জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের সময় হামবুর্গের কিছু এলাকায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ মেয়রের পদত্যাগের দাবি উঠেছে, সমালোচনা হচ্ছে হামবুর্গে এই সম্মেলন করার সিদ্ধান্তেরও৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ক্ষমতাসীন জোট সরকারের বড় শরিক সিডিইউ-র কয়েকজন রাজনীতিবিদ হামবুর্গের মেয়র ওলফ শোলৎসের পদত্যাগ দাবি করেছেন৷ তবে অন্য শরিক দলের রাজনীতিবিদ শোলৎস সেই দাবি প্রত্যাখান করে বলেছেন যে ম্যার্কেলের দল সিডিইউ তাঁর পদত্যাগ আশা করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত৷ জি-টোয়েন্টি সম্মেলনকে ঘিরে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার অবধি হামবুর্গের কিছু এলাকায় সহিংস প্রতিবাদের ঘটনা ঘটে৷ মূলত পুঁজিবাদবিরোধী এবং ট্রাম্প, পুটিন, এর্দোয়ানের মতো রাষ্ট্রনায়কদের কট্টর সমালোচক এই উগ্র প্রতিবাদকারীদের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় খানিকটা বিপাকে পড়েছেন মেয়র৷ তবে রবিবার রাতে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তাঁকে পদত্যাগ করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সরাসরি না বলে দেন৷
মেয়র জানান, হামবুর্গ শহরে সম্মেলনের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রাখতে ২০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ এর বেশি পুলিশ জার্মানি দিতে পারেনি৷ সম্মেলনের সময় সংঘর্ষে যেসব পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, জানমাল রক্ষায় তাদের ‘নায়কোচিত' আচরণের প্রশংসা করেছেন মেয়র৷ পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জি-টোয়েন্টি সম্মেলন চলাকালে প্রায় পাঁচশো পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন৷ তবে এসময় কতজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি৷
হামবুর্গের রাস্তা পরিষ্কার করেছে হাজারো স্থানীয় বাসিন্দা
জি-টোয়েন্টি সম্মেলন বিরোধী প্রায় ৭০ হাজার বিক্ষোভকারীর ফেলে যাওয়া আবর্জনার অনেকটাই পরিষ্কার করেছেন হামবুর্গের বাসিন্দারা৷ সামাজিক গণমাধ্যমে একটি গ্রুপের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঝাড়ু-বালতি নিয়ে হাজির হয়ে যান তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
ফেসবুকে ডাক
রবিবার পাঁচ তরুণ-তরুণী ফেসবুকে ‘‘হামবুর্গ রাউম্ট আউফ’’ বা ‘‘হামবুর্গ সাফ কর’’ নামে একটি ইভেন্ট চালু করেন৷ সেখানে দুপুর একটায় হামবুর্গের সেন্ট্রাল স্টেশনের সামনে সবাইকে জড়ো হবার আহ্বান জানান৷
ছবি: facebook.com/Rebecca Lunderup
অভূতপূর্ব সাড়া
আহ্বানকারীরা আশা করছিলেন যে প্রায় ৮,০০০ মানুষ জড়ো হবেন তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে৷ কিন্তু সাড়া পাওয়া গেল তারচেয়েও বেশি৷ পুলিশ জানিয়েছে, অন্তত ১০,০০০ মানুষ সেইন্ট পাউলিতে আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন৷
ছবি: Reuters/F. Bimmer
ঝাড়ু-বালতি হাতে স্থানীয়রা
সময় হতে না হতেই ঝাড়ু-বালতি হাতে অনেককেই দেখা যায়৷ তারা রাস্তা থেকে ইট, পাথর, বোতল ও অন্যান্য আবর্জনা পরিষ্কার করেন৷
ছবি: Reuters/F. Bimmer
মেয়রের প্রতি
