হাসপাতালে মানুষ যায় রোগের চিকিৎসা করাতে৷ কিন্তু অনেকে ফেরে নতুন মারাত্মক জীবাণু নিয়ে৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা এমন এক অভিনব প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন, যার সাহায্যে অতি সহজে জীবাণুর মোকাবিলা করা সম্ভব৷
বিজ্ঞাপন
মাল্টি-রেজিস্টেন্ট ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে৷ তার মোকাবিলায় নতুন যে হাতিয়ার তৈরি হয়েছে, সেটি দেখতে তেমন শক্তিশালী না হলেও মোক্ষম কাজ দেয়৷ রেগেন্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নতুন এই প্রতিষেধক তৈরি করা হয়েছে৷ ভল্ফগাং বয়েমলার-এর নেতৃত্বে এক গবেষক-দল আসলে এমন এক জীবাণু-নাশকের খোঁজ করছিলেন, যা সহজে জীবাণু ধ্বংস করতে পারে৷ বয়েমলার বলেন, ‘‘অসংখ্য মানুষের হাত পড়ে এবং সে কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি – এমন সারফেসকে যতটা সম্ভব নিরাপদ করে তুলতে আমরা অবদান রাখতে চাই৷ শুধু শিল্পোন্নত বিশ্বে নয়, উন্নয়নশীল দেশেও সেটা যেন সম্ভব হয়৷
নতুন এই পদার্থ আসলে এক পেন্ট বা রং৷ রংয়েরই উপাদান হিসেবে বহু বছর ধরে সেটি যে কোনো সারফেস জীবাণুমুক্ত রাখবে৷ তবে খালি চোখে তা দেখা যাবে না৷ তবে তার প্রভাব টের পাওয়া যাবে৷ গবেষকরা বড় আকারে তার রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া দেখালেন৷ একটি খালি বোতলের তলদেশে রং রাখা হয়েছে৷ একমাত্র তার উপর আলো পড়লে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নিয়ে তা বাড়তি শক্তি পায়৷ অক্সিজেনের এই ধাক্কা বুদবুদের মতো উপর দিকে উঠে আসে এবং জীবাণুর মোকাবিলা করে৷
জীবাণুমুক্ত থাকার ১৩টি উপায়
আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নানা জীবাণু, যা আমরা হয়ত লক্ষ্যই করি না৷ এ সবই কি মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার একটা বড় কারণ? একটু সচেতন হয়ে কিভাবে এই সব জীবাণু থেকে নিজেকে দূরে রেখে সুস্থ থাকবেন – তারই কিছু উপায় পাবেন এখানে৷
ছবি: vsurkov/Fotolia
হাত ধোয়া
গাড়ি, রিক্সা, কোনো কিছুর দরজা বা হ্যান্ডেল সাধারণত আমরা হাত দিয়েই ধরি৷ অথচ সেগুলোতে কতজন হাত দিয়েছে, তার কোনো ঠিক নেই৷ তার ওপর বাতাসেও ছড়িয়ে নানা জীবাণু৷ তাই বাইরে থেকে এসে প্রথমেই খুব ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলা প্রয়োজন৷ তা না হলে বাইরের জীবাণুগুলো খুব সহজেই ঢুকে পড়তে পারে আপনার শরীরে৷
ছবি: bilderbox
কম্পিউটার
আজকের দিনে প্রায় সব জায়গাতেই রয়েছে কম্পিউটারের ব্যবহার৷ চাকরির প্রয়োজনে যাঁদের ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়, তাঁদের জন্য পরামর্শ – কাজ শুরুর আগে হাত দুটো ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’ দিয়ে মুছে নেবেন এবং কাজ শেষ হওয়ার পর ঐ একই পদ্ধতিতে হাত পরিষ্কার করে ফেলবেন৷ এছাড়া বাড়িতে ঢুকেও প্রথম কাজ হতে হবে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে ফেলা৷
ছবি: Fotolia/fotek
রান্নাঘর
রান্নাঘরেই লুকিয়ে থাকতে পারে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জীবাণু৷ কাঁচা মাংস কাটার পর সেই কাটিং বোর্ডে অন্য কিছু কাটাকাটি করা হলে, যা তার সংস্পর্শে আসবে, তাতেই মাংসের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাই কাঁচা মাছ, মাংস কাটার জন্য আলাদা বোর্ড ব্যবহার করুন৷ আর তা ব্যবহারের পর বোর্ড, ছুড়ি, দা এবং অবশ্যই হাত দুটো ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ এছাড়া রান্নাঘরের কাঁচা আবর্জনা পরিষ্কার করুন প্রতিদিন৷
ছবি: Fotolia/industrieblick
বাথরুম
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বেশিরভাগ বাড়িতেই বসার ঘর কিংবা শোবার ঘর যতটা পরিষ্কার বা সুন্দর করে সাজানো থাকে, রান্নাঘর বা বাথরুমের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা দেখা যায় না৷ অথচ বাথরুম এবং রান্নাঘরই হচ্ছে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা৷ তাই বাথরুম সব সময় শুকনো এবং পরিষ্কার রাখুন৷ তার সঙ্গে ব্যবহৃত টয়লেট পেপার বা কসমেটিক পেপার সহ সব ময়লা নিয়মিত সরিয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/Pixelwolf
ব্যবহৃত যে কোনো ব্রাশ
রান্নাঘর, বাথরুম অথবা বাড়ির অন্য কোনো ঘরই বলুন, সেই সব জায়গা পরিষ্কার বা মোছার জন্য ব্যবহার করা ব্রাশটিতে কিন্তু থাকে অসংখ্য জীবাণু৷ তাই ব্রাশগুলো ব্যবহারের পর প্রতিবারই ধুয়ে এবং পানি চিপে ফেলে দিয়ে পরেরবার ব্যবহারের জন্য রেখে দিন৷ এছাড়া মাসে অন্তত একবার পুরনো ব্রাশ ফেলে দিয়ে নতুন ব্রাশ কিনে আনুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টুথ ব্রাশ
দাঁত মাজার ব্রাশের ভেতরও জমে থাকতে পারে নানা রকম ব্যাকটেরিয়া৷ তাই সময়মতো, অর্থাৎ মাসে অন্তত একবার টুথব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত৷ তা না হলে নিজের ব্রাশের জীবাণুই আবারো নিজেরই ক্ষতি করতে পারে৷ এছাড়া ‘‘প্রতিবার ব্যবহারের পর টুথব্রাশটি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি৷’’ একথা বলেন কোলন শহরের দাঁত বিশেষজ্ঞ ডা. আইকার৷
ছবি: imago/CTK/CandyBox
ঘরের ভেতরের গাছের পানি
অনেকেই সখ করে ঘরে গাছ লাগিয়ে থাকেন৷ এ সব গাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দেওয়া হলে, তা জমে জীবাণুর জন্ম হয়, যা কিনা সে’সব জায়গায় বসা মশা, মাছি বা পোকামাকড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইনজেকশনের সিরিঞ্জ
নানা কারণেই মানুষকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়৷ তবে ইনজেকশন দেওয়ার আগে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত সিরিঞ্জটি নতুন কিনা৷ কারণ সিরিঞ্জটি আগে যে ব্যবহার করেছেন, তাঁর কোনো ছোঁয়াচে রোগ থাকলে এর মধ্য দিয়ে অন্য আরেকজন আক্রান্ত হতে পারেন সহজেই৷ বলা বাহুল্য, এইচআইভি ভাইরাসের মতো বিপজ্জনক ভাইরাসও কিন্তু এভাবে ছড়াতে পারে৷
ছবি: Fotolia
বাতাসে জীবাণু ছড়ায়
সার্দি-কাশি বা হাঁচিতে জীবাণু ছড়ায় – সেকথা কম-বেশি আমরা অনেকেই জানি৷ তাই এ ধরণের রোগীদের থেকে খানিকটা দূরে থাকাই ভালো৷ এ সব অসুখ ছড়ায় সাধারণত, বাস, ট্রেন, মিটিং, মিছিল বা সেই সব জায়গায় যেখানে অনেক মানুষের যাতায়াত৷ যাঁরা শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল বা যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা সহজেই এভাবে আক্রান্ত হয়ে পরতে পারেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানি
পানির আরেক নাম জীবন৷ পানি পান করা ছাড়াও প্রায় সব কাজেই প্রয়োজন হয় পানির৷ তবে যে কোনো জায়গার পানি পান না করাই ভালো৷ পানি বাহিত রোগের কথা কে না জানে? তাই প্রয়োজনে এক বোতল ফুটন্ত পানি বাড়ি থেকে সাথে নিয়ে বের হন৷ অথবা পথেই ‘মিনারেল ওয়াটার’-এর বোতল কিনে নিন৷ গোসলের সময়ও লক্ষ্য রাখা উচিত যাতে পানি পেটে না চলে যায়৷
ছবি: Fotolia/photo 5000
সতর্কতা
জীবাণু সম্পর্কে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সতর্ক করে দেওয়া উচিত৷ বিশেষ করে, অন্য কোথাও টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই হাত ধোয়া উচিত, সেই ছোট থেকেই৷ বাইরের খাবারের ব্যাপারেও ভলোভাবে সতর্ক হওয়ার কথা শিশুদের বুঝিয়ে বলতে হবে৷ আর সতর্ক না হলে তার ফল যে ভয়ংকর হতে পারে – সেটারও একটা ধারণা দেয়া উচিত সেই ছোটবেলাতেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাস্তার খাবার
রাস্তা বা ফুটপাথে মজার মজার লোভনীয় খাবারের দোকানগুলো আমাদের কেমন যেন হাতছনি দিয়ে ডাকে৷ তাই না? কিন্তু খাবারগুলো লোভনীয় হলেও এ সব থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত৷ বাইরে খোলা অবস্থায় রাখা খাবারগুলোয় মাছি, ধুলোবালি পড়ে৷ অনেকক্ষণ আগে কেটে রাখা ফল বা সালাদ তো একেবারেই খাওয়া উচিত নয়৷ তবে ফুটন্ত বা রান্না করা খাবার গরম অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে৷
ছবি: dapd
ভ্রমণ
অনেককেই দেখা যায় ভ্রমণ বা বেড়ানোর পর ফিরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এর কারণ নিয়ে কি কেউ খুব বেশি মাথা ঘামায়? জায়গা, পরিবেশ, খাবার সবই তো ছিল ভিন্ন৷ বিশেষ করে দূরে কোথাও গেলে তা এ কথা বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যায়৷ কাজেই বেড়াতে গেলে ছোট থেকে বড় সবারই বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত৷
ছবি: vsurkov/Fotolia
13 ছবি1 | 13
জীবাণুর সারফেস-এর নেগেটিভ চার্জ থাকে৷ আর এই বিশেষ রংয়ের চার্জ হয় পজিটিভ৷ ফলে এই রং জীবাণু আকর্ষণ করে৷ রংয়ের উপর আলো পড়লে অতি-প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন জীবাণু ধ্বংস করে৷ গবেষকরা প্রায় দু'বছর ধরে এই প্রক্রিয়া তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন৷ বয়েমলার বলেন, প্রথমদিকে এই সারফেসের উপর উজ্জ্বল সার্চলাইটের আলো নিক্ষেপ করা হতো, যাতে জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও জোরালো হতে পারে৷ শেষে সাধারণ আলোই যথেষ্ট হয়ে উঠলো৷ সেটা ছিল উল্লেখযোগ্য এক মুহূর্ত, যখন সাধারণ একটি ঘরে সাধারণ আলোর নীচে গোটা প্রক্রিয়া সম্ভব হলো৷ এই প্রযুক্তি বিনা জটিলতায় যে কোনো জায়গায় প্রয়োগের পথ খুলে গেলো৷
হাতেনাতে এই প্রক্রিয়ার উপযোগিতা দেখাতে গবেষকরা এই বিশেষ রং স্প্রে করার এক তরলের সঙ্গে মিশিয়েছেন৷ তা দিয়ে হাসপাতালের মারাত্মক এমআরএসএ জীবাণুও কাবু করা যায়৷ পরীক্ষায় দেখা গেলো, আলোকপাতের পর হাতে-গোনা কয়েকটি জীবাণু অবশিষ্ট রয়েছে৷ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাই তা কাবু করতে সক্ষম৷
যে সারফেসে এই রং ব্যবহার করা হয়নি, সেখানে জীবাণু রয়ে গেছে৷ প্রশ্ন হলো, ডানদিকে কত জীবাণু রয়ে গেছে৷ এর উত্তর, মোটামুটি সাতটি জীবাণু অবশিষ্ট রয়েছে৷ তবে সবার শেষে মাত্র চারটি থেকে গেছে৷ নতুন এই প্রক্রিয়ার জন্য এখনো স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন বাকি রয়েছে৷ গবেষকদের আশা, এরপর সব হাসপাতালেই এর প্রয়োগ শুরু হবে৷