জিনসের প্যান্ট আজ প্রায় গোটা বিশ্বেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে৷ এক ব্রিটিশ শিল্পী উপকরণ হিসেবে ডেনিমকে ভিন্ন মাত্রা দিচ্ছেন৷ তাঁর শিল্পকর্ম গোটা বিশ্বে সমাদর পাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জিনসের বিশাল স্তূপই ইয়ান বেরি-র রংয়ের প্যালেট ও শিল্পের উপকরণ৷ লন্ডনে তাঁর স্টুডিওতে কমপক্ষে ২,০০০ জিনসের প্যান্ট রয়েছে৷ শিল্পী হিসেবে তিনি প্রতিটি শিল্পকর্মের জন্য সর্বদা নীল রঙের সঠিক শেড বা মাত্রার খোঁজ করেন৷ ইয়ান বলেন, ‘‘আমি এমন শিল্পী নয়, যে পেন্ট ব্যবহার করে সঠিক রংয়ের মিশ্রণ ঘটায়৷ আমাকে বাইরে বেরিয়ে সঠিক শেড খুঁজতে হয়৷ ব্লিচ বা রঞ্জক ব্যবহার করে আমি রং বদলাই না৷ সত্যি ম্যাচ করবে, এমন রঙের জিনস খুঁজি৷ আমি এখানে আধ ঘণ্টা, এক ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করে সঠিক জিনসের খোঁজ করি৷''
বেরি তাঁর বিশাল ফরম্যাটের শিল্পকর্মের উপকরণ হিসেবে ডেনিম খোঁজেন৷ একটু দূর থেকে দেখলে মন হয় ছবি৷ কাছে গেলে বোঝা যায় সেটি আসলে কয়েক'শ ডেনিমের টুকরো দিয়ে তৈরি একটি কোলাজ৷ রং, শেড ও তার উপরিভাগ – সবই ফেডেড ও ওয়াশড আউট জিনস থেকে আসে৷ ডেনিম শিল্পী ইয়ান বেরি বলেন, ‘‘আমি যে সব টুকরো ব্যবহার করি, তার সবকটির শেড আলাদা৷ তাই দূর থেকে ছবির মতো দেখতে লাগে৷ মানুষ বুঝতে পারেন না, যে আমার শিল্পকর্ম জিনস দিয়ে তৈরি৷ সেটাই অন্যতম সেরা বিষয়৷ আমি ছবি আঁকার মতোই এই উপকরণ ব্যবহার করি৷ ঠিক যেন তুলির টানে আঁকা হচ্ছে৷''
জিন্সপ্রেমীদের যে ৮টি তথ্য জানা দরকার
জিন্সের সাথে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই, একথা ঠিক৷ তবে জিন্সের প্যান্ট স্কিনি বা স্ট্রেচ হওয়ায় যেমন রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম, তেমনি রয়েছে না্না রকমের ছাঁট ও ডিজাইন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPhoto
মম জিন্স
এই নামের ও ছাঁটের জিন্স হয় আরামদায়ক৷ ওপরের অংশ কিছুটা ঢিলেঢালা হলেও নীচে অর্থাৎ পায়ের কাছে চাপা৷ এই জিন্স পরার পর কিন্তু পেট বেশ নির্মেদ দেখায়৷ বলা যায়, যাঁদের পেট সামান্য মোটা, তাঁদের জন্য অবশ্যই মম জিন্স ভালো৷
ছবি: picture-alliance/beyond/Sonntag
ওয়াইড ক্রপড জিন্স
এই ছাঁটের জিন্সের ওপরটা চাপা বা টাইট, তবে পা দু’টো চওড়া৷ এই জিন্সের সাথে হাইহিল পরলে মেয়েদের কিন্তু বেশ স্মার্ট দেখায়৷
ছবি: Colourbox
ফ্লেয়ার্ড জিন্স
টাইট জিন্স তবে নীচের বর্ডার উল্টনো বা ভাঁজ করা৷ এই ডিজাইন কিন্তু আগে ট্রেন্ড ছিল, এখনো ট্রেন্ড৷
ছবি: picture-alliance/L. Albig-Treffers
স্কিনি জিন্স
নামেই যার পরিচয়৷ পায়ের সাথে একদম টাইট হয়ে লেগে থাকে এই জিন্স৷ তরুণ-তরুণীদের ভীষণ পছন্দ!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Grant
ডেকোরেটেড অর্থাৎ সাজুগুজু করা জিন্স
ছোট ছোট কাঁচ পাথর বা পুতি বসানো জিন্স৷ একটু কম বয়সের মেয়েরাই এসব পরে থাকে৷ তবে এই জিন্স ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া যায়না৷
