হামবুর্গে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের সময় যে দাঙ্গা হয়, তার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে জার্মানিতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ৷ গত ছ'মাস ধরে বিশেষ কমিশনের অধীনে ছবি ও ভিডিও দেখে দাঙ্গার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার থেকে সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ৷ গত জুলাই মাসেহামবুর্গ শহরে অনুষ্ঠিত জি-টোয়েন্টি সামিটকে কেন্দ্র করে দাঙ্গার সূত্রপাত হয়৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল পত্রিকা ও রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা এনডিআর-এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশের গোয়েন্দা দল জার্মানির বিভিন্ন শহরে একযোগে অভিযান চালায়৷ এর মধ্যে রয়েছে হামবুর্গ, বার্লিন, হেসে, নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া, বাডেন ভ্যুর্টেমব্যার্গ, সেক্সোনি আনহাল্ট, রাইনল্যান্ড প্যালাটিনেট ও লোয়ার সেক্সোনি অঞ্চল৷ হামবুর্গের বারেনফেল্ড অঞ্চলে তথাকথিত ‘ব্ল্যাক ব্লক' যে দাঙ্গা সৃষ্টি করে, তার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে ১৭০-সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ এক কমিশন গঠন করা হয়৷ গত ছ'মাস ধরে হাজার হাজার ভিডিও ও ছবি দেখে তৈরি করা হয় সন্দেহভাজনদের তালিকা৷ চরম বামপন্থি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নেতা ডেনিজ এরগ্যুনের নামও এ তালিকায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তবে এবারের অভিযান সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েচালানো হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে৷
জি-টোয়েন্টিতে প্রতিবাদের যত কারণ, ধরন
কখনো শিক্ষার্থীরা, কখনো রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট, কখনও বা পরিবেশবাদীরা৷ হামবুর্গের জি-টোয়েন্টি সম্মেলন ঘিরে প্রতিবাদে মুখর অসংখ্য প্রতিবাদকারী৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
ট্রাম্পের রাস্তায় বাধা দেয়ার পরিনাম
ট্রাম্প যাবেন শোয়ানেনভিক রাস্তা দিয়ে৷ তাই সে রাস্তাটি ব্লক করেছিলেন প্রতিবাদকারীরা৷ কিন্তু পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে৷ পানিতে অনেক প্রতিবাদকারী ভিজে একাকার হয়েছেন৷ পরবর্তীতে তাদের এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে কাপড় শুকাতে দেখা গেছে৷
ছবি: DW/A. Islam
পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই
পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া প্রতিবাদকারীদের ব্যানার এটি৷ পুলিশের কড়া অবস্থান সত্ত্বেওকয়েকশতহামবুর্গের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন থেকে একটি প্রতিবাদ ব়্যালি নিয়ে সেন্ট পাউলির দিকে যেতে সক্ষম হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
নো জি-টোয়েন্টি
জি-টোয়েন্টি চান না এই প্রতিবাদকারী৷ তাই ছাতাতে লিখে দিয়েছেন সেই কথা৷ পাশে আরেকজন দেখাচ্ছেন শান্তির প্রতীক৷
ছবি: DW/A. Islam
তোমাদের সমাধান আমাদের সমস্যা
শুক্রবার এক প্রতিবাদ ব়্যালিতে অংশ নেন অনেক শিক্ষার্থী৷ তাদেরই একজনের হাতে ছিল এই ব্যানার৷ আপনি কি তাঁর সঙ্গে একমত?
ছবি: DW/A. Islam
বন্ধুদের সঙ্গে ব়্যালিতে
তাঁর বন্ধুরা নাকি সবাই ‘ব্যাড কিডস’! এমনই দাবি প্রতিবাদে অংশ নেয়া এই শিক্ষার্থীর৷ এর মাধ্যমে তিনি কি কোনো প্রেসিডেন্টকে ইঙ্গিত করছেন তিনি?
