জিপলাইন আজ পাহাড়ের মাথা থেকে উপত্যকায়, বনে-জঙ্গলে, সর্বত্র৷ ইংল্যান্ডের দীর্ঘতম জিপলাইনগুলোর মধ্যে একটি আছে ওয়েলস-এর এক সাবেক স্লেট পাথরের খনির ওপর দিয়ে নেমে গেছে হ্রদের দিকে৷
বিজ্ঞাপন
ইংল্যান্ডের দীর্ঘতম জিলপাইন
04:16
স্নায়ু শক্ত না হলে বস্তুটিতে না চড়াই ভালো! ওয়েলস-এর লিন ডিনাস হ্রদের ওপর দিয়ে ১,৭৫০ মিটার লম্বা ইস্পাতের তার ধরে বিনা ব্রেকে জিপলাইনিং৷ এটি হলো ইউরোপের দীর্ঘতম জিপলাইনগুলির মধ্যে একটি৷ প্রায় ভারশূন্য অবস্থায় ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে উড়ে যাওয়া৷
প্রথমে একটি ছোট, মোট ৫০০ মিটার লম্বা জিপলাইনে জিপলাইনিং-এর কায়দাটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়৷ শুধুমাত্র দু'পাশে বাতাসে হাত বাড়িয়ে গতিবেগ কিছুটা কমানো সম্ভব৷ যার ওজন বেশি, সে স্বভাবতই আরো তাড়াতাড়ি নীচে পৌঁছে যাবে৷
জিপলাইন শুরু হচ্ছে একটি পাহাড়ের মাথায়৷ জিপলাইনের উদ্যোক্তা শন টেইলর অংশগ্রহণকারীদের সেখান অবধি নিয়ে যান৷ জিপলাইনটা একটি সাবেক স্লেট পাথরের খনির একাংশে বসানো হয়েছে, যেটি ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে চালু৷ স্টার্টিং পয়েন্টে পৌঁছানোর আগে ডিলান হিউজ ওয়েলস-এর লোকগীতি গেয়ে সকলকে সাহস দেন৷
ক্লাইম্বিং পার্কের কদর বাড়ছে
জার্মানিতে ক্লাইমিং পার্কের সংখ্যা চারশোর মতো৷ আর এগুলোর প্রতি মানুষের চাহিদা ক্রমশ বাড়তির দিকে৷ দলবদ্ধভাবে ক্লাইম্ব করতে হয়৷ আর এতে মজা এবং বিনোদন দু’টোই অনেক৷ চলুন ঘুরে আসা যাক ক্লাইম্বিং পার্ক থেকে৷
ছবি: cc-by-sa-2.0-de/diba
উচ্চতা নিয়ে ভীতদের জন্য নয়
ক্লাইবিং মানেই উচ্চতার সঙ্গে খেলা৷ কখনো দড়ির তৈরি সিড়ি ধরে ওঠানামা করতে হবে, কখনো দড়ি ধরে ঝুলতে হবে, আবার কখনো সহায়তা করতে হবে সঙ্গীকে৷ ভূমি থেকে ৬ মিটার থেকে বিশ মিটার অবধি উপরে চলাফেরা খুব স্বাভাবিক ক্লাইম্বিং কোর্সে৷ তাই উচ্চতা নিয়ে যারা ভীত তাদের এদিকে না আগালেই ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
সবার আগে নিরাপত্তা
জার্মানির সবকিছুতেই নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়৷ ক্লাইম্বিং পার্কও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়৷ তাই ক্লাইম্ব শুরুর আগে অবশ্যই বিশেষ নিরাপত্তা বর্ম এবং হেলমেট পরতে হবে৷ কখনো কখনো হাতে গ্লোভস পরাও বাধ্যতামূলক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
মনোযোগ ঠিক রাখুন
ক্লাইম্ব শুরুর আগে অবশ্যই হেলমেট এবং আপনার দেহে বাঁধা বর্মের হুকটি নিরাপত্তা দড়িতে আটকাতে ভুলবেন না৷ প্রশিক্ষক বা সহযাত্রী ছাড়াই এভাবে আপনি একটি ঝুলন্ত সেতু পাড় হতে পারবেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/P. Royer
একক দড়ির সেতু
ঐতিহাসিকভাবে সেতু তৈরির সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে একটি দড়ি যার দু’প্রান্ত দু’দিকে বাধা থাকে৷ ‘হাই রোপ গার্ডেনে’ এ ধরনের সেতু রয়েছে৷ তবে এ ধরনের সেতুতে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে এগিয়ে চলা বেশ কঠিন৷ খেলার ছলে সে কাজটা করা যায় ক্লাইম্বিং পার্কে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/D. Maehrmann