ছবি: Colourbox
স্ট্রিংটাঙ্গা জিন্স
খোলামেলা জিন্স৷ এরকম জিন্সপরা মানুষ অবশ্য তেমন দেখা যায়না বললেই চলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashi
স্ট্রেচ জিন্স
এই জিন্স টানলে কিছুটা বড় হয়, অর্থাৎ সাইজ একটু এদিক-সেদিক হলেও কিন্তু ভালোভাবেই পরা যায়৷এ জিন্স খুব আরামদায়ক৷ তবে এই ধরনের জিন্স কিন্তু ড্রায়ারে দেওয়া যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/O. Gutfleisch
বয়ফ্রেন্ড জিন্স
এই জিন্সের ছাঁট সাধারণ, তবে একটু ঘুরিয়ে সেলাই করা৷ খুব জনপ্রিয় এই জিন্স মেরিলিন মনরোর মতো সে যুগের অভিনেত্রীর যেমন প্রিয় ছিল, তেমনি এ যুগের কেটি হোমসেরও খুব প্রিয়৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/F. Röder
8 ছবি1 | 8
সঠিক শেড খুঁজে পেলে বেরি জিনসের কাপড় প্রয়োজন মতো কেটে নেন৷ তারপর বিশেষ আঠা লাগিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে দেন৷ এভাবে ধীরে ধীরে ছবিটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ বিভিন্ন স্তর থাকায় সেটি প্রায় ত্রিমাত্রিক হয়ে ওঠে৷ ইয়ান বেরি সর্বদা তাঁর উপকরণের নতুন গুণাগুণ আবিষ্কার করে চলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হয়ত আট বছর আগে আমি পাড় কাটতে শুরু করি৷ চকচকে সারফেসের উপর এক ধরনের প্রতিফলন হিসেবে আমি সেটি ব্যবহার করি৷ তখন সেই পাড়ের সারফেস উজ্জ্বল ধাতব পালিশ করা মনে হতো৷''
প্রায় ১৫ বছর আগে ডেনিম সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল৷ গোছগাছ করার সময় তিনি জিনসের একটি স্তূপ খুঁজে পান৷ একেবারে প্রথম দিকের শিল্পকর্মে গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের বিখ্যাত অভিনেতাদের কোলাজ শোভা পেত৷ ইয়ান বেরি বলেন, ‘‘যখন আমি ডেনিম নিয়ে হাত পাকাতে শুরু করি, তখন সেই সব ব্যক্তিদের পোর্ট্রেট করার ইচ্ছা হয়েছিল, যারা ডেনিমকে আজ এত জনপ্রিয় করে তুলেছেন৷ অতীতে শুধু কিছু পেশার কাজের জন্য ডেনিম ব্যবহার করা হতো৷ আজ উচ্চদরের ফ্যাশনে তা করা হয়৷ ভাবলে অবাক লাগে যে ম্যারিলিন মনরো, জেমস ডিন, মার্লন ব্র্যান্ডোর মতো মানুষ জিনস পরে ডেনিমের ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছেন৷''
ডেনিম আর্টের দৌলতে ইয়ান বেরি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন৷ আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্ম প্রকাশিত হয়৷ তিনি নিজেও কিছু দামি, ঝকমকে বই প্রকাশ করেছেন৷ সেই সঙ্গে তিনি বিশাল মাপের ইনস্টলেশনও সৃষ্টি করেন৷ ‘সিক্রেট গার্ডেন'-এর মতো শিল্পকর্ম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে৷ হাজার হাজার ইউরো মূল্যে সে সব বিক্রি হয়৷
জিন্সের প্যান্ট দীর্ঘদিন সুন্দর রাখবেন যেভাবে
জিন্স সকলেরই পছন্দ৷ তরুণ প্রজন্মের তো জিন্স ছাড়া যেন চলেই না৷ একটু আলাদা বা বিশেষভাবে যত্ন নিলে জিন্সের প্যান্ট কিন্তু দীর্ঘদিন সুন্দর রাখা সম্ভব৷
ছবি: picture alliance / dpa
প্যান্ট উল্টে নিন
ধোয়ার আগে প্যান্টটি পুরোপুরি উল্টো করে নিন৷ বিশেষ করে মেশিনে দিলে তো অবশ্যই তা করা উচিত৷ তা না হলে মেশিনের গায়ে প্যান্টটি বার বার লাগতে লাগতে কিছুটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Colourbox
কম ধোবেন
জিন্সের প্যান্ট যদি অতিরিক্ত ধোয়া হয়, তাহলে রং উঠে যেমন মলিন হয়ে যায়, তেমনি টাইট বা খাটোও হয়ে যেতে পারে৷ সে কারণে কমপক্ষে পাঁচ বা ছয় বার পরার পর ধোয়া উচিত৷ সুতরাং জিন্স যতটা সম্ভব কম ধোবেন৷
ছবি: Colourbox
মেশিনে না ধোয়াই ভালো
জিন্সের প্যান্ট মেশিনে না ধোয়াই ভালো আর ধুলেও শুধু ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন৷ আর হাতে ধোয়ার জন্য সাবান ছাড়া ১০ মিনিট ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন৷
ছবি: Fotolia/lightpoet
যে কোনো সাবান নয়
জিন্স ধুতে যে কোনো সাবান ব্যবহার না করাই ভালো৷ কারণ এতে রং নষ্ট হয়ে যাবার ভয় থাকে৷ তাই ফাইন ওয়াশিং সাবান বা রঙিন কাপড় ধোয়ার বিশেষ সাবান ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
শুকাবেন যেভাবে
জিন্স শুকাতে ড্রায়ার বা শুকানোর মেশিনে দেবেন না কিন্তু! জিন্স ধোয়ার পর অতিরিক্ত রোদে না দিয়ে বরং হালকা রোদ বা বাতাসে মেলে দিন৷
ছবি: picture-alliance/L. Albig-Treffers
জিন্স ইস্ত্রি করার প্রয়োজন নেই
ধোয়ার পরে পরার সময় একটু টান টান ভাব হয় বটে, তবে তা কিছুক্ষণের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়৷ কাজেই জিন্স ইস্ত্রি করার কোনো প্রয়োজন নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
প্রথমবার পরার আগে
প্রথম পরার আগে জিন্সের প্যান্ট অবশ্যই ধুয়ে নেবেন৷ কারণ জিন্সের রংয়ের সাথে কোনো রাসায়নিক উপদান থাকতে পারে এবং তা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে৷ তাছাড়া ধোয়ার আগে প্যান্টের গায়ে লেখা ‘গার্মেন্টস’ ট্যাগটি ভালো করে পড়ে নেবেন৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
7 ছবি1 | 7
তিনি সবার জন্য উন্মুক্ত স্থানেও প্রদর্শনী করেন৷ যেমন লন্ডনের সেলফ্রিজ বিপণীর জিনস বিভাগ ৬ সপ্তাহের জন্য ছোট মাপের গ্যালারির রূপ পেয়েছিল৷ তাঁর একটি শিল্পকর্ম আসলে আত্ম-প্রতিকৃতি৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে ইয়ান বলেন, ‘‘শিল্পী হিসেবে অবশ্যই গ্যালারি ও মিউজিয়ামে নিজের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী বেশ ভালো লাগে৷ কিন্তু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেগুলি দেখাতেও আমি ভালবাসি৷ মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখতে ভালো লাগে৷ ভিন্ন ধরনের দর্শকদের দেখাতে চাই৷ সব মানুষ গ্যালারিতে যান না৷ মানুষ এখানে এসে দেখলে শিল্পকর্মটি অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যায়৷''