আজ যারা অ্যাসিড মত্ত, কাল তারাই বিপথে যাওয়া ছেলেপুলেদের জীবনে ফেরাবে। সেই হোক আসল নেশা।
বিজ্ঞাপন
বাতি জ্বলছে না ঘরে। নিঝুম অন্ধকারে ভাঙা বোতলের মতো মেঝেতে ছড়িয়ে আছে তিনটে ছেলে একটা মেয়ে। তখন উইন্ডোজ চার-পাঁচের যুগ। নাকি তিন? সাব উফারের ঝংকার একটু কড়া। বেশিই কড়া। জানলার কাঁচ ঝনঝনিয়ে উঠছে মাঝে মাঝেই। কম্পিউটারের স্ক্রিন জুড়ে গোল সাইক্লোরোমায় আকাশপাতাল সাঁতার কেটেই চলেছে একটি ছেলে। সেই সাইক্লোরোমাকে সাক্ষী রেখে লাইভ অনুষ্ঠানে একের পর সাইকেডেলিক ফরমেশন তৈরি করে চলেছে পিংক ফ্লয়েড। ডার্ক সাইড অফ দ্য মুন। অ্যাসিড।
জিভের ডগায় অ্যাসিড নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া তিনটে ছেলে একটা মেয়ে ট্রিপ নিচ্ছে। প্রতিটি সুর মূর্ছনা যেন মনে হচ্ছে শরীরের শিড়া বেয়ে বেয়ে চলেছে কোষ থেকে কোষান্তরে। দেখা যাচ্ছে। সেই ইনার স্পেস ছবিটার মতো। শরীরের ভিতরে এক টাইম ট্র্যাভেল। মাথার ভিতর হাল্কা থেকে আরো হাল্কা। যেন ভেসে থাকা যায় হাওয়ায়। যেন প্রথম স্বর্গ থেকে সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে এক নিঃশ্বাসে ফিরে আসা যায় তৃতীয় বা চতুর্থে। আশ্রয় নেওয়া যায় এক মায়াবী বনে। সাঁতার কাটতে কাটতে পৌঁছানো যায় মায়ের জঠরে। সৃষ্টির গোড়ায়। পিংক ফ্লয়েড থামছে না।
একটা গোটা দিন ওভাবেই, ঠিক ওভাবেই ছিটকে ছিল, ঝিট খেয়ে ছিল, মেঝের উপর ভাঙা বোতলের মতো ছড়িয়ে ছিল তিনটে ছেলে আর আর একটা মেয়ে। কলেজ পড়ুয়া। বড়লোক বন্ধুর বদান্যতায় প্রথম অ্যাসিড স্পর্শ। প্রথম হুব্বার মতো শরীরের ভিতর আরেকটা, তার ভিতর আরেকটা, তার ভিতর আরো একটা শরীর আবিষ্কার। করতেই থাকা, করতেই থাকা। সাইকেডেলিক চক্র।
তিনটে ছেলে একটা মেয়ের দুইজন জীবন, অর্থনীতি এবং মধ্যবিত্ততার নিয়মে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক জীবনে। দুইজন থেকে গেছে সাইকেডেলিক চক্রে। অ্যাসিড ছাড়া ঘুম হয় না। অ্যাসিড ছাড়া ঘুম ভাঙে না। অ্যাসিডের জন্য চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া। ধোলাই। পুলিশ। লকআপ। মাঝরাতে চেয়ারে বেঁধে ডান্ডা। সকালে আবার অ্যাসিড। কেমিক্যাল ট্যাবলেট জিভের গোড়ায় না দিলে পাগল পাগল করতে থাকতো দুজনেই। পাগলই হয়ে গেছিল বলা চলে। তখন ওদের আলাদা দল। ব্যান্ডের নামও-- অ্যাসিড। কলেজ ক্যান্টিনে খবর পেলাম লিড গিটারিস্ট, আমাদের চেয়ে বছর তিনেকের বড়, ওভার ডোজে শেষ। শ্মশানে ওকে পুড়িয়ে গঙ্গার ধারে বসে জিভে অ্যাসিড নিয়ে মন খারাপ সেলিব্রেট করছে বাকি বন্ধুরা।
জাম্পকাট
মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে। প্রায় এক যুগ। জীবনের নিয়মেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল সেই দুই বন্ধুর সঙ্গে। খবরও রাখতাম না, মরে গেছে, নাকি পাগলাগারদে! দেখা হলো এক অ্যাসাইনমেন্টে। অ্যাসিডমুখো সেই বন্ধু বক্তৃতা দিচ্ছে এক বিদেশি কনসুলেটের কনফারেন্স রুমে। বিষয়, নেশা থেকে ফিরে আসার কাহিনি। অন্তত বার বিশেক লকআপে যাওয়া সেই বন্ধু এখন ভারতের অন্যতম ফোটোগ্রাফার। ছবি বানিয়েছে। সপ্তাহে অনেক কাজের ফাঁকেও অন্তত একবার দেখা করে ওর দাদার সঙ্গে। বছর ছয়েক আগে যে দাদা এক নেশার ঠেক থেকে তুলে নিয়ে গেছিল ওকে। নিজের বাড়িতে রেখে ধীরে ধীরে স্রোতে ফিরিয়েছে। ঠিক যেভাবে একসময় ওই দাদাকে স্রোতে ফিরিয়েছিল আরো এক দাদা। ঠিক যেভাবে আমার বন্ধু দাদা হয়ে স্রোতে ফেরায় আরো আরো অ্যাসিডখেকোদের। এ-ও এক চক্র। সাইকেডেলিক। এ-ও এক নেশা। জীবনের। এ-ও এক লুপ। অ্যাসিডের ঘোরের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের যত অভিযান
মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া মাদকের পরিমাণও বাড়ছে৷ পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও তুলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ ছবিঘরে বিস্তারিত..
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাদক চোরাচালান
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদক চোরাচালানের পরিমাণ বাড়ছে৷ সরকারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটককৃত মাদকের পরিমাণ ও এর সাথে জড়িতদের সংখ্যা তার আগের বছরগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে৷
ছবি: AFP
বেড়েছে ইয়াবা
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ২০১৯ সালে এর পরিমান ছিল তিন কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার পিস। ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে করোনার বছরে বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।
ছবি: Getty Images/Afp/Y. A. Thu
গাঁজা আটকও বাড়ছে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালেদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ৩৯ হাজার নয়শ ৬৮ কেজি গাঁজা আটক করে৷ ২০২০ সালে আটকের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার দুইশ ৭৯ কেজি৷
ছবি: Fadel Senna/AFP/Getty Images
হেরোইন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২০১৫ সালে একশ সাত দশমিক ৫৪ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে৷ ২০২০ সালে উদ্ধারের পরিমাণ ছিল দুইশ ১০ দশমিক ৪৪ কেজি৷
ছবি: Bulgarian Prosecutor's Office/picture-alliance/AP
সরকারের বিশেষ অভিযান
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০১৮ সালের মে মাসে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে৷ বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ‘সাড়াশি অভিযান’ চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
হাজার হাজার আটক
মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরুর প্রথম দুই মাসের মাথায় প্রায় ২৫ হাজার মামলা দায়ের হয়৷ এসব মামলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি লোককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো৷
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin
শতাধিক আত্মসমর্পন
অভিযান চলার সময় মাদকব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পনের সুযোগ দেওয়া হয়৷ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ১০২জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেন৷
ছবি: Getty Images/Afp
সমালোচনায় মাদকবিরোধী অভিযান
এদিকে অভিযানের প্রায় পুরোসময় জুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের খবর পাওয়া যায়৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, এ সময় ‘৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত’ হত্যার শিকার হয়৷ বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার৷
ছবি: bdnews24.com
কতটা সফল মাদকবিরোধী অভিযান?
কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিচারের আওতায় না আনার অভিযোগ ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলেরই এক কাউন্সিলরের মৃত্যুর পর প্রশ্নের মুখে পড়ে অভিযান৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযানে সময়িকভাবে ঠেকানো গেলেও মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
বাড়ছে মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানায়, ২০১৯ সালে ১১৪জন রোগী সরকারি-বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০৪ জন আর ২০১৭ সালে ৬৯জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Buchanan
নতুন মাদকের আবির্ভাব
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডি নামের এক মাদকের সন্ধানও পায় গোয়েন্দা বিভাগ৷ পুলিশের দাবি, রাজধানীতে ১৫টি গ্রুপ রয়েছে, যারা এক বছর ধরে এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত৷