খেলার পুতুল জীবন্ত হয়ে উঠলে কেমন হবে? এক পোলিশ আলোকচিত্রী বিশেষ ধরনের পুতুল সংগ্রহ করে অসাধারণ সব চরিত্র সৃষ্টি করে চলেছেন৷ সেগুলি দেখলে গা ছমছম করলেও উপেক্ষা করার উপায় নেই৷
বিজ্ঞাপন
এই পুতুলগুলি খেলার জন্য তৈরি হয় নি৷ পোলিশ শিল্পী মোনিকা মস্টোভিক প্রায় জীবন্ত দেখতে এই পুতুলগুলিকে এমন প্রেক্ষাপটে সাজিয়ে রাখেন, যে দেখলেই গা ছমছম করে৷ মনে হয়, হঠাৎ যেন নড়ে না ওঠে৷ মোনিকা বলেন, ‘‘আমি বিজেডি পতুল সংগ্রহ করি এবং পুতুলের ছবি তুলি৷ এই পুতুলই আমার প্যাশন বা নেশা৷ দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি সেগুলির ছবি তুলে আসছি৷''
এশিয়া মহাদেশেই তথাকথিত ‘বল জয়েন্টেড ডল্স'-এর চল শুরু হয়৷ জয়েন্ট বা শরীরের বিভিন্ন ভাঁজের জায়গায় বল ঢুকিয়ে পুতুলের অঙ্গভঙ্গি পছন্দমতো বদলানো যায়৷ পোলিশ এই শিল্পীর বাসায় ২৫টিরও বেশি এমন পুতুল রয়েছে৷ এক রুশ শিল্পী মোনিকার ইচ্ছা অনুযায়ী পুতুলের মুখচ্ছবি ও শরীরের ত্বক রং করেন৷ প্রত্যেক ছবির জন্য মোনিকা এক নতুন চরিত্র সৃষ্টি করেন৷ মোনিকা বলেন, ‘‘পুতুলের চোখ এবং চোখের মণির রং বদলে ফেলা যায়, সোজা অথবা বাঁকা দৃষ্টি সাজানো যায়৷ পরের বার পুতুল অন্য মুখচ্ছবি ও চরিত্র পাবে৷''
পুতুলের জন্য আলাদা করে জামাকাপড়ও সেলাই করা হয়৷ এক শিল্পী বন্ধু সেগুলি তৈরি করেন৷ মোনিকা বলেন, ‘‘নানা মাপের পুতুল রয়েছে, তাই কখনো সঠিক জামাকাপড় খোঁজা কঠিন হয়ে পড়ে৷ হয় বেশি বড়, কখনো খুব ছোট হয়ে যায়৷’’
চামড়ার বুট জুতোও জামাকাপড়ের সঙ্গে মানিয়ে যায়৷ মোনিকা হাতে গ্লাভস পরে পুতুলের মেকআপ অক্ষত রাখার চেষ্টা করেন৷
ভয় দেখায় যে পুতুল
04:05
তার তোলা ছবিগুলি কিন্তু মোটেই পোর্ট্রেট নয়৷ তিনি বরং দর্শকের কল্পনাশক্তি উসকে দিতে চান৷ মোনিকা মস্টোভিক মনে করেন, ‘‘এই পুতুলগুলি আমাকে এত প্রেরণা দেয়, কারণ সেগুলির মুখে হাসির বদলে কখনো সিরিয়াস ভাব, কখনো দুঃখ, কখনো কান্না দেখা যায়৷ পুতুল নয়, এভাবে মানুষ এবং মানুষের আবেগের কাহিনি তুলে ধরা সম্ভব৷''
মোনিকা তার ছবিগুলি ইনস্টাগ্রাম অথবা বিভিন্ন প্রদর্শনীতে দেখান৷ পোল্যান্ডের ক্রাকাউ শহরে নিজের পরিচিত পরিবেশেও এমন প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছে৷ বিভিন্ন অবহেলিত জায়গায় পুতুলগুলি বসিয়ে ছবি তুলেছেন শিল্পী৷ অনেক সময় একাধিক পুতুলকে পরিবার অথবা বোনেদের গ্রুপ ফটো হিসেবে দেখা যায়৷
কিছুটা রূপকথা, সামান্য ছমছমে ভাব এবং উপযুক্ত পরিবেশের প্রতি নিষ্ঠার কারণে মোনিকার ছবি দেখে নির্লিপ্ত থাকার উপায় নেই৷
ইয়ানা ওরটেল/এসবি
বার্বি ডল সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য
তাকে অনেকেই ভালোবাসে, ঘৃণা করে, বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি: সে বার্বি৷ ১৯৫৯ সাল থেকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে এর রূপ৷ বার্বি সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: imago/bonn-sequenz
প্রথম বার্বি ডল
স্বর্ণকেশী, সরু কোমর, সুদীর্ঘ পা: ১৯৫৯ সালের ৯ মার্চ ম্যাটেল এ ধরনের এক পুতুল বাজারে আনে৷ সেই থেকে বিশ্বের সব শিশুদের ঘরে প্রবেশ করা শুরু করে বার্বি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আনন্দের স্মৃতি
কোনো মেয়ে ঘোড়া পছন্দ করে, আবার অন্যরা বার্বি ডল নিয়ে খেলতে ভালোবাসে৷ তাদের ঘর হয়ে ওঠে বার্বি বিশ্ব৷ শোওয়ার বা বসার ঘরের তাকের পর তাক জুড়ে থাকে বার্বি, তার প্রেমিক কেন এবং তার ছোট ভাই-বোন টড এবং টুটি৷
ছবি: picture-alliance/ZB/B. Pedersen
খেলাঘর
আশির দশক থেকে অনেক মেয়েদের ঘরে বার্বি আর কেন হয়ে ওঠে স্বপ্ন চরিত্র এবং প্রেমের গল্পের আদর্শ চরিত্র৷
ছবি: imago/bonn-sequenz
পেশাজীবী নারী
আশির দশকেই বার্বির চরিত্রে পরিবর্তন আনা হয়৷ তার নির্মাতা ম্যাটেল নভোচারী, কম্পিউটার প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক, স্থপতি নানা পেশার বার্বি নির্মাণ করে৷ পেশাজীবী এই নারী চরিত্রের মধ্যে আছে প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্টও৷
ছবি: DW/D. Bryantseva
চরিত্রে বৈচিত্র
২০০০ সালে মডেল চরিত্র থেকে সরাসরি মধ্যবিত্তদের কাতারে নামিয়ে আনা হয় বার্বিকে৷ বার্বির পোশাকে চাকচিক্য কিছুটা কমিয়ে আনা হয়৷ ২০১৬ সালে চার চরিত্রের বার্বি ডল বাজারে আনে ম্যাটেল: পেটিটে (সাধারণ মানের পোশাক পরিহিত), লম্বা, কার্ভি এবং চিরাচরিত৷
ছবি: picture-alliance
সময়ের পরিবর্তন
৬০ বছর আগে কে ভাবতে পেরেছিল হিজাব পরা বার্বি ডলও বাজারে আসতে পারে? ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে অংশ নেয়া মার্কিন অ্যাথলিট ইবিতিহাজ মুহাম্মদের আদলে তৈরি হয় এই বার্বি৷
ছবি: picture-alliance/AP/Invision/E. Agostini
বিশ্বজুড়ে
কেনিয়ার বার্বি কোন বড় শহরের আধুনিক চরিত্র নয়৷ বরং আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত এক নারী চরিত্র৷
ছবি: picture-alliance
নারীবাদী ভাবমূর্তি
ফ্রিদা কাহলো বার্বি (মাঝে) দারুণ একটা ভাবনা থেকে তৈরি হলেও তা শেষ হয় ব্যর্থতার মাধ্যমে৷ কপিরাইট ইস্যুতে ম্যাক্সিকান এই শিল্পীর এক আত্মীয়া ম্যাটেলের নামে মামলা করেছিলেন৷ ফলে দোকান থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এই পুতুল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Barbie
৬০ বছর এবং এরপর...
২০১৯ সালে হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় এবং প্রস্থেটিক পা লাগানো বার্বি ডলও বাজারে এসেছে৷ এই পুতুল নির্মাতারা বুঝতে পেরেছেন, স্বর্ণকেশী, নীল নয়না এবং সরু কোমরের পুতুলকে বর্তমান যুগের শিশুরা গ্রহণ করে না৷