ছবি: DW/A. Islam
চেহারা দেখাতে মানা
হামবুর্গে জি-টোয়েন্টি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া কেউ কেউ নিজেদের চেহারা বা পরিচয় প্রকাশে আগ্রহী হননি৷ ছবি তুলতে গেলে তেমন একজন ছাতা মেলে ধরেন৷
ছবি: DW/A. Islam
ওয়ান্টেড তালিকায় বিশ্ব নেতারা
জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে অংশ নেয়াদের কয়েকজনকে ওয়ানটেড তালিকায় ফেলেছেন প্রতিবাদকারীরা৷ এর কারণও অবশ্য লেখা আছে ব্যানারে৷
ছবি: DW/A. Islam
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান
মানবতার খাতিরে ‘‘ফ্যাসিস্ট অ্যামেরিকার’’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এই প্রতিবাদকারীরা৷ তাদের মতো আরো অনেককে দেখা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে৷ বিশেষ করে প্যারিস জলবায়ু এগ্রিমেন্ট থেকে সরে আসায় তাঁর অনেক সমালোচনা হচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Islam
পোশাকে প্রতিবাদ
প্রতিবাদকারীরা তাদের পোশাকেও জি-টোয়েন্টি বিরোধী স্টিকার এঁটে দিয়েছেন৷ শুক্রবার একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবাদকারী৷
ছবি: DW/A. Islam
পুলিশের সতর্ক অবস্থান
তবে হামবুর্গে পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে প্রতিবাদকারীরা বড় ধরনের সহিংস কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটাতে পারেনি৷ গতকাল একটি বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ জলকামান ও মরিচের গুড়া ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ হামবুর্গে বর্তমানে ২০ হাজারের মতো পুলিশ অবস্থান করছে৷ শহরের মধ্যে রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকা রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
10 ছবি1 | 10
এর আগে দাঙ্গার সাথে জড়িত থাকার দায়ে ২১ বছর বয়সি এক যুবককে দু'বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ শান্তি ভঙ্গ, সদস্যের উপর চড়াও হওয়া ও গ্রেপ্তার এড়াতে ধস্তাধস্তি করার অভিযোগে তাকে এ কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ এছাড়াও অন্তত দু'হাজার জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করে পুলিশ৷
জুলাইয়ের ৭-৮ তারিখে জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠিত জি-টোয়েন্টি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এ বিক্ষোভ শুরু হয়৷ পুঁজিবাদবিরোধী এবং সামিটে অংশ নেয়া রাষ্ট্রনায়কদের বিরুদ্ধে কট্টর সমালোচক এ সব প্রতিবাদকারীদের সাথে একসময় পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়৷ পাঁচশ'রও বেশি মানুষ এ সময় আহত হয়৷ এছাড়াও অসংখ্য দোকান লুট ও গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা৷
জার্মান ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব মতে, এ দাঙ্গায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ মিলিয়ন ইউরো৷ হামবুর্গের মতো বহুজাতিক নব্য উদারপন্থি জোটের প্রতি সংশয়বাদী বলে পরিচিত একটি শহরকে এই সম্মেলনের জন্য বেছে নেয়ায় চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়৷ অনেক রাজনীতিবিদ সেসময় হামবুর্গের মেয়র ওলফ শোলৎসের পদত্যাগেরও দাবি তুলেছিলেন৷ অন্যদিকে, শুরু থেকেই ভিনদেশিদের উপর এ দাঙ্গার দায় চাপানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷
আরএন/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)
জার্মানিতে জি-টোয়েন্টির অতিথিরা যেখানে থাকবেন
শুক্রবার জার্মানির হামবুর্গে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী জি-টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন৷ সারা দুনিয়া থেকে আসা অতিথিদের জন্য প্রায় নয় হাজার হোটেলরুম প্রয়োজন পড়বে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Scholz
হামবুর্গ সেনেটের অতিথিশালা
নিরাপত্তার খাতিরে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা কোথায় থাকবেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি৷ তবে ইতিমধ্যে বেশ কিছু অনুমান প্রকাশিত হয়েছে৷ যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামবুর্গ সেনেটের অতিথিশালায় থাকবেন বলে জানা যাচ্ছে৷ অতীতে সেখানকার অতিথি হয়েছেন প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানা সহ বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Perrey
পার্ক হায়াৎ
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ও ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হোটেলে থাকতে পারেন৷ সম্মেলনের সময় হোটেলগুলো দূর্গ হয়ে ওঠবে৷ চারদিকে থাকবে পুলিশি পাহারা৷ সম্মেলনে নিরাপত্তা দিতে প্রায় ২০ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে৷
ছবি: Park Hyatt
দ্য ওয়েস্টিন
হামবুর্গ শহরের নতুন আকর্ষণ ‘এলবফিলহারমোনি’-তেই অবস্থিত এই হোটেল৷ এখান থেকে এলবে নদীর দারুণ সব দৃশ্য দেখা যায়৷ শোনা যাচ্ছে, সৌদি আরবের প্রতিনিধি দল সেখানে অবস্থান করবেন৷ সেটি সত্যি হলে সম্মেলন উপলক্ষ্যে যে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে তা দেখতে সৌদি প্রতিনিধিদের বেশি দূরে যেতে হবে না৷ শুধু কয়েক তলা নীচে নামলেই চলবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
রাইশসহোফ হোটেল হামবুর্গ
হামবুর্গের প্রধান রেলস্টেশনের কাছে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ভবনে গড়ে ওঠা হোটেলটি ২০১৫ সালে পুনঃসংস্কার করা হয়৷ সেখানে রুম আছে ২৭৮টি৷ ব্রাজিল, ব্রিটেন, ভিয়েতনাম ও ভারতের প্রতিনিধিদের সেখানে থাকার কথা৷
ছবি: picture alliance/dpa/C. Charisius
গ্র্যান্ড এলিজে
১৯৮৫ সালে নির্মিত এই হোটেলে ৫১১টি রুম আছে৷ সম্মেলনের সময় এর কয়েকটিতে চীনা অতিথিরা থাকতে পারেন৷ সব অতিথিকে একই চোখে দেখায় বিশ্বাস করে এই হোটেলের কর্তৃপক্ষ৷ ফলে স্টেফি গ্রাফ কিংবা ক্লিফ রিচার্ড যে-ই ঐ হোটেলে যান না কেন তাঁদেরকে সাধারণ অতিথিদের সমানই অর্থ দিতে হয়৷ ভিআইপি বলে তাদের জন্য আলাদা কোনো ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা নেই৷
ছবি: Grand Elysée
সোফিটেল হামবুর্গ আল্টার ওয়াল
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সম্ভবত এই হোটেলে থাকবেন৷ হোটেলটির সাজসজ্জায় ফরাসি শিল্পের ছোঁয়া পাওয়া যায়৷
ছবি: Sofitel Hamburg
ফেয়ামন্ট হোটেল ফিয়ার ইয়ারেসসাইটেন
কোনো বিশ্বনেতা শেষ পর্যন্ত এই হোটেলে থাকবেন তা এখনও জানা যায়নি৷ তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ট্রাম্প আর পুটিনকে ‘না’ বলেছে৷ যদিও গত বছরের ডিসেম্বরে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এই হোটেলে ছিলেন৷
ছবি: Fairmont Hotel Vier Jahreszeiten
ম্যুভেনপিক হোটেল হামবুর্গ
আগে ছিল লাল ইটের তৈরি একটি পানির টাওয়ার৷ ১৯১০ সালে তৈরি টাওয়ারটি পরে হোটেলে পরিণত করা হয়৷ ১৭ তলায় অবস্থিত টাওয়ার সুট থেকে হামবুর্গের ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য দেখা যায়৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও তাঁর স্ত্রী এই হোটেলে থাকতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Marks
হোটেল অ্যাটল্যান্টিক কেম্পিনস্কি
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল থাকবেন এই হোটেলে৷ জি-টোয়েন্টি সম্মেলন চলাকালীন আপনি যদি এই হোটেলগুলোর একটিতে থাকতে চান (যদি এখনও রুম খালি থাকে) তাহলে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ দিতে হতে পারে৷