1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জিম্বাবোয়ের বুনো কুকুর সংরক্ষণে অভিনব প্রকল্প

১৩ মার্চ ২০১৯

আফ্রিকার হিংস্র পশুদের মধ্যে বুনো কুকুর বেশ রহস্যজনক এক প্রাণী৷ সেই প্রজাতির অনেক আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যের কথা অনেকেই জানে না৷ তাদের সংরক্ষণের এক বিশাল উদ্যোগ চলছে৷

Simbabwe letzte Zuflucht für den Afrikanischen Wildhund?
ছবি: DW/Jürgen Schneider

আবহাওয়া ধীরে ধীরে একটু শীতল হলে জিম্বাবোয়ের দক্ষিণ পূর্বে বুশল্যান্ড এলাকায় আবার জীবনের ছন্দ ফিরে আসে৷ দিনের বেলা উচ্চ তাপমাত্রা এড়াতে বুনো কুকুর ছায়ায় পড়ে ঘুমায়৷ বিকালের দিকে গোটা দল একত্রিত হয় ও তারপর সন্ধ্যায় শিকার করতে বেরিয়ে পড়ে৷

কুকুরদের অভয়ারণ্য

এমন মোক্ষম সময় বেছে নিয়ে জেসিকা ওয়াটারমায়ার কুকুরদের দেখতে যান৷ প্রায় ৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সাভে উপত্যাকায় আফ্রিকার বুনো কুকুরদের সুরক্ষার লক্ষ্যে এক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি৷  নিজের পেশাগত জীবন জুড়ে তিনি এই প্রাণীদের নিয়েই চর্চা করেছেন৷ জেসিকা বলেন, ‘‘এদেরকে আমরা ‘ফেস্টিভ প্যাক' নামে ডাকি৷ কারণ তাদের শরীরে অত্যন্ত সুন্দর, স্বতন্ত্র ও রঙিন চিহ্ন রয়েছে৷ গোটা অভয়ারণ্যে এটিই সবচেয়ে বড় কুকুরের পাল৷ বর্তমানে তাদের সংখ্যা ১১৷ শুরুতে ১২টি ছিল৷ তাদের ১৪টি শাবক ছিল, এখন মাত্র সাতটি অক্ষত রয়েছে৷ তারা দল হিসেবে বেশ সংগঠিত৷ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার লক্ষ্যে তাদের সঙ্গে কাজ করা সত্যি খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা৷'' 

জিম্বাবোয়েতে বুনো কুকুর সংরক্ষণের চেষ্টা

05:39

This browser does not support the video element.

আফ্রিকা মহাদেশে যেসব মাংসাশী প্রাণী হুমকির মধ্যে পড়েছে, বুনো কুকুর তাদের মধ্যে পড়ে৷ গোটা মহাদেশে বড়জোর ৭,০০০ প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে৷ সাভে উপত্যকা এই শিকারি প্রাণীদের জন্য অন্যতম প্রধান আশ্রয়স্থল৷ টিকে থাকার জন্য তাদের অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়৷ ইম্পালা অ্যান্টিলোপ প্রজাতির হরিণই তাদের প্রধান খাদ্য৷

জেসিকা ওয়াটারমায়ার বলেন, ‘‘এগুলি আসলে খুব সামাজিক প্রাণী৷ তারা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান করে, পরস্পরের দেখাশোনা করে, শাবকের যত্ন নেয়৷ সিংহের মতো সামাজিক মাংসাশী প্রাণীর তুলনায় তারা খুবই অন্যরকম৷ বুনো কুকুররা শিকার করার পর সবার আগে শাবকদের খেতে দেয়৷ কেউ আহত হলে তার দেখাশোনা করে৷ তারা আহত কুকুরের কাছে মাংস নিয়ে যায়৷''

সাভে অভয়ারণ্য একাধিক বেসরকারি কোম্পানির সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে৷ বড় মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত শিকারের মাধ্যমে আয় হয়৷ সেই অর্থ কাজে লাগিয়ে লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়৷ চাষের কাজের জন্য সেখানে কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি৷

