জীবনযাত্রার ব্যয় সাশ্রয়ে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কমলা হ্যারিসের
১৭ আগস্ট ২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস শুক্রবার জীবনযাত্রার মূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রস্তাব ঘোষণা করেছেন। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বেশ কয়েকটি নীতির কথা জানিয়েছেন কমলা হ্যারিস৷
বিজ্ঞাপন
রোজকার মুদিখানার জিনিস অর্থাৎ গ্রসারির ‘দাম বাড়াতে' চায় যারা, মূল্য নিয়ন্ত্রণে তেমন সংস্থাগুলোকে জরিমানা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেছেন, এর ফলে আবাসনগুলোকে আরো সাশ্রয়ী করা সম্ভব, অ্যামেরিকানদের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷ উত্তর ক্যারোলিনায় প্রচারণার সময় কমলা বলেন, ‘খরচ বেড়েই চলেছে৷ খাবার, ভাড়া, গ্যাস, স্কুলের জামা, প্রেসক্রিপশনের ওষুধ। এত কিছু খরচের পরে অনেক পরিবারের জন্য, মাসের শেষে হাতে আর খুব বেশি টাকা থাকে না।''
নিত্যনৈমিত্তিক জিনিস (গ্রসারি) বা মুদিখানার খরচ বাড়াতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর উপর ‘কঠোর শাস্তি' আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে বড় কর্পোরেশনগুলোকে শাস্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে যদি সেগুলো মূল্যবৃদ্ধিতে জড়িত বলে জানা যায়। তবে এটা কংগ্রেসে পাস হতে হবে।
ট্রাম্পের প্রচারণায় বলা হয়েছে, ‘‘কমলা হ্যারিসের অফিসে মাত্র সাড়ে তিন বছর হয়েছে। তিনি যা করেছেন তা হলো অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া।''
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি একটা স্থির নিম্নগামী প্রবণতায় রয়ে গিয়েছে। শক্তিশালী চাকরির বৃদ্ধি এবং রেকর্ড স্টক মার্কেটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দা এড়িয়ে যেতে পেরেছে। কোভিড-সংক্রান্ত অর্থনৈতিক উত্থানের কিছু প্রভাব রয়েছে, যার মধ্যে খাবারের প্রচুর দাম এবং বাড়ির ক্রেতাদের জন্য উচ্চ সুদের হারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।
ট্রাম্প এদিকে নানা কর বসানোর প্রস্তাব করেছেন। তার দাবি, এর ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। শুক্রবার উত্তর ক্যারোলিনায় কমলা পাল্টা যুক্তি দেন, এর ফলে অ্যামেরিকানরা আরো বিপদে পড়বেন।
কমলা হ্যারিস বলেন, ‘‘তিনি দৈনন্দিন পণ্য এবং মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর উপর জাতীয় বিক্রয় কর আরোপ করতে চান যা আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করি। এটা অ্যামেরিকানদের ধ্বংস করে দেবে।''
কমলার কথায়, ‘‘এর অর্থ হল আপনার প্রতিদিনের প্রায় প্রতিটা চাহিদার দাম বাড়বে। গ্যাসের উপর কর বসাবেন ট্রাম্প। খাদ্যের উপর কর বসাবেন ট্রাম্প। পোশাকের উপর কর বসাবেন ট্রাম্প। এছাড়াও প্রেসস্ক্রিপশন লাগে না এমন ওষুধের উপর কর বসাতে চান ট্রাম্প।"
মার্কিন প্রেসিডেন্টের আসলে কতটা ক্ষমতা?
