‘ভূমিকম্প ওয়ালপেপার’
৯ এপ্রিল ২০১২![](https://static.dw.com/image/15847457_800.webp)
বৈজ্ঞানিক নাম ‘ইন্টেলিজেন্ট কম্পোজিট সিসমিক ওয়ালপেপার'৷ তবে বিজ্ঞানীরা সহজ করে একে ডাকেন ‘ভূমিকম্প ওয়ালপেপার' নামে৷ গ্লাস ফাইবার দিয়ে তৈরি এই পেপার কোনো বাড়ির দেয়ালে লাগালে সেটা ভূমিকম্পের সময় সহজে ভেঙে পড়বে না৷ আর পড়লেও ওয়ালপেপারের ভেতরে থাকা বিশেষ প্লাস্টিকের কারণে ইটের টুকরোগুলো সহসাই মানুষের মাথার উপর পড়বে না৷ কেননা ঐ প্লাস্টিক সেগুলোকে কিছু সময়ের জন্য আটকে রাখতে পারবে৷ আর ততক্ষণে ঘরের ভেতর থাকা মানুষগুলো বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে৷
জার্মানির ‘কার্লসরুয়ে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি'-র অধীনে থাকা ‘ইনস্টিটিউট অব সলিড কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়াল টেকনোলজি'-র বিজ্ঞানীরা এই ওয়ালপেপার আবিষ্কার করেছেন৷ এ বছরই সেটা বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে৷
প্রথম দেখায় আপনার বিশ্বাস হতে চাইবে না যে, কী করে এমন একটা সরু ওয়ালপেপার, যেটা মাত্র এক মিলিমিটার পুরু, এত বড় একটা কাজ করতে পারে!
গবেষকদের একজন মরটিস উরবান এই ওয়ালপেপারের কাজ করার কৌশলটা জানিয়েছেন৷ তিনি বলছেন, যে ফাইবার দিয়ে পেপারটা তৈরি সেটা একইসঙ্গে খুব শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক৷ ফলে যখন ভূমিকম্প হয় তখন এই ওয়ালপেপারটা পুরো দেয়ালেই কম্পনের মাত্রাটা ছড়িয়ে দেয়৷ তাই দেয়ালের দুর্বল অংশের উপর আঘাত হানার সুযোগ নেই ভূমিকম্পের৷ ফলে দেয়াল সহজে ভেঙে পড়বে না৷
কিন্তু এরপরও যদি ভাঙনের সৃষ্টি হয় তাহলে আছে ‘স্থিতিস্থাপক পলিপ্রোপিলিন প্লাস্টিক'৷ ওয়ালপেপারের মাঝে এই প্লাস্টিকের অবস্থান৷ এর কাজ হচ্ছে ভেঙে যাওয়া টুকরাগুলো আটকে রাখা, যেন সেগুলো মানুষের মাথার উপর না পড়ে৷ অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও এই কাজ সাফল্যের সঙ্গে করতে সক্ষম এই প্লাস্টিক৷ এই সময়ের মধ্যে মানুষগুলো বাইরে বেরিয়ে যেতে পারবে৷
আরেক গবেষক লোথার স্টেম্পনিভস্কি বলছেন অন্যান্য ওয়ালপেপারের মতো ভূমিকম্প ওয়ালপেপারও প্লাস্টার করা দেয়ালে লাগানো যাবে৷ অবশ্য এজন্য বিশেষ ধরণের আঠা ব্যবহার করতে হবে৷ যেটা তৈরি করেছে জার্মান কোম্পানি ‘বায়ার আর্থ সায়েন্স'৷ এর একজন কর্মকর্তা মিশায়েল এঙ্গেল বলছেন, সাধারণ ওয়ালপেপার লাগানোর আঠা হয় শক্তিশালী, নয় স্থিতিস্থাপক৷ কিন্তু ভূমিকম্প ওয়ালপেপারের আঠাকে দুটি গুণেরই অধিকারী হতে হবে বলে জানালেন বায়ার কর্মকর্তা এঙ্গেল৷
বায়ারের তৈরি এই আঠাতে যে রাসায়নিক পদার্থগুলো রয়েছে সেগুলো একে অপরের সঙ্গে হাইড্রোজেন দ্বারা যুক্ত৷ ভূমিকম্পের কারণে কখনো এই বন্ধন ছুটে গেলে, মুহূর্তের মধ্যেই সেগুলো দেয়ালের অন্য কোনো অংশে গিয়ে সংগঠিত হতে পারে৷ এভাবেই ওয়ালপেপারটি দেয়ালের সঙ্গে লেগে থাকতে পারে৷
বিজ্ঞানী উরবান বলছেন, তাঁরা বাস্তবে একটি ঘর তৈরি করে এই ওয়ালপেপারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং সফল হয়েছেন৷ তিনি বলছেন, মাঝারি থেকে কম শক্তিশালী ভূমিকম্পে এই ওয়ালপেপার কার্যকরী৷ তবে এটা শুধুমাত্র ইটের তৈরি বাড়ির জন্য প্রযোজ্য, কংক্রিটের জন্য নয়৷ কংক্রিটের জন্য আরও শক্তিশালী ফাইবার প্রয়োজন এবং এটা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান উরবান৷
বায়ার্ন কর্মকর্তা এঙ্গেল বলছেন, বাজারে ছাড়ার জন্য ভূমিকম্প ওয়ালপেপার তৈরি৷ তিনি বলেন, ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ যেমন জাপান, তুরস্ক অথবা চিলিতে এই ওয়ালপেপার কাজে লাগানো যেতে পারে৷ ঐসব দেশের সরকার চাইলে হাসপাতালে, বৃদ্ধাশ্রমে বা শিশুদের স্কুল তৈরিতে এই পেপার ব্যবহার করতে পারে৷ তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ ওয়ালপেপারের চেয়ে ভূমিকম্প ওয়ালপেপারের দামটা একটু বেশিই হবে বলে জানান এঙ্গেল৷ তবে আস্তে আস্তে সেটা কমে আসবে৷
প্রতিবেদন: ব্রিগিটে ওস্টেরাথ/জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