পরিষ্কার অভিযানের সময় কেউ কেউ বন্দর শহরটির মেয়র ওলাফ শল্জকে উদ্দেশ্য করেও প্ল্যাকার্ডে বার্তা লিখেছেন৷ যেমন একজন লিখেছেন যে, মি. শল্জ, আপনার সঙ্গে কথা বলা দরকার৷
ছবি: Reuters/F. Bimmer
সংঘর্ষের চিহ্ন
সেইন্ট পাউলিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধেছিল মূলত বামপন্থি বিক্ষোভকারীদের৷ তাই রাস্তাজুড়ে ইট, কাঁচ এগুলো পড়েছিল৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাতে গ্লাভস পরে এক নারী সেই ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
দেয়াললিখন
শুধু রাস্তা থেকেই আবর্জনা পরিষ্কার করেননি স্থানীয়রা৷ যেসব এলাকায় প্রতিবাদ হয়েছে, সেখানকার দেয়াল ছেয়ে গেছে নানান রকমের প্রতিবাদী লিখনে৷ সেগুলোও পরিষ্কারে নেমেছিলেন হামবুর্গবাসী৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
সবস্তরের মানুষ
এই পরিষ্কার অভিযানে নারী, পুরুষ, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই এসেছিলেন৷ অনেকে কোলের শিশুটিকেও সাথে করে যোগ দেন এই আয়োজনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Gateau
সহিংস বিক্ষোভ
পুলিশ জানিয়েছে, জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের প্রতিবাদে অন্যরা অহিংস প্রতিবাদ করলেও শুক্র ও শনিবার বাম ঘরানার উগ্রপন্থিরা সহিংস হয়ে ওঠে৷ মাস্ক পরা বিক্ষোভকারীরা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানাতে ‘‘নরকে স্বাগতম’’ নামে সমাবেশের আয়োজন করে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/O. Messinger
সংঘর্ষে আহত শত শত
পুলিশের দাবি, সহিংস বিক্ষোভকারীরা সুপারমার্কেট ও দোকানপাটে ভাঙচুর, লুটপাট চালায়৷ ব্যারিকেড দেয়, আবর্জনার কন্টেইনারে আগুন জ্বালায় এবং পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ করে৷ এতে করে কয়েকশ’ পুলিশ সদস্য আহত হন এবং প্রায় চারশ’ প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়৷
ছবি: Reuters/P. Kopczynski
9 ছবি1 | 9
তবে প্রতিবাদকারীদের রুখতে পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে এরকম দাবি যারা তুলেছেন, তাদের সেই দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছেন শোলৎস৷ তিনি বরং মনে করেন, ভাঙচুরে অংশ নেয়াদের দীর্ঘমেয়াদে হাজতবাসের শাস্তি দেয়া প্রয়োজন৷ আর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়া প্রতিবাদকারীরা সংখ্যায় কম ছিল এবং মূলত বিদেশ থেকে আসা বলেও দাবি করেছেন জার্মানির কয়েকজন রাজনীতিবিদ৷
এদিকে, হামবুর্গের মতো বহুজাতিক নব্যউদারপন্থিদের জোটের প্রতি সংশয়বাদী বলে পরিচিত এবং পুলিশের শক্ত উপস্থিতির বিরোধী একটি শহরকে এই সম্মেলনের জন্য বেছে নেয়ায় ম্যার্কেলের সমালোচনা করেছেন কোন কোন জার্মান৷ পাশাপাশি সহিংস প্রতিবাদকারীদের রুখতে জলকামান, প্যাপার স্প্রে এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার ছাড়াও পুলিশ আরো কোনো উদ্যোগ নিতে পারতো কিনা সে বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে৷ তবে জি-টোয়েন্টি সম্মেলন চলাকালে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, যা আশ্বস্ত করেছে জার্মানদের৷
জি-টোয়েন্টিতে প্রতিবাদের যত কারণ, ধরন
কখনো শিক্ষার্থীরা, কখনো রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট, কখনও বা পরিবেশবাদীরা৷ হামবুর্গের জি-টোয়েন্টি সম্মেলন ঘিরে প্রতিবাদে মুখর অসংখ্য প্রতিবাদকারী৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
