জিঞ্জারব্রেড দিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের ভীতিকর চরিত্র
৯ মার্চ ২০২৩শিল্পী কারোলিন এরিকসনের বৈঠকখানা হরর ও কল্পবিজ্ঞান চলচ্চিত্রের ‘মনস্টার' বা দৈত্যে ভরা৷ তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই, সেগুলি সব জিঞ্জারব্রেড দিয়ে তৈরি৷ কারোলিন বলেন, ‘‘কাঠামো জিঞ্জারব্রেডের ওজন ধরে রাখতে পারবে কিনা, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ৷ না পারলে ভেঙে মেঝের উপর পড়বে৷ তখন আমার সব কাজ হারিয়ে যাবে৷ সত্যি আশা করি, এমনটা ঘটবে না৷''
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অসলো-ভিত্তিক এই সুইডিশ শিল্পী মার্কিন অতিপ্রাকৃত ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস' সিরিজের মনস্টার ‘ডেমোগর্গন' নিয়ে কাজ করছেন৷ জিঞ্জারবেডের উচ্চতা এক মিটার বিশ সেন্টিমিটার, ওজন প্রায় ১৫ কিলো৷
স্টার ওয়ার্সের ডার্থ ভেডার, এলিয়েন চলচ্চিত্রের জেনোমর্ফ, গার্ডিয়ান্স অফ দ্য গ্যালাক্সির গ্রুট এবং স্পাইডারম্যানের চরিত্র ভিনোমের মতো জিঞ্জারব্রেডের সৃষ্টিও শোভা পাচ্ছে৷ এমন উদ্ভট শখ সম্পর্কে কারোলিন বলেন, ‘‘আমি চলচ্চিত্র-পাগল ও সায়েন্স ফিকশন অনুরাগী৷ পপ কালচারের সব কিছুই আমার পছন্দ৷ সে কারণেই হয়তো এমন সব চরিত্র বেছে নেই৷ তাছাড়া ভয়ংকর ও রহস্যজনক কোনো কিছু তৈরির একটা আলাদা রোমাঞ্চ রয়েছে৷ আমার সত্যি সেটা পছন্দ৷''
প্রতিটি প্রকল্পই এক স্কেচের মাধ্যমে শুরু হয়৷ নিজের কাজের মূলমন্ত্র ব্যাখ্যা করে কারোলিন এরিক্সসন বলেন, ‘‘প্রক্রিয়ার শুরুতে কোন্ দিকে সব সময়ে মনোযোগ দিতে হয়, সেটা আমি শিখেছি৷ কারণ শুরুতে ভুল করলে পরেও কিছু না কিছু গোলমাল হবে৷ তাই আগেভাগেই সম্ভাব্য সমস্যা কল্পনা করে ঘটার আগেই সেই সমস্যা দূর করার চেষ্টা করি৷''
মূর্তিগুলিকে স্থিতিশীল করতে তিনি তার দিয়ে এক কঙ্কাল তৈরি করে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে মুড়ে দেন৷ জাপানের ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে' নামের অ্যানিমে চলচ্চিত্রের ড্রাগন হাকু তাঁর অন্যতম চলমান প্রকল্প৷ মূর্তির বাইরের অংশ সব সময়ে শুদ্ধ জিঞ্জারব্রেডের তাল দিয়ে তৈরি৷ সেটা কি শিল্প, নাকি বড়সড় এক বিস্কিট? কারোলিন বলেন, ‘‘আমার মনে কখনো এমন ভাস্কর্য খাবার ইচ্ছে জাগে নি৷ আমি যেহেতু কুকি নয়, আর্ট হিসেবে সেগুলি সৃষ্টি করি, কেউ সেই ভাস্কর্য খেলে আমার কষ্ট হবে বলে মনে হয়৷''
শুরুতে তিনি জিঞ্জারবেড দিয়ে বাড়িঘর বানিয়েছেন৷ তখন থেকেই তিনি একই উপকরণ দিয়ে জীবগুলি সৃষ্টির আইডিয়া পান৷ কারোলিন এরিকসন বলেন, ‘‘এটি জিঞ্জারবেড তৈরির সাধারণ প্রণালী৷ আমি একেবারে শুরু থেকে সেটা তৈরি করি৷ অতএব খাওয়া যায়৷ স্বাদ আসলেই খুব ভালো৷''
কারোলিন এরিকসনের সর্বশেষ কৌশল হলো এমন এক জিঞ্জারব্রেডের তাল তৈরি করা, পানি যোগ করার কারণে যেটি কাদামাটির মতো সহজে পছন্দমতো আকার দেওয়া যায়৷
তিনি ধীরে ধীরে কাঠামোর উপর সেই তাল বসিয়ে একাধিকবার শুকাতে দেন৷ সেই গঠন অক্ষত থাকে৷ অবশেষে তিনি ভোজ্য রং যোগ করে ভাস্কর্যটিকে আরও জীবন্ত করে তোলেন৷ তবে সেই শিল্পকর্ম মোটেই স্থায়ী হয় না৷ কারোলিন এরিকসন বলেন, ‘‘এমন সৃষ্টি অবশ্যই চিরকালের জন্য নয়৷ খাদ্য বলে কোনো না কোনো সময় ভেঙে পড়বেই৷ মনে হয় কয়েক মাস টিকবে৷ ভেঙে পড়ার আগে মন একটু খারাপ হলেও অন্যদিকে শিল্পকর্ম স্থায়ী না হবার একটা রোমাঞ্চও রয়েছে৷ তখন সেটির আরও কদর করা হয়৷''
বাইরে ভয়ংকর হলেও ভেতরটা মিষ্টি৷ সে কারণেও কারোলিন এরিকসনের শিল্পকর্ম দর্শকদের আরও মুগ্ধ করে৷
টেওডোরা মাভ্রোপুলুস/এসবি