বাংলাদেশের নারীদের বার্ষিক মজুরিবিহীন গৃহকাজের অর্থনৈতিক মূল্য এক লাখ ১১ হাজার ৫৯১ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা৷ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
গবেষণায় বলা হয়েছে, গৃহকাজের অর্থনৈতিক মূল্য মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশের সমতুল্য৷ ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার৷
উন্নয়ন অন্বেষণ দুই পদ্ধতিতে নারীদের মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্যমান হিসাব করেছে৷ ‘সুযোগ খরচ' পদ্ধতি এবং ‘বাজার প্রতিস্থাপন খরচ' পদ্ধতি৷
সুযোগ খরচ পদ্ধতিতে শ্রমবাজারে অন্য বিকল্প থেকে যে আয় পাওয়া যায়, তার অঙ্ক হিসাব করা হয়৷ আর বাজার প্রতিস্থাপন খরচ পদ্ধতিতে গৃহকর্ম করতে বিকল্প কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে কত টাকা ব্যয় হতো, তা হিসাব করা হয়৷ দেশের সাতটি বিভাগ থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সাতটি জেলা নির্ধারণ করে ৫২০ জন নারীর ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়৷ দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বেছে নেওয়া এ নারীদের মধ্যে শহরের ৩১৮ জন এবং গ্রামের ২০২ জন৷
২০১৩ সালে বাংলাদেশের আলোচিত নারী
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো আলোচনায় ছিলেনই, ছিলেন আরো কয়েকজন৷ ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন দুই নারী৷
ছবি: DW/M. Magunia
শেখ হাসিনা
রাজনীতির ময়দানে প্রধানমন্ত্রী বরাবরই আলোচনায় ছিলেন৷ সেইসাথে পেয়েছেন জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ পুরস্কার৷ সর্বদলীয় সরকার গঠনসহ নানা কারণে এখনও আলোচনায় তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খালেদা জিয়া
সরকার পতনের আন্দোলন, জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবি, হেফাজতকে সমর্থন – এসব কারণে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াও ছিলেন আলোচনার তুঙ্গে৷
ছবি: DW
শিরীন শারমিন চৌধুরী
এ বছরের এপ্রিলে জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী৷ তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার৷ এছাড়া প্রথমবার এবং সংরক্ষিত কোটায় সংসদ সদস্য হয়ে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাও তারই ক্ষেত্রে প্রথম৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাজমুন আরা সুলতানা
ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন নাজমুন আরা সুলতানা৷ তিনি ইতিহাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নিয়োগ পাওয়া প্রথম নারী বিচারপতি৷ ২০০০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তিনিই ছিলেন দেশের উচ্চ আদালতে প্রথম নারী বিচারপতি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
ওয়াসফিয়া নাজরীন
এভারেস্ট জয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন এ বছর মার্চে ইউরোপের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এলব্রুস জয় করেন৷ সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তিনি৷ ২০১১ সালে স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ ৭টি শৃঙ্গ জয় করার ঘোষণা দেন ওয়াসফিয়া৷ এরই মধ্যে পাঁচটি শৃঙ্গ জয় করেছেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
রেশমা
বাংলাদেশে এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা রানা প্লাজার ভবন ধস৷ এ ঘটনায় আলোচিত নারী রেশমা৷ রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে যাকে ১৭ দিনের মাথায় জীবিত উদ্ধার করা হয়৷ বিশ্ব গণমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন তুলে৷ তবে তাকে উদ্ধারের ঘটনা ‘নাটক’ বলেও উল্লেখ করেছিল অনেক দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
