ চলছে৷ শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে৷ আর তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়ার কাজও চলছে৷ এসব কাজ শেষ হতে তেমন সময় লাগবেনা৷
সিপিডি'র অর্থনীতিবিদ ড. গোলাম মোয়াজ্জেমও মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ দুই জায়গায়ই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি সংকটে পড়বে৷ কারণ এই দুই এলাকায়ই ৯০ ভাগ পোশাক রপ্তানি হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র পোশাকে জিএসপি সুবিধা না দিলেও অন্যান্য পণ্যে বাতিল হলে তার প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাকে৷ আর যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তৈরি পোশাকে জিএসপি বাতিল করলে তা হবে অনেক বড় ক্ষতির কারণ৷ তিনি বলেন তাই সরকারে উচিত এককভাবে নয়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বহাল রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা৷ তবে তিনি মনে করেন ভবিষ্যতে জিএসপি সুবিধা ছাড়াই তৈরি পোশাক রপ্তানির সক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন৷
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ আর এখন রপ্তানির পরিমাণ বছরে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ আসে এই খাত থেকে৷ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ এখানে সাড়ে ৪ হাজার পোশাক কারখানা আছে৷ এসব কারখানায় প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ যাদের ৮০ ভাগই নারী৷ কম মজুরি এবং পোশাক কারখানায় আগুনসহ একের পর এক নানা দুর্ঘটনায় শত শত শ্রমিকের মৃত্যু বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে এখন প্রশ্নের মুখে দাড় করিয়েছে৷