টারজান হবার সুযোগ
দড়ি বা শিকলের সাহায্যে ঝোলানো সেতুর এক প্রান্ত যদি অপর প্রান্ত থেকে নীচু হয় তাহলে সেটি ‘রোপ স্লাইডে’ রূপ নেয়৷ আর তখন ছবির মতো করে শুধুমাত্র একটি হুক ধরে সেটা সহজেই পার হওয়া সম্ভব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
উড়ন্ত গাড়ি
ক্লাইম্বিং পার্কের মালিকরা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকেন৷ সেরকম এক উদ্যোগ হিসেবে ড্রেসডেনের কাছে মারিৎব্যার্গের এই গার্ডেনে যোগ করা হয়েছে সাবেক পূর্ব জার্মানির ‘ট্রাবান্ট কার৷’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
টিম ওয়ার্ক
ক্লাইম্বিং-এর ক্ষেত্রে টিম ওয়ার্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে জার্মানির সব ‘হাই রোপ গার্ডেনে’ টিম ক্লাইম্বিং-এর সুবিধা নেই৷ ছবিতে একজন প্রশিক্ষকের নেতৃত্বে দলগতভাবে কাজ করতে শিখছেন ক্লাইম্বাররা৷
ছবি: picture alliance/augenklick/firo Sportphoto
শহরে উপর দিয়েও চলার সুযোগ
‘হাই রোপ কোর্স’ শুধু বনজঙ্গল কিংবা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ বার্লিনের মাউন্টমিটে ‘রোপ গার্ডেন’ দিচ্ছে শহরের উপর দিয়ে হেঁটে চলার সুযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Schlesinger
নদীতে ক্লাইম্বিং
জার্মানির প্রথম এবং একমাত্র ভাসমান ‘হাই রোপ ক্লাইম্বিং গার্ডেনের’ অবস্থান হামবুর্গে৷ পানি থেকে ৩০ মিটার উপর অবধি ক্লাইম্ব সম্ভব এতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
9 ছবি1 | 9
বিশেষজ্ঞরা মাসের পর মাস ধরে নানা ধরনের টেস্ট আর কম্পিউটার অ্যানালিসিস করে দেখেছেন বটে যে, জিপলাইনটি নিরাপদ – কিন্তু আবহাওয়া সবসময়েই অনিশ্চিত থাকে৷ সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, জোর বাতাস থাকলে জিপলাইনে যিনি স্লাইড করছেন, তিনি ফিনিশিং পয়েন্টে পৌঁছাবেন এমন গতিবেগ নিয়ে যে, ব্রেক করতে গিয়ে তিনি চোট পেতে পারেন৷
স্টার্ট টু ফিনিশ
জিপ ওয়ার্ল্ড স্নোডনিয়া-র সিইও শন টেইলর স্টার্টের আগে অনেক কিছু বুঝিয়ে দেন: ‘‘নিঃশ্বাস নেওয়া চাই৷ এমন লোক আছেন, যারা জিপলাইনে চড়ে নীচে নামেন কোনো দম না নিয়ে৷ কিন্তু জিপলাইনে স্পিড উঠবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ মাইল৷ আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে, যিনি চড়ছেন, তিনি কোনো অস্বস্তি বোধ করবেন না – কেননা তিনি যেটা করতে চলেছেন, সেটা খুবই নাটকীয়৷''
হঠাৎ বাতাস আরো জোরালো হল৷ হিউজ-কে এবার অপেক্ষা করতে হবে৷ বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটারের বেশি হলে স্টার্ট করা সম্ভব নয়৷
ভীষণ অদ্ভুত পাঁচটি খেলা
একটি খেলায় প্রতিযোগীরা শুধু মুখ ভ্যাংচান৷ আরেকটাতে বেশি বেশি ঝাল খেয়ে অন্যদের হারানোর চেষ্টা করেন৷ জেনে নিন এমন কয়েকটি খেলার কথা যেগুলোতে জয়-পরাজয় নয়, নির্মল আনন্দ লাভই আসল কথা৷
ছবি: Getty Images/J. Li
ক্যাননবলিং
