তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সময়টা ভালো যাচ্ছে না৷ অনেক জমি হারানোর পাশাপাশি ইরাকের রামাদি শহর হাতছাড়া হয়ে গেছে৷ আল-বাগদাদির অডিও বার্তা নিয়ে মশকরা করছেন অনেক মুসলিম টুইটার ব্যবহারকারী৷
বিজ্ঞাপন
সপ্তাহান্তেই ইরাকের রামাদি শহর হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল৷ এবার কুর্দিদের সাহায্য নিয়ে উত্তরের মোসুল শহরও আইএস-মুক্ত করার উদ্যোগ শুরু করছে ইরাকের সরকার৷ ইরাকের অর্থমন্ত্রী হোশিয়ার জেবারি এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা পেশ করেছেন৷
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে ইরাককে সম্পূর্ণ আইএস মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন৷
বন্দি, ক্রীতদাস – বিশেষ করে নারীদের প্রতি আচরণের ‘নির্দেশিকা' সংক্রান্ত ফতোয়া প্রকাশ করে নিজেদের বিকৃত মানসিকতার আরও এক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে আইএস৷ তাতে কীভাবে ধর্ষণ করতে হবে, তারও বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে৷
আইএস-এর সর্বোচ্চ নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি সম্প্রতি এক অডিও বার্তায় সৌদি আরবে বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন৷ আইএস-বিরোধী জোটেরও নিন্দা করেন তিনি৷ সেইসঙ্গে ইসরায়েলের উপর হামলার হুমকিও শোনা গেছে আল-বাগদাদির কণ্ঠে৷ একই নামের এক মানবাধিকার কর্মী সেই বার্তার সংক্ষিপ্ত সারমর্ম টুইটারের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন৷
এমন প্রচারণার জবাবে ঘৃণার বদলে হাস্যরস, শ্লেষ ও মশকরা দেখিয়েছেন অনেক মুসলিম টুইটার ব্যবহারকারী৷ আইএস-এর হিংসাত্মক ও বিকৃত ভাবাদর্শের প্রতি চরম তাচ্ছিল্য দেখিয়েছেন তাঁরা৷ জার্মানির ‘ডেয়ার স্পিগেল' পত্রিকা সহ কিছু সংবাদ মাধ্যম এই সব টুইট তুলে ধরেছে৷ কেউ লিখেছে, জিহাদের জন্য সময় নেই৷ কারণ তারা আপাতত টেলিভিশনে ছবি দেখতে ব্যস্ত৷
খুনি বিকৃতমনস্কদের সঙ্গের তুলনায় স্টার ওয়ার্স চলচ্চিত্র সিরিজের আগামী ছবিগুলি দেখা কারো জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷
একজন লিখেছে, পোষা মাছকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে৷
কেউ আবার ফুটবল ম্যাচ নিয়ে চরম ব্যস্ত৷
একজন লিখেছে, পরের সপ্তাহে কলেজ শুরু হচ্ছে, তাই জিহাদে যোগ দেবার সময় নেই৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