নাদিয়া শারমিন
এ বছরের এপ্রিলে হেফাজত ইসলামের একটি সমাবেশে দলটির কর্মীদের হাতে নাজেহাল হন একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন৷ এ হামলার প্রতিবাদে কেবল সাংবাদিকরাই নন, পুরো দেশের নারী অধিকার কর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাকি আক্তার
গণজাগরণ মঞ্চের অগ্নিকন্যা লাকি আক্তার শাহবাগ আন্দোলনের সময় ব্যাপক পরিচিত পান৷ তার স্লোগান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং গণজাগরণের কর্মীদের উদ্দীপিত করেছিল সব সময়৷ তার স্লোগানে গর্জে উঠেছিল শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা৷
ছবি: REUTERS
নাজমা আক্তার
বার্লিনে এ বছরের বর্ষসেরা নারী নেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের নাজমা আক্তার৷ তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা এই নারী এ বছরের অক্টোবরে ‘আস্ত্রাইয়া ফিমেল লিডার অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০১৩’ ট্রফি গ্রহণ করেন৷
ছবি: DW/Ashish Chakraborty
মাহফুজা আক্তার
বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী মাহফুজা আক্তার এ বছর ডয়চে ভেলে আয়োজিত ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম অ্যাওয়ার্ড' পান৷ উচ্চমাধ্যমিক পাস করা মাহফুজা তথ্যকল্যাণী হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে৷ গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নে অবস্থিত তাঁর নিজের গ্রামসহ আশেপাশের মোট পাঁচটি গ্রামে কাজ করেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Magunia
10 ছবি1 | 10
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, বাংলাদেশে সাধারণভাবে মজুরি এত কম না হলে এবং নারী ও পুরুষের মজুরি বৈষম্য না থাকলে ওই দুই পদ্ধতিতে মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কর্মের মূল্যমান আরও বেশি হতো৷
উন্নয়ন অন্বেষণের গবেষণা অনুযায়ী, যেসব নারী চাকরি, ব্যবসা, হস্তশিল্প তৈরি, দিনমজুরি এবং অন্যের বাসায় কাজে নিয়োজিত, তারাও নিজেদের গৃহকর্মের জন্য দৈনিক যথাক্রমে গড়ে ৩ দশমিক ৭১, ৩ দশমিক ৬৯, ৫ দশমিক ২, ৪ দশমিক ৮ এবং ৪ দশমিক ৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে থাকেন৷ এ ক্ষেত্রে কাঠামোগত ব্যর্থতা ও প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী৷
সিপিডি-র ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘নারীর গৃহকাজের আর্থিক হিসাব তার ক্ষমতায়ন এবং সমতার জন্য জরুরি৷ কারণ বাংলাদেশে আয় সক্ষমতার ওপর ক্ষমতায়ন নির্ভর করে৷ নারীরা ঘরের কাজ করে বলে তার কোন আর্থিক মূল্য বিবেচনা করা হয় না৷ আর পুরুষরা বাইরে কাজ করে নগদ অর্থ আয় করায় তা বিবেচনায় নেয়া হয়৷ এই প্রবণতা দূর করা উচিত৷''
তিনি বলেন, ‘‘ঘরের কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করালে তাতে অর্থ খরচ হয়৷ সেটা বিবেচনা করলেই গৃহকাজের আর্থিক বিষয়টি স্পষ্ট হয়৷''
তবে তিনি বলেন, ‘‘এখনই নারীদের গৃহকাজের আর্থিক হিসাবকে জিডিপিতে যোগ করা হয়তো যাবে না৷ তবে ধারাবাহিকভাবে এর হিসাব প্রকাশ হলে ধীরে ধীরে জিডিপিতেও যোগ করা যেতে পারে৷ তবে তা কিভাবে করা যাবে তা গবেষণার বিষয়৷''
উন্নয়ন অন্বেষণ শ্রমবাজারে নারীদের আরও বেশি হারে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলছে, জীবনধারণের বাধ্যবাধকতা, ক্রমবর্ধমান আর্থিক চাহিদা এবং পারিবারিক সহায়তা হ্রাস নারীদেরকে বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিত হতে বাধ্য করছে৷
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘শুধু তাই নয় ঘরের কজের পাশাপাশি নারীরা এখন ব্যবসাসহ নানা স্বাধীন পেশায় যুক্ত হচ্ছে৷''