গেল নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বিষয়ে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন ফেডারেল তদন্ত সংস্থার বিশেষ কাউন্সেল রবার্ট মালার৷ ট্রাম্প কোনো ‘অন্যায়ে' জড়িয়েছিলেন কি না তা-ই যাচাই করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে মালার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ চেয়েছেন বলে জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম৷ এনবিসি নিউজ সবার আগে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ পরে ওয়াশিংটন পোস্টসহ অন্যান্য গণমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তকারীদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে জিজ্ঞাসাবাদ যেন নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যেই থাকে, সে বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা৷ জিজ্ঞাসাবাদ ‘অতি দ্রুত' হবে বলে জানিয়েছে পত্রিকাগুলো৷
‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’: ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে একনজর
মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফের বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’ প্রকাশের আগেই ওয়াশিংটনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ বইতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার রয়েছে৷ হোয়াইট হাউসের অন্য চিত্র ফুটে উঠেছে এতে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/D. Higgins
‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’
মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল উলফের নতুন বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’৷ এই বইয়ের বিশেষ কিছু অংশ মার্কিন এবং ব্রিটিশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ বইটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের এক অন্য ছবি উঠে এসেছে৷ ম্যাকডোনাল্ড বার্গারের প্রতি ভালোবাসা থেকে ইভানকা’র প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন এমন নানা বিষয় উঠে এসেছে এতে৷
ছবি: picture-alliance/AP/B. Camp
‘মেলানিয়ার চোখে জল’
‘‘নির্বাচনের রাতে, ৮টার একটু পরে, যখন মোটামুটি নিশ্চিত ট্রাম্প হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট, ট্রাম্প জুনিয়র তার বন্ধুকে বলেছিলেন, তার বাবাকে এমন দেখাচ্ছিল, যেন ভূত দেখেছেন৷ মেলানিয়ার চোখে ছিল জল, তবে তা আনন্দের নয়৷ এর এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে হতবাক ট্রাম্পকে এমন দেখাচ্ছিল যেন তিনি ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাঁকে দ্বিধাগ্রস্ত আর ভীত দেখাচ্ছিল৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/V. Mayo
ইভানকা ট্রাম্প প্রথম ‘নারী প্রেসিডেন্ট’?
‘‘কোনো পুরস্কার পেতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে– জ্যারেড এবং ইভানকা এটা মেনে নিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছেন, অন্যদের পরামর্শ মেনে কাজ করছেন৷ দু’জনের মধ্যে যেন এক অলিখিত চুক্তি: ভবিষ্যতে কখনো যদি সুযোগ আসে, ইভানকাই লড়বেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিলারি নন, হবেন ইভানকা৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/M. Sohn
ফাস্ট ফুড খেতে লাগে ভালো
‘‘অনেক আগে থেকে ট্রাম্পের মধ্যে একটি চিন্তা কাজ করে যে, কেউ তার খাবারে বিষ মিশিয়ে দিবে– এই চিন্তা থেকেই ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার বেছে নিয়েছেন তিনি৷ কেননা, ম্যাকডোনাল্ডসের খাবার আগে থেকেই তৈরি থাকে৷ তাই কেউ জানে না যে ট্রাম্প সেটা খাবেন৷’’
ছবি: Instagram
ব্যাননের তত্ত্ব
‘‘ব্যাননের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু হলো চীন৷ নতুন শীতল যুদ্ধের প্রথম ফ্রন্ট হলো চীন৷ চীনকে নিয়েই মাথা ঘামানো উচিত, আর কিছু নিয়ে নয়৷ চীনের সঙ্গে যদি সম্পর্ক ঠিক না থাকে, কোনো কিছুই ঠিক থাকবে না৷ পুরো ব্যাপারটা খুব সহজ৷ চীনের বর্তমানে যা অবস্থা, ১৯২৯ থেকে ১৯৩০ সালে জার্মানির নাৎসিদেরও এমন অবস্থাই ছিল৷ চীনারা, জার্মানদের মতোই ভীষণ বাস্তববাদী৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/B. Anderson
ব্যানন: ডোনাল্ড জুনিয়র ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’
‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, জ্যারেড কুশনার এবং নির্বাচনি প্রচারণার ব্যবস্থাপক পল ম্যানাফোর্ট মনে করেন, ট্রাম্প টাওয়ারের ২৬ তলায় সম্মেলন কক্ষে বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকটি একটি ভালো পরিকল্পনা ছিল৷ সেখানে কোনো আইনজীবী ছিল না৷ এখন যদি আপনার কাছে মনে হয় এটা রাষ্ট্রদ্রোহ না, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড নয়, তারপরও আমি বলবো, এটা রাষ্ট্রদ্রোহ৷ আমাদের ঠিক সেই মুহূর্তেই এফবিআইকে খবর দেয়া উচিত ছিল৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
‘হেরে গেলেও জিতে জেতেন’
‘‘ট্রাম্প যদি নির্বাচনে হেরেও যেতন, তাহলেও বিখ্যাত হতেন৷ তার মেয়ে ইভানকা এবং জামাই জ্যারেড আন্তর্জাতিক তারকা বনে যেতো৷ স্টিভ ব্যানন হতো টি-পার্টি আন্দোলনের ডি ফ্যাক্টো প্রধান৷ অর্থাৎ হেরে গেলেও তাদের অন্যরকম জয় হতো৷’’
ছবি: picture-alliance/AP/B. Anderson
7 ছবি1 | 7
এদিকে, এ ঘটনায় হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে হোয়াইট হাউসে৷ হোয়াইট হাউস এতদিন ভাবেনি যে, তদন্ত ২০১৮ পর্যন্ত টেনে নেবেন মালার৷ এর আগে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা দলের তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে৷
প্রচারণা দলের সাবেক যোগাযোগ বিষয়ক প্রধান পল ম্যানাফর্ট তো বলেই দিয়েছিলেন যে, মালার তার এখতিয়ার লঙ্ঘন করছেন৷
এদিকে, হোয়াইট হাউসের দূত টাই কব ও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী জে সেকুলো চাইছেন, মালার যেন প্রশ্নগুলো আগেভাগে দিয়ে দেন, অথবা সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প যেন প্রশ্নের লিখিত উত্তর দিতে পারেন৷
এদিকে, এই সাক্ষাৎকারের সঙ্গে জড়িত একজনের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে যে, প্রেসিডেন্টের জন্য আলাদা নিয়ম তৈরির কোনো আগ্রহ মালারের নেই৷ বিশেষ করে, সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি প্রসঙ্গে৷ গত বছরের মে মাসে তাঁকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প৷
তখন থেকেই কোমি বলে আসছেন যে, প্রেসিডেন্ট তাঁকে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো যোগসাজশ আছে কিনা তা তদন্ত করতে নিষেধ করেছিলেন৷
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