মানুষের সঙ্গে সংঘাত

অভয়ারণ্যের বাইরে অনেক এলাকায় ঝোপ কার্যত লোপ পেয়েছে৷ জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষবাস ও পশুপালনের জন্য জমির ব্যবহারও বাড়ছে৷ মানুষ ও বন্য প্রাণীর মধ্যে সংঘাতও বাড়ছে৷ কুকুরের পাল এর মধ্যে শিকার শুরু করে দিয়েছে৷ বিশাল আকারের কারণে গ্নু অ্যান্টিলোপ সামলাতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়৷ তবে এক্ষেত্রে তরুণ শাবকদের শিকার শেখাতে এই প্রাণী কাজে লাগছে বটে৷

বুনো কুকুরদের জন্য বিপদের মাত্রা কতটা বেশি, পরের দিন তা বোঝা গেল৷ রেঞ্জার কাইন কোডদেভু টহল দেবার সময় এক সহকর্মীর পাঠানো বেতার বার্তা পেলেন৷ একটি বুনো কুকুরের দেহ পাওয়া গেছে৷ রেঞ্জার ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারলেন যে পরিস্থিতি আসলে আরও উদ্বেগজনক৷ জেসিকা ওয়াটারমায়ার জানালেন, ‘‘আজ সকালে আমরা রিপোর্ট পেলাম, যে দু'টি কুকুর তারে আটকা পড়েছে৷ তারা এখনো নিজেদের ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছে৷ যত দ্রুত সম্ভব রওয়ানা হয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছলাম৷ কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, ততক্ষণে গলায় ফাঁস লেগে দম বন্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু ঘটেছে৷''

শিকারিদের উপদ্রব

সম্পূর্ণ বেঘোরে কুকুরগুলি প্রাণ দিল৷ চোরাশিকারিরা তারের ফাঁদ বসিয়ে অ্যান্টিলোপ ধরতে চেয়েছিল৷ বুনো কুকুররা দাঁত বসিয়ে সেই তার কাটার চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু শক্ত তামার কাছে তাদের হার মানতে হয়েছে৷ ফলে দলের সর্দার ও আরেকটি পরিণতবয়স্ক কুকুরের মৃত্যু হলো৷ দু'টি প্রাণীই সবচেয়ে শক্তিশালী শিকারি ছিল৷ জেসিকা ওয়াটারমায়ার বলেন, ‘‘পরের ধাপে আমাদের স্কাউটরা স্থানীয় ব়্যাঞ্চ বা খামারের স্কাউটদের সঙ্গে কাজ করবেন৷ তাঁরা গোটা এলাকা চষে ফেলে যত বেশি সংখ্যক তারের ফাঁদ সরিয়ে ফেলবেন৷ এমন ঘটনা ঘটার আগেই তার সরিয়ে ফেললে সবথেকে ভালো হয়৷''

সেটা খুবই কঠিন কাজ৷ ঘন ঝোপের মধ্যে এমন তার প্রায় অদৃশ্য হয়ে থাকে৷ তাছাড়া এলাকাটিও বেশ বড়৷ একটি জায়গায়ই রেঞ্জাররা প্রায় ৫০টি তারের ফাঁদ সংগ্রহ করেছেন৷ জেসিকা মনে করিয়ে দেন, ‘‘একমাত্র আফ্রিকা মহাদেশেই এই কুকুর পাওয়া যায়৷  পশু সংরক্ষণ আফ্রিকায় সফল হচ্ছে৷ তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই প্রজাতির সংরক্ষণ আমাদের কর্তব্য৷ জিনগতভাবে তারা সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতি৷ একবার তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না৷''

শাবকগুলি বড় হওয়া পর্যন্ত পালের বাকি কুকুরগুলি একসঙ্গেই থাকবে৷ বছরে একবার বুনো কুকুর বাচ্চার জন্ম দেয়৷ সৌভাগ্যবশত পালের প্রধান মাদি কুকুর প্রাণে বেঁচে গেছে৷ তা না হলে এই পাল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়তো৷ কিন্তু তার স্থায়ী সঙ্গী বেঁচে না থাকায় চলতি বছর বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷

ইয়ুর্গেন স্নাইডার/এসবি 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