পানিতে আনন্দ করাই এই খেলার মূল উদ্দেশ্য৷ সুইমিং পুলে যত অদ্ভুতভাবে সম্ভব লাফিয়ে পড়া, পানি ছিঁটানো – এ সবেরই প্রতিযোগিতা হয় ক্যাননবলিংয়ে৷ খেলাটি অবশ্য নতুন নয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে নাকি একশ বছর আগেও হতো এ খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাদায় সাঁতরানো
এ খেলার ইংরেজি নাম ‘বগ স্নর্কেলিং’৷ লম্বা কূপের মতো জায়গা হলেই শুরু করা যায় এ খেলা৷ কূপে খুব কাদা থাকতে হবে৷ সেই কাদায় মাথায় স্নর্কেল আর পায়ে ফ্লিপার লাগিয়ে শুরু করতে হবে সাঁতরে সেই কূপ পার হওয়ার চেষ্টা৷ ওয়েলসে ১৯৮৫ সাল থেকে চলছে এ খেলা৷ সেখানে বরফশীতল কাদাজলে অনেক আমুদে, সাহসী মানুষ এ খেলায় অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঝাল খান আর হাসুন
যত খুশি ঝাল খাওয়ারও একটা প্রতিযোগিতা আছে৷ আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই হয় এমন প্রতিযোগিতা৷ জার্মানির বার্লিনে হয় চিলি সস খাওয়ার প্রতিযোগিতা৷ ঝাল খেতে খেতে অসুস্থও হয়ে পড়েন অনেকে৷ প্রতিযোগীদের উৎসাহে তারপরও ভাটা পড়ে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চেসবক্সিং
১৩ বছর আগে নেহায়েত মজা করতেই দাবার সঙ্গে বক্সিং মিলিয়ে ‘চেসবক্সিং’ নামের মজার এক খেলা শুরু করেছিলেন হল্যান্ডের ইয়েপ রুবিং৷ ৬ রাউন্ড দাবা আর ৫ রাউন্ড বক্সিং, দুটো মিলে ‘চেসবক্সিং’৷ দাবায় একবার কিস্তিমাত করতে পারলে কিংবা বক্সিংয়ে প্রতিপক্ষকে একবার নক আউট করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হবে খেলা৷ খেলাটি এখন অনেক দেশেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stephanie Pilick
ভ্যাংচানো
প্রাচীন কালে ইংল্যান্ডের এগ্রেমন্ট শহরে নাকি বোকা লোকদের মাথায় ঘোড়ার লাগাম লাগিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হতো৷ লোকটি রেগেমেগে নানা ধরণের মুখভঙ্গি করত আর সবাই তা দেখে হাসতো৷ ওখান থেকেই নাকি খেলাটির উৎপত্তি৷ আবার এ-ও কথিত আছে যে,টক আপেল খেতে গিয়ে অভিব্যক্তিতে যে পরিবর্তন আসে, তা দেখেই নাকি একদিন কারো মাথায় এসেছিল এমন এক খেলার আইডিয়া৷ এগ্রেমন্টে মুখ ভ্যাংচানোর খেলাটি চলছে প্রায় ৮০০ বছর ধরে৷
ছবি: Getty Images/J. Li
5 ছবি1 | 5
দুর্ধর্ষ গতির উড়াল৷ খাড়া স্টার্টের পরে স্লেট পাথরের চুড়োগুলোর উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে নেমে যাওয়া৷ কোনো কোনো সময় চুড়োগুলো থেকে কেবল-এর দূরত্ব মাত্র কয়েক মিটার৷ হ্রদের জলের ওপর উড়াল কিছুটা সু্স্থির ও শান্ত৷ ৫৫ সেকেন্ডের মধ্যেই উড়াল শেষ৷ উচ্চতার হিসেবে এই ৫৫ সেকেন্ডে ডিলান হিউজ নেমেছেন মোট ৪০০ মিটার৷
ডিলান হিউজ বললেন, ‘‘অসাধারণ!....উপর থেকে নামছি স্লেট পাথরগুলোর ওপর দিয়ে৷ তারপর খাড়াইটা পার হলেই সামনে এক বিস্তার, ফ্যান্টাস্টিক, দৃশ্যটা খুলে যায়, মনে হয় যেন উড়ছি....দুনিয়াটা হাতের মুঠোয়!''
ইউরোপের দীর্ঘতম জিপলাইনে চড়তে প্রতিবার লাগে ৫০ ইউরোর বেশি৷ তা সত্ত্বেও জিপলাইন অপারেটররা জানেন, যে একবার জিপলাইনে চড়েছে, সে চিরকাল জিপলাইনিং করতে চাইবে৷