ওভাল কার্যালয়ে যিনি বসেন, তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন- সাধারণ মানুষের ধারণা এমনই৷ আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমিত৷ কারণ, সরকারের অন্যান্য বিভাগেরও বলার সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Ken Cedeno/abaca/picture alliance
মার্কিন সংবিধান যা বলছে
একজন প্রেসিডেন্ট চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারেন না৷ তিনি রাষ্ট্র এবং সরকারের প্রধান৷ কেন্দ্রীয় নির্বাহী বিভাগ তার দায়িত্বে থাকে, যার কর্মীসংখ্যা চল্লিশ লাখের বেশি৷ তাদের মধ্যে সেনা সদস্যরাও অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন৷ কংগ্রেসে অনুমোদিত আইন প্রয়োগ করা তার দায়িত্ব৷
ছবি: bildagentur-online/picture alliance
ভারসাম্য রক্ষা
নির্বাহী, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা নামে সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে৷ এরা একে অপরের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে৷ প্রেসিডেন্ট চাইলে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন এবং কেন্দ্রীয় বিচারপতিদের নিয়োগ দিতে পারেন৷ তবে সেগুলো নিশ্চিত করতে সিনেটের অনুমোদন লাগবে৷ সিনেটের অনুমোদন নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও নিয়োগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Evelyn Hockstein/File Photo/REUTERS
কংগ্রেসকে জানাতে হয়
দেশ কেমন চলছে তা পর্যায়ক্রমে কংগ্রেস জানানোর দায়িত্ব রয়েছে প্রেসিডেন্টের৷ বাৎসরিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ বক্তব্যে এটা করেন তিনি৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
চাইলেই ‘না’ বলতে পারেন না
রাষ্ট্রপতি চাইলে একটি বিল অনুমোদন না করে কংগ্রেসে ফেরত পাঠাতে পারেন৷ কিন্তু কংগ্রেসের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য যদি চান, তাহলে বিলটি প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ছাড়াও কার্যকর করতে পারেন৷ এখন অবধি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভেটো দেয়া এক হাজার পাঁচশ ত্রিশটি বিলের মধ্যে মাত্র ১১২টি কার্যকর করেছে সিনেট৷
ছবি: Mandel Ngan/AFP/Getty Images
ক্ষমতার ধূসর দিক
সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টে সিদ্ধান্তগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার পরিধি পুরোপুরি বোঝাতে পারে না৷ ‘পকেট ভেটো’ নামের একটি চর্চা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রচলিত আছে, যেটির প্রয়োগ কোনো বিলের ক্ষেত্রে করা হলে কংগ্রেসের কিছু করার থাকে না৷ সহস্রাধিকবার এই পন্থার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা৷
ছবি: Jacquelyn Martin/AP Photo/picture alliance
নির্দেশনা আইন হিসেবে কাজ করে
সরকারি কর্মীদের কোনো কাজ নির্দিষ্ট পরিধি অবধি করার নির্দেশনা দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷ ‘নির্বাহী নির্দেশগুলো’ আইনের মতোই৷ এগুলোর প্রয়োগে অন্য কোনো অনুমতির দরকার হয় না৷ এক্ষেত্রে কংগ্রেস চাইলে পাল্টা আইনের অনুমোদন দিতে পারে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আগের প্রেসিডেন্টের জারি করা নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে পারেন৷
ছবি: Ronen Tivony/ZUMA Press/IMAGO
কংগ্রেসকে পাশ কাটানোর উপায়
প্রেসিডেন্ট চাইলে অন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে৷ কিন্তু সেগুলো সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন পেতে হবে৷ তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে ‘নির্বাহী সমঝোতার’ মাধ্যমে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে পারেন৷ কংগ্রেস আপত্তি না তোলা অবধি এ ধরনের সমঝোতা কার্যকর থাকে৷
ছবি: Evan Vucci/AP Photo/picture alliance
মার্কিন সেনা কোথায় যাবে নির্ধারণের ক্ষমতা
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট৷ তবে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে৷ কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই অবশ্য সশস্ত্র সংঘাতে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করতে পারেন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: HORST FAAS/AP/picture alliance
চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ
যদি একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহার বা কোনো অপরাধ করেন, তাহলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস তাকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে৷ মার্কিন ইতিহাসে তিনজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমনটা ঘটেছিল৷ তবে তারা কেউই অভিযুক্ত হননি৷ প্রেসিডেন্টের উপর চাপ প্রয়োগে কংগ্রেসের নানাবিধ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance