দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ডের চাষিরা ধানচাষ ছেড়ে ফলচাষি হয়েছেন৷ মোটর সাইকেলে চড়ে ফলের বাগানে যান৷ নদী থেকে সেঁচের জল তোলার জন্য তারা দেন ‘জীবন্ত বাঁধ', যা কিনা বাঁশ গোত্রীয় নানা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি৷
বিজ্ঞাপন
নাখোন সি থামারাত শহরে সকাল হয়েছে৷ শহরের প্রখ্যাততম মন্দিরটির মাথায় এখনও পাণ্ডুর চাঁদ লেগে রয়েছে৷ বৌদ্ধ মন্দিরটিতে ভগবান বুদ্ধের একটি দাঁত রাখা রয়েছে – বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সেটিকে পাহারা দেন৷ ঠিক একই সময় শহরের কাছের একটি গ্রামে চাষি ওয়ানচার্ট সামদাং নিজের কাজে বেরোচ্ছেন৷ বাড়ি থেকে তাঁর ফলের বাগানটির দূরত্ব সাত কিলোমিটার৷
দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ডের চাষিদের মধ্যে খুব কমজনই আজকাল ধানচাষ করেন৷ তাঁরা সকলেই মোটামুটি সবজি আর ফলের চাষে মন দিয়েছেন৷ সামদাং বলেন: ‘‘এখানে আমি যে সব ফলের চাষ করি, তার মধ্যে দু'টি হলো এই ম্যাঙ্গোস্টিন আর ডুরিয়ান – খেতে খুব ভালো, কিন্তু একটু গন্ধ আছে৷ দু'টোই খুব ভালো বিক্রি হয়৷ ম্যাঙ্গোস্টিন-এর দাম কিলো প্রতি ১২০ বাট, ডুরিয়ান-এর ৬০ বাট৷'' অর্থাৎ কিলো প্রতি তিন কিংবা দেড় ইউরো৷
পরিবেশ-বান্ধব বাঁধ
ওয়ানচার্ট-এর আসল সমস্যা হলো সেচের পানি৷ গরমের শেষে জল পাওয়া শক্ত৷ ওয়ানচার্ট দেখালেন: ‘‘এটা আমার পানি ধরে রাখার চৌবাচ্চা৷ বর্ষায় নিজে থেকেই পানিতে ভরে যায়৷ ঢাল বেয়ে পানি নেমে ফলের গাছগুলোতে পানি দেয়৷ গরমের সময় আমাকে নদী থেকে পানি তুলতে হয়৷ সেই পানি নল দিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয়৷''
ঈশ্বরদীর লিচু
বাংলাদেশে লিচু উৎপাদনের অন্যতম বড় অঞ্চল পাবনা জেলার একটি উপজেলা৷ নাম – ঈশ্বরদী৷ এ বছর সেখানকার প্রায় ২,৪০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে৷ গতবছর লিচু বিক্রি করে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি আয় করেছিল সেখানকার স্থানীয় কৃষকরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
জনপ্রিয় হচ্ছে ঈশ্বরদীর লিচু
ঈশ্বরদীর রূপপুরের একটি বাগানে পাকা লিচু৷ স্বাদে ও আকারে এখানকার লিচুর সুনাম দেশজুড়ে৷ একটা সময় দিনাজপুরের লিচুর খ্যাতি থাকলেও গত প্রায় এক যুগ ধরে তাতে ভাগ বসাতে শুরু করেছে ঈশ্বরদীর লিচু৷ ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি দপ্তরের মতে, গত বছর সেখানে প্রায় ২,৩০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল৷ এবার সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৪০০ হেক্টর৷
ছবি: DW/M. Mamun
পরিবারের সবাই ব্যস্ত
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরের একটি বাগানে লিচু বাছাই করছেন পরিবারের সদস্যরা৷ লিচু মৌসুমে এ অঞ্চলে শ্রমিকের অভাব থাকে বলে শ্রমের মূল্যও থাকে চড়া৷ পরিবারের সব সদস্যই তাই এ সময়ে কাজে লেগে পড়েন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সার্বক্ষণিক তদারকি
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরের লিচু চাষি আবুল কালাম৷ প্রতিবছর লিচু চাষের টাকায়ই চলে তাঁর সংসার৷ অনাবৃষ্টি এবং উচ্চ তাপমাত্রা ঈশ্বরদীর অনেক বাগানে লিচু চাষে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও কালামের সার্বক্ষণিক তদারকি আর যত্নের কারণে তাঁর বাগানে ক্ষতির ছোঁয়া এবার খুব একটা লাগেনি৷ এ বছরও লিচু থেকে আয় ভালো বলে জানান তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যত্নের সঙ্গে পাড়া
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরে গাছ থেকে লিচু পাড়ছেন একজন কৃষক৷ এ কাজটি তাঁদেরকে করতে হয় অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বৈরি আবহাওয়া
বৈরি আবহাওয়া ঈশ্বরদীর লিচু চাষে অনেক ক্ষতি করলেও ভালো ফলন পেয়েছেন অনেক কৃষক৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাজারে নেয়ার ব্যবস্থা
গাছ থেকে লিচু পাড়ার পর বাগানেই ঝুড়িতে ভরে নিচ্ছেন কৃষকরা৷ চারপাশে গাছের কাচা পাতা দিয়ে ঝুড়ির ভেতরে রাখা হয় লিচু৷ গাছ থেকে পাড়ার পর খুব দ্রুতই এ কাজটি করতে হয় তাদের৷ কারণ খুব বেশি বাতাসের সংস্পর্শ পেলে লিচু দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
দাম চড়া
ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন গতবছরের তুলনায় কিছুটা কম হওয়ায় এবছর ফলটির দাম কিছুটা চড়া৷ গত বছর ভালো মানের প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হয়েছিল দুই থেকে তিন হাজার টাকায়৷ কিন্তু এ বছর প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
কুড়িয়ে পাওয়া লিচু
ঈশ্বরদীর মিরকামারীতে গাছের তলায় কুড়িয়ে পাওয়া লিচু হাতে একটি শিশু৷ এ অঞ্চলের গরিব মানুষ যাঁদের লিচু বাগান নেই, আবার কিনে খাবার সামর্থ্যও নেই, এই কুড়িয়ে পাওয়া লিচুই তাদের চাহিদা মেটায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিক্রির জন্য প্রস্তুতি
বাছাই শেষে ঝুড়ি ভর্তি লিচু৷ পাঠানো হবে শহরে৷ ঈশ্বরদীর ছলিমপুর থেকে তোলা ছবি৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রতিকূল আবহাওয়ার শিকার
খরায় ফেটে যাওয়া ঈশ্বরদীর মিরকামারী এলাকার একটি বাগানের লিচু৷ গাছে ফলন আসার পরে বেশ কিছুদিন বৃষ্টির দেখা মেলেনি এ অঞ্চলে৷ তবে সময়মতো কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় কৃত্রিম বৃষ্টি ও ঔষধ প্রয়োগ করে ক্ষতির হাত থেকে অনেকেই বাঁচতে পেরেছেন৷ যাঁরা সময়মতো পদক্ষেপ নেননি, তাঁদেরই এরকম ক্ষতি হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
সেচের পানির প্রয়োজন সব চাষির, কাজেই গাঁয়ের চাষিরা সবাই মিলে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন৷ তারা জার্মান উন্নয়ন সাহায্য সংগঠন জিআইজেড-এর সহযোগিতায় নদীতে একটি বাঁধ দিচ্ছেন৷ সেই বাঁধে নদীর স্রোত কিছুটা কমবে৷ মাটি ফেলার বস্তাগুলো প্লাস্টিকের নয়, বরং মানিওক ওলের মাড় থেকে তৈরি, কাজেই ওগুলো পরিবেশের হানি করে না৷ ওয়ানচার্ট বলেন: ‘‘আমাদের পানির সমস্যা সমাধানের এই পরিকল্পনা বস্তুত সব গ্রামবাসীর৷ ইতিপূর্বে আমরা সিমেন্ট দিয়েও চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু সিমেন্ট তো একটা প্রাণহীন পদার্থ, পানিতে নষ্ট হয়ে যায়৷ সেই কারণে আমরা বাঁশ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক পদার্থ ব্যবহার করি আর আমাদের বাঁধকে বলি ‘জীবন্ত বাঁধ'৷''
বাঁধ দেওয়ার ফলে নদীর স্রোত কমে যায়৷ ফলে আরো বেশি পানি চুঁইয়ে প্রকৃতিকে ভরপুর করে তুলতে পারে৷ বাঁধের কিনারায় কিছু কিছু গাছের চারা লাগানো হয়েছে – পরে তাদের শিকড় নদীর বাঁধটাকে আরো স্থিতিশীল করবে৷
একসঙ্গে কাজ করার ফলে গ্রামের মানুষদের অভ্যন্তরীণ সংহতিও বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সবাই খুশি মনেই এখানে কাজ করেন৷ দুপুরের দিকে নদীর বাঁধ খালি হয়ে আসে৷ ওয়ানচার্ট সামদাং ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কাজ কতটা এগিয়েছে: ‘‘আমরা গত বসন্তে এই বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছি, ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ হয়ে গেছে৷ বছর শেষ হবার আগেই আমাদের বাঁধও শেষ হয়ে যাবে, বলে আমার ধারণা৷ তখন থাড়ি নদীর তীরের সব গ্রাম আমাদের ‘জীবন্ত বাঁধ' থেকে উপকৃত হবে৷'