চিত্রকলা আক্ষরিক অর্থে জীবন্ত হয়ে উঠলে কেমন লাগবে? তুরস্কের এক শিল্পী এক প্রক্রিয়ায় ক্ল্যাসিক যুগের অনেক শিল্পকর্মকে গতিশীল, জীবন্ত করে তুলছেন৷ নাটক, অপেরা ও লাইট শো-র মধ্যেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
শিল্পকর্ম যখন জীবন্ত হয়ে ওঠে
03:00
শিল্পকলার ইতিহাসের এক ক্ল্যাসিক সৃষ্টি স্নান করতে যাচ্ছে৷ ভিনসেন্ট ফান গখ-এর ‘স্টারি নাইট' ছবিটি এক বিশেষভাবে প্রস্তুত করা তরলে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে৷ এই প্রক্রিয়ার নাম এব্রু শৈলি৷
গারিপ এই-এর মনে শিল্পকলার ইতিহাসের ক্ল্যাসিক ছবিগুলিকে এব্রু প্রযুক্তির সাহায্যে ফুটিয়ে তোলার আইডিয়া আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘ফান গখ সত্যি বিখ্যাত শিল্পী৷ তাঁর ‘স্টারি নাইটস’ ছবিটি সত্যি এব্রু-র মতো দেখতে৷ কারণ তিনি মেঘ নিয়ে কাজ করেছেন৷ এব্রু শব্দটির একটি অর্থও মেঘ৷’’
গারিপ এই ফান গখ ভিডিও ক্লিপ-টি তাঁর ফেসবুক পাতায় পোস্ট করেন৷ সেটি ভাইরাল হয়ে পড়ে৷ কম সময়ের মধ্যেই ভিডিওটি বিশাল সংখ্যায় শেয়ার করা হয়৷ এক মাসে ২ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি ক্লিক৷ তাও সুধু ফেসবুকের পাতায়৷ ইস্তানবুল শহরের এই শিল্পী এমন সাফল্য ও সাড়া পেয়ে এখনো বিস্মিত৷
নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া শিল্পকর্ম
নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া শিল্পকর্মটি পিকাসোর৷ তবে ক্লিম্ট এবং ফান গখ-ও আছেন তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পিকাসোর ‘ওমেন অফ আলজিয়ার্স’: ১৭৯.৪ মিলিয়ন
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাবলো পিকাসো দেলাক্রোয়ার ‘লে ফেম দ’আলজের’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৫টি ছবি আঁকেন৷ সেসব ছবির একটি, ‘ভার্সন ও’, ২০১৫ সালের মে মাসে নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৭৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
ছবি: Reuters
মোদিগলিয়ানির ‘রিক্লাইনিং ন্যুড’: ১৭০.৪ মিলিয়ন
২০১৫ সালের নভেম্বরে ক্রিস্টির এক নিলামে সাতজন সম্ভাব্য ক্রেতা এই পেইন্টিংটি কেনার জন্য নয় মিনিট ধরে উত্তেজনাপূর্ণ দর কষাকষিতে অংশ নেন৷ শেষমেষ টেলিফোনে নিলামে অংশ নেয়া চীনের এক ক্রেতা চিত্রকর্মটি কিনে নেন৷ ১৯১৭-১৮ সালে ছবিটি আঁকা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্লিম্টের ‘দ্য উওম্যান ইন গোল্ড’: ১৩৫ মিলিয়ন
১৯০৭ সালে এই ছবিটি আঁকেন গুস্তাভ ক্লিম্ট৷ ২০০৬ সালে সেটি নিলামে বিক্রি হয় ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷ তখন এটাই ছিল কোনো পেইন্টিং এর নিলামে ওঠা সর্বোচ্চ দাম৷ সেবছরই অবশ্য আরেকটি পেইন্টিং বিক্রি হয় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
ফান গখের ‘পোট্রেইট অফ ড. গাশে’: ১৪৯.৭ মিলিয়ন
কথিত আছে ফান গখ ১৮৯০ সালে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার গাশে সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘ও আমার চেয়েও অসুস্থ৷’’ গাশের এই পোট্রেট ১৪৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: AP
বেকনের ‘থ্রি স্টাডিজ অফ লুসিয়ান ফ্রয়েড’: ১৪২.৪ মিলিয়ন
১৯৬৯ সালে আঁকা এই ছবি তিনটি ফ্রান্সিস বেকনের সঙ্গে তাঁর সতীর্থ পেইন্টার লুসিয়ান ফ্রয়েডের বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার সম্পর্ককে তুলে ধরেছে৷ ২০১৩ সালের নভেম্বরে ছবিটি নিলামে বিক্রি হয় ১৪২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
5 ছবি1 | 5
এব্রু শিল্পশৈলির মৌলিক ভিত্তি হলো জল, যা ষাঁড়ের পিত্তের সঙ্গে মেশানো হয়৷ এর ফলে সারফেস আঠার মতো হয়ে ওঠে৷ রং নীচে চলে যেতে পারে না৷ একটু একটু করে তা লাগানো হয় এবং ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ স্বতঃস্ফূর্ত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিভিন্ন আকৃতির মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা চলে আসে৷ গারিপ বলেন, ‘‘জল নিয়ে কাজ করলে একটা সীমা থাকে৷ ৩০ মিনিট পর রং ভেঙে যাবে৷’’
গারিপ এই গোটা বিশ্বে কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন করেন৷ রংগুলিকে নাচিয়ে তোলার তাঁর এই প্রতিভা নাটক, অপেরা ও লাইট শো-য় কাজে লাগানো হয়ে থাকে৷ যেমন দুবাই শহরে৷ নরওয়ের সংগীত ব্যান্ড ‘এভা অ্যান্ড দ্য হার্টমেকার’ তাদের ‘ট্রেসেস অফ ইউ’ গানের ভিডিও-তে গারিপ আই-র সৃষ্টি ব্যবহার করেছে৷
১৯৮৪ সালে তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে গারিপ এই জন্মগ্রহণ করেন৷ ইস্তানবুল শহর তাঁকে প্রেরণা যোগায়৷ সাধারণ ফুলের মোটিফ তরুণ এই এব্রু শিল্পীর কাছে যথেষ্ট নয়৷ তিনি নতুন পথে পাড়ি দিতে চান, নিজেকে কোনো কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চান না৷
পানির উপর নৃত্য চলছে৷ গারিপ এই এক্ষেত্রে এডভার্ড মুংক-এর কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েছেন৷ কয়েক মিনিটের মধ্যে নরওয়ের এই এক্সপ্রেশনিস্ট শিল্পীর সৃষ্টি ফুটে উঠেছে৷
আন্দ্রেয়া বিকেরিশ/এসবি
আবর্জনা থেকে বিস্ময় জাগানো শিল্পকর্ম
সমুদ্রসৈকত নোংরা করে ফেলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্যান্ডেল, খেলনা, টুথব্রাশসহ নানারকম পরিত্যক্ত জিনিস৷ সবার চোখে আবর্জনা হলেও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর কাছে এ সব অমূল্য বস্তু৷ তাই এগুলো দিয়েই দারুণ সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে তারা৷
ছবি: Washed Ashore
আবর্জনাই যখন শিল্পীর হাতে...
এই বিশাল মাছঠি তৈরি হয়েছে শুধু সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে৷ ভালো মনের শিল্পীর হাতে আবর্জনাও কত অপরূপ, কত অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে পারে – এ ছবিটা তারই নিদর্শন, তাই নয় কি?
ছবি: Washed Ashore
যেখানে দেখিবে প্লাস্টিক
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই/পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ – ছাই কুড়ালে রতন তো পায়ই অনেকে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সংগঠন প্লাস্টিক কুড়িয়েই তৈরি করছেন অমূল সব শিল্পকর্ম৷ শিল্প সৃষ্টির আগে ওরেগনের সমুদ্রসৈকত থেকে প্লাস্টিকের জিনিস সংগ্রহ করে, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পর সব জিনিস রং অনুযায়ী আলাদা করাও কিন্তু খুব শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ৷
ছবি: Washed Ashore
আসল উদ্যোক্তা
ছবির এই মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের প্রধান তিনি৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের নানা জিনিস দিয়ে নানা ধরনের প্রাণীর যে সব মূর্তি গড়া হয়, সেগুলোর সবচেয়ে কঠিন অংশটুকুও তিনিই করেন৷
ছবি: Washed Ashore
স্বেচ্ছাসেবা দিতে এসে শিক্ষার্থী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর উদ্যোগের অংশ হতে আজ অনেকেই আগ্রহী৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর হয়ে কাজও করছেন অনেকে৷ পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে শরিক হয়ে শিল্প সৃষ্টির নেশায়ও মেতেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Washed Ashore
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বড় প্রাণী তৈরি করেই কিন্তু কাজ শেষ নয়৷ শিল্পকর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে তারা৷ এ সব প্রদর্শনীর একটাই উদ্দেশ্য – পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি৷
ছবি: Washed Ashore
মনে দাগ কাটার মতো বড়
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সব সময় প্লাস্টিকের বড় বড় মূর্তিই তৈরি করে৷ বেশির ভাগ মূর্তিই সাড়ে তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং প্রায় তিন মিটার উঁচু৷ সবচেয়ে বড় একটি পাখির মূর্তি৷ সেই পাখির ডানার দৈর্ঘ্যই সাত মিটারের মতো!
ছবি: Washed Ashore
সবাই তাদের অনুসরণ করুন
অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি মনে করেন, ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ যে কাজটি করছে তা যদি বিশ্বের সব প্রান্তে অনেক মানুষ করতে শুরু করে তাহলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷ যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ফেলার প্রবণতা কমিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা তাহলেই যে সম্ভব৷