তবে জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড মশা ছাড়ার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্সিটেক বায়োটেকনোলজি নামের একটি কোম্পানি তাদের ল্যাবে সৃষ্ট কয়েক কোটি মশা উন্মুক্ত করবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি৷ সংখ্যাটি ৭৫ কোটি বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন৷
জিন পরিবর্তন করা এসব পুরুষ মশা রক্তের জন্য কামড়ানো ক্ষতিকর স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হবে৷ এর ফলে নতুন জন্ম নেয়া স্ত্রী মশা প্রকৃতিতে আর বেঁচে থাকতে পারবে না, লার্ভা পর্যায়েই সেগুলোর মৃত্যু ঘটবে ৷ এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জিকা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতি রোগ বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশার বিস্তার ঠেকানো যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এরইমধ্যে কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ ও ব্রাজিলে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে এপিকে জানিয়েছেন অক্সিটেক এর বিজ্ঞানী কেভিন গরম্যান৷ তিনি বলেন, ‘‘ আমরা গত কয়েক বছরে এমন কয়েক শত কোটি মশা ছেড়েছি৷ পরিবেশ বা মানুষের উপরে এর কোনো সম্ভাব্য ক্ষতি নেই৷''
কিন্তু তারপরও ক্ষতির আশঙ্কায় অনেকেই এই ধরনের উদ্যোগের সমালোচনা করছেন৷ এর ফলে পরিবেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটবে বলে মনে করেন তারা৷
ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, জিকা আমাদের কাছে খুব পরিচিত৷ কিন্তু এমন অনেক রোগ রয়েছে, যার নামও হয়ত আমরা জানি না৷ মশাবাহিত নানা ধরনের রোগ নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: CC/somaskandaগর্ভবতী নারী মশাদের কামড়ে এই রোগ ছড়ায়৷ ৩০ ধরনের ভিন্ন প্রজাতির লাইশম্যানিয়াসিস জীবাণু রয়েছে৷ এর মধ্যে ১০টি মানবদেহে রোগ ছড়ায়৷ প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর ও মাথা ব্যাথা দেখা দেয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্কিন আলসার হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়৷ তবে দ্রুত ডাক্তার না দেখালে যকৃত, বৃক্কসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে লাইশম্যানিয়াসিস৷
ছবি: WHO/C.Blackকুলেক্স নামের নিশাচর মশা এই রোগের ভাইরাস বহন করে৷ মূলত আফ্রিকায় পাওয়া গেলেও সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে মানবশরীরে এই জীবাণুর অস্তিত্ব পেয়েছেন৷ এই মশার কামড়ে তীব্র জ্বর ও মস্তিষ্কে প্রদাহ দেখা দেয়৷ আরো ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন হাড়ের সংযোগেও প্রদাহের সৃষ্টি হয়৷ কয়েক সপ্তাহ পর এ রোগ এমনিতেই সেরে যায়৷ এর কোনো ওষুধ নেই৷
ছবি: Imagoটাইগার মশা এবং এডিস প্রজাতির আরো কিছু মশার মাধ্যমে ইয়েলো ফিভার ছড়ায়৷ সাধারণভাবে একে ফ্লাভিবাইরাসও বলা হয়ে থাকে৷ আফ্রিকার ৩৪টি এবং দক্ষিণ ও মধ্য অ্যামেরিকার ১৩টি দেশে ইয়েলো ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি৷ শুরুতে জ্বর এলেও পরে তা বমি, এবং একসময় মেনিনজাইটিসে রূপ নেয়৷ গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হওয়া, এমনকিসম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়৷
ছবি: Reuters/P. Whitakerএডিস ইজিপ্টাই নামের মশার কামড়ে আক্রান্ত হলে শরীরে ব্যাথা হয়, লাল গুটি দেখা দেয়, মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়াতেও ব্যাথা হয়৷ চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে রক্তক্ষরণে মৃত্যুও হতে পারে৷ প্রথমবারের ধাক্কা সামলে উঠলেই যে মুক্তি তা কিন্তু নয়৷ ডেঙ্গু রোগে কেউ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তা প্রথমবারের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে৷
ছবি: R. Richterএডিস ইজিপ্টাই, টাইগার মস্কিউটো এবং এডিস আলবোপিকটাস জিকা ভাইরাস ছড়ায়৷ ২০১৫ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ৷ জিকার আক্রমণে ব্রাজিলে অসংখ্য শিশু মাইক্রোসিফেলি নামের ভয়াবহ প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জন্মায়৷ এর ফলে শিশুদের মাথার আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়৷ বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা জিকায় আক্রান্ত হলে শিশুদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Lacerdaবয়স্ক লোক বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের ক্ষেত্রে এই রোগ ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে৷ এর ফলে মেনিনজাইটিস ও মায়োকার্ডিটিস হতে পারে৷ অন্যান্য মশাবাহী রোগের মতো কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা, জ্বর, মাথা ব্যাথা, ঝিমুনি এবং ব়্যাশ দেখা দিতে পারে৷ এর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleulচিকুনগুনিয়ার প্রভাবে জ্বর কাটিয়ে উঠতে তিন-চার দিন লাগে৷ কিন্তু এর পর হাড়ের জোড়ায় ভয়াবহ ব্যথা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে চামড়ায় ক্ষত দেখা দিতে পারে৷ তবে আশার কথা, একবার চিকুনগুনিয়া হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়৷
ছবি: Imagoমশাবাহী রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া সবচেয়ে বেশি পরিচিত৷ অ্যানোফিলিস নামের মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়৷ এই রোগে আক্রান্ত হলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে৷ ম্যালেরিয়ার কার্যকর ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি৷ তবে আগে থেকে সতর্ক থাকলে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কমানো যেতে পারে৷
ছবি: Cécilia Conan ফ্লোরিডা কিস এনভায়রনমেন্ট কোয়ালিশন নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের পরিচালক ব্যারি রেবলেছেন, এর ফলে আসলেই কী ঘটবে সে সম্পর্কে কারো কোনো ধারণাই নেই৷ প্রকৃতিতে জিন পরিবর্তন করা পুরুষ মশা প্রাকৃতিক মশার সঙ্গে মিলনে কেমন আচরণ করবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বলে মনে করেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মশাবাহিত রোগ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ম্যাক্স মরেনো৷
সিএনএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯-১০ সালে ফ্লোরিডা কিস-এ ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে৷ এরপর থেকেই এই রোগ বহনকারী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ৷ ওষুধ ছিটানো কিংবা মশাখেকো মাছ ছেড়েও তেমন একটা ফল পাওয়া যায়নি৷ এজন্য প্রতিবছর ১০ লাখ ডলারেরও বেশি ব্যয় করে আসছে তারা৷
এনএস/এফএস (এপি, সিএনএন)