ব্রিয়া মেয়েটির জন্ম ২০০৬ সালে৷ ইতিমধ্যেই সে ছবি আঁকার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির বিপন্ন জীবজন্তুকে বাঁচাতে চায়, ছবি বিক্রির টাকা দেয় পরিবেশ সংরক্ষণকারীদের৷ ডিডাব্লিউ-র ব্রিয়া-র সঙ্গে আলাপচারি৷
বিজ্ঞাপন
ডিডাব্লিউ: ব্রিয়া, তোমার এই সব পরিকল্পনা এলো কোথা থেকে?
ব্রিয়া: আমি আর আমার মা বিপন্ন প্রজাতির জীবজন্তুদের সম্বন্ধে পড়ছিলাম৷ আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না, কত রকমের জীবজন্তু আজ নিশ্চিহ্ন হবার মুখে৷ আমার খুব খারাপ লেগেছিল৷ তাই ভাবলাম, আমি কিছু একটা করবো৷ তখনই আমি ঠিক করি যে, আমি বিপন্ন প্রজাতির জীবজন্তুদের ছবি আঁকব, তারপর ছবিগুলো বেচে, সেই টাকা দিয়ে ওদের বাঁচাব৷
এ'পর্যন্ত তুমি যে সব ছবি এঁকেছো, তার মধ্যে কোনটা তোমার সবচেয়ে ভালো লাগে?
‘‘বিগ ব্লু'' হলো আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবি৷ ওর মানে নীল তিমি৷ ওটা আমার ফেবারিট কেননা আমার তিমি মাছের মুখটা খুব ভালো লাগে৷
আর তোমার সবচেয়ে প্রিয় জন্তু?
আমার প্রিয় জন্তু হল চিতাবাঘ৷ কেননা ওদের মুখের খুঁটিনাটি আমার খুব ভালো লাগে৷
তুমি আঁকা পছন্দ করো কেন?
আমি অ্যাক্রিলিক রং পছন্দ করি কেননা ওটা বেশ পুরু আর জ্বলজ্বলে, আর আমি ঐ রং দিয়ে খুঁটিনাটি আঁকতে পারি৷ আমার আঁকতে খুব ভালো লাগে৷
তুমি তোমার ছবির প্রেরণা পাও কোথা থেকে? তুমি কি ফটো থেকে আঁকো, নাকি চিড়িয়াখানায় যাও?
বই-এর ছবি থেকে প্রেরণা পাই, ইন্টারনেটে খোঁজ করি, ছবি দেখি৷
কোনটা আঁকতে সবচেয়ে মজা লাগে আর কোনটা আঁকা সবচেয়ে শক্ত?
চোখ আঁকা খুব শক্ত, কিন্তু সেটাই আমার সবচেয়ে ভালো লাগে৷
কি করে জানো, এর পরে কোন জন্তুর ছবি আঁকবে?
খোঁজ করে বার করি৷ আমার পরের ছবিটা হবে একটা সাদা ময়ূর৷
তুমি ছবি আঁকা থেকে তোমার যে রোজগার হয়, তা ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার-কে দাও৷ সেটা কেন?
আমার ইফ-কে পছন্দ কেননা ওরা সারা পৃথিবীতে জীবজন্তুদের সাহায্য করে৷ ওদের একটা ছোটদের আঁকার প্রতিযোগিতাও আছে৷ এছাড়া ছোটদের জীবজন্তুদের সম্পর্কে জানবারও ব্যবস্থা আছে৷
তুমি কি শিল্পী হতে চাও?
আমি বড় হয়ে একজন নাম-করা শিল্পী হতে চাই৷
যারা এই সাক্ষাৎকারটি পড়বেন, তাদের তুমি কী বলবে?
জীবজন্তুরা ছাড়া আমরাও থাকব না৷ আমাদের সকলেরই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে৷
প্রাণিজগতের রেকর্ডধারীদের কথা
প্রাণিজগতের বৈচিত্র্য নিয়ে ভাবলে অবাক হতে হয়৷ কেউ খুব ছোট, কেউ খুব বড়৷ প্রাণীদের চলন-বলনেও কত বৈচিত্র্য! কেউ দৌড়ায় ঝড়ের বেগে, কেউ লাফিয়ে চলে, কারো আবার বিচরণ আকাশের কাছাকাছি৷ ছবিতে দেখে নিন তাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিতা : দ্য স্প্রিন্টার
ক্ষুধার্ত চিতার সামনে পড়লে আর রক্ষা নেই, ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে চিতা৷ নিঃশব্দে শিকারের কাছাকাছি গিয়ে এমন বেগে তাড়া করতে শুরু করলে ভয়ঙ্কর এই শিকারী প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার৷ একটাই আশার কথা- চিতা বেশিক্ষণ খুব দ্রুত দৌড়াতে পারেনা৷ তাই কয়েকশ মিটারের মধ্যে ধরতে না পারলে হরিণের মতো পছন্দের খাবার হাতছাড়া করার হতাশায়ও ভুগতে হয় চিতাকে৷
ছবি: Fotolia/stephane angue
গতির সঙ্গে কষ্টসহিষ্ণুতা
‘প্রংহর্ন’ অন্য হরিণদের মতোই ক্ষিপ্রগতির হলেও এক জায়গায় পৃথিবীর বাকি প্রাণীদের চেয়ে এগিয়ে৷ কিছু প্রাণী শুরুতে খুব দ্রুত ছুটতে পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ফলে গতিও কমে আসে দ্রুত৷ প্রংহর্ন সেরকম নয়৷ পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত অনায়াসে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে৷ ফলে চিতা, বাঘ, সিংহ বা অন্য যে-কোনো প্রাণীই শিকার করতে আসুক, শুরুর ঝড়টা সামলে নিলে প্রংহর্নকে আর কে পায়!
ছবি: Getty Images
দ্রুততম পাখি
সব পাখি কিন্তু ওড়ে না৷ কোনো কোনো পাখি ডানা না মেলে দু পায়ে ছুটতেই বেশি ভালোবাসে৷ বিশালদেহী উটপাখি তো উড়তেই পারেনা৷ তবে দৌড়ায় অবিশ্বাস্য গতিতে৷ ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে ছোটে বলে তারা যে শুধু পাখিজগতের দ্রুততম সদস্য তা-ই নয়, অন্তত আধঘণ্টা পর্যন্ত ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের বেগ ধরে রাখতে পারে বলে তাদের কষ্টসহিষ্ণুতারও প্রশংসা করতে হয় আলাদাভাবে৷
ছবি: AP
‘শকুন হইতে সাবধান’
১৯৭৩ সালে একটা বিমান প্রায় বিধ্বস্ত হতে বসেছিল শকুনের কবলে পড়ে৷ ১১ হাজার ২০০ মিটার অর্থাৎ ৩৬ হাজার ৭৪৫ ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল বিমানটি৷ এক রুপেল শকুন উড়তে উড়তে সেখানে গিয়ে হাজির এবং বিমানের সঙ্গে ধাক্কা৷ পাখি সাধারণত ১০০ থেকে ২,০০০ মিটার উঁচুতে ওড়ে৷ শুধু অভিবাসী পাখিরাই প্রবল শীতে মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে বাঁচতে যখন দেশান্তরী হয়, বিশেষ করে যখন হিমালয়ের ওপর দিয়ে উড়তে হয়, তখন বড় জোর ৯,০০০ মিটার উঁচুতে ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবচেয়ে উঁচুতে লাফ
বিশাল আকৃতির বুনো বেড়াল শ্রেণির এই প্রাণী একেবারে জায়গায় দাঁড়িয়ে সাড়ে পাঁচ মিটার, অর্থাৎ ১৮ ফুট ওপরের মগডাল থেকে শিকার ধরে আনতে পারে৷ স্থলচর আর কোনো প্রাণী লাফিয়ে এত উঁচুতে উঠতে পারেনা৷ ৫০ কেজি ওজনের শরীর নিয়ে পুমা কী করে যে এত উঁচুতে লাফিয়ে উঠতে পারে, কে জানে! প্রাণীকুলে ডলফিনই শুধু পুমার চেয়ে বেশি, ৭ মিটার উঁচুতে উঠতে পারে লাফিয়ে৷ তবে জলচর ডলফিন লাফের আগে অনেকটা পথ সাঁতরে গতি বাড়িয়ে নেয়৷
ছবি: Bas Lammers
সবচেয়ে ছোট পাখি
সবচেয়ে ছোট পাখির নাম হামিং বার্ড৷ সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ে এটা নিশ্চয়ই অনেক আগেই জেনে গেছেন সবাই৷ সবচেয়ে ছোট হামিং বার্ডের শরীর দুই ইঞ্চি বা ৬ সেন্টিমিটারের মতো৷ ওজন অন্য পাখির পালকের সমান, মাত্র ২ গ্রাম! খুব ছোট পাখি, খুব ছোট ডানাও তাদের৷ তাই উড়তে হয় অনেক কষ্ট করে৷ ওড়ার সময় সেকেন্ডে ৪০ থেকে ৫০ বার ডানা ঝাপটায় হামিং বার্ড৷
ছবি: Fabian Schmidt
সবচেয়ে গভীরে
ডাইভ দিয়ে সমুদ্রের পানির ৩,০০০ মিটার গভীরে চলে যায় তিমি৷ একঘণ্টা শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে থাকতেও পারে সেখানে৷ আর কোনো স্তন্যপায়ী প্রানী পানির এত গভীর তলদেশে যেতে পারে না৷ এতক্ষণ ধরে তিমির মতো শ্বাস বন্ধ রাখাটা অন্য কোনো প্রাণীর পক্ষে সম্ভব নয়৷ তিমি নাকি ডাইভ দেয়ার সময়ই মস্তিস্ক আর হৃৎপিণ্ডে রক্ত পাঠিয়ে দেয়৷ আর এভাবেই দম বন্ধ করে ঘণ্টা পার করার জাদু দেখায় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই প্রাণী৷
ছবি: 2010 Universum Film GmbH / Richard Herrmann
খরতাপে নির্বিকার
‘অরিক্স’ হরিণ ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তপ্ত হাওয়া গায়ে মেখে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায়৷ মানুষ হলে অমন তাপে মৃত্যু নির্ঘাত৷ অরিক্সের দেহের রক্ত শীততাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ তাছাড়া তৃষ্ণা খুব কম পায় বলে অন্য প্রাণীদের মতো গরমে ঘন ঘন পানি পান করারও দরকার পড়েনা৷ সপ্তাহে একবার পানি পান করলেই সুস্থ থাকে অরিক্স৷ এমন হলে কারো গায়ে তাপ দুর্ভোগ হয় কী করে!
ছবি: picture-alliance/zb
সেরা কান
প্রাণীকুলে সেরা কান বাঁদুরের৷ নিশাচর এই প্রাণী তার বড় বড় কান শব্দের উৎসের দিকে ঘোরালে যেন দীর্ঘ এক চোঙ চলে যায় সেখানে, টেনে নিয়ে আসে শব্দকে৷ ঘুটঘুটে অন্ধকারেও বাঁদুরের তাই পোকামাকড় ধরে খেতে কোনো অসুবিধা হয়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাফের আসল চ্যাম্পিয়ন
মাছিদেরও আছে অসাধারণ এক ক্ষমতা৷ শরীরের উচ্চতার চেয়ে ২০০ গুণ উঁচুতে লাফিয়ে উঠতে পারে তারা৷ ফ্রগহপার তো আরেক কাঠি সরেস৷ নিজের শরীরের উচ্চতার চেয়ে ৪০০ গুণ বেশি উঁচুতে এক লাফে হেসেখেলে উঠে যায় তারা!