ট্রাম্পের রাস্তায় বাধা দেয়ার পরিনাম
ট্রাম্প যাবেন শোয়ানেনভিক রাস্তা দিয়ে৷ তাই সে রাস্তাটি ব্লক করেছিলেন প্রতিবাদকারীরা৷ কিন্তু পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে৷ পানিতে অনেক প্রতিবাদকারী ভিজে একাকার হয়েছেন৷ পরবর্তীতে তাদের এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে কাপড় শুকাতে দেখা গেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই
পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া প্রতিবাদকারীদের ব্যানার এটি৷ পুলিশের কড়া অবস্থান সত্ত্বেওকয়েকশতহামবুর্গের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন থেকে একটি প্রতিবাদ ব়্যালি নিয়ে সেন্ট পাউলির দিকে যেতে সক্ষম হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
নো জি-টোয়েন্টি
জি-টোয়েন্টি চান না এই প্রতিবাদকারী৷ তাই ছাতাতে লিখে দিয়েছেন সেই কথা৷ পাশে আরেকজন দেখাচ্ছেন শান্তির প্রতীক৷
ছবি: DW/A. Islam
তোমাদের সমাধান আমাদের সমস্যা
শুক্রবার এক প্রতিবাদ ব়্যালিতে অংশ নেন অনেক শিক্ষার্থী৷ তাদেরই একজনের হাতে ছিল এই ব্যানার৷ আপনি কি তাঁর সঙ্গে একমত?
ছবি: DW/A. Islam
বন্ধুদের সঙ্গে ব়্যালিতে
তাঁর বন্ধুরা নাকি সবাই ‘ব্যাড কিডস’! এমনই দাবি প্রতিবাদে অংশ নেয়া এই শিক্ষার্থীর৷ এর মাধ্যমে তিনি কি কোনো প্রেসিডেন্টকে ইঙ্গিত করছেন তিনি?
ছবি: DW/A. Islam
চেহারা দেখাতে মানা
হামবুর্গে জি-টোয়েন্টি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া কেউ কেউ নিজেদের চেহারা বা পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী হননি৷ ছবি তুলতে গেলে তেমন একজন ছাতা মেলে ধরেন৷
ছবি: DW/A. Islam
ওয়ান্টেড তালিকায় বিশ্ব নেতারা
জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে অংশ নেয়াদের কয়েকজনকে ওয়ানটেড তালিকায় ফেলেছেন প্রতিবাদকারীরা৷ এর কারণও অবশ্য লেখা আছে ব্যানারে৷
ছবি: DW/A. Islam
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান
মানবতার খাতিরে ‘‘ফ্যাসিস্ট অ্যামেরিকার’’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এই প্রতিবাদকারীরা৷ তাদের মতো আরো অনেককে দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে৷ বিশেষ করে প্যারিস জলবায়ু এগ্রিমেন্ট থেকে সরে আসায় তাঁর অনেক সমালোচনা হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Islam
পোশাকে প্রতিবাদ
প্রতিবাদকারীরা তাদের পোশাকেও জি-টোয়েন্টি বিরোধী স্টিকার এঁটে দিয়েছেন৷ শুক্রবার একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবাদকারী৷
ছবি: DW/A. Islam
পুলিশের সতর্ক অবস্থান
তবে হামবুর্গে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে প্রতিবাদকারীরা বড় ধরনের সহিংস কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটাতে পারেনি৷ গতকাল একটি বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ জলকামান ও মরিচের গুড়া ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ হামবুর্গে বর্তমানে ২০ হাজারের মতো পুলিশ অবস্থান করছে৷ শহরের মধ্যে রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকা রাখা হয়েছে৷