প্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পর এই প্রথম কোনো ফোরামে ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্বের ক্ষমতাধর অন্য ১৯ দেশ৷ হামবুর্গে শুরু হতে যাওয়া জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে জলবায়ু পরিবর্তন৷
বিজ্ঞাপন
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা৷ সেই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বকে ট্রাম্প উড়িয়ে দিলেও জি-টোয়েন্টির সভপতিত্বকারী দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এড়িয়ে যাননি বিষয়টি৷ বরং একে আলোচনার অ্যাজেন্ডায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই রেখেছেন৷
‘‘জলবায়ু পরিবর্তন অ্যাজেন্ডাগুলোর মধ্যে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে'' ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার-জার্মানির রাজনীতি বিভাগের প্রধান আলোয়েস ফেডার৷ ‘‘কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চু্ক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এ আলোচনা কোনো ফল দিতে পারবে কি না৷'' অন্য দেশগুলো কী করে সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করেন তিনি৷
যে অ্যামেরিকা প্যারিস চুক্তি মান্য করছে
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বর্জন করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য শহর ও রাজ্য কর্তৃপক্ষ প্যারিস চুক্তি মেনে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির বদলে বিকল্প পথে এগোনোর অঙ্গীকার করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
বারাক ওবামার বিবৃতি
কঠিন পরিস্থিতিতেও আশাবাদী হিসেবে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরিচিত৷ ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি বর্জন করার পর তিনি অ্যামেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা দেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ক্লাইমেট মেয়রস গ্রুপ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৬৮টি শহরের মেয়র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলার অঙ্গীকার করেছেন৷ লস অ্যাঞ্জেলেস, বস্টন, নিউ ইয়র্ক, হিউস্টন ও শিকাগোর মতো বড় শহরের নগরপাল পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি
ছবি: CC/ John Picker
‘ট্রাম্প পিটসবার্গের প্রতিনিধি নন’
ট্রাম্প তাঁর ভাষণে নিজেকে পিটসবার্গের প্রতিনিধি বললেও শহরের মেয়র তা নস্যাৎ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলার উদ্যোগ চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করেন৷ ইস্পাত শিল্পের পতনের পর শহরকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তির জন্য প্রস্তুত করতে তিনি বদ্ধপরিকর৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/S. Strasburg
শিকাগোর সাফল্যের কাহিনি
বারাক ওবামার শহর শিকাগোর মেয়র ব়্যাম ইমানুয়েল মনে করিয়ে দেন, কার্বন নির্গমন কমিয়ে কীভাবে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, তাঁর শহর তার দৃষ্টান্ত৷ প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী তিনি এই সফল কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/A. Nelles
মার্কিন জলবায়ু জোট
ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন রাজ্যের গভর্নররা মিলে ‘ইউএস ক্লাইমেট অ্যালায়েন্স’ নামের এক জোট গড়ে তুলেছেন৷ তাঁরা শুধু প্যারিস চুক্তি কার্যকর করবেন না, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জোরালো পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: Imago/blickwinkel
ক্যালিফোর্নিয়া আদর্শ দৃষ্টান্ত
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন বলেন, ‘‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পূর্ণ ভুল পথ বেছে নিয়েছেন৷’’ এমন ‘বিপথগামী’ ও ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর রাজ্য তার বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত৷
ছবি: Reuters/M. Whittaker
6 ছবি1 | 6
বুধবার পরিবেশ বিষয়ক প্রখ্যাত জার্নাল ‘ন্যাচার' আয়োজিত এক সভা থেকে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে পরিবেশ নিয়ে আলোচনার জন্য ছয়টি বিষয়কে সুপারিশ করা হয়৷ সেগুলো হলো: সবুজ জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষ অবকাঠামো, পরিবহন, ভূমির ব্যবহার, শিল্প ও অর্থায়ন৷
‘‘বিজ্ঞান বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার পড়তির দিকে নিতে হবে৷ এটি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও অতিদারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করবে৷'' সভায় বলছিলেন জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সাবেক নির্বাহী সচিব ক্রিস্টিয়ানা ফিগিয়েরেস৷
সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজ, বিজ্ঞানী ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কার্যকর আলোচনার জন্য চাপ রয়েছে৷
গেল সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সিভিল২০ সম্মেলনে যোগ দিয়ে সুধীসমাজের কথা শোনেন৷ সবার একটাই প্রশ্ন, পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র যেখানে বিষয়টি খারিজ করে দিচ্ছে, সেখানে কতটা সফল হবে এই আলোচনা?
যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান নেয়ার পর জলবায়ু পর্যবেক্ষকরা সম্মেলে নজরে রাখবেন ইউরেপ ও চীনকে৷ নজরে থাকবে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো যেসব দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে প্রচুর বিনিয়োগ ও কার্বন নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের ওপরও৷ তাদের মতে, এটি দেশগুলোর জন্য একটি পরীক্ষা৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ছয়টি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটবে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অবিশ্বাস্য বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে৷ বিমান চলাচল দুরুহ হবে, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বাড়বে, বাড়বে বজ্রপাত৷ চলুন জেনে নিই ছয়টি ঘটনা যা বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ঘটবে৷
বিমানযাত্রা কঠিন হবে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিমানে ঝাঁকুনি বেড়ে যাবে, ফলে বিমানযাত্রায় শারীরিক ও মানসিক চাপ আরো বাড়বে৷ বিশেষ করে যাত্রীবাহী বিমানগুলো যে পথে চলাচল করে, সেই পথ আগের চেয়ে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে৷
ছবি: Colourbox/M. Gann
জাহাজের পথে আইসবার্গ
সমুদ্রে জাহাজ চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করবে ভাসমান আইসবার্গ৷ গত এপ্রিলে চারশ’ আইসবার্গ নর্থ আটলান্টিকে জাহাজ চলাচলের জলসীমায় প্রবেশ করে৷ ফলে অনেক জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি সময় নিয়েছে, ঘুরে যাওয়ার কারণে তেল খরচও গেছে বেড়ে৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
বজ্রপাত আরো ঘনঘন হবে
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাত আরো ঘনঘন হবে৷ যদিও এতে দাবানলের ঝুঁকি বাড়বে৷ তবে বজ্রপাতের ফলে নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন হয় যা বিশ্বের বায়ুমণ্ডলির জন্য উপকারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত বাড়বে
ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরিগুলো ভবিষ্যতে সক্রিয় হতে শুরু করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনটা ঘটার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Getty Images/S. Crespo
আপনার রাগ বাড়বে
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের মুডও পরিবর্তন করে দেবে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যে অস্থিরতাও বাড়বে৷ এমনকি সহিংস আচরণ করার প্রবণতাও দেখা দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
প্রাণীর আকার ছোট হবে
এই পরিবর্তনটি অবশ্য চোখে পড়তে সময় লাগবে৷ তবে কয়েক কোটি বছর আগে দৈত্যাকারের প্রাণিগুলো ছোট হয়ে গিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও৷ ভবিষ্যতেও তেমনটা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/khmel
6 ছবি1 | 6
প্যারিস চুক্তিতে কার্বন নিঃসরণের মূল্য যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেভাবেই দেশগুলোকে ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে উৎসাহী করবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা৷ ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মাইডান ভায়েলের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বন্ধ করার সময়সীমা নির্ধারণ করতে জি২০-কে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে৷ ফেডার মনে করেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে পরিবেশগত ঝুঁকি নির্ণয়ে এই সম্মেলনে একটি প্রবিধান তৈরি করা উচিত৷
তবে পরিবেশ সুরক্ষায় বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া জার্মানিকে তার ইমেজ ধরে রাখা এবং প্যারিস চুক্তিকে বাঁচানোর মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আনপ্রেডিক্টেবল' প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব এবং উত্তপ্ত আলোচনায় দেখা যেতে পারে৷