1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈষম্যের শিকার জিপসিরা

ক্রিশ্টিয়ান স্টেফানেসকু/আরবি৩০ জানুয়ারি ২০১৩

বেশ কয়েক বছর ধরে রুমেনিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে জিপসি জনগোষ্ঠী জার্মানিতে বসবাস করতে আসছেন৷ স্বদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্যের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য তাঁরা পাড়ি দিচ্ছেন অন্যান্য দেশে৷ কিন্তু কোথাও তাঁরা সমাদৃত নন৷

ছবি: DW/C. Stefanescu

ডুইসবুর্গ শহরের অভিবাসী অধ্যুষিত এলাকা মার্ক্সলোহর অনেক মানুষের ভিড়ের মধ্যেও তাঁদের চিনতে ভুল হয় না৷ বিশাল প্লাস্টিকের ব্যাগে নানারকমের ব্যবহারযোগ্য আবর্জনা নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে মিলিয়ে যান তাঁরা জরাজীর্ণ বাড়িগুলির ভেতরে৷ এরা হলেন রুমেনিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে আসা জিপসি জনগোষ্ঠী৷

ছয় বছর আগে রুমেনিয়া ও বুলগেরিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকার পর থেকে দেশ দুটির প্রায় ১০ হাজার নাগরিক ডুইসবুর্গে এসে থিতু হয়েছেন৷ মার্ক্সলোহ এলাকায় অমানবিক পরিবেশে বসবাস করছেন তাঁরা৷ দরজাগুলি ভাঙাচোরা, জানালায় শার্সির বদলে কার্পেটের টুকরা বা চাদর ঝোলানো৷ দুই কক্ষের একটা বাড়িতে বয়স্ক ও বাচ্চা কাচ্চাসহ ১০ জনের মতো মানুষ বাস করে৷ ময়লার বিন থেকে কুড়ানো প্লাস্টিকের বোতল দোকানে জমা দিয়ে কিছু পয়সা উপার্জন করেন তাঁরা৷ বাচ্চাদের জন্য নগর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিছু ভাতাও জোটে৷ অবশ্য শর্ত হলো, তাদের কিন্ডারগার্টেন বা স্কুলে পাঠাতে হবে৷ অনেকেই নির্দ্বিধায় জানান, বাধ্য হয়ে চুরির পথে পা বাড়াতে হয়৷

Asylum Seekers from Southeastern Europe

03:20

This browser does not support the video element.

অভাব থেকে পরিত্রাণে অনটনের কবলে

এঁদেরই একজন জানান, ‘‘আরেকবার চুরির করার বদলে আমার মরাও ভালো''৷ এখন এই নারী বেকারদের সাহায্যের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জন করছেন৷ একবার এক দোকান থেকে ব্লেড চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতে নাতে ধরা পড়ে সাজাও ভোগ করেছেন তিনি৷ সামান্য ৭০ সেন্টের জন্য এই ধরনের ঝুঁকি নেয়ার মানেই হয় না৷

এঁদের অধিকাংশই নানা পথ পাড়ি দিয়ে ডুইসবুর্গে এসে পড়েছেন৷ কিছুদিন তাঁরা ফ্রান্সে বসবাস করেছেন৷ সেখান থেকে তাঁদের বের করে দেওয়া হয়৷ তারপর স্পেন ও ইটালিতে যাত্রা, কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ঐ দেশগুলিতে থাকা সম্ভব হয়নি তাঁদের পক্ষে৷ অবশেষে গন্তব্যস্থল হয় জার্মানির ডুইসবুর্গ৷ এখানে তাঁরা এমন এক জীবন যাপন করেন, যা মোটেও ঈর্ষণীয় নয়৷ মোটা অঙ্কের ভাড়া গুণে যে সব বাড়িতে তাঁরা বাস করেন, সেখানে কেউ থাকতে চাইবে না৷ কায়ক্লেশে যে অর্থ তাঁরা জোগাড় করতে পারেন, তা ভাড়া বাবদই চলে যায়৷ অন্যান্য জরুরি কাজের জন্য হাতে প্রায় কিছুই থাকে না৷

ডুইসবুর্গ-এ রুমেনিয়া ও বুলগেরিয়ার জিপসিদের ছাপ সর্বত্রছবি: DW/C. Stefanescu

এগিয়ে এসেছে মানবকল্যাণ সমিতি

দুই বছর ধরে একটি মানবকল্যাণ সমিতি এই সব মানুষের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, গড়ে তুলেছে এক প্রকল্প৷ এটির শিরোনাম, ‘পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা ইইউ অভিবাসন'৷

গত কয়েক বছরে বুলগেরিয়া ও রুমেনিয়া থেকে আসা ইইউ নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল৷ এ কারণে এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল৷

যে সব সমাজকর্মী রুমেনিয়ান বুলগেরিয়ান ভাষা জানেন, তাঁরা নতুন বাসিন্দাদের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজকর্মে সহায়তা দিয়ে থাকেন৷ এই সব মানুষ অফিস আদালতে অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান৷ এক তরুণী বলেন, ‘‘কেন তাঁরা জানতে চান আমার সন্তানের বাবা কে? আমি নিজেই তো তা জানিনা৷ তাঁরা সবাই বর্ণবাদী৷''

আরেক ব্যক্তির ১০০০ ইউরো জরিমানা হয়েছে৷ কারণ তিনি এক জুতার দোকানে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন৷ তিক্ত স্বরে জানান তিনি, ‘‘এত টাকা থাকলে চুরির তো দরকার হতো না৷'' সমাজকর্মীরা মধ্যস্থতা করার জন্য এগিয়ে আসেন৷ এতে হয়ত সাজা কিছুটা নরম হবে৷

যাজকরাও পিছিয়ে নেই

রুমেনিয়া থেকে আসা প্রটেস্ট্যান্ট যাজক ডিটার হুবারও এক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি ডুইসবুর্গ রাইনহাউসেন-এ যাজক হিসাবে কাজ করছেন৷ তাঁর সহকর্মী হাইনার আউগুস্টিন-এর সঙ্গে একত্রে নতুন অভিবাসীদের দেখাশোনা করছেন তিনি৷ তবে স্থানীয়দের জন্যও সাহায্য প্রয়োজন৷ কেননা এখানকার বাসিন্দাদের এক সময়ের শান্তশিষ্ট জীবনযাত্রা অনেকটাই লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে৷

জিপসিদের পাড়া মার্কসলোছবি: DW/C. Stefanescu

বাড়িভাড়া আকাশচুম্বী আয় নগণ্য

কিছু কিছু বাড়ির মালিকও সুযোগ বুঝে জরাজীর্ণ বাড়িগুলির জন্য মোটা অঙ্কের ভাড়া আদায় করছেন এই সব অভিবাসীর কাছ থেকে৷ এর ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ প্রবণতা৷ স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিচ্ছে ক্রোধ ও হতাশা৷ আর এই সুযোগটা গ্রহণ করছে বর্ণবাদী দল ও প্রতিষ্ঠানগুলি৷ তারা জিপসি বিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে৷ এদের বের করে দেয়ার কথা বলছে৷ কিন্তু আইনত তা সম্ভব নয়, কেননা তাঁরা ইইউ-এর নাগরিক৷ এই সব মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে যে কোনো দেশে যেতে পারেন৷ আইন অনুযায়ী কিছুদিন পর তাঁরা বসবাস করার ও কাজ করারও অনুমতি পান৷

সে পর্যন্ত তাঁরা ছোটখাট কাজ করে টিকে থাকার চেষ্টা করেন৷ নির্মাণ কাজে অংশ নিয়ে ঘণ্টায় তিন ইউরোর বেশি পান না তাঁরা৷ ন্যূনতম মজুরির এক তৃতীয়াংশ মাত্র৷ তবে আশানুরূপ কাজ পাওয়া সহজ নয়৷ প্রতিযোগিতার বাজার বড়ই কঠিন৷ কিন্তু এত সংগ্রাম সত্ত্বেও সমাজের এই প্রান্তিক গোষ্ঠী তাদের আগের স্বদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক নন৷ আরো বড় সামাজিক বৈষম্য ও দারিদ্র্যের ভয়টা তাঁদের এতই বেশি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