লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে যে, জি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়ার পর থেকে ভিন্নমতামবলম্বীদের উপর দমনপীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে রিয়াদ৷
বিজ্ঞাপন
গত বছর বিশ্বের ধনীদেশগুলোর ফোরাম জি-টোয়েন্টির নেতৃত্বে ছিল সৌদি আরব৷ সেসময় অপ্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল এবং জনসমক্ষে বেত্রাঘাত নিষিদ্ধসহ কিছু পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছিল মুসলিম দেশটি৷
কিন্তু, জি-টোয়েন্টি প্রেসিডেন্সি ছাড়ার পর চলতি বছর আবার সেদেশে মানবাধিকার কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের নিপীড়ন ও গত ছয় মাসে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের হার বেড়ে গেছে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
সৌদি আরবে নারী পরিচালিত কারখানা
সৌদি আরবের এক খেজুর কারখানায় শুধু নারীরা কাজ করছেন৷ ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে ভারী যান চালনা- সব কাজই করছেন মেয়েরা৷
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
সৌদি আরব দ্বিতীয়
সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৮৮ লাখ টন খেজুর উৎপাদিত হয়৷ এর ১৭ ভাগই হয় সৌদি আরবে (প্রায় ১৫ লাখ ৪০ হাজার টন)৷ বিশ্বে খেজুর উৎপাদনকারী দ্বিতীয় দেশ এটি৷ সেখানে খেজুরের কারখানা আছে ১৫৭টি৷
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
নারী পরিচালিত কারখানা
ইবনে জায়েদ নামের এই খেজুর কারখানায় শুধু নারীরা কাজ করেন৷ প্রায় ১০০ নারী কাজ করেন সেখানে৷
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
আগে ছিলেন বিদেশি শ্রমিকরা
আল-আহসা অঞ্চলে অবস্থিত ইবনে জায়েদ কারখানায় আগে বিদেশি শ্রমিকরা কাজ করতেন৷ গত এক বছর ধরে শুধু মেয়েরাই কারখানাটি চালাচ্ছেন৷ আল-আহসা অঞ্চলটি সৌদি আরবের পুবে অবস্থিত৷ এটি মরুর দেশ সৌদি আরবের অন্যতম সবুজ অঞ্চল৷ ত্রিশ হাজার একর এলাকা জুড়ে প্রায় ত্রিশ লাখ গাছ আছে সেখানে৷
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
‘মেয়েরাও পারে’
কারখানার ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে হিসাবরক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ, প্যাকেজিং সব কাজই করছেন মেয়েরা৷ এমনকি ফর্কলিফটও (ছবি) চালাচ্ছেন মেয়েরা৷ তাদের একজন আকিলাহ আলি৷ তিনি বলছেন, ‘‘প্রথমে কিছু জটিলতা ছিল৷ ভারী ট্রাক চালানো শুধু পুরুষের কাজ মনে করা হতো৷ কিন্তু আমি খুশি, কারণ, মেয়েরাও যে নতুন কোনো কাজ করতে পারে এবং সফল হতে পারে, সেটা আমি প্রমাণ করতে পেরেছি৷’’
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
‘প্রমাণ করতে পেরেছি’
ফ্যাক্টরি ম্যানেজার নাবতাহ আলসবাই বলেন, ‘‘একদল নারীকে এই কারখানা চালানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ আমরা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আমরা সফল হতে পারি এবং সৌদি নারীরা অন্যান্য খাতেও কাজ করতে পারে৷’’
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
পরিবর্তনের শুরু
ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান ‘ভিশন ২০৩০’ নামে একটি সংস্কার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন৷ এর আওতায় ২০১৭ সাল থেকে সৌদি আরবে নারীরা অনেক কাজের অনুমতি পাচ্ছেন৷ সে কারণে ইবনে জায়েদ কারখানার মালিক বিদেশি শ্রমিক বাদ দিয়ে ধীরে ধীরে মেয়েদের নিয়োগ দেয়া শুরু করেছিলেন৷
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে
২০১৯ সালে সৌদি আরবে শিল্পখাতে কাজ করা নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ হাজার৷
ছবি: Yosri Ahmed/Reuters
7 ছবি1 | 7
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন অবধি সৌদি আরবে অন্তত ৪০ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ এর আগে সৌদি হিউম্যান রাইটস কমিশন নামের একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছিল যে, ২০২০ সালে ২৭টি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল যা ছিল ২০১৯ সালের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম৷
গবেষকরা হিসেব করে দেখেছেন চলতি বছর রিয়াদের বিশেষ অপরাধ আদালত (এসসিসি) অন্তত ১৩ মানবাধিকার কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে৷ অ্যামনেস্টি এসসিসিকে ‘‘একটি কুখ্যাত সন্ত্রাসবিরোধী আদালত যেখানে গণশুনানিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ঘটে'' উল্লেখ করে প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে আসামীদের মাসের পর মাস বিনা বিচারে কারাবন্দি করে রাখা হয় এবং তাদেরকে উকিলের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না৷''
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপপরিচালক লীন মালুফ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘গত নভেম্বরে জি-টোয়েন্টি সম্মেলন আয়োজনের সময় সাময়িকভাবে বিরুদ্ধমত দমন বন্ধ রাখার অর্থ হচ্ছে দেশটিতে নিয়মনীতি সংস্কার চলছে বলে যে ধারণা তৈরি করা হয়েছিল তা আসলে প্রচারণা ছাড়া কিছুই নয়৷''
বিরুদ্ধমত দমনের একটি উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান যে, শুধুমাত্র সৌদি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করে টুইট করায় এক মানবাধিকার কর্মীকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
সৌদি আরব অবশ্য অ্যামনেস্টির নতুন এই প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